আমির হোসেন (বীর প্রতীক)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

আমির হোসেন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

আমির হোসেন
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

শহীদ আমির হোসেনের পৈতৃক বাড়ি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বক্তানগর গ্রামে। তার বাবার নাম বাবর আলী এবং মায়ের নাম তসিরন নেছা। তার স্ত্রীর নাম রাহেলা খাতুন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

আমির হোসেন পেশায় ছিলেন তেলি বা তেল বিক্রেতা। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কেরোসিন তেল বিক্রি করতেন। পড়াশোনার প্রাথমিক গণ্ডি শেষ করে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য বাবার হাত ধরে তিনি এই পেশায় যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল আনুমানিক ২৫ বছর। তখন তিনি বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক ছিলেন। মেয়ের বয়স ছিল মাত্র তিন মাস। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমির হোসেন ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার যোগ দেন যুদ্ধে। এক যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হন, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিলে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একদিন রাতে আমির হোসেন বাড়ি থেকে চলে যান। তার স্ত্রী ও বাবা-মা কেউ জানতেন না তিনি কোথায় গেছেন। অনেক দিন পর এক রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। তখন পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে তিনি গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। আমির হোসেন ভারতে গিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরে নাম অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে এই সেক্টরে কিছুদিন যুদ্ধ করার পর অনুমতি নিয়ে নিজ এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য চলে আসেন। স্ত্রী, বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দু-তিন দিন থাকেন। তারপর বিদায় নিয়ে আবার যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি নিজ এলাকায় যুদ্ধ করেন হালিম বাহিনীর অধীনে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবদুল হালিম চৌধুরী। তিনি নিজ উদ্যোগে ও স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত অস্ত্র নিয়ে এই বাহিনী গড়েন। দুর্গম হরিরামপুর উপজেলায় ছিল বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প। মানিকগঞ্জ জেলা এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার যাঁরা ২ ও ৩ নম্বর সেক্টরে প্রশিক্ষণ নেন, তাদের অনেকে বিভিন্ন সময়ে এই বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৪ অক্টোবর বেলা আনুমানিক দুইটায় আমির হোসেন ও তার সহযোদ্ধারা হালিম বাহিনীর একটি গোপন উপক্যাম্পে ছিলেন। তখন ক্যাম্পে দুপুরের খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এমন সময় খবর আসে, পাশের সমসাবাদ গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ও রাজাকাররা এসেছে। আমির হোসেন ও তার সহযোদ্ধারা দ্রুত প্রস্তুত হয়ে ওই গ্রামে যান এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেন। তাদের আকস্মিক আক্রমণে পাঁচ-ছয়জন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার হতাহত হয়। এরপর দুই পক্ষে সামনাসামনি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনায় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বেশি ছিল। অস্ত্রশস্ত্রেও তারা এগিয়ে ছিল। মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা আক্রমণ করে। একপর্যায়ে আমির হোসেনের বুকে তিন-চারটি গুলি লাগে। গুরুতর আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা দ্রুত আমির হোসেনকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু তার অবস্থা ক্রমে অবনতি হয়। তখন সহযোদ্ধারা স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে পাঠান। কিন্তু পথেই তার জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"www.prothom-alo.com। ২০১২-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-৩০ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৯২। আইএসবিএন 9789849025375