আব্দিমের মানিকজোড়

পাখির প্রজাতি

আব্দিমের মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Ciconia abdimii) বা সাদাঠুঁটি মানিকজোড় Ciconiidae (সাইকোনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ciconia (সাইকোনিয়া) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির বৃহদাকৃতির জলচর পাখি। আব্দিমের মানিকজোড়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আব্দিমের মানিকজোড় (লাতিন: ciconia = মানিকজোড়, abdimii = আব্দিমের, সুদানে তুরস্কের গভর্নর আব্দিমের (১৭৮০-১৮২৮) নামানুসারে[৩])। পাখিটি সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৬৭ লাখ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রজাতি বলে ঘোষণা করেছে।[১] প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী এবং কোন উপপ্রজাতি নেই।

আব্দিমের মানিকজোড়
Ciconia abdimii
আব্দিমের মানিকজোড়, লন্ডন চিড়িয়াখানা, ইংল্যান্ড
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Ciconiiformes
পরিবার: Ciconiidae
গণ: Ciconia
প্রজাতি: C. abdimii
দ্বিপদী নাম
Ciconia abdimii
Lichtenstein, 1823
বিস্তৃতি

       প্রজননক্ষেত্র
       শীতকালীন বিচরণস্থল

প্রতিশব্দ

Sphenorhynchus abdimii[২]

বিবরণ সম্পাদনা

আব্দিমের মানিকজোড় মানিকজোড় জাতীয় পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও আকারে বেশ বড়সড় পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭৩ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১ কেজি।[৫][৬] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে কোন যৌন দ্বিরূপতা নেই। তবে পুরুষ পাখি গড়ে স্ত্রী পাখির থেকে একটু বড়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি, পিঠ, গলা ও ডানা কালো। পালকে মেলানিন থাকার কারণে পালক কালো দেখায়।[৭] দেহতল, লেজ ও লেজ-ঢাকনি সাদা। মুখের পালকহীন চামড়া লালচে। প্রজনন মৌসুমে তা নীল রঙ ধারণ করে। লম্বা পা ধূসর রঙের। হাঁটু ও পায়ের পাতা গোলাপি। চোখ বাদামি থেকে ধূসরাভ বাদামি, চোখের কোল লাল। লম্বা সোজা ঠোঁট লালচে-ধূসর।

স্বভাব সম্পাদনা

আব্দিমের মানিকজোড় ঘাসক্ষেত, জলাভূমি, পতিত জমি এবং ডোবাময় মাঠে বিচরণ করে। শুষ্ক এলাকায়ও দেখা যায়। সচরাচর একা, জোড়ায় কিংবা বিশাল ঝাঁকে থাকে। খাবারের সন্ধানে খুব ভোরে জলাভূমিতে নামে। হেঁটে হেঁটে ভেজা ঘাস ও জলাভূমিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে এরা মাংসাশী পাখি। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শামুক, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, ছোট স্তন্যপায়ী ও মাছ। ধীরে ধীরে ডানা মেলে এরা উড়ে চলে। হালকা বাতাসে ভেসে থাকে। আশ্রয়ের জন্য এরা একটিমাত্র গাছকে বেছে নেয়। কোন ব্যাঘাত না ঘটলে ঐ গাছে এরা রাতের পর রাত আশ্রয় নেয়। শীতে সচরাচর নীরব থাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে ঠোঁট দিয়ে ঠক-ঠক আওয়াজ তোলে।

প্রজনন সম্পাদনা

প্রজনন মৌসুমে এরা লোকালয়ের উঁচু দালান, ঘরবাড়ি, খাড়া বাঁধ কিংবা উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বড় মাচার মত আগোছালো বাসা বানায়। এরা কলোনি করে বাসা করে। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই বাসা করে। বাসা বানাতে ৫-১৫ দিন সময় লাগে। বাসা বানানো শেষে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংখ্যায় ২-৫টি এবং সাদা রঙের। ৩০ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ciconia abdimii ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে, The IUCN Red List of Threatened Species এ আব্দিমের মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  2. "Abdim's Stork (Ciconia abdimii)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২১, ২০১২ 
  3. ""Abdim's Stork Fact Sheet, Lincoln Park Zoo""। ১৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১২ 
  4. Ciconia abdimii ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ আব্দিমের মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  5. Mead,C. and Ogilvie, M. (2007)The Atlas of Bird Migrations: Tracing the Great Journeys of the Worlds Birds
  6. Hancock & Kushan, Storks, Ibises and Spoonbills of the World. Princeton University Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-১২-৩২২৭৩০-০.
  7. Grande, Juan Manuel (২০০৪)। "The evolution of bird plumage colouration; a role for feather-degrading bacteria?" (PDF)Ardeola51 (2): 375–383। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১১  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা