আবুল কাসেম (ভাষা সৈনিক)
প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবুল কাসেম (২৮ জুন ১৯২০ - ১১ মার্চ ১৯৯১) একজন প্রথিতযশা বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজসেবক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।[১][২] তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্থপতি এবং তমদ্দুন মজলিস ও বাঙলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।
মোহাম্মদ আবুল কাসেম | |
---|---|
জন্ম | জুন ২৮ ১৯২০ |
মৃত্যু | ১১ মার্চ ১৯৯১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | রাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজসেবক |
দাম্পত্য সঙ্গী | মমতাজ কাসেম |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমী পুরস্কার একুশে পদক স্বাধীনতা পদক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামোহাম্মদ আবুল কাসেম ১৯২০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে "বরমা ত্রাহি-মেনকা উচচ বিদ্যালয়" থেকে তিনটি বিষয়ে লেটার সহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৪১ সালে "চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ" থেকে আই এস সি-তে মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক ও ১৯৪৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অধীনে স্নাতকোত্তরের থিসিস করেন।[২][৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাপ্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। প্রভাষক হিসাবে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ক্লাস নেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রভাষক পদে ছিলেন।[৪]
প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম এদেশের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গণে একজন বিরল ব্যক্তিত্ব ৷ ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষে বাংলা ভাষায় উচ্চ শিক্ষা দানের জন্য তিনি বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তিনি বাংলায় ৪০টি পাঠ্য পুস্তক রচনা করেন এবং বাংলা একাডেমী, আর্ট কলেজ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সিটি কলেজসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সহিত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন ৷ তিনি প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য থাকাকালীন ১৯৫৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রথম সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ও সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহীত হয়৷[২]
তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব-কমিটি এবং পরে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি হয়, তিনি সে আন্দোলনের পথিকৃৎ্ ছিলেন৷ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন বিকাশ লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম ছিলেন বাংলা ভাষার জাগ্রত বিবেকতুল্য ৷
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাএকজন প্রতিভাবান লেখক, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য এবং শিক্ষা, ইসলাম, সংস্কৃতি ও রাজনীতি বিজ্ঞানের পাঠ্যবই সহ প্রায় ১০০টি বই রচনা করেন। এর মধ্যে ৪০টি পদার্থবিদ্যার পাঠ্যবই এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয় রয়েছে।
তার সুপরিচিত বই কিছু হলো-
বাংলা
সম্পাদনাইসলাম | |
---|---|
* ইসলাম কি দিয়েছে ও কি দিতে পারে | ১৯৫২ |
* বুঝে নামাজ পড় | ১৯৬৮ |
* ইসলামের রাষ্ট্রিয় আদর্শ | ১৯৮০ |
* ইসলামী মেনিফেস্টো | ১৯৫২ |
* একমাত্র পথ | ১৯৪৯ |
* ঘোষণা | ১৯৫২ |
ইসলাম ও বিজ্ঞান | |
* আধুনিক চিন্তাধারা | ১৯৬৮ |
* বিজ্ঞান বস্তুবাদ ও আল্লাহর অস্তিত্ব | ১৯৬৮ |
* বিবর্তনবাদ সৃষ্টিতত্ত্ব ও আল্লাহর অস্তিত্ব | ১৯৬৯ |
* বিজ্ঞান সমাজ ধর্ম | ১৯৮২ |
অর্থনীতি | |
* কোরানিক অর্থনীতি | ১৯৭১ |
* পাকিস্তানের অর্থনীতি | ১৯৬৫ |
আন্তর্জাতিক রাজনীতি | |
*তৃতীয় ব্লক আন্দোলন | ১৯৫২ |
ইতিহাস | |
*পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা: বাংলা না উর্দু? | ১৯৪৭ |
*ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস | ১৯৫২ |
*আমাদের অতীত | ১৯৫৭ |
বাংলা কলেজ সম্পর্কীয় | |
* বাংলা কলেজের চাকরির নিয়মাবলী | ১৯৬৮ |
* বাংলা কলেজ প্রসঙ্গে | ১৯৬৮ (২য় সংস্করণ) |
* বাংলা কলেজ কি, কেন, এবং কিরুপ | ১৯৬২ |
* ঈর্ষা বনাম সাধনা | ১৯৬৫ |
* বাংলা কলেজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ | ১৯৬৪ |
অন্যান্য | |
* শাসনতান্ত্রিক মুলনীতি | ১৯৬৮ |
* বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে শ্রেণীসংগ্রাম | ১৯৫২ |
* মুক্তি কোন পথে | ১৯৫২ |
* ইসলামী রাষ্ট্রনীতি | ১৯৬৭ |
* আমাদের ভাষার রুপ | ১৯৬২ |
* বাংলা প্রচলনের কয়েকটি সমস্যা | ১৯৬৭ |
* অফিস-আদালত ও শিক্ষার বাহনরুপে বাংলা প্রচলনের সমস্যা | |
* সহজ বাংলা | ১৯৭৪ |
* একুশ দফার রুপায়ন | ১৯৫৩ |
* কৃষক ভাইয়ের জমি চাই | অজানা |
* শ্রমিক ভাইয়ের জমি চাই | অজানা |
* দুইটি প্রশ্ন | ১৯৫৫ |
* ভুলের পুনরাবৃত্তি | ১৯৫৩ |
* রাষ্টবিজ্ঞান | ১৯৬৪ |
* সংগঠন | ১৯৫২ |
* আধুনিক কারবার পদ্ধতি | ১৯৬৬ |
* ছাত্র আন্দোলন | ১৯৫১ |
* প্রবন্ধ মঞ্জুষা | ১৯৮৯ |
পাঠ্যপুস্তক | |
* উচ্চমাধ্যমিক পদার্থিকা, ১ম খন্ড | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক পদার্থিকা, ২য় খন্ড | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক ল্যাবরেটরী পদার্থিকা | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন, ১ম খন্ড (অজৈব) | ১৯৬৫ |
* উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন, ২য় খন্ড (জৈব) | ১৯৬৫ |
* উচ্চমাধ্যমিক ল্যাবরেটরী রসায়ন | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক এলজেব্রা | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক ক্যালকুলাস | ১৯৬৬ |
* উচ্চমাধ্যমিক জ্যামিতি | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক ডিনামিক্স | ১৯৬৮ |
* উচ্চমাধ্যমিক ত্রিকোনমিতি | ১৯৬৪ |
* উচ্চমাধ্যমিক স্টেটিস্ক | ১৯৬৭ |
* বিজ্ঞান প্রকাশ (৭ম ও ৮ম শ্রেণীর) | ১৯৪৯ |
* বিজ্ঞান প্রকাশ (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) | ১৯৪৯ |
* মাধ্যমিক ত্রিকোনমিতি | ১৯৬৪ |
* ডিগ্রি পদার্থিকা | ১৯৭১ |
* সহজ পদার্থিকা, ১ম খন্ড | ১৯৭৪ |
* সহজ পদার্থিকা, ২য় খন্ড | ১৯৭৪ |
* সহজ রসায়ন, ১ম খন্ড | ১৯৬২ |
* সহজ রসায়ন, ২য় খন্ড | ১৯৬২ |
* ল্যাবরেটরী রসায়ন (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) | ১৯৭৫ |
* ল্যাবরেটরী পদার্থবিজ্ঞান (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) | ১৯৭৫ |
* ল্যাবরেটরী জীববিজ্ঞান (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) | ১৯৭৫ |
ইংরেজি
সম্পাদনাইসলাম ও বিজ্ঞান | |
---|---|
* Islam Science & Modern Thoughts | ১৯৭৫ |
* Universal Ideology in the Light of Modern Thought | অজানা |
পাঠ্যপুস্তক | |
* Degree Physics | ১৯৭০ |
* General Properties of Matter | ১৯৫৫ |
* New Physics (1st part) | ১৯৫৫, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৬৬ |
* New Physics (2nd part) | ১৯৫৬, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৬৬ |
* Inter Physics Tutor part 1 | ১৯৫৫ |
* Inter Physics Tutor part 2 | ১৯৫৫ |
* Laboratory Physics | ৩য় সংস্করণ ১৯৭০ |
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাজাতীয় স্বীকৃতি হিসাবে তিনি বাংলা কলেজ ছাত্র মজলিস সমিতি পুরস্কার ও রাইর্টাস গিল্ড পুরস্কার (১৯৬৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (১৯৮৭), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৩), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার ও চট্টগ্রাম সমিতি পদক (১৯৮৮) এবং জাতীয় সংবর্ধনা স্বর্ণপদক (১৯৮৯) লাভ করেন ৷
মৃত্যু
সম্পাদনাআবুল কাসেম ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Principal Abul Kashem's Death Anniversary Today"। The Bangladesh Observer। ১১ মার্চ ২০০৫।
- ↑ ক খ গ Ahmad, Quazi Azizuddin (১৯৯১)। Principal Abul Kashem Sharok Grantho: A commemorative book on Principal Abul Kashem। Chittagong: Principal Abul Kashem Shreti Parishod।
- ↑ Mahmud, Akif bin, Principal Abul Kashem: Matrivashake gire je full bekoseto. The Weekly Bangla Patrika, Friday 24 March 2006
- ↑ "Death anniversary of Principal Abul Kashem today."। The New Nation। ১১ মার্চ ২০০৫।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |