আফজাল মিয়া

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

আফজাল মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯১) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[]

আফজাল মিয়া
জন্ম
ভারারুল চৌরাস্তা, ৩১ নং ওয়ার্ড
মৃত্যু১৯৯১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

আফজাল মিয়ার পৈতৃক বাড়ি গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার ভারারুল গ্রামে। তার বাবার নাম জমির উদ্দিন এবং মায়ের নাম জহুরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মরিয়ম আফজাল। তাদের এক ছেলে, দুই মেয়ে।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন আফজাল মিয়া। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে গিয়ে যোগ দেন যুদ্ধে। পরে তাকে মুক্তিবাহিনীর নৌ-শাখার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর নৌ-শাখা গঠিত হয়। নৌ-শাখায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তিনি দুটি অপারেশনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসা নদীতে ভারতীয় জঙ্গিবিমান ভুলক্রমে মুক্তিবাহিনীর দুই জাহাজে বোমাবর্ষণ করে। এতে দুই জাহাজই বিধ্স্ত হয় এবং মুক্তিবাহিনীর নৌউইংয়ের অনেকে শহীদ ও আহত হন। এই বিমান হামলায় আফজাল মিয়াসহ কয়েকজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। সেদিন দুপুরে তিনটি জঙ্গিবিমান তাদের জাহাজের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাগরের দিকে উড়ে যায়। জাহাজের নৌসেনারা বিমানগুলোকে শত্রু পাকিস্তানিদের বিমান মনে করে সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় ক্যাপ্টেনের কাছে অনুমতি চাইলেও তিনি সে অনুমতি দেননি। ক্যাপ্টেন ছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, ঘটনার ওখানেই শেষ। কিন্তু তার সেই ধারণা ছিল ভুল। পরে বিমানগুলো আবার পেছন দিক থেকে জাহাজ লক্ষ্য করে এগিয়ে আসে। খুব নিচু দিয়ে উড়ে এসে কোনো রকম সতর্কতা না দেখিয়েই পদ্মা ও পলাশে বোমাবর্ষণ করে। প্রথম হামলায়ই বিধ্স্ত পদ্মা। একটি গোলা এসে পড়ে পদ্মার ইঞ্জিন রুমে। পলাশেও বোমা পড়ে, তবে সচল ছিল। ওই অবস্থাই পলাশ এগিয়ে যেতে থাকে। একটু পর বিমানগুলো ফিরে এসে আবার পলাশে বোমাবর্ষণ করে। ভারতীয় জঙ্গিবিমান প্যানভেল জাহাজে বোমাবর্ষণ করেনি। পরে প্যানভেল জাহাজের নাবিকেরা আফজাল মিয়াসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠায়। তার একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

আফজাল মিয়াদের গানবোট দুপুরের মধ্যেই নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেল রূপসা নদীতে, খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি। ওই গানবোটের সঙ্গে আছে আরও দুটি জাহাজ। তিনটির মধ্যে দুটি মুক্তিবাহিনীর, অপরটি ভারতীয় নৌবাহিনীর। মুক্তিবাহিনীর জাহাজের নাম ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’; ভারতীয় জাহাজের নাম ‘আইএনএস প্যানভেল।’ তারা যাচ্ছেন খুলনায় পাকিস্তানি নৌঘাঁটি দখলের জন্য। এ অপারেশনের সাংকেতিক নাম ‘অপারেশন হটপ্যান্টস।’ বহরের সামনে প্যানভেল, মাঝে কিছুটা দূরত্বে পদ্মা, পেছনে পলাশ। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজগুলো। আফজাল মিয়া পদ্মা জাহাজের আর্টিফিশার। সে দিন তিনি ইঞ্জিন রুমে নিজের কাজে ব্যস্ত।

এমন সময় গোটা জাহাজ কেঁপে উঠে ইঞ্জিনরুমে আগুন ধরে গেল। তিনি ছিটকে পড়লেন। যখন হুঁশ হলো তখন চোখে কিছু দেখতে পারছেন না। ক্ষতবিক্ষত আফজাল মিয়া অনেক কষ্টে ইঞ্জিনরুম থেকে বেরিয়ে এলেন ডেকে। সেখানে করুণ দৃশ্য। চিৎকার, চেঁচামেচি, দৌড়াদৌড়ি। নিহত সহযোদ্ধাদের লাশ পড়ে আছে। আহত সহযোদ্ধারা কাতরাচ্ছেন। অক্ষত সহযোদ্ধারা ছোটাছুটি করছেন পানিতে লাফিয়ে পড়ার জন্য। যে যেভাবে পারছেন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন জীবন বাঁচাতে। আহত আফজাল মিয়ার গোটা মুখমণ্ডল ও হাত-পা রক্তাক্ত। এর পর তিনি কীভাবে কখন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজেও জানেন না। লাইফ জ্যাকেট পরা থাকায় নদীর পানিতে ভাসতে থাকলেন। তখনো ঠিকমতো দেখতে পারছেন না। অনেকক্ষণ পর দেখেন তিনি নদীর তীরে। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-১১-২০১১"। ২০১৮-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 9789849025375