আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস

৩০ শে জুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি ও অন্যান্য কাব্যের ইংরাজী অনুবাদ হতে কয়েকটি পাঠ করে শ্রোতৃমণ্ডলীকে শোনান বিশ শতকের প্রখ্যাত আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস। এই ঘটনাটিকে সামনে রেখে বিশ্বের রবীন্দ্রপিপাসুরা কবিতা পাঠ করেন। গভীর আগ্রহে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্‌যাপন করেন আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস বা আন্তর্জাতিক কাব্যপাঠ দিবস।

পশ্চিমদেশে তথা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠার - ভারতবর্ষীয় কবির গৌরব ও খ্যাতির দীর্ঘ ইতিহাসের সূচনা দিবস।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
গীতাঞ্জলি: সং অফারিংস‎-এর প্রথম ম্যাকমিলান সংস্করণের প্রচ্ছদ,আইরিশ কবি ইয়েট্সের ভূমিকাসহ, ১৯১৩

১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জুন প্রখ্যাত ইংরেজি শিল্পী উইলিয়াম রদেনস্টাইনের হামস্টেড হিথের বাড়িতে এজরা পাউন্ড, মে সিনক্লেয়ার, আর্নস্ট রিজ, এলিস মেনেল, ইভলিন আন্ডারহিল, অ্যান্ড্রুজ় সহ বিশিষ্ট বিদ্বজনের সামনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের কয়েকটি পড়েছিলেন আইরিশ কবি ইয়েট্স।রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সেদিনের এই ঘটনাটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডের বিদ্বসমাজে রবীন্দ্রনাথের প্রথম আত্মপ্রকাশ। তারপর ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর, ইংরেজি গীতাঞ্জলির – Gitanjali, (Song Offerings) – সীমিত সংস্করণ প্রকাশ করে লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১লা মার্চ, ম্যাকমিলান প্রকাশ করে ইংরেজি গীতাঞ্জলির সুলভ সংস্করণ। ৩০ শে জুন, ১৯১২ থেকে ১৩ ই নভেম্বর, ১৯১৩ এই সতেরো মাসের কম সময়ে বাংলার অপরিচিত বাঙালি কবি জয় করলেন পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ পুরস্কার। [১] বাংলা ভাষা ও সাহিত্য স্থায়ীভাবে সম্মানের আসন লাভ করল। নোবেল প্রাপ্তির সে বার্তা শান্তিনিকেতনে এসেছিল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই নভেম্বর কবির জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় মারফত।

প্রস্তাবনা সম্পাদনা

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি কলকাতার 'টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট', তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির বন শহরের 'টেগোর ইনস্টিটিউট', কোরিয়ার 'টেগোর সোসাইটি অব কোরিয়া' এবং লন্ডনের 'দ্য টেগোরিয়ান্স'-এর পরিচালকগণ যথাক্রমে সোমেন্দ্রনাথ বসু, তৃণা পুরোহিত রায়, কিম ইয়াং সিক এবং তপন বসু, নিজের নিজের মুখপত্রে একযোগে আইরিশ কবি ইয়েট্স কর্তৃক রবীন্দ্রকবিতা পাঠের এই স্মরণীয় দিনটিকে সামনে রেখে আবেদন করেন, যেন প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিকস্তরে রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস পালন করা হয়। [২] কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট বহু বছর ধরে ৩০ শে জুন দিনটিকে "আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস" হিসাবে পালন করে আসছে।[৩] পরবর্তীতে যখন কোন কোন রবীন্দ্র গবেষকের মতে তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ঘটে, তখন স্থির হয় যে, ২৮ জুন থেকে ১২ জুলাই, এই পক্ষকালের মধ্যে যে কোনও একটি দিন আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র কাব্যপাঠ দিবস হিসেবে পালন করা হবে এবং অনেক রবীন্দ্রপিপাসুরা করে থাকেন।

তবে সংশ্লিষ্ট রবীন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র সমূহের আবেদনে মান্যতা দিয়ে ৩০ শে জুন তারিখে প্রতি বছর রবীন্দ্রকাব্য পাঠের আয়োজন হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সৌরীন্দ্র মিত্র, সম্পাদক (১৯৭৭)। খ্যাতি অখ্যাতির নেপথ্যে। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 81-7215-390-2 
  2. "সম্পাদক সমীপেষু- রবীন্দ্রকাব্য পাঠ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-৩০ 
  3. "রবীন্দ্রনাথ: নোবেল পুরস্কার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-৩০