আদেলাইদা আভাগিয়ান

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী

আদেলাইদা আভাগিয়ান (আর্মেনীয়: Ադելաիդա Հովսեփի Ավագյան, জন্ম: ৬ এপ্রিল ১৯২৪—মৃত্যু: ১২ মে ২০০০) হলেন একজন আর্মেনীয় চিকিৎসক, গবেষক এবং শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবক। ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি আর্মেনিয়ার ইয়েরেভান শহরের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন সায়েন্স অ্যান্ড প্রফেশনাল ডিজিজ প্রিভেনশন প্রতিষ্ঠানের পুষ্টি স্বাস্থ্য (পুষ্টিবিজ্ঞান) পরীক্ষাগারের প্রধান ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন জার্নালে পঞ্চাশের বেশি গবেষণাপত্রের লেখক তিনি।[১]

আদেলাইদা আভাগিয়ান
জন্ম(১৯২৪-০৪-০৬)৬ এপ্রিল ১৯২৪
ইয়েরেভান, আর্মেনিয়া
মৃত্যুমে ১২, ২০০০(2000-05-12) (বয়স ৭৬)
উইলিয়ামসবার্গ, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
পেশাচিকিৎসক ও বিজ্ঞানী
জাতীয়তাআর্মেনীয়
দাম্পত্যসঙ্গীআর্তাভজ জভাকেরিয়ান
সন্তান
  • আন্না গিউরজিয়ান

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

আদেলাইদা আভাগিয়ানের জন্ম হয়েছিল আর্মেনিয়ার ইয়েরেভান শহরে, তাঁর পিতা ছিলেন একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ হভসেপ আভাগিয়ান এবং মাতা মারিয়ানুশ ভাসিলিয়ান যিনি ছিলেন একজন ভাষা শিক্ষিকা। তাঁর চার ভাইবোনের মধ্যে আদেলাইদা ছিলেন সকলের বড়ো, বাকিরা হলেন ডেসডিমোনা, রবার্ট এবং এসফিরা। নবীনতর ভাইবোনদের দৈনিক দেখাশোনা করতে আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানের চাইকোভশি স্ট্রিটে অনেক সময় খুব বেশি জড়িয়ে পড়ে তিনি তাঁদের পথিকৃৎ হয়ে উঠতেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ভাষা শিক্ষিকা হিসেবে তাঁর মা সন্তানদের ভালো শিক্ষার প্রতি খুবই নজর দিতেন এবং একাধিক ভাষা ও বিজ্ঞান শিখনের জন্য উৎসাহিত করতেন। তাঁর পিতা বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেক শিশুকে তার প্রতিভা এবং স্বাভাবিক গুণ নিয়ে অসীম উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া উচিত। বিশেষত, আভাগিয়ান পরিবারের বিশ্বাস ছিল যাতে তাদের সন্তানরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পায় সেই ব্যবস্থা রাখা। চারজন শিশুর সামনেই তাদের পুরো শৈশবাবস্থায় সাংগীতিক বাদ্যযন্ত্র এবং সাহিত্যের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সেই সুবাদে ৬ বছর বয়স থেকে আদেলাইদা ৭ বছর যাবৎ পিয়ানো বাজান এবং তাঁর প্রদর্শনে দ্রুত উন্নতি হয়েছিল।

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আভাগিয়ান খাচাতুর আবোভিয়ান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান হিসেবে স্নাতক হন। পরবর্তীতে তিনি ইয়েরেভান স্টেট মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভরতি হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাগনা কাম লড নিয়ে স্নাতক হন এবং চিকিৎসা অভ্যাস করার জন্যে পেশাদার ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন ও গবেষণা সম্পাদনা

আভাগিয়ান যখন চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভ্যাস করছিলেন তখন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে তিনি চিকিৎসা গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দশকে আর্মেনিয়ায় স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি অভ্যাস এবং জনস্বাস্থ্য ও সার্বিক সুস্থতার উন্নতিতে সহায়তা করার ব্যাপারে তিনি নির্দিষ্টভাবে ইচ্ছুক ছিলেন । তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোতে ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশনাল হাইজিনে যোগদান করেছিলেন। পদ গৃহীত হওয়ার পর তিনি মস্কো চলে যান। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র (কান্ডিডাটসাকাইয়া ডিসারট্যাটসিয়া) নথিভুক্ত করেন এবং মস্কোতে পোস্টডক্টোরাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আর্মেনীয় চিকিৎসকদের মধ্যে একজন হয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের জন্য আভাগিয়ান মনোনীত হন, স্বাস্থ্যসেবা পুনর্গঠনের কাজে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর্মেনিয়ায় তাঁর সেবা প্রদানের জন্য আভাগিয়ান এই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ইয়েরেভানের স্বাস্থ্য পুষ্টি পরীক্ষাগারের পরিচালক হয়েছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বিভাগীয় প্রধান থাকাকালে আভাগিয়ান তাঁর গবেষণপত্র নথিভুক্ত করেছিলেন, যে বিষয়গুলো ছিল তাঁর ২০ বছরের গবেষণালব্ধ জৈবচিকিৎসার ফল। তাঁর চিকিৎসা গবেষণা কর্মজীবনে যখন তিনি তরুণ বিজ্ঞানী ও তাঁদের গবেষণাপত্রের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন, তখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর নিজস্ব একশোর বেশি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া আভাগিয়ান বেতার ও দূরদর্শনের মতো গণমাধ্যমগুলোতে অসংখ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অপুষ্টি এবং বাড়িতে খাদ্যসংরক্ষণে বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতেন।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আভাগিয়ান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আর্তাভাজড জভাকেরিয়ানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে আন্না নামে তাঁদের এক কন্যা হয়েছিল। তিনি তিনজনের মাতামহী হয়েছিলেন: অসিয়া, হারুত এবং আদেলাইদা (তাঁর নামানুসারে যার নামকরণ করা হয়েছিল)। আভাগিয়ান ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মেয়ে এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সামিল হয়েছিলেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে, আভাগিয়ানের রোগনির্ণয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তাঁর কন্যা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকাকালেই তাঁর মৃত্যু হয়। আভাগিয়ানকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামসবার্গ ভার্জিনিয়ার উইলিয়ামসবার্গ মেমোরিয়াল পার্কে।[২]

নির্বাচিত কর্মসমূহ সম্পাদনা

  • ১৯৫৯ মস্কো, টিনজাত মাংসে অণুজীবের গাঁজন প্রতিক্রিয়ার দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ নির্ধারণের জন্য পুষ্টির পদ্ধতিগুলি।
  • ১৯৬৫ মাংসের পণ্যগুলির তাপীয় প্রক্রিয়াকরণের ফসফেটেজ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর মূল্যায়ন।
  • ১৯৬৮ সিএল বোটুলিনাম দ্বারা প্ররোচিত খাদ্য বিষক্রিয়া নির্ণয়ের ফ্লুরোসেন্ট-সেরিওলজিকাল পদ্ধতি।
  • ১৯৬৮ ২, ৩, ৫-কাঁচা, আধা-সমাপ্ত এবং খাওয়ার জন্যে তৈরি মাংস এবং মাছের পণ্যগুলির স্বাস্থ্যকর মূল্যায়নের জন্য একটি সূচক হিসেবে ট্রাইফিনাইলটেট্রাসোলিয়াম ক্লোরাইড (টিটিসি)।
  • ১৯৬৯ রেজাউরিন পরীক্ষা ব্যবহার করে কাঁচা, আধা-সমাপ্ত এবং খাওয়ার জন্য তৈরি মাংস এবং মাছের পণ্যগুলির স্যানিটারি-ব্যাকটিরিওলজিকাল মূল্যায়ন।
  • ১৯৭০ বোটুলিজম নির্ণয়ের জন্য খাদ্যদ্রব্য-দ্রুত পদ্ধতিগুলির স্যানিটারি-ব্যাকটিরিওলজিকাল মূল্যায়নের এক্সপ্রেস পদ্ধতিগুলি।
  • ১৯৭২অ্যাসিড ফসফেটেজ উপস্থিতির জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে মাংসের পণ্যগুলির গৌণ ব্যাকটিরিয়া দূষণ নির্ধারণ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Biography"। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২ 
  2. ADELAIDA AVAGYAN HOVSEPI / ԱԴԵԼԱԻԴԱ ԱՎԱԳՅԱՆ ՀՈՎՍԵՓԻ