আটলান্টিক সনদ

আন্তর্জাতিক সনদ

আটলান্টিক সনদ মূলত শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে একটি আন্তর্জাতিক সনদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়সীমাকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে গণ্য করা যায়। এই সময়কার আন্তর্জাতিক ঘটনাপুঞ্জের নানা ঘাতপ্রতিঘাতের বিবর্তনের মধ্য দিয়েই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উত্পত্তি হয়েছে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার নিউফাউন্ডল্যান্ড [১] দ্বীপের কাছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকেপ্রিন্স অফ ওয়েলস' নামে একটি যুদ্ধজাহাজে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে আটদফা সুত্র সম্বলিত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি ''আটলান্টিক সনদ'' ('Atlantic charter' 1941 ) নামে পরিচিত।

Franklin D. Roosevelt and Winston Churchill aboard HMS Prince of Wales in 1941

এই সনদে যুদ্ধ নীতি পরিত্যাগ করে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সকল আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত হয়।

পৃথিবীর মোট ২৬টি দেশ এই আটলান্টিক সনদকে সমর্থন করেছিল।

বিষয়বস্তু এবং বিশ্লেষণ সম্পাদনা

আটলান্টিক সনদ স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যকে সমর্থন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয়ই তাদের পারস্পরিক নীতি ও যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদ এবং নাৎসিদের পরাজিত হওয়ার পরে তারা যে নীতিমালা অনুসরণ করতে রাজি হয়েছিল তাদের বিষয়ে ঐক্য উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। [২] একটি মৌলিক লক্ষ্য ছিল যে শান্তি অনুসরণ করা হবে এবং নির্দিষ্ট আমেরিকান জড়িত হওয়া এবং যুদ্ধের কৌশল নয়, তবে আমেরিকান জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়তি দেখা দিয়েছে। [৩]

সনদের আটটি মূল বিষয় হ'লঃ

(১) কোনো দেশ বা জাতি ভবিষ্যতে বিস্তার বা সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করবে না

(২) কোনো স্বনির্ভর জাতি তার জনগণের ইচ্ছা অনুসারে স্বাধীন সরকার গঠন করতে পারবে

(৩) প্রতিবেশী দেশের সম্মতি ছাড়া কোনো দেশের সীমারেখা চিহ্নিত করা যাবে না

(৪) বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সমান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থাকবে

(৫) নাত্সী ও ফ্যাসিস্ট শক্তির পতনের পর প্রতিটি দেশ নিজেদের উন্নতির জন্য দারিদ্র দূরীকরণ ও বিদেশি আক্রমণ মোকাবিলার জন্য কাজ করবে

(৬) প্রতিটি দেশ উন্নত জীবনযাত্রা ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে কাজ করবে

(৭) প্রতিটি দেশ সৈন্য, যুদ্ধজাহাজ, বিমান ও যুদ্ধের অন্যান্য উপকরণ কমাবে

(৮) সমুদ্রপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সুযোগ থাকবে

অংশগ্রহণকারীরা সম্পাদনা

  যুক্তরাজ্য
  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Langer and Gleason, chapter 21
  2. Stone, p. 5
  3. O'Sullivan and Welles

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা