আইসবার্গ তত্ত্ব

মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উদ্ভাবিত লেখার কৌশল

আইসবার্গ তত্ত্ব বা বাতিলের তত্ত্ব হল মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উদ্ভাবিত লেখনীর কৌশল। তরুণ সাংবাদিক হিসেবে হেমিংওয়েকে কোন ঘটনা ঘটার পরপরই সংবাদপত্রে প্রতিবেদন লিখতে হত, যেখানে খুবই অল্প বিষয় বা ব্যাখ্যা থাকত। যখন তিনি ছোটগল্প লেখা শুরু করেন, তিনি তার এই অল্প কথায় বর্ণনা অব্যাহত রাখেন। তিনি অন্য বিষয়গুলোর ব্যাখ্যায় না গিয়ে মূল বিষয়ে মনোযোগ দেন। হেমিংওয়ে বিশ্বাস করতেন যে একটি গল্পের গভীর অর্থ এর ঘটনার দালিলিক প্রমাণে নয়, বরং ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা প্রদানে নিহিত।

ফর হুম দ্য বেল টোলস-এর জন্য তোলা হেমিংওয়ের ছবি।

পটভূমি সম্পাদনা

মার্ক টোয়েইন, স্টিফেন ক্রেন, থিওডোর ড্রেইজার, সিনক্লেয়ার লুইসউইলা ক্যাথারের মত মার্কিন লেখকের মত হেমিংওয়ে ঔপন্যাসিক হওয়ার পূর্বে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি দ্য কানসাস সিটি স্টার-এ কাব প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন,[১] সেখানে তিনি জানতে পারেন যে সত্য প্রায়ই একটি গল্পের ঘটনাবলির অভ্যন্তরে লুকায়িত থাকে।[২] তিনি শহরের রাজনীতিতে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে, পুলিশ স্টেশনে দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে পারেন।[২] তার লেখনীতে তিনি পটভূমি বাদ দিয়ে এইসব প্রাসঙ্গিক বিষয়াবলি সম্পর্কে লিখতেন। টরন্টো স্টার-এর বিদেশি প্রতিবেদক হিসেবে ১৯২০-এর দশকের শুরুর দিকে প্যারিসে থাকাকালীন তিনি গ্রেকো-তুর্কি যুদ্ধের ডজনের অধিক প্রতিবেদন করেন। তার জীবনীকার জেফ্রি মেয়ার্স বর্ণনা করেন, "তিনি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শুধু তাৎক্ষণিক ঘটনাবলির প্রতিবেদন করতেন।"[৩] গ্রেকো-তুর্কি যুদ্ধ থেকে তিনি লেখনীর মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন যা তিনি তার কথাসাহিত্যের লেখনীতে রূপান্তর ঘটান। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কথাসাহিত্য বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে হতে পারে, কিন্তু যদি একটি অভিজ্ঞতাকে শোধন করা হয় তবে যা থাকে তার ব্যাখ্যা অনুসারে তা হল "যা স্মরণ করা হয়েছে তার থেকেও সত্য।"[৩]

প্রারম্ভিক কথাসাহিত্য ও ছোটগল্প সম্পাদনা

গুয়েন্ডোলিন টেটলো মনে করেন হেমিংওয়ের প্রারম্ভিক কথাসাহিত্যগুলোতে, যেমন "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প"-এ চরিত্র গঠনের তার মনোযোগ কম ছিল, বরং তিনি সাধাসিধেভাবে চরিত্রগুলোকে একে অপরের পাশে বসিয়েছেন। "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প"-এ বর্ণনামূলক খুঁটিনাটি তথ্য, যেমন চিৎকাররত নারী, ধূমপানরত পুরুষ, বা সংক্রামিত আঘাতের মাধ্যমে সত্যনিষ্ঠা প্রকাশ করেছেন।"[৪] অন্য কথায়, একটি গল্প এর উপ-তথ্য দিয়ে মূল তথ্য পরিবেশন করতে পারে, উদাহরণস্বরূপ - হেমিংওয়ের "হিলস লাইক হোয়াইট এলিফ্যান্টস" গল্পে 'গর্ভপাত' শব্দটির উল্লেখ নেই, কিন্তু গল্পে পুরুষ চরিত্রটি তার প্রেমিকাকে গর্ভপাত করতে বলছিলেন।[৫] "বিগ টু-হার্টেড রিভার" গল্প সম্পর্কে হেমিংওয়ে ব্যাখ্যা করেন, "একটি বালক সম্পর্কে ... যে যুদ্ধ থেকে ফিরছে ... ফলে যুদ্ধ সম্পর্কিত, যুদ্ধের বর্ণনা, যুদ্ধের যে কোন কিছুই, বাদ দেওয়া হয়েছে।"[৬] হেমিংওয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" ও "বিগ টু-হার্টেড রিভার" গল্পে কিছু বাদ দিয়েছেন, যা তিনি ভালো বলে গণ্য করেন।[৭]

উপন্যাস সম্পাদনা

বেনসন মনে করেন হেমিংওয়ে যে সকল তথ্য বাদ দেন তা তাকে চরিত্রের সৃষ্টিকারী ও চরিত্রের মধ্যে এক ধরনের বাফার হিসেবে কাজ করেছে। তিনি ব্যাখ্যা দেন যে লেখক যখন নিজের ও চরিত্রের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেন, তখন তিনি আরও বেশি কর্মে প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। বেনসন বলেন হেমিংওয়ের কথাসাহিত্যে এই দূরত্ব দরকারী এবং প্রারম্ভিক কথাসাহিত্য যেমন দ্য সান অলসো রাইজেস-এ তার সার্থক, কিন্তু তিনি যদি লেখক হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে এই দূরত্ব তৈরি করেন, তবে কথাসাহিত্যটি ব্যর্থ হবে, যেমনটা হয়েছে তার পরবর্তী কাজগুলোতে, তথা অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ-এ।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা