আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

সাহিত‍্যে নোবেল পুরষ্কার জয়ী মার্কিন সাহিত‍্যিক

আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে (২১ জুলাই ১৮৯৯ - ২ জুলাই ১৯৬১) একজন মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন। তার আইসবার্গ তত্ত্ব নামে পরিচিত নির্মেদ ও নিরাবেগী লেখনী বিংশ শতাব্দীর কথাসাহিত্যের ভাষাশৈলীতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে; অন্যদিকে তার রোমাঞ্চপ্রিয় জীবন ও ভাবমূর্তি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে প্রশংসিত করে তোলে। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তিনি তার অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন এবং ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি সাতটি উপন্যাস, ছয়টি ছোটগল্প সংকলন এবং দুইটি অকল্পিত সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে আরও তিনটি উপন্যাস, চারটি ছোটগল্প সংকলন এবং তিনটি অকল্পিত সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তার প্রকাশিত গ্রন্থের অনেকগুলোই মার্কিন সাহিত্যের ধ্রুপদী বা চিরায়ত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
হেমিংওয়ে, ১৯৩৯ সালে
হেমিংওয়ে, ১৯৩৯ সালে
স্থানীয় নাম
Ernest Hemingway
জন্মআর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে
(১৮৯৯-০৭-২১)২১ জুলাই ১৮৯৯
ওক পার্ক, ইলিনয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুজুলাই ২, ১৯৬১(1961-07-02) (বয়স ৬১)
কেচাম, আইডাহো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পেশালেখক, সাংবাদিক
জাতীয়তামার্কিন
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারকথাসাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার (১৯৫৩)
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯৫৪)
দাম্পত্যসঙ্গীহ্যাডলি রিচার্ডসন (বি. ১৯২১; বিচ্ছেদ. ১৯২৭)
পলিন ফাইফার (বি. ১৯২৭; বিচ্ছেদ. ১৯৪০)
মার্থা গেলহর্ন (বি. ১৯৪০; বিচ্ছেদ. ১৯৪৫)
ম্যারি ওয়েলশ হেমিংওয়ে (বি. ১৯৪৬; মৃ. ১৯৬১)
সন্তানজ্যাক হেমিংওয়ে (১৯২৩-২০০০)
প্যাট্রিক হেমিংওয়ে (১৯২৮–)
গ্রেগরি হেমিংওয়ে (১৯৩১-২০০১)

স্বাক্ষর

হেমিংওয়ে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ওক পার্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে বেড়ে ওঠেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি কয়েক মাস দ্য ক্যানসাস সিটি স্টার সংবাদপত্রে প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ইতালীয় রণাঙ্গনে গমন করেন। ১৯১৮ সালে তিনি মারাত্মক আঘাত পান এবং বাড়ি ফিরে আসেন। তার যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাই তার আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস (১৯২৯) উপন্যাসের অনুপ্রেরণা।

১৯২১ সালে তিনি হ্যাডলি রিচার্ডসনকে বিয়ে করেন এবং প্যারিস চলে যান। সেখানে তিনি বিদেশি প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন এবং "হারানো প্রজন্ম" নামে আধুনিক লেখক ও শিল্পীদের প্রবাসী সম্প্রদায় দ্বারা প্রভাবিত হন। তার প্রথম উপন্যাস দ্য সান অলসো রাইজেস ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে হ্যাডলির সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং তিনি সাংবাদিক পলিন ফাইফারকে বিয়ে করেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর ফাইফারের সাথেও তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হতে তিনি ফর হুম দ্য বেল টোলস (১৯৪০) উপন্যাস রচনা করেন। ১৯৪০ সালে তিনি মার্থা গেলহর্নকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনে ম্যারি ওয়েলশের সাথে তার সাক্ষাতের পর গেলহর্নের সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি নরম্যান্ডি অবতরণপ্যারিসের স্বাধীনতার সময় উপস্থিত ছিলেন।

দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী (১৯৫২) প্রকাশের কিছুদিন পর হেমিংওয়ে আফ্রিকায় সাফারি ভ্রমণে যান। সেখানে তিনি পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেলেও বাকি জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি শারীরিক পীড়া নিয়ে কাটান। তিনি ১৯৩০-এর দশকে ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টে এবং ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে কিউবায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি আইডাহোর কেচামে একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং সেখানে ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।

জীবনী সম্পাদনা

বাল্যকাল সম্পাদনা

 
শৈশবে হেমিংওয়ে

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৮৯৯ সালের ২১শে জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরের অন্তর্গত ওক পার্কে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা ক্লেরেন্স এডমন্ডস হেমিংওয়ে পেশায় একজন চিকিৎসক এবং তার মাতা গ্রেস হল হেমিংওয়ে একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। দুজনেই ওক পার্কের উচ্চ শিক্ষিত ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন,[২] এই সংরক্ষিত এলাকার বাসিন্দা ফ্র্যাংক লয়েড রাইট এলাকাটি সম্পর্কে বলেন, "ভদ্রলোকদের প্রার্থনার জন্য এখানে অনেকগুলো গির্জা রয়েছে।"[৩] ক্লেরেন্স ও গ্রেস হেমিংওয়ে তাদের বিয়ের পর কিছু সময় গ্রেসের পিতা আর্নেস্ট হলের বাড়িতে ছিলেন।[৪] হেমিংওয়ের নামকরণ করা হয় তার মাতামহের নামে। যদিও পরবর্তী কালে হেমিংওয়ে বলেন যে তিনি এই নাম পছন্দ করেননি। কারণ অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক দি ইমপোর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট-এর সাদাসিধে, বোকাসোকা ধরনের প্রধান চরিত্রের নাম ছিল আর্নেস্ট।[৫] হেমিংওয়ের অন্যান্য ভাইবোনেরা হলেন মার্শেলিন (জ. ১৮৯৮), উরসুলা (জ. ১৯০২), ম্যাডেলিন (জ. ১৯০৪), ক্যারল (জ. ১৯১১) ও লিস্টার (জ. ১৯১৫)।[২] তাদের পরিবার পরবর্তী কালে নিকটবর্তী একটি স্থানে সাত-কামরা বিশিষ্ট বাড়িতে চলে যান, সেখানে গ্রেসের জন্য একটি মিউজিক স্টুডিও ও ক্লেরেন্সের জন্য মেডিক্যাল অফিসের সুব্যবস্থা ছিল।[২]

হেমিংওয়ের মাতা প্রায়ই গ্রামে গ্রামে কনসার্ট করে বেড়াতেন। হেমিংওয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর তার মাকে ঘৃণা করেন বলে ঘোষণা দেন। যদিও হেমিংওয়ের জীবনীকার মিশেল এস. রেনল্ডস মনে করতেন হেমিংওয়ে তার মায়ের শক্তি ও সাহসিকতার স্বভাব পেয়েছিলেন।[৬] হেমিংওয়ে তার মায়ের পীড়াপীড়িতে চেলো বাজানো শিখতে শুরু করেন এবং কিছুদিন পর এই বাজানোকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে সংঘাত বাধে। যদিও পরবর্তীকালে হেমিংওয়ে স্বীকার করেছিলেন যে গান শেখার কারণেই তার ফর হুম দ্য বেল টোলস বইটি লেখা সহজসাধ্য হয়েছে।[৭] তার পরিবার মিশিগানের পেটস্কির নিকটবর্তী ওয়ালুন লেকে তাদের গ্রীষ্মকালীন আবাস উইন্ডমেয়ারে গ্রীষ্মকাল কাটাত। হেমিংওয়ের পিতা বালক হেমিংওয়েকে উত্তর মিশিগানের বনে ও হ্রদে শিকার, মাছ ধরা, ক্যাম্প করা শিখেছিলেন। তার বাল্যকালের এই সব অভিজ্ঞতাই ধীরে ধীরে তাকে রোমাঞ্চকর অভিযানে অণুরক্ত করে তুলেছিল এবং দূরবর্তী-জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাসে উদ্বুদ্ধ করেছিল।[৮]

 
হেমিংওয়ে পরিবার, (বাম থেকে) মার্শেলিন, সানি, ক্লেরেন্স, গ্রেস, উরসুলা ও আর্নেস্ট

১৯১৩ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত হেমিংওয়ে ওক পার্ক অ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি মুষ্টিযুদ্ধ, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, ওয়াটার পোলো ও ফুটবলসহ নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন,[৯] এবং তিনি ও তার বোন দুই বছর বিদ্যালয়ে ঐকতান-বাদকদলের হয়ে সঙ্গীত পরিবেশনা করেছেন।[৬] বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে সাংবাদিকতা বিষয়ে হেমিংওয়ের একটি পাঠ্য ছিল, যেখানে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ছিল সংবাদপত্র অফিসের মত। ভালো লেখকেরা স্কুলের দেয়াল পত্রিকা ট্রাপিজির জন্য লেখা জমা দিতেন। তিনি ও তার বোন মার্শেলিন লেখা জমা দিতেন। শিকাগো সিমফনি অর্কেস্ট্রার স্থানীয় একটি পরিবেশনা সম্পর্কিত হেমিংওয়ের প্রথম লেখা ১৯১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।[১০] তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকদের লেখা অনুকরণ করে শিকাগো ট্রিবিউনের রিং লার্ডনারের নামানুসারে রিং লার্ডনার জুনিয়র ছদ্মনামে ট্রাপিজিট্যাবুলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করতেন।[১১]

মার্ক টোয়েইন, স্টিভেন ক্রেন, থিওডোর ড্রাইজার, ও সিনক্লেয়ার লুইসদের মত হেমিংওয়ে উপন্যাস রচনা শুরুর পূর্বে সাংবাদিকতা করেন। উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়ার পর তিনি শিক্ষানবিশ সংবাদদাতা হিসেবে দ্য ক্যানসাস সিটি স্টার সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন।[১১] তিনি সেখানে মাত্র ছয় মাস কর্মরত ছিলেন, কিন্তু স্টারের লেখনীর নির্দেশনা: "ছোট বাক্যের ব্যবহার। ছোট প্রথম অনুচ্ছেদের ব্যবহার। তেজস্বী ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। নেতিবাচকতা বর্জন করে ইতিবাচকতার ব্যবহার।" তার লেখনীর মূলভিত্তি গড়ে দেয়।[১২]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

 
১৯১৮ সালে মিলান শহরে উর্দি পরিহিত হেমিংওয়ে। সেখানে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুই মাস অ্যাম্বুলেন্স চালান।

১৯১৮ সালের শুরুর দিকে হেমিংওয়ে ক্যানসাস সিটিতে রেডক্রসের নিয়োগ কার্যক্রমে সাড়া দেন এবং ইতালিতে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে নিয়োগ পান।[১৩] তিনি মে মাসে নিউ ইয়র্ক সিটি ছেড়ে যান এবং প্যারিস পৌছেঁ দেখেন শহরটি জার্মান গোলন্দাজ বাহিনী কর্তৃক বোমাবিধ্বস্ত।[১৪] জুনের মধ্যে তিনি ইতালীয় রণাঙ্গনেে পৌঁছে যান। এই সময়েই সম্ভবত তিনি প্রথম জন ডস প্যাসসের সাথে পরিচিত হন। তার সাথে হেমিংওয়ের দীর্ঘদিন গভীর সম্পর্ক ছিল।[১৫] মিলানে উপস্থিত হওয়ার প্রথম দিনই তাকে একটি যুদ্ধোপকরণ কারখানার বিস্ফোরনস্থলে পাঠানো হয়, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা নারী শ্রমিকদের লাশের টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধারের চেষ্টা করছিল। তিনি এই ঘটনার কথা তার ডেথ ইন দি আফটারনুন বইতে বর্ণনা করেন: 'আমার মনে আছে আমরা গোটা মৃতদেহ খুঁজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম মৃতদেহের টুকরো টুকরো অংশ'।[১৬]

৮ই জুলাই যুদ্ধ শিবিরের ক্যান্টিনে সিগারেট ও চকোলেট দিয়ে ফেরার সময় মর্টারের গুলিতে হেমিংওয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন।[১৬] আহত অবস্থাতেই নিজের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে তিনি ইতালীয় সৈনিকদের বহন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে চলেন। তার এই বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পরবর্তীকালে তাকে সাহসিকতার জন্য ইতালীয় রৌপ্য পদক প্রদান করা হয়।[১৭] তখন মাত্র ১৮ বছর বয়সী হেমিংওয়ে তার দুর্ঘটনার ব্যাপারে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন, "যখন বালক হিসেবে যুদ্ধে যাও তখন অমরত্ব লাভের জন্য একটা মোহ কাজ করে। অন্য যোদ্ধারা মারা যাবে, তুমি মরবে না... এমন মনোভাব থাকে। কিন্তু যখনি প্রথম বারের মত মারাত্মভাবে আহত হবে তখনই সেই মোহ কেটে যাবে এবং ভাবতে শুরু করবে, আমিও মরে যেতে পারি।[১৮] দুর্ঘটনায়ে তার দুই পায়ে মর্টারের টুকরোগুলো ঢুকে যায়। জরুরি একটি অপারেশনের পর তাকে একটি ফিল্ড হাসপাতালে পাঁচ দিন কাটাতে হয়। তারপর তাকে মিলানের রেড ক্রসের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।[১৯] এই হাসপাতালে তিনি ছয়মাস কাটান এবং সেখানেই "চিঙ্ক" ডরম্যান-স্মিথের সাথে তার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়। এই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়েছিল প্রায় এক দশকের মত। এছাড়া তিনি পরবর্তীতে মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তা, দূত ও লেখক হেনরি সেরানো ভিলার্ডের সাথে এক কক্ষে ছিলেন।[২০]

রেডক্রসে থাকাকালীন তিনি অ্যাগনেস ভন কুরভ্‌স্কির প্রেমে পড়েন, যিনি রেডক্রসের একজন নার্স ছিলেন এবং বয়সে ছিলেন হেমিংওয়ের চেয়ে ৭ বছরের বড়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে হেমিংওয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। তারা কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্চে আগনেস হেমিংওয়েকে চিঠি লিখে জানালেন, তিনি একজন ইতালীয় অফিসারকে বিয়ে করে ফেলেছেন। জীবনীকার জেফ্রি মেয়ার হেমিংওয়ে: আ বায়োগ্রাফি বইয়ে লিখেন হেমিংওয়ে এই ঘটনায়ে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তী কালে তার স্ত্রীরা তাকে পরিত্যাগ করার পূর্বেই তিনি তাদের পরিত্যাগ করতেন।[২১]

টরেন্টো ও শিকাগো সম্পাদনা

১৯১৯ সালের শুরুর দিকে হেমিংওয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ২০ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই তিনি যুদ্ধ থেকে পরিপক্বতা অর্জন করে ফিরেন। তিনি বুঝতে পারেন চাকরি ছাড়া ঘরে বসে থাকা খারাপ দেখাচ্ছে এবং তার এই অবসাদ থেকে বের হয়ে আসা উচিত।[২২] রেনল্ডস বলেন, "হেমিংওয়ে তার পিতামাতাকে বলতে পারছিল না তিনি তার হাঁটু দেখার পর কি ভাবছিলেন।" তিনি তাদের বলতে পারছিলেন না যে তিনি ভিন্ন এক দেশে কতটা ভীত ছিলেন, যেখানে চিকিৎসকেরা তাকে ইংরেজি ভাষায় বলতে পারতো না যে তার পা আদৌ ভালো হবে কিনা।[২৩]

সেপ্টেম্বরে তিনি তার হাই স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে মিশিগানের উর্ধ্বস্থ উপদ্বীপে মাছ ধরা ও ক্যাম্পিং সফরে যান।[১৮] এই প্রমোদ সফর তার বিগ টু-হার্টেড রিভার ছোটগল্পের অনুপ্রেরণা ছিল। অর্ধ-আত্মজীবনীমূলক এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নিক অ্যাডামস যুদ্ধ থেকে ফিরে স্বস্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়াতে যায়।[২৪] তার এক পারিবারিক বন্ধু তাকে অন্টারিওর টরন্টোতে একটি চাকরির প্রস্তাব দেন। কোন কাজ না পেয়ে তিনি এই চাকরি করতে রাজি হন। পরে তিনি টরন্টো স্টার পত্রিকাতে একাধারে ফ্রিল্যান্সার ও স্টাফ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই সময়ে তার পরিচয় হয় একই পত্রিকার সাংবাদিক কানাডার এক সাহিত্য বিস্ময় মর্লে কালাঘানের সাথে। তিনি হেমিংওয়ের লেখনীর প্রশংসা করেন এবং তার নিজের কিছু লেখা তাকে দেখান। হেমিংওয়েও সেগুলোর প্রশংসা করেন। পরের বছর জুন মাসে তিনি মিশিগানে ফিরে আসেন[২২] এবং ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তার বন্ধুদের সাথে থাকার উদ্দেশ্যে শিকাগো যান, কিন্তু তখনো তিনি টরন্টো স্টারের জন্য গল্প লেখছিলেন।[২৫] শিকাগোতে তিনি মাসিক সাময়িকী কোঅপারেটিভ কমনওয়েলথ-এর সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে ঔপন্যাসিক শেরউড অ্যান্ডারসনের সাথে তার পরিচয় হয়।[২৫]

হেমিংওয়ের রুমমেটের বোন হ্যাডলি রিচার্ডসন শিকাগোতে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসলে হেমিংওয়ের সাথে তার পরিচয় হয়। হেমিংওয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে বলেন, "আমি জানতাম এই নারীকেই আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি।"[২৬] রিচার্ডসন হেমিংওয়ের চেয়ে আট বছরের বড় ছিলেন।[২৬] বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও মায়ের অতি-আশ্রয়ে পালিত হ্যাডলি তার বয়সী নারীর তুলনায় কম পরিপক্ব ছিলেন।[২৭] দ্য হেমিংওয়ে উইমেন বইয়ের লেখক বার্নিস কার্ট লিখেন হ্যাডলি আগনেসের মত ছিলেন, কিন্তু হ্যাডলির মধ্যে বাচ্ছাসুলভ ভাব ছিল, যা আগনেসের মধ্যে ছিল না। তারা দুজন কয়েক মাস পত্র আদান-প্রদান করেন এবং বিয়ে করে ইউরোপ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।[২৬] তারা রোমে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেরউড অ্যান্ডারসনের পরামর্শে তারা প্যারিস ভ্রমণে যান।[২৮] ১৯২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর হেমিংওয়ে হ্যাডলি রিচার্ডসনকে বিয়ে করেন। দুই মাস পর হেমিংওয়ে টরন্টো স্টারের বিদেশি প্রতিবেদক হিসেবে চাকরি পান এবং তারা টরন্টো ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমান।[২৯] হ্যাডলির সাথে হেমিংওয়ে বিবাহ সম্পর্কে মেয়ার্স বলেন, "হ্যাডলির সাথে হেমিংওয়ে আগনেসের সাথে যা চেয়েছিলেন তাই পেয়েছেন: একজন সুন্দরী নারীর ভালোবাসা, আরামদায়ক জীবনযাপন করার মত আয়, ইউরোপে জীবন।"[৩০]

প্যারিস সম্পাদনা

 
১৯২৩ সালে হেমিংওয়ের পাসপোর্টের ছবি।

হেমিংওয়ের প্রথম জীবনীকার কার্লোস বেকার মনে করেন অ্যান্ডারসন তাকে প্যারিস যাওয়ার সুপারিশ করেন কারণ সেখানকার অর্থের বিনিময় হার কম হওয়ায় তা বসবাসের জন্য সস্তা ছিল। অন্যদিকে, এখানে সেই সময়ের সবচেয়ে কৌতুহলী মানুষেরা বাস করত। প্যারিসে হেমিংওয়ে মার্কিন লেখিকা ও শিল্পকলা সংগ্রাহক গারট্রুড স্টেইন, আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েস ও মার্কিন কবি এজরা পাউন্ড ও অন্যান্য লেখকদের সাথে পরিচিত হন।[২৮]

প্যারিসে শুরুর বছরগুলোতে হেমিংওয়ে ছিলেন "লম্বা, সুদর্শন, বলিষ্ঠ, চওড়া কাঁধ, বাদামী চোখ, গোলাপী গাল, বর্গাকৃতির চোয়াল, সুমিষ্ট কণ্ঠের যুবক।"[৩১] তিনি ও হ্যাডলি লাতিন কোয়ার্টারের ৭৪ রু দ্যু কার্দিনাল ল্যমোইনে বাস করতেন এবং নিকটবর্তী একটি ভবনের ভাড়া করা কক্ষে কাজ করতেন।[২৮] প্যারিসে গারট্রুড স্টেইন ছিলেন আধুনিকতার রক্ষক ও তিনি হেমিংওয়েকে প্যারিসের গণজাগরণের সাথে একাত্ম করে তোলেন।[৩২] এছাড়া তিনি হেমিংওয়ের গুরু হয়ে ওঠেন ও তার সন্তান জ্যাকের ধর্মমাতা হন।[২৮] স্টেইন মোঁপারনাস কোয়ার্টারে তাকে বিভিন্ন প্রবাসী শিল্পী ও লেখকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যাদের স্টেইন "বিগত প্রজন্ম" বলে অভিহিত করতেন এবং হেমিংওয়ে তার দ্য সান অলসো রাইজেস বই প্রকাশের পর এই শব্দগুচ্ছ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৩৩] স্টেইনের সালুনে তিনি পাবলো পিকাসো, জোয়ান মিরোহুয়ান গ্রিসদের মত প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীদের সাথে পরিচিত হন।[৩৪] ধীরে ধীরে তিনি স্টেইনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে তা সাহিত্যিক ঝগড়ায় পরিণত হয় এবং দশকব্যাপী চলতে থাকে।[৩৫]

১৯২২ সালে সিলভিয়া বিচের বইয়ের দোকান শেকসপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানিতে মার্কিন কবি এজরা পাউন্ডের সাথে হেমিংওয়ের সাক্ষাৎ হয়। ১৯২৩ সালে তারা ইতালি ভ্রমণে যান এবং ১৯২৪ সাল পর্যন্ত একই মহল্লায় বাস করতেন।[৩১] তাদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পাউন্ড হেমিংওয়ের মধ্যে তারুণ্যের প্রতিভা খুঁজে পান এবং তাকে উৎসাহ প্রদান করতেন।[৩৪] হেমিংওয়ে পাউন্ডের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যিনি তরুণ হেমিংওয়েকে মইয়ের ধাপে উপরে উঠায় সাহায্য করেন।[২৮] পাউন্ড তাকে আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।[৩৬] ১৯২২ সালে জয়েসের ইউলিসিস প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়। হেমিংওয়ে তার টরন্টোর বন্ধুদের সাহায্যে গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত বইটির কপিগুলো পাচার করতেন।[৩৭]

প্যারিসে অবস্থানের ২০ মাসে হেমিংওয়ে টরন্টো স্টার পত্রিকার জন্য ৮৮টি গল্প রচনা করেন।[৩৮] তিনি গ্রেকো-তুরস্ক যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেন, সেখানে তিনি স্মার্নার অগ্নিকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন। তিনি টুনা ফিশিং ইন স্পেনট্রাউট ফিশিং অল অ্যাক্রস ইউরোপ: স্পেন হ্যাজ দ্য বেস্ট, দেন জার্মানি নামে দুটি ভ্রমণকাহিনী লিখেন।[৩৯] ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে হ্যাডলি জেনেভায় তার সাথে দেখা করতে আসার পথে গার দ্য লিওঁর নিকটে তার পাণ্ডুলিপিসহ একটি সুটকেস হারিয়ে ফেলেছেন এমন খবরে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।[৪০] ১৯২৩ সালে প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই থ্রি স্টোরিজ অ্যান্ড টেন পোয়েমস, প্রকাশক ছিলেন রবার্ট ম্যাকেলমন। হারিয়ে যাওয়া সুটকেসের পাণ্ডুলিপিতে থাকা দুটি গল্প এই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তৃতীয় একটি গল্প তিনি আগের বছর ইতালিতে থাকাকালীন লিখেছিলেন। এক মাসের মধ্যে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। ছোট এই খণ্ডে ছয়টি ভিগনেত্তে ও এক ডজন গল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা তিনি আগের গ্রীষ্মে স্পেনে প্রথমবার ভ্রমণকালে লিখেছিলেন। এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তারা দুজন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টরন্টোতে ফিরে আসেন। সেখানে ১৯২৩ সালের ১০ই অক্টোবর তাদের প্রথম পুত্র জন হ্যাডলি জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের পিছনে সময় দেয়ার জন্যে একপর্যায়ে তিনি পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি প্যারিস শহরের মায়ায় পড়ে যান। টরন্টো শহর তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তিনি সাংবাদিকের জীবনে থাকার চেয়ে লেখকের জীবনে ফিরে যেতে চান।[৪১]

 
১৯২৬ সালে অস্ট্রিয়ার শ্রুন্সে হেমিংওয়ে, হ্যাডলি, ও তাদের পুত্র জ্যাক (বাম্বি)

হেমিংওয়ে ও হ্যাডলি তাদের পুত্র জ্যাককে (ডাকনাম বাম্বি) নিয়ে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারিসে ফিরে আসেন। তারা র‍্যু নত্র্‌-দ্যম দে শাম্পে একটি নতুন অ্যাপার্টমেন্টে চলে যায়।[৪১] হেমিংওয়ে ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ডকে দ্য ট্রান্সআটলান্টিক রিভিউ সম্পাদনায় সাহায্য করতেন। এতে পাউন্ড, জন ডস প্যাসস, বারোনেস এলসা ফন ফ্রাইটাগ-লরিংহোফেন ও গারট্রুড স্টেইনের লেখা প্রকাশিত হত, এবং মাঝে মাঝে ইন্ডিয়ান ক্যাম্প এর মতো হেমিংওয়ের নিজের লেখা ছোটগল্পগুলোও প্রকাশিত হত।[৪২] ১৯২৫ সালে ইন আওয়ার টাইম প্রকাশিত হওয়ার পর ফোর্ডের মন্তব্যে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল।[৪৩][৪৪] বিগ টু-হার্টেড রিভার-কে এই সংকলনের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইন্ডিয়ান ক্যাম্প বইটিও বেশ প্রশংসা অর্জন করে। ফোর্ড বইটিকে একজন তরুণ লেখকের গুরুত্বপূর্ণ গল্প হিসেবে বিবেচনা করেন[৪৫] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচকেরা মজাদার ধরন ও বর্ণনামূলক বাক্যের ব্যবহারের মাধ্যমে ছোটগল্পকে পুনর্জাগ্রত করার জন্য হেমিংওয়ের প্রশংসা করেন।[৪৬] ছয় মাস পূর্বে প্যারিসের ডিঙ্গো বারে এফ. স্কট ফিট্‌জেরাল্ডের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। ফিট্‌জেরাল্ড আর হেমিংওয়ে শুরুতে ভাল বন্ধু ছিলেন। তারা একে অপরের পাণ্ডুলিপি বিনিময়ও করতেন। তাছাড়া লেখক হিসেবে হেমিংওয়েও নানা ভাবে তার কাছে ঋণী। তার লেখা প্রথম বইটি প্রকাশে সাহায্য করেছিলেন ফিট্‌জেরাল্ড। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সম্পর্কে শীতলতা তৈরি হয়।[ক][৪৭] যাই হোক, এই বছর ফিট্‌জেরাল্ডের দ্য গ্রেট গেটসবি উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। হেমিংওয়ের বইটি পড়ে পছন্দ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তার পরবর্তী কাজ হবে একটি উপন্যাস।[৪৮]

মোঁপারনাসে অবস্থানকালে তিনি টানা ৮ সপ্তাহ ধরে লিখে শেষ করেন তার প্রথম উপন্যাস দ্য সান অলসো রাইজেস (১৯২৬)।[৪৯] এক মাস পরে ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে হেমিংওয়ে অস্ট্রিয়ার শ্রুন্সে শীত কাটাতে যান। সেখানে হেমিংওয়ে পাণ্ডুলিপিতে ব্যাপক সংশোধনী আনেন। পলিন ফাইফার জানুয়ারি মাসে তাদের সাথে যোগ দেন এবং হ্যাডলি পরামর্শের বাইরে গিয়ে তিনি হেমিংওয়েকে চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পীড়াপীড়ি করেন। তিনি এই প্রকাশকের সাথে সাক্ষাতের জন্য অস্ট্রিয়া থেকে এক ঝটিকা সফরে নিউ ইয়র্কে যান এবং ফেরার পথে প্যারিসে অবস্থানকালে তিনি ফাইফারের সাথে সম্পর্কে জড়ান। শ্রুনে ফিরে আসে তিনি মার্চের মধ্যে তার পুনর্পাঠ ও সংশোধনী সমাপ্ত করেন।[৫০] এপ্রিলে তিনি পাণ্ডুলিপিটি নিউ ইয়র্কে পাঠান; ১৯২৬ সালের আগস্টে প্যারিসে তিনি চূড়ান্ত মুদ্রণ সংশোধন করেন এবং অক্টোবর মাসে স্ক্রিবনার্স থেকে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।[৪৯][৫১][৫২]

দ্য সান অলসো রাইজেস যুদ্ধ-পরবর্তী প্রবাসী প্রজন্মকে নিয়ে রচিত একটি সংক্ষিপ্তসার।[৫৩] বইটি ভালো পর্যালোচনা অর্জন করে এবং একে "হেমিংওয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম" বলে গণ্য করা হয়।[৫৪] হেমিংওয়ে নিজে পরবর্তীকালে তার সম্পাদক ম্যাক্স পারকিন্সকে লিখেন যে "বইয়ের মূল বিষয়বস্তু" এমন নয় যে একটি প্রজন্ম হারিয়ে গেছে; কিন্তু "পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে"। তিনি মনে করতেন দ্য সান অলসো রাইজেস-এর চরিত্রাবলি বার বার প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে, কিন্তু হারিয়ে যায়নি।[৫৫]

 
১৯২৭ সালে প্যারিসে আর্নেস্ট ও পলিন হেমিংওয়ে।

দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসটি রচনাকালে হ্যাডলির সাথে হেমিংওয়ের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।[৫২] ১৯২৬ সালের শুরুতে হ্যাডলি ফাইফারের সাথে হেমিংওয়ের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। ফাইফার জুলাই মাসে তাদের সাথে পাম্পলোনা থেকে আসেন।[৫৬][৫৭] প্যারিস ফিরে যাওয়ার কালে হ্যাডলি আলাদা হয়ে যেতে চান। নভেম্বর মাসে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তালাকের আবেদন করেন। তারা আলাদা হয়ে গেলেও হ্যাডলি হেমিংওয়ের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী দ্য সান অলসো রাইজেস-এর বিক্রিয়লব্ধ অর্থ গ্রহণ করেন।[৫৮] ১৯২৭ সালে হেমিংওয়ে হ্যাডলি রিচার্ডসনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পলিন ফাইফারকে বিয়ে করেন।[৫৯] ফাইফার ছিলেন আর্কানসাসের ধনাঢ্য একনিষ্ঠ রোমান ক্যাথলিক। তিনি ভোগ সাময়িকীতে কাজের উদ্দেশ্যে প্যারিস গিয়েছিলেন। বিয়ের পূর্বে হেমিংওয়ে ক্যাথলিক বাদে দীক্ষিত হন।[৬০] তারা ল্য গ্রো-দ্যু-রোয়াতে মধুচন্দ্রিমায় যান, সেখানে তিনি অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন। সেখানেই তিনি তার পরবর্তী ছোটগল্প সংকলনের পরিকল্পনা করেন।[৬১] ঐ বছরের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় তার ছোট গল্পের সংকলন মেন উইদাউট উইমেন[৬২] এই সংকলনের দ্য কিলার্স গল্পটি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সাড়াজাগানো একটি রচনা এবং এতে তার মুষ্টিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প ফিফটি গ্র্যান্ড অন্তর্ভুক্ত ছিল। কসমোপলিটান সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক রে লং ফিফটি গ্র্যান্ড-এর প্রশংসা করে লিখেন, "আমার হাতে আসা অন্যতম সেরা ছোটগল্প... আমার পড়া সেরা মুষ্টিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প... বাস্তবতাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ খণ্ড।"[৬৩]

কি ওয়েস্ট ও ক্যারিবিয়ান সম্পাদনা

১৯২৭ সালের শেষের দিকে অন্তঃসত্ত্বা পলিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে যান। জন ডস প্যাসস তাদের ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা ১৯২৮ সালের মার্চে প্যারিস ত্যাগ করেন। প্যারিস ছাড়ার পর হেমিংওয়ে আর কখনো বড় শহরে থাকেন নি।[৬৪] হেমিংওয়ে ও পলিন ক্যানসাস সিটিতে যান। সেখানে ১৯২৮ সালের ২৮শে জুন হেমিংওয়ের দ্বিতীয় সন্তান প্যাট্রিক জন্ম নেয়। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে অনেক জটিলতার পর তার জন্ম হয়। হেমিংওয়ে তার আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস উপন্যাসে সেই দৃশ্যের অবতারণা করেছেন। উপন্যাসের পটভূমি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। একজন আমেরিকান সেনা ও একজন ব্রিটিশ নার্সের প্রেম এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য কাহিনী। এটিকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে তার আত্মজীবনীই বলা যেতে পারে। ব্রিটিশ নার্সের চরিত্রের মাঝে তার প্রথম প্রেমিকা জেনা কুরোভ্‌স্কির ছাপ পাওয়া যায়। আর মার্কিন সেনার চরিত্রটি যেন তিনি নিজেই।

 
১৯৩৫ সালে বিমিনিতে আর্নেস্ট, পলিন, বাম্বি, প্যাট্রিক ও গ্রেগরি হেমিংওয়ে মার্লিন মাছের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

তার তৃতীয় সন্তান গ্রেগরি হ্যানকক হেমিংওয়ে ১৯৩১ সালের ১২ই নভেম্বর ক্যানসাস সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন।[৬৫] পলিনের চাচা কি ওয়েস্টে তাদের একটি বাড়ি কিনে দেন। বাড়িটির তৃতীয় তলা লেখার দপ্তরে রূপান্তর করা হয়।[৬৬] কি ওয়েস্টে থাকাকালীন হেমিংওয়ে প্রায়ই স্থানীয় বার স্লপি জোসে যেতেন।[৬৭] তিনি তার বন্ধু ওয়াল্ডো পিয়ার্স, ডস প্যাসস ও ম্যাক্স পারকিন্সদের তার সাথে মাছ ধরতে যাওয়া ও ড্রাই টর্টুগাসে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানাতেন।[৬৮] এরই মধ্যে তিনি ইউরোপ ও কিউবায় ভ্রমণ করতে থাকেন। যদিও ১৯৩৩ সালে তিনি কি ওয়েস্ট সম্পর্কে লিখেন, "এখানে আমাদের একটি সুন্দর বাড়ি রয়েছে, এবং বাচ্চারা সকলেই ভালো আছে"; তবুও মেলো মনে করেন তিনি খুবই অস্থিরমনা ছিলেন।[৬৯]

১৯৩৩ সালে হেমিংওয়ে ও পলিন পূর্ব আফ্রিকায় সাফারিতে যান। ১০ সপ্তাহের এই ভ্রমণে তিনি গ্রিন হিলস অব আফ্রিকা এবং দ্য স্নোস অব কিলিমাঞ্জারোদ্য শর্ট হ্যাপি লাইফ অব ফ্রান্সিস ম্যাকম্বার ছোটগল্প দুটি রচনার রসদ পান।[৭০] তারা দুজন কেনিয়ায় মম্বাসা, নাইরোবি, ও মাকাকোস ভ্রমণ করেন। পরে তারা তাঞ্জানিকা অঞ্চলে যান, সেখানে তারা সেরেঙ্গেটি, মানিয়ারা হৃদ ও বর্তমানকালের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব টারাঞ্জাইয়ার জাতীয় উদ্যানে শিকার করেছিলেন। তাদের গাইড ছিলেন বিখ্যাত "শ্বেতাঙ্গ শিকারী" ফিলিপ পার্সিভাল, যিনি থিওডোর রুজভেল্ট যখন ১৯০৯ সালে সাফারিতে আসেন তখন তার গাইড ছিলেন। এই ভ্রমণকালে হেমিংওয়ের রক্তামশয় হয়, যার ফলে তার অন্ত্রের স্থানচ্যুতি ঘটে। তিনি দ্রুত বিমানে করে নাইরোবি ফিরে আসেন। দ্য স্নোস অব কিলিমাঞ্জারো বইতে এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। ১৯৩৪ সালের শুরুর দিকে কি ওয়েস্টে ফিরে এসে হেমিংওয়ে গ্রিন হিলস অব আফ্রিকা বই লেখার কাজ শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে বইটি প্রকাশের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্জন করে।[৭১]

হেমিংওয়ে ১৯৩৪ সালে একটি নৌকা ক্রয় করেন। পিলার নামে এই নৌকা নিয়ে তিনি ক্যারিবিয়ান দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।[৭২] ১৯৩৫ সালে তিনি বিমিনিতে পৌঁছান। সেখানে তিনি অনেকটা সময় কাটান।[৭০] এই সময়ে তিনি টু হ্যাভ অর হ্যাভ নট বইয়ের রচনা শুরু করেন। বইটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়, তখন তিনি স্পেনে ছিলেন। এটি ১৯৩০-এর দশকে রচিত একমাত্র বই।[৭৩]

স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ ও কিউবা সম্পাদনা

 
স্পেনের গৃহযুদ্ধকালীন ওলন্দাজ চলচ্চিত্র নির্মাতা ইয়োরিস আইভেন্স ও জার্মান লেখক লুডভিগ রেনের সাথে হেমিংওয়ে (মধ্যে), ১৯৩৭।

১৯৩৭ সালে হেমিংওয়ে উত্তর আমেরিকার সংবাদপত্রের ঐক্যজোটের (এনএএনএ) জন্য স্পেনের গৃহযুদ্ধের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সম্মত হন।[৭৪] তিনি মার্চ মাসে ওলন্দাজ চলচ্চিত্র নির্মাতা ইয়োরিস আইভেন্সের সাথে স্পেনে পৌঁছান।[৭৫] আইভেন্স রিপাবলিকানদের পক্ষে দ্য স্পেনিশ আর্থ নামে একটি প্রচারণামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন। আইভেন্স হেমিংওয়েকে ডস প্যাসসের স্থলে চিত্রনাট্যকারের ভূমিকা পালন করার প্রস্তাব দেন। কারণ ডস প্যাসসের বন্ধু হোসে রোবলসকে গ্রেফতার করার পর হত্যা করা হলে তিনি এই চলচ্চিত্রে কাজ ছেড়ে যান।[৭৬] এই ঘটনা বামপন্থী রিপাবলিকানদের প্রতি ডস প্যাসসের প্রারম্ভিক ইতিবাচক মতামত পাল্টে দেয়। ফলে তার ও হেমিংওয়ের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং হেমিংওয়ে পরে গুজব ছড়ান ডস প্যাসস ভীরুতার জন্য স্পেন ছেড়ে গেছেন।[৭৭]

সাংবাদিক ও লেখক মার্থা গেলহর্ন স্পেনে হেমিংওয়ের সাথে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালের বড়দিনে কি ওয়েস্টে গেলহর্নের সাথে হেমিংওয়ের পরিচয় হয়েছিল। হ্যাডলির মত গেলহর্নও সেন্ট লুইসের বাসিন্দা ছিলেন এবং পলিনের মত তিনিও প্যারিসে ভোগ সাময়িকীতে কাজ করতেন।[৭৮] ১৯৩৭ সালের শেষের দিকে মার্থার সাথে মাদ্রিদে থাকাকালীন হেমিংওয়ে তার একমাত্র নাটক দ্য ফিফথ কলাম রচনা করেন।[৭৯] তিনি কয়েক মাসের জন্য কি ওয়েস্টে ফিরে যান এবং ১৯৩৮ সালে দুইবার স্পেনে ফিরে আসেন। তিনি এব্রোর যুদ্ধ ও সর্বশেষ রিপাবলিকান স্ট্যান্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সবশেষে ফিরে আসা কয়েকজন ব্রিটিশ ও মার্কিন সাংবাদিকদের মধ্যে একজন।[৮০][৮১]

 
চীনের চুংকিংয়ে জেনারেল ইউ হানমোয়ের সাথে হেমিংওয়ে ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মার্থা গেলহর্ন, ১৯৪১।

১৯৩৯ সালের বসন্তকালে হেমিংওয়ে তার বোটে করে কিউবার রাজধানী হাভানার হোটেল আম্বোস মুন্দোসে থাকতে যান। মার্থা গেলহর্নের সাথে পরিচয় পরবর্তী এই সময়ে তিনি পলিন ফাইফারের থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যেতে থাকেন।[৮২] মার্থা অল্প কিছুদিন পর কিউবায় তার সাথে যোগ দেন এবং তারা হাভানা থেকে ১৫ মাইল দূরে ১৫ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত "ফিন্সা ভিজা" ভাড়া নেন। এই বছর গ্রীষ্মে উইয়োমিংয়ে ভ্রমণকালে তিনি তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং হেমিংওয়ে ও পলিনের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হলে পলিন ও তার সন্তানেরা হেমিংওয়েকে ছেড়ে চলে যায়। তিনি ১৯৪০ সালের ২০শে নভেম্বর উইয়োমিংয়ের চেয়েনে মার্থার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[৮৩]

গেলহর্ন তাকে তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ফর হুম দ্য বেল টোলস লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। ১৯৩৯ সালে মার্চে তিনি এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন এবং ১৯৪০ সালের জুলাই মাসে লেখা সমাপ্ত হয়। বইটি ১৯৪০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়।[৮৪] তিনি কোন পাণ্ডুলিপি লেখা শুরু করলে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করতেন এবং এই ধারাবাহিকতায় ফর হুম দ্য বেল টোলস বইটিও তিনি কিউবা, ওয়াইয়োমিং, ও সান ভ্যালিতে অবস্থানকালীন রচনা করেন।[৮২] ফর হুম দ্য বেল টোলস মাসের সেরা বই ক্লাবে তালিকাভুক্ত হয় এবং এক মাসের মধ্যেই বইটির ৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়। বইটি পুলিৎজার পুরস্কারে মনোনীত হয়। মেয়ার্স এই সফলতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেন, "সাফল্যের সাথে হেমিংওয়ে তাঁর সাহিত্যিক খ্যাতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।"[৮৫]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

 
১৯৪৪ সালে জার্মানি হুর্টগেনের যুদ্ধকালীন ল্যানহামের সাথে হেমিংওয়ে।

১৯৪৪ সালের মার্চ থেকে ১৯৪৫ সালের মে পর্যন্ত হেমিংওয়ে লন্ডনইউরোপে ছিলেন। হেমিংওয়ে যখন প্রথম লন্ডনে পৌঁছান, তিনি টাইম সাময়িকীর করেসপন্ডেন্ট ম্যারি ওয়েলশের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তার প্রতি আকৃষ্ট হন। হেমিংওয়ে মার্থাকে বিমানে প্রেস পাস না দেওয়ায় মার্থা বিস্ফোরক ভর্তি এক জাহাজে করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেন। তিনি লন্ডনে এসে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হেমিংওয়েকে হাসপাতালে খুঁজে বের করেন। তার এই অবস্থায় সহানুভূতিশীল না হয়ে বরং মার্থা তার বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন।[৮৬] হেমিংওয়ে শেষবারের মত মার্থার সাথে সাক্ষাৎ করেন ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে যখন তিনি কিউবা ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।[৮৭] এই বছরের শেষের দিকে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়। ইতোমধ্যে, তিনি ম্যারি ওয়েলশকে তাদের তৃতীয় সাক্ষাতেই বিয়ের প্রস্তাব দেন।[৮৬]

জুলাই মাসের শেষের দিকে তিনি কর্নেল চার্লস বাক ল্যানহামের অধীনস্থ ২২তম পদাতিক রেজিমেন্টে যোগ দেন। তিনি প্যারিসের বাইরে রামবুয়েতে একটি ছোট গ্রাম্য মিলিশিয়া ব্যান্ডের অনানুষ্ঠানিক নেতার দায়িত্ব পালন করেন।[৮৮] হেমিংওয়ের বীরত্ব সম্পর্কে ইতিহাসবেত্তা ও দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাহিত্যের সমালোচক পল ফুসেল লিখেন, "হেমিংওয়ে তার জড়ো করা রেজিস্টেন্স দলের পদাতিক বাহিনীর ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালনকালে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, কারণ একজন করেসপন্ডেন্টের সৈন্যদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা নয়, তবুও তিনি তা সুষ্ঠুভাবে পালন করেন।"[১৮] এমনকি তা জেনেভা চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল ছিল। হেমিংওয়ের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও আনা হয়েছিল। তিনি বলেন তিনি শুধুমাত্র উপদেশ প্রদান করতেন।[৮৯]

২৫শে আগস্ট প্যারিসের স্বাধীনতা অর্জনকালে তিনি উপস্থিত ছিলেন; যদিও মতবিরোধ রয়েছে যে তিনি প্রথমে এই শহরেই ছিলেন না।[৯০] প্যারিসে তিনি ম্যারি ওয়েলশকে নিয়ে সিলভিয়া বিচ ও পাবলো পিকাসোর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং অত্যধিক খুশিতে থাকার কারণে তিনি গারট্রুড স্টেইনকে ক্ষমা করে দেন।[৯১] এই বছরের শেষের দিকে তিনি হুর্টগেন বনের যুদ্ধে মারাত্মক সংঘর্ষ সংগঠিত হওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন।[৯০] ১৯৪৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর জ্বরাক্রান্ত ও অসুস্ত হেমিংওয়ে বালজের যুদ্ধের সংবাদ আহরণের লক্ষ্যে লুক্সেমবুর্গ পর্যন্ত নিজেই গাড়ি চালিয়ে যান। সেখানে পৌঁছা মাত্রই ল্যানহাম তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হেমিংওয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এক সপ্তাহ পরে তিনি আরোগ্য হলে ততোদিনে এই যুদ্ধের অধিকাংশই সমাপ্ত হয়ে যায়।[৮৯] হেমিংওয়ে ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ব্রোঞ্জ স্টার পদকে ভূষিত হন।[১৮]

কিউবা ও নোবেল পুরস্কার সম্পাদনা

 
দুটি দুর্ঘটনার পূর্বে আফ্রিকায় ম্যারি ও হেমিংওয়ে।

হেমিংওয়ে বলেন তিনি ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কিউবায় তার বাড়িতে অবস্থানকালে লেখক হিসেবে তার কাজের বাইরে ছিলেন।[৯২] ১৯৪৬ সালে তিনি ম্যারিকে বিয়ে করেন। পাঁচ মাস পর ম্যারি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরের বছর হেমিংওয়ে পরিবার ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি দুর্ঘটনা ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হন। ১৯৪৫ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় হেমিংওয়ে তার হাঁটুতে আঘাত পান এবং কপালে আঘাত থেকে রেহাই পান। অন্যদিকে, ম্যারির ডান গোড়ালি ভেঙ্গে যায় এবং পরে আরেকটি স্কিইং দুর্ঘটনায় বাম গোড়ালি ভাঙ্গে। ১৯৪৭ সালে অপর একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্যাট্রিক মাথায় আঘাত পান এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।[৯৩] একের পর এক তার সাহিত্যিক বন্ধুগণ মারা যেতে থাকলে হেমিংওয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েন।[৯৪] এই সময়ে পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা ও অনেক বছরের অত্যধিক মদ্যপানের কারণে তিনি তীব্র মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন হ্রাস, ও ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকেন।[৯৫] ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি দ্য গার্ডেন অব ইডেন বই রচনা শুরু করেন। জুন মাসে বইটির ৮০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখা শেষ করেন।[৯৬] যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি দ্য ল্যান্ড, দ্য সীদি এয়ার ত্রয়ী গ্রন্থ রচনা করেন, যা তিনি দ্য সী বুক শিরোনামে একটি উপন্যাসে সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন। যাই হোক, দুটি কাজই থেমে যায়। মেলো বলেন হেমিংওয়ের এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার অক্ষমতা ছিল এই বছরগুলোতে তার সমস্যাগুলোর উপসর্গ।[৯২]

১৯৪৮ সালে হেমিংওয়ে ও ম্যারি ইউরোপ ভ্রমণে যান। তারা কিছুদিন ভেনিস শহরে অবস্থান করেন। সেখানে হেমিংওয়ে ১৯ বছর বয়সী আদ্রিয়ানা ইভানচিচের প্রেমে পড়েন। এই প্রেমের সম্পর্ক তাকে অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ উপন্যাস লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। কিউবায় অবস্থানকালে ম্যারির সাথে বিবাদে জড়িয়ে থাকাকালীন তিনি এই বইটি রচনা করেন। বইটি ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অর্জন করে।[৯৭] উপন্যাসটির সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়ার ক্ষুব্ধ হেমিংওয়ে পরের বছর মাত্র আট সপ্তাহে দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি রচনা করেন। তিনি বলেন, "এটি ছিল আমার লেখার সাধ্যের মধ্যে আমার জীবনের সেরা বই।"[৯৫] দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী বইটি মাসের সেরা বইয়ের নির্বাচনে তালিকাভূক্ত হয়। হেমিংওয়ে আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠেন এবং ১৯৫২ সালে মে মাসে তিনি এই বইয়ের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। এর একমাস পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মত আফ্রিকা ভ্রমণে যান।[৯৬][৯৮]

১৯৫৪ সালের অক্টোবরে তিনি সাহিত্যজগতের সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আন্তরিকতার সাথে গনমাধ্যমকে জানান কার্ল সান্ডবুর্গ, আইজাক ডিনেসেন ও বের্নার্ড বেরেনসন এই পুরস্কার লাভের যোগ্য ছিলেন।[৯৯] তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে পুরস্কার গ্রহণ করেন।[১০০]

আইডাহো ও আত্মহত্যা সম্পাদনা

১৯৬০ সালের ২৫শে জুলাই হেমিংওয়ে ও ম্যারি কিউবা ছেড়ে চলে যান এবং কখনো আর সেখানে ফিরেন নি। ১৯৬০ সালের গ্রীষ্মে তিনি তার নিউ ইয়র্ক সিটির অ্যাপার্টমেন্টে ছোট অফিস করেন এবং কাজ করার প্রচেষ্টা চালান। কিছুদিন পর তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিও চিরতরে ছেড়ে চলে যান। তিনি পরে লাইফ সাময়িকীর প্রচ্ছদের জন্য ছবি তুলতে একাকী স্পেন সফরে যান। কিছুদিন পর প্রতিবেদন প্রকাশ হয় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং মৃত্যুশয্যায় চলে গেছেন। ম্যারি এই খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হেমিংওয়ে তাকে তারবার্তায় খবর পাঠান, "প্রতিবেদনটি ভুল, মাদ্রিদের রাস্তায়, ভালোবাসা পাপা।"[১০১] যাই হোক, তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।[১০২] তিনি একাকী ছিলেন এবং কয়েকদিন শয্যাশায়ী ছিলেন; তা সত্ত্বেও ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে লাইফ সাময়িকীতে দ্য ডেঞ্জারাস সামার-এর প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয় এবং ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[১০৩] অক্টোবরে তিনি স্পেন ত্যাগ করে নিউ ইয়র্কে যান, সেখানে তিনি ম্যারির অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে নারাজ ছিলেন। ম্যারি তাকে নিয়ে আইডাহো চলে যান। সেখানে যাওয়ার সময় ট্রেনে সান ভ্যালির চিকিৎসক জর্জ স্যাভিয়ার্সের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়।[১০২]

এই সময়ে হেমিংওয়ে প্রায়ই তার অর্থ ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকতেন।[১০৪] তিনি কর নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন এবং ভাবতেন তিনি কখনো কিউবা ফিরে গিয়ে সেখানে খালি ভল্টে রাখা তার পাণ্ডুলিপিগুলো ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। কেচামে এফবিআই সর্বক্ষণ তার কর্মকাণ্ড নিরীক্ষণ করছে এই ভেবে তার মধ্যে ভ্রম-বাতুলতা দেখা দেয়।[১০৫][১০৬] এফবিআই সত্যিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং জে. এডগার হুভার ১৯৫০-এর দশকে হেমিংওয়েকে চোখে চোখে রাখার জন্য তার একজন এজেন্টকে হাভানায় প্রেরণ করে।[১০৭] নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ম্যারি তার অবলম্বন হয়ে ওঠে। স্যাভিয়ার্স হেমিংওয়েকে মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন এবং তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।[১০৫] এফবিআই জানত হেমিংওয়ে মায়ো ক্লিনিকে আছেন, কারণ ১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাসে একজন এজেন্ট একটি পত্রে তা জানিয়েছিলেন।[১০৮] অজ্ঞাত পরিচয়ে থাকার জন্য হেমিংওয়েকে স্যাভিয়ার্সের নামে মায়ো ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল।[১০৩] মেয়ার্স লিখেন মায়োতে হেমিংওয়ের চিকিৎসা গোপনতার বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল, কিন্তু মেয়ার্স নিশ্চিত করেন ১৯৬০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে কমপক্ষে ১৫ বার ইলেক্ট্রোকনক্লুসিভ থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি প্রায় ধ্বংসাবশেষ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান।[১০৯] রেনল্ডস মায়োতে হেমিংওয়ের নথিপত্র পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন হেমিংওয়েকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল তা তার হতাশ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল।[১১০]

 
সান ভ্যালিতে হেমিংওয়ের সমাধিফলক।

মায়ো ক্লিনিক থেকে ছাড়া পাওয়ার তিন মাস পরে হেমিংওয়ে যখন তিনি কেচামে ফিরে আসেন ১৯৬১ সালের এপ্রিলে একদিন সকালে ম্যারি হেমিংওয়েকে শর্টগান হাতে রান্নাঘরে দেখতে পান। তিনি স্যাভিয়ার্সকে বিষয়টি জানালে তাকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয় ও সান ভ্যালি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে আরও ইলেক্ট্রোশক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আবার মায়ো ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।[১১১] জুন মাসের শেষের দিকে তিনি মায়ো থেকে ছাড়া পান এবং ৩০শে জুন কেচামে নিজ বাড়িতে আসেন। দুই দিন পরে ১৯৬১ সালের ২রা জুলাই ভোর-সকালে নিজের প্রিয় শটগান দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।[১১২] ম্যারি সান ভ্যালি হাসপাতালে ফোন করেন। ডাক্তার দ্রুত বাড়িতে পৌঁছান এবং মাথায় স্ব-আরোপিত আঘাতের কারণে মৃত বলে ঘোষণা দেন। ম্যারিকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয় এবং হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন বাড়ি ফিরে তিনি শেষকৃত্যের আয়োজন ও মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার দেখতে পান। বার্নিস কার্ট লিখেন সে সময়ে তিনি যখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তার মৃত্যু দুর্ঘটনাবশত ছিল তখন তা সজ্ঞানে মিথ্যার মত মনে হয় নি।[১১৩] পাঁচ দিন পরে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি হেমিংওয়ের আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।[১১৪]

পরিবারের সদস্য ও বন্ধুগণ কেচামে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় ক্যাথলিক যাজক শেষকৃত্য পরিচালনা করেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন হেমিংওয়ের মৃত্যু একটি দুর্ঘটনা ছিল।[১১৩] তাকে কেচাম সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়।[১১৫]

শেষ দিনগুলোতে হেমিংওয়ের আচরণ তার পিতার শেষ দিনগুলোর আচরণের মত হয়ে গিয়েছিল।[১১৬] তার পিতার সম্ভবত জিনগত রোগ হেমোক্রোমাটোসিস ছিল, যে কারণে দেহের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার অক্ষমতা তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়।[১১৭] ১৯৯১ সালে প্রাপ্ত তার চিকিৎসার নথি হতে পাওয়া যায় যে তিনি ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে হেমোক্রোমাটোসিসের চিকিৎসা নিয়েছিলেন।[১১৮] তার বোন উরসুলা ও ভাই লিস্টারও আত্মহত্যা করেছিলেন।[১১৯]

রচনাশৈলী সম্পাদনা

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ১৯২৬ সালে তার প্রথম উপন্যাস সম্পর্কে লিখে, " কোন বিশ্লেষণই দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসের গুণমান বর্ণনা করতে পারবে না। এটি সত্যিই পাঠককে আটকে রাখার মত একটি গল্প, এবং কৃশ, কঠোর ও অ্যাথলেটিক গদ্যধারায় বর্ণিত।[১২০] জেমস ন্যাজেলের মতে, দ্য সান অলসো রাইজেস পরিমিত ও আঁটসাঁট গদ্যে লেখা, যা হেমিংওয়েকে বিখ্যাত করে তুলে এবং মার্কিন লেখনীর ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসে।"[১২১] ১৯৫৪ সালে যখন হেমিংওয়েকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়, তাতে বলা হয়, "বর্ণনার শিল্পে তার পাণ্ডিত্যের জন্য, অতি সম্প্রতি দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী উপন্যাসে যা উপস্থাপিত হয়েছে, এবং সমকালীন লেখনীর ধরনে তার প্রভাবের জন্য।"[১২২]

হেনরি লুইস গেটস মনে করেন হেমিংওয়ের লেখনীর ধরন তার বিশ্বযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতালব্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ও অন্যান্য আধুনিকতাবাদীগণ উনবিংশ শতাব্দীর লেখকদের বর্ণনাধর্মী ধরনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাশ্চাত্য সভ্যতার কেন্দ্রীভূত শাখা থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং নতুন ধরনের সৃষ্টি করেন যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অল্প বর্ণনা করে বা অল্প কিছু অংশ বিশদভাবে বর্ণনা করে সংলাপ, কার্য ও নৈশব্দের মাধ্যমে অর্থবোধক করে তোলা হয়।[১৮]

বেকার মনে করেন ছোটগল্পকার হিসেবে সাহিত্য জীবন শুরু করার জন্য কীভাবে সবচেয়ে ভালোটুকু পাওয়া যায়, কীভাবে ভাষার কাটছাঁট করা যায়, কীভাবে প্রগাঢ়তাকে ঘনীভূত করা যায় এবং কীভাবে সত্য বলা যায় হেমিংওয়ে তা শিখেছিলেন।[১২৩] হেমিংওয়ে তার লেখনীর ধরনকে আইসবার্গ তত্ত্ব বলে অভিহিত করেন, যেখানে মূখ্য বিষয়টি পানির উপরে ভাসমান থাকে এবং গৌণ বিষয়গুলো দৃষ্টির বাইরে থাকে।[১২৩] আইসবার্গ তত্ত্বকে প্রায়ই বাতিলের তত্ত্ব বলেও অভিহিত করা হয়। হেমিংওয়ে মনে করেন একজন লেখক একটি বিষয় বর্ণনা করতে পারে (যেমন "বিগ টু-হার্টেড রিভার"-এ নিক অ্যাডামস মাছ ধরছেন), যদিও অন্যদিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনা ঘটছে (নিক অ্যাডামস মাছ ধরায় এতোটাই মনোযোগী ছিলেন যে তিনি অন্যকিছু সম্পর্কে ভাবছিলেন না)।[১২৪] পল স্মিথ লিখেন হেমিংওয়ের ইন আওয়ার টাইম নামে সংকলিত প্রথম গল্পসমূহে তিনি তখনও তার লেখনীর ধরন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন।[১২৫] তিনি জটিল পদবিন্যাস এড়িয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ বাক্যই সরল বাক্য ছিল, একাধিক বাক্যাংশবিহীন বালকসুলভ পদবিন্যাস।[১২৬]

জ্যাকসন বেনসনের মতে হেমিংওয়ে সাধারণ অর্থে জীবন সম্পর্কিত ছাঁচ গড়ে তোলার জন্য আত্মজীবনীমূলক বর্ণনার ব্যবহার করতেন, এবং তা শুধু তার জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, বেনসন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে হেমিংওয়ে তার অভিজ্ঞতার ব্যবহার ঘটাত এবং সেগুলো থেকে "যদি এমন হয়" ধরনের দৃশ্যগুলোর বের করে আনত: "যদি আমি এমনভাবে আঘাত পেতাম যে আমি রাতে ঘুমাতে না পারতাম? যদি আমি এমনভাবে আঘাত পেতাম এবং পাগল হয়ে যেতাম, আমাকে যদি আবারো রণাঙ্গনে ফেরত পাঠানো হত তাহলে কি হত?"[১২৭] দ্য আর্ট অব দ্য শর্ট স্টোরি বইতে হেমিংওয়ে বর্ণনা করেন: "অল্প সংখ্যক বিষয়ই আমি সত্য বলে পেয়েছি। যদি আপনি আপনার জানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা ঘটনাবলি বাদ দেন, গল্পটি শক্তিশালী হবে। যদি আপনি কোন কিছু না জানার কারণে বাদ দেন বা ছেড়ে যান, তবে গল্পটি মূল্যহীন হবে। কোন গল্পের পরীক্ষা হল আপনার সম্পাদক নয়, বরং আপনি কতটুকু অংশ বাদ দিতে পেরেছেন।"[১২৮]

গদ্যের সাধাসিধে ভাবটি প্রবঞ্চনামূলক। জো ট্রড মনে করেন হেমিংওয়ে হেনরি জেমসের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত শব্দ বিষয়ক পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কঙ্কালসার বাক্য রচনা করতেন। হেমিংওয়ে একধরনের বহু-অধিশ্রয়ণিক আলোকচিত্রধর্মী বাস্তবতা তৈরি করেন। তার বাতিলের আইসবার্গ তত্ত্ব তার রচনার মূলভিত্তি। তার বাক্যরীতিতে সহায়ক সংযোজক অব্যয় পদের স্বল্পতা বাক্যগুলোকে স্থিতিশীল করে তুলে। তার আলোকচিত্রধর্মী "স্ন্যাপশট" ধরন দৃশ্যাবলিকে একত্রিত করে। ছোট বর্ণনামূলক বাক্য গঠনের জন্য অনেক অভ্যন্তরীণ যতি চিহ্ন, তথা কোলন, সেমিকোলন, ড্যাশ, ব্র্যাকেট বাদ দেওয়া হয়। বাক্যগুলো একটি অপরটির উপর নির্ভর করে গঠন করা হয়, যেমনভাবে ঘটনাবলি সামগ্রিক অবস্থা বুঝাতে গঠিত হয়। একটি গল্পে একাধিক গতিশীলতার ধারা থাকতে পারে; সম্প্রসারিত লেখনী দিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোণের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়। তিনি এক দৃশ্য থেকে দ্রুত পরের দৃশ্য যাওয়ার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পের কাটিং পদ্ধতিও ব্যবহার করতেন। ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল পাঠকদের শূন্যস্থান পূরণ করার সুযোগ প্রদান করে, যেন মনে হয় পাঠক লেখকের নির্দেশনায় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। এছাড়া এই ধরনের বাতিল ত্রিমাত্রিক গদ্যের সৃষ্টি করে।[১২৯]

হেমিংওয়ে কমার স্থলে অভ্যাসগতভাবে "এবং" শব্দটি ব্যবহার করতেন। অব্যয় পদের এই ব্যবহার আসন্নতা প্রকাশ করে থাকে। হেমিংওয়ের অব্যয় পদের ব্যবহারযুক্ত বাক্যে, বা পরবর্তী সময়ে তার কাজে উপ-বাক্যাংশের ব্যবহারে, চমকপ্রদ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিত্রগুলিকে পাশাপাশি সাজাতে সংযোজক অব্যয় পদ ব্যবহার করে। বেনসন এই বাক্যগুলিকে হাইকুর সাথে তুলনা করেন।[১৩০][১৩১] হেমিংওয়ের অনেক অনুসারী তার এই কাজের ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং আবেগের প্রকাশকে ভ্রুকুটি করেছেন। সল বেলো লেখনীর এই ধরনটিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, "আপনার কি অনুভূতি আছে? তাদের শ্বাসরোধ করুন।"[১৩২] তবে হেমিংওয়ের উদ্দেশ্য আবেগকে দূর করতে চাওয়া ছিল না; বরং তিনি তা আরও বৈজ্ঞানিকভাবে চিত্রিত করতে চেয়েছিলেন। হেমিংওয়ে ভেবেছিলেন আবেগকে বিবৃত করা সহজ এবং অর্থহীন। তিনি "আসল জিনিসটি" ধরার জন্য চিত্রগুলিকে একত্রিত করেছিলেন, যেখানে "আসল জিনিসটি হল গতি ও সত্যের অনুক্রম, যা অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং যা এক বছরে বা দশ বছরে বা ভাগ্যের সাথে আইনসিদ্ধ হবে এবং যদি আপনি এটি পুরোপুরি বর্ণনা করতে চান, তাহলে সর্বদাই।"[১৩৩] বিষয়বস্তুগত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চিত্রের এই ব্যবহারটি এজরা পাউন্ড, টি এস এলিয়ট, জেমস জয়েসমার্সেল প্রুস্তের বৈশিষ্ট্য।[১৩৪] হেমিংওয়ে তার চিঠিগুলিতে কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকবার প্রুস্তের রিমেম্ব্রেন্স অব থিংস পাস্ট-এর উল্লেখ করেন এবং তা জানান দেয় যে তিনি কমপক্ষে দুইবার বইটি পড়েছেন।[১৩৫]

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

হেমিংওয়ের কাজের জনপ্রিয়তা এর বিষয়বস্তু অর্থাৎ প্রেম, যুদ্ধ, বন্যতা ও ক্ষতির উপর নির্ভরশীল। এই সবকয়টি উপাদান তার কাজের উতপ্রোতভাবে জড়িত।[১৩৬] এগুলো মার্কিন সাহিত্যে বহুল ব্যবহৃত বিষয়বস্তু এবং হেমিংওয়ের কাজের প্রধানতম উপাদান। সমালোচক লেসলি ফিল্ডার এই বিষয়বস্তুগুলোকে "পবিত্র ভূমি"-মার্কিন পাশ্চাত্য বলে সংজ্ঞায়িত করেন, যা হেমিংওয়ের কাজে স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও আফ্রিকার পর্বতমালা থেকে শুরু করে মিশিগানের ছোট নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। মার্কিন পাশ্চাত্য দ্য সান অলসো রাইজেসফর হুম দ্য বেল টোলস উপন্যাসে ব্যবহৃত "হোটেল মন্টানা" নামে একটি প্রতীকী উপস্থাপনা।[১৩৭] স্টলৎজফাস ও ফিল্ডারের মতে, হেমিংওয়ের কাজে প্রকৃতি হল পুনর্জন্ম ও বিশ্রামের স্থান এবং এখানেই শিকারী ও জেলেরা তাদের শিকারকে ধরার মুহূর্তে অতীন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করে।[১৩৮] প্রকৃতিতে মানুষ নারী ছাড়া বাঁচে, মাছ ধরে, শিকার করে, এবং প্রকৃতিতে মুক্তির সন্ধান করেন।[১৩৭] যদিও হেমিংওয়ে খেলাধুলা সম্পর্কে, বিশেষত মাছ ধরা সম্পর্কে, লিখতেন, ক্যারল বেকার উল্লেখ করেন খেলাধুলার চেয়ে তিনি মল্লক্রীড়ায় বেশি জোর দিতেন।[১৩৯] কেন্দ্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হেমিংওয়ের অনেক কাজকে মার্কিন প্রকৃতিবাদের আলোকে বিবেচনা করা যায়, "বিগ টু-হার্টেড রিভার"-এ এর বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।[৮]

ফিডলার মনে করেন হেমিংওয়ে মন্দ "ডার্ক ওম্যান" বনাম ভাল "লাইট ওম্যান" বিষয়ক মার্কিন সাহিত্যের বিষয়বস্তু পাল্টে দিয়েছেন। দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসে মন্দ নারী ব্রেট অ্যাশলিকে দেবী হিসেবে দেখিয়েছেন, অন্যদিকে "দ্য শর্ট হ্যাপি লাইফ অব ফ্রান্সিস ম্যাকম্বার" গল্পে ভালো নারী মার্গো ম্যাকম্বারকে খুনী হিসেবে দেখিয়েছেন।[১৩৭] রবার্ট শোলস উল্লেখ করেন হেমিংওয়ের শুরুর দিকের গল্প, যেমন "আ ভেরি শর্ট স্টোরি"-তে পুরুষ চরিত্র ইতিবাচকভাবে এবং নারী চরিত্র নেতিবাচকভাবে দেখানো হয়েছে।[১৪০] হেমিংওয়ের লেখনীর শুরুর দিকের সমালোচক রেনা স্যান্ডারসন তার পুরুষ-কেন্দ্রিক জগৎ ও নারীদের খোজা বা প্রেমের দাসে রূপান্তরকারী কল্পকাহিনির প্রশংসা করেন। নারীবাদী সমালোচকগণ হেমিংওয়েকে "জনগণের এক নাম্বার শত্রু" বলে উল্লেখ করে, যদিও তার কাজের সাম্প্রতিক পুনর্মূল্যায়নে হেমিংওয়ের নারী চরিত্রগুলো নতুনভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এবং লৈঙ্গিক বিচারে তার সংবেদনশীলতা প্রকাশিত হয়। ফলে তার লেখাগুলো একপেশে পুরুষজাতীয় এই বিষয়ক পূর্ববর্তী মূল্যায়নের সন্দেহ দূর হয়।[১৪১] নিনা বায়াম মনে করেন ব্রেট অ্যাশলি ও মার্গো ম্যাকম্বার হল হেমিংওয়ের খারাপ নারী চরিত্রের দুটি বিশিষ্ট উদাহরণ।[১৪২]

হেমিংওয়ের শুরুর দিকের ছোটগল্প "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প"-সহ একাধিক লেখনীতে নারী ও মৃত্যু সম্পর্কিত বিষয়বস্তু দেখা যায়। হেমিংওয়ের কর্মে মৃত্যু বিষয়বস্তুটি প্রবাহিত হয়। ইয়ং মনে করেন "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" গল্পে সন্তান জন্মদানকারী নারী বা আত্মহননকারী পিতার দিকে নয়; বরং এই ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করা নিক অ্যাডামসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাকে "খুবই ভীত উদ্বিগ্ন কিশোর" হিসেবে দেখানো হয়েছে। হেমিংওয়ে "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" গল্পের ঘটনাবলি পটভূমি এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেন, যা নিক অ্যাডামসের ব্যক্তিত্ব গঠন করে। ইয়ং মনে করেন "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" তার ৩৫ বছরের সাহিত্য জীবনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।[১৪৩] স্টলৎজফাস হেমিংওয়ের কর্মগুলোকে অস্তিত্ববাদী সহজাত সত্যের উপস্থাপনা-সমৃদ্ধ জটিল কাজ বলে গণ্য করেন: "যদি শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরা হয়, তবে মৃত্যুর মুহূর্তেই কেবল স্বাধীনতা মিলে। যারা মর্যাদা ও সাহসের সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তারাই অকৃত্রিম জীবন যাপন করে। ফ্র্যান্সিস ম্যাকম্বারের মৃত্যু সুখের হয়েছিল, কারণ তার জীবনের শেষ সময়গুলো অকৃত্রিম ছিল; যেমনটা করিডায় ষাঁড়ের লড়াইবিদেরা অকৃত্রিম জীবন যাপনের শীর্ষে অবস্থান করে।"[১৩৮] টিমো মুলার তার দ্য ইউজ অব অথেনটিসিটি: হেমিংওয়ে অ্যান্ড দ্য লিটারেরি ফিল্ড প্রবন্ধে লিখেন হেমিংওয়ের কল্পকাহিনিগুলো সফল কারণ চরিত্রাবলি বাস্তব জীবনে বসবাস করে এবং আধুনিক সাহিত্যে অকৃত্রিমতার ছাঁচগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈন্যদল, জেলে, মুষ্টিযোদ্ধা, ও কাঠুরে।[১৪৪]

হেমিংওয়ের কাজগুলোতে পৌরষবর্জিততা বিষয়ক বিষয়বস্তু প্রচলিত রয়েছে, বিশেষত দ্য সান অলসো রাইজেস-এ। ফিডলারের মতে পৌরষবর্জিততা হল আহত সৈন্যদের একটি প্রজন্মের ফলাফল; এবং এমন একটি প্রজন্মের, যেখানে ব্রেটের মতো নারীরা মুক্তি পেল। এই বিষয়টি বইটির শুরুতে গৌণ চরিত্র কোনের বান্ধবী ফ্রান্সিস ক্লিনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তার চরিত্রটি এই বিষয়টিকে সমর্থন করে কেবল ধারণাটি উপন্যাসের প্রথম দিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল বলেই নয়, অল্প সংখ্যক বার উপস্থিত হয়েও বইয়ের শুরুতে তিনি কোহনের উপর যে প্রভাব ফেলেছিলেন তার জন্য।[১৩৭] বেকার বিশ্বাস করেন যে হেমিংওয়ের কাজ "স্বাভাবিক" বনাম "অস্বাভাবিক"-এর উপর জোর দেয়। "আলপাইন আইডিল"-এ দেরিতে বসন্তকালের স্কিইংয়ের "অস্বাভাবিকতা"-এর বিরুদ্ধে শীতকালে স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে ছাউনিতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব করে এমন কৃষকের "অস্বাভাবিকতা"-কে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছিল। স্কি ব্যবহারকারী ব্যক্তি এবং কৃষকরা মুক্তির জন্য উপত্যকাকে "স্বাভাবিক" বসন্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।[১৩৯]

সুজান বিগেল লিখেছেন যে কয়েকজন সাম্প্রতিক সমালোচক হেমিংওয়ের মৃত্যুর কয়েক দশক পরে আরও আধুনিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ও তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার অর্ধ শতাব্দী পরে তার কল্পকাহিনিগুলোতে ফুটে ওঠা সামাজিক সময়কালকে নারী বিদ্বেষীসমকামভীতিমূলক বলে উল্লেখ করেন।[১৪৫] বিগেল তার ১৯৯৬ সালে প্রবন্ধ "ক্রিটিক্যাল রিসেপশন"-এ হেমিংওয়ের সমালোচনার চার দশকের বিশ্লেষণ আলোকপাত করেন এবং দেখান যে "সমালোচকগণ একাধিক সাংস্কৃতিকবাদে আগ্রহী", বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশকের। হেমিংওয়ে এই বিষয়টি সহজভাবে এড়িয়ে গেছেন, যদিও কয়েকজন দুঃখজ্ঞাপনও করেছেন।[১৪৬] বিগেলের মতে হেমিংওয়ের ১৯২৬-এর দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসের বিশ্লেষণে লিখেছেন, "হেমিংওয়ে কখনো তার পাঠকদের ভুলতে দেননি যে কোন একজন ইহুদি, অনাকর্ষক নয় এমন চরিত্র যে একজন ইহুদি কিন্তু এমন একটি চরিত্র যে অনাকর্ষক কারণ সে ইহুদি।" বিগেল আরও বলেন যে ১৯৮০-এর দশকে প্রকাশিত সমালোচনাগুলোর প্রধান উল্লেখ্য ছিল হেমিংওয়ের কল্পকাহিনিগুলোতে চিত্রিত সামাজিক সময়কালের স্বাভাবিক "সমকামিতার ভয়" ও "বর্ণবাদ"।[১৪৫] হেমিংওয়ের লেখনীর সামগ্রিক মূল্যায়নে বিগেল লিখেন, "তার সামগ্রিক কল্পকাহিনিতে তিনি মানুষের ভয়, অপরাধ, বিশ্বাসঘাতকতা, সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা, মদ্যপান, ক্ষুধা, লোভ, সমবেদনা, পরমানন্দ, স্নেহপরায়ণতা, ভালোবাসা ও কাম বিষয়ক সত্যতা উপস্থাপন করেছেন।"[১৪৭]

প্রভাব ও উত্তরাধিকার সম্পাদনা

 
হাভানার এল ফ্লোরিডিটা বারে হোসে ভিয়া সোবেরনের করা হেমিংওয়ের মূর্তি।

মার্কিন সাহিত্যে হেমিংওয়ের অবদান হল তার লেখনীর ধরন, তার পরে যেসব লেখক এসেছেন তারা এই ধরন অতিক্রম করে গেছেন বা পরিত্যাগ করেছেন।[১৪৮] দ্য সান অলসো রাইজেস প্রকাশিত হলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরলে তিনি এই অনুসরণযোগ্য ধরন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।[১২১] আধুনিক অবক্ষয়ের স্তম্ভ হয়ে ওঠার কারণে ১৯৩৩ সালে বার্লিনে তার বইগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।[১৪৯] রেনল্ডস এই অবদান বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন হেমিংওয়ে যেসব গল্প ও উপন্যাস রেখে গেছেন তা এতো কঠোরভাবে মর্মস্পর্শী যে তা মার্কিন সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে।[১৫০]

বেনসন মনে করেন যে হেমিংওয়ের জীবনের বর্ণনা "শোষণের প্রধান বাহন" হয়ে উঠেছে, যার ফলস্বরূপ হেমিংওয়ে শিল্প গড়ে ওঠেছে।[১৫১] হেমিংওয়ে বিষয়ক পণ্ডিত হ্যালেনগ্রেন মনে করেন লেখনীর ধরন ও পৌরষ এই দুটি থেকে লেখককে আলাদা করতে হবে।[১৪৯] বেনসন এই বিষয়ে একমত হন এবং তাকে জে. ডি. স্যালিঞ্জারের মত অন্তর্মুখী এবং একান্ত হিসেবে বর্ণনা করেন, যদিও হেমিংওয়ে দাম্ভিকতাসম্পন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।[১৫২] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, স্যালিঞ্জার হেমিংওয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। স্যালিঞ্জার তাকে তার লেখনীর প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করেন। হেমিংওয়ের কাছে একটি চিঠিতে স্যালিঞ্জার দাবি করেছেন যে তাদের আলোচনা "সমগ্র যুদ্ধের সময়ে তার কাছে একমাত্র আশাব্যঞ্জক মুহূর্ত ছিল" এবং রসিকতার সাথে "নিজেকে হেমিংওয়ের ভক্তদের ক্লাবগুলির জাতীয় চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন।"[১৫৩]

জনসংস্কৃতিতে হেমিংওয়ের কল্পকাহিনিসমূহের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রতিচ্ছবিতে তার প্রভাবের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। ১৯৭৮ সালে তার নামানুসারে সোভিয়েত জ্যোতির্বিদ নিকলাই চের্নিখ আবিষ্কৃত একটি গ্রহাণুর নামকরণ করা হয় ৩৬৫৬ হেমিংওয়ে।[১৫৪] রে ব্র্যাডবেরি রচিত দ্য কিলিমাঞ্জারো ডিভাইস বইতে হেমিংওয়ে নামক একটি চরিত্র কিলিমাঞ্জারো পর্বতের শীর্ষে আরোহণ করে। ১৯৯৩ সালের রেসলিং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে আইরিশ ও কিউবীয় দুজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে নির্মিত, এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন রবার্ট ডুভল, রিচার্ড হ্যারিস, শার্লি ম্যাকলেইন, সান্ড্রা বুলকপাইপার লরি[১৫৫] রেস্তোরাঁ ও বারের নামকরণেও তার প্রভাব রয়েছে, অসংখ্য রেস্তোরাঁর নাম "হেমিংওয়ে" এবং অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ বইয়ের অনুকরণে "হ্যারিস" নামক বারের অধিক্য দেখা যায়।[১৫৬] হেমিংওয়ের পুত্র জ্যাক এক ধরনের আসবাবপত্রের প্রচার করেন, যাতে টেবিলের পাশে "কিলিমাঞ্জারো" ও "ক্যাথরিন" স্লিপ-কভারের সোফা রয়েছে। মন্টব্ল্যাঙ্ক হেমিংওয়ে ঝর্ণা কলমের প্রবর্তন করে এবং এক ধরনের হেমিংওয়ে সাফারি কাপড়ের প্রচলন হয়।[১৫৭] প্রকাশ্যে তার প্রভাবের স্বীকৃতি প্রদান ও তার লেখনীর ধরন অনুকরণের চেষ্টার জন্য ১৯৭৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইমিটেশন হেমিংওয়ে কম্পিটিশন চালু হয়। প্রতিযোগীদের হেমিংওয়ের খুবই বাজে লেখার খুবই ভালো এক পাতা জমা দিতে বলা হয় এবং বিজয়ীকে ইতালিতে হ্যারিস বারে আমন্ত্রণ জানানো হয়।[১৫৮]

১৯৬৫ সালে ম্যারি ওয়েলশ হেমিংওয়ে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭০-এর দশকে তিনি তার স্বামীর পাণ্ডুলিপিসমূহ জন এফ. কেনেডি লাইব্রেরিতে দান করে দেন। ১৯৮০ সালে হেমিংওয়ে পণ্ডিতদের একটি দল দানকৃত পাণ্ডুলিপিসমূহ মূল্যায়ন করার জন্য একত্রিত হন এবং তারা "হেমিংওয়ে পাণ্ডিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রসারের লক্ষ্য" নিয়ে হেমিংওয়ে সোসাইটি গড়ে তুলেন।[১৫৯]

হেমিংওয়ের মৃত্যুর প্রায় ৩৫ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১লা জুলাই তার নাতনী মার্গো হেমিংওয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১৬০] মার্গো ছিলেন একজন সুপার মডেল ও অভিনেত্রী, যিনি তার ছোট বোন মারিয়েলের সাথে ১৯৭৬ সালের লিপস্টিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।[১৬১] তার মৃত্যু পরবর্তী কালে আত্মহত্যা বলে রায় আসে, ফলে তিনি তার পরিবারের চার প্রজন্মে পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে আত্মহত্যা করেন।"[১৬২]

 
২০১৮ সালে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কুটির

হেমিংওয়ের সাথে জড়িত তিনটি বাড়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থানের জাতীয় রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেগুলো হল মিশিগানের ওয়ালুন লেকের আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কুটির, কি ওয়েস্টে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বাড়ি এবং কেচামে আর্নেস্ট ও ম্যারি হেমিংওয়ের বাড়িইলিনয়ের ওক পার্কে তার শৈশবের বাড়িটি হেমিংওয়ের প্রতি উৎসর্গীকৃত জাদুঘর ও সংরক্ষণাগার।[১৬৩] ২০১২ সালে শিকাগো লিটারেরি হল অব ফেমে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৬৪]

শিল্পকলা ও সংস্কৃতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তার নামে একাধিক পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। তন্মধ্যে রয়েছে -

নির্বাচিত রচনাবলি সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. ফিট্‌জেরাল্ড এর স্ত্রী জেল্ডা প্রথম থেকেই হেমিংওয়েকে অপছন্দ করতেন। ক্রমে তার ধারণা জন্মে যে হেমিংওয়ে একজন সমকামী এবং তিনি অভিযোগ করেন হেমিংওয়ে ও তার স্বামীর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৪০।
  2. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ১৭–১৮।
  3. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪।
  4. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৩৪।
  5. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৮।
  6. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ১৯।
  7. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩।
  8. বিগেল (২০০০), পৃ. ৬৩-৭১।
  9. মেলো (১৯৯২), পৃ. ২১।
  10. গ্রিফিন (১৯৮৫), পৃ. ২৫।
  11. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৯-২৩।
  12. "Star style and rules for writing"দ্য ক্যানসাস সিটি স্টার। ২৬ জুন ১৯৯৯। Archived from the original on ৮ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৮ 
  13. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৪৮–৪৮।
  14. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ২৭-৩১।
  15. পিজার (১৯৮৬)
  16. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৭-৬০।
  17. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৬১।
  18. পুটন্যাম, টমাস (১৫ আগস্ট ২০১৬)। "Hemingway on War and Its Aftermath"National Archives (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৮ 
  19. ডেসনয়ার্স, পৃ. ৩।
  20. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩৪, ৩৭-৪২।
  21. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩৭-৪২।
  22. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪৫–৫৩।
  23. রেনল্ডস (১৯৯৮), পৃ. ২১।
  24. মেলো (১৯৯২), পৃ. ১০১।
  25. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৬–৫৮।
  26. কার্ট (১৯৮৩), পৃ. ৮৩-৯০।
  27. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৩৯।
  28. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৭।
  29. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৬০–৬২।
  30. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৬০-৬২।
  31. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৭০-৭৪।
  32. মেলো (১৯৯১), পৃ. ৮।
  33. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩০৮।
  34. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ২৮।
  35. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৭৭–৮১।
  36. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৮২।
  37. গার্নার, ডোয়াইট (২৪ জুন ২০১৪)। "Daunting Path to Publication"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮ 
  38. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ২৪।
  39. ডেসনয়ার্স, পৃ. ৫।
  40. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৬৯-৭০।
  41. বেকার (১৯৭২), পৃ. ১৫-১৮।
  42. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১২৬।
  43. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৩৪।
  44. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১২৭।
  45. মেলো (১৯৯২), পৃ. ২৩৬।
  46. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩১৪।
  47. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৫৯-১৬০।
  48. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৩০-৩৪।
  49. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৮৯।
  50. রেনল্ডস (১৯৮৯), পৃ. vi–vii।
  51. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩২৮।
  52. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৪৪।
  53. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩০২।
  54. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৯২।
  55. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৮২।
  56. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৪৩।
  57. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩৩৩।
  58. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩৩৮-৩৪০।
  59. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৭২।
  60. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৭৩, ১৮৪।
  61. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩৪৮-৩৫৩।
  62. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ১৯৫।
  63. লং (১৯৩২), পৃ. ২–৩।
  64. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ২০৪।
  65. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৪৪।
  66. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ২২২-২২৭।
  67. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৪০২।
  68. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩৭৬-৩৭৭।
  69. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৪২৪।
  70. ডেসনয়ার্স, পৃ. ৯।
  71. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৩৩৭-৩৪০।
  72. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ২৮০।
  73. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ২৯২।
  74. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৪৮৮।
  75. কোচ (২০০৫), পৃ. ৮৭।
  76. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩১১।
  77. কোচ (২০০৫), পৃ. ১৬৪।
  78. কার্ট (১৯৮৩), পৃ. ২৮৭-২৯৫।
  79. কোচ (২০০৫), পৃ. ১৩৪।
  80. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩২১।
  81. টমাস (২০০১), পৃ. ৮৩৩।
  82. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩২৬।
  83. লিন (১৯৮৭), পৃ. ৪৭৯।
  84. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩৩৪।
  85. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৩৩৪-৩৩৮।
  86. কার্ট (১৯৮৩), পৃ. ৩৯৩-৩৯৮।
  87. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪১৬।
  88. মেয়ার্স (১৯৮৫), ৩৯৮–৪০৫।
  89. লিন (১৯৮৭), পৃ. ৫১৮-৫১৯।
  90. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪০৮–৪১১।
  91. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৩৫–৫৪০।
  92. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৫২।
  93. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪২০–৪২১।
  94. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৪৮-৫৫০।
  95. ডেসনয়ার্স, পৃ. ১২।
  96. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪৮৯।
  97. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৪৪০–৪৫২।
  98. ডেসনয়ার্স, পৃ. ১৩।
  99. লিন (১৯৮৭), পৃ. ৫৭৪।
  100. বেকার (১৯৭২), পৃ. ৩৮।
  101. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ৫৪৬।
  102. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ৫৪৪-৫৪৭।
  103. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৯৮–৬০১।
  104. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৪২-৫৪৪।
  105. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ৫৪৮।
  106. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৪৩।
  107. মেলো (১৯৯২), পৃ. ৫৯৭-৫৯৮।
  108. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৪৩-৫৪৪।
  109. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৪৭-৫৫০।
  110. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ৩৫০।
  111. মেয়ার্স (১৯৮৫), পৃ. ৫৫১।
  112. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ১৬।
  113. কার্ট (১৯৮৩), পৃ. ৫০৪।
  114. গিলরি, হ্যারি (২৩ আগস্ট ১৯৬৬)। "Widow Believes Hemingway Committed Suicide; She Tells of His Depression and His 'Breakdown' Assails Hotchner Book"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৮ 
  115. উইলসন, স্কট। Resting Places: The Burial Sites of More Than 14,000 Famous Persons (৩য় সংস্করণ)। ম্যাকফারল্যান্ড কোম্পানি ইনকরপোরেটেড পাবলিশার্স। 
  116. বারওয়েল (১৯৯৬), পৃ. ২৩৪।
  117. বারওয়েল (১৯৯৬), পৃ. ১৪।
  118. বারওয়েল (১৯৯৬), পৃ. ১৮৯।
  119. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৩৯-১৪৯।
  120. "The Sun Also Rises: Marital Tragedy"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ৩১ অক্টোবর ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  121. ন্যাজেল (১৯৯৬), পৃ. ৮৭।
  122. "The Nobel Prize in Literature 1954"নোবেল পুরস্কার। দ্য নোবেল ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  123. বেকার (১৯৭২), পৃ. ১১৭।
  124. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ৩২১-৩২২।
  125. স্মিথ (১৯৯৬), পৃ. ৪৫।
  126. ওয়েলস (১৯৭৫), পৃ. ১৩০-১৩৩।
  127. বেনসন (১৯৮৯), পৃ. ৩৫১।
  128. হেমিংওয়ে (১৯৭৫), পৃ. ৩।
  129. ট্রড (২০০৭), পৃ. ৮।
  130. ম্যাকরমিক, পৃ. ৪৯।
  131. বেনসন (১৯৮৯), পৃ. ৩০৯।
  132. হোবেরেক (২০০৫), পৃ. ৩০৯।
  133. হেমিংওয়ে, আর্নেস্ট (১৯৩২)। ডেথ ইন দি আফটারনুন। নিউ ইয়র্ক: সিমন অ্যান্ড শুস্টার। 
  134. ম্যাকরমিক, পৃ. ৪৭।
  135. বারওয়েল (১৯৯৬), পৃ. ১৮৭।
  136. সভোবদা (২০০০), পৃ. ১৫৫।
  137. ফিডলার (১৯৭৫), ৩৪৫–৩৬৫।
  138. স্টলৎজফাস (২০০৫), ২১৫–২১৮।
  139. বেকার (১৯৭২), ১০১–১২১।
  140. শোলস (১৯৯০), পৃ. ৪২।
  141. স্যান্ডারসন (১৯৯৬), পৃ. ১৭১।
  142. বায়াম (১৯৯০), পৃ. ১১২।
  143. ইয়ং (১৯৬৪), পৃ. ৬।
  144. মুলার (২০১০), পৃ. ৩১।
  145. বিগেল (১৯৯৬), পৃ. ২৮২।
  146. বিগেল (১৯৯৬)
  147. "Susan Beegel: What I like about Hemingway"ক্যানসাস সিটি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৯ 
  148. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৪০-১৪১।
  149. হ্যালেনগ্রেন, অ্যান্ডার্স (২৮ আগস্ট ২০০১)। "Article about Ernest Hemingway: A Case of Identity: Ernest Hemingway"নোবেল পুরস্কার। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  150. রেনল্ডস (২০০০), পৃ. ১৫।
  151. বেনসন (১৯৮৯), পৃ. ৩৪৭।
  152. বেনসন (১৯৮৯), পৃ. ৩৪৯।
  153. বেকার (১৯৬৯), পৃ. ৪২০।
  154. শ্মাডেল, লুৎজ ডি. (২০০৩)। Dictionary of Minor Planet Names। নিউ ইয়র্ক: স্প্রিঞ্জার ভেরলাগ। পৃষ্ঠা ৩০৭। আইএসবিএন 3-540-00238-3 
  155. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ৩৬০।
  156. অলিভার (১৯৯৯), পৃ. ১৪২।
  157. হফম্যান, জ্যান (১৫ জুন ১৯৯৯)। "A Line of Hemingway Furniture, With a Veneer of Taste"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৮ 
  158. স্মিথ, জ্যাক (১৫ মার্চ ১৯৯৩)। "Wanted: One Really Good Page of Really Bad Hemingway"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৮ 
  159. মিলার (২০০৬), পৃ. ৭৮-৮০।
  160. রেইনি, জেমস (২১ আগস্ট ১৯৯৬)। "Margaux Hemingway's Death Ruled a Suicide"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৯ 
  161. হলোওয়ে, লিনেট (৩ জুলাই ১৯৯৬)। "Margaux Hemingway Is Dead; Model and Actress Was 41"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৯ 
  162. "Coroner Says Death of Actress Was Suicide"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। ২১ আগস্ট ১৯৯৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৯ 
  163. "The Ernest Hemingway Foundation of Oak Park"। অক্টোবর ১০, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  164. "Ernest Hemingway"শিকাগো লিটারেরি হল অব ফেম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • অলিভার, চার্লস (১৯৯৯)। Ernest Hemingway A to Z: The Essential Reference to the Life and Work। নিউ ইয়র্ক: চেকমার্ক পাবলিশিং। আইএসবিএন 978-0-8160-3467-3 
  • ইয়ং, ফিলিপ (১৯৬৪)। Ernest Hemingway। সেন্ট পল: মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়। আইএসবিএন 978-0-8166-0191-2 
  • ওয়েলস, এলিজাবেথ জে. (১৯৭৫)। "A Statistical Analysis of the Prose Style of Ernest Hemingway: Big Two-Hearted River". in Benson, Jackson (ed). The Short Stories of Ernest Hemingway: Critical Essays। ডারহাম, নিউ ইয়র্ক: ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8223-0320-6 
  • কার্ট, বার্নিস (১৯৮৩)। The Hemingway Women। নিউ ইয়র্ক: নর্টন। আইএসবিএন 978-0-393-31835-7 
  • কোচ, স্টিভেন্স (২০০৫)। The Breaking Point: Hemingway, Dos Passos, and the Murder of Jose Robles। নিউ ইয়র্ক: কাউন্টারপয়েন্ট। আইএসবিএন 978-1-58243-280-9 
  • গ্রিফিন, পিটার (১৯৮৫)। Along with Youth: Hemingway, the Early Years। নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-503680-0 
  • ডেসনয়ার্স, মেগান ফ্লয়েড। "Ernest Hemingway: A Storyteller's Legacy"। জন এফ. কেনেডি প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেবি অনলাইন রিসোর্সেস। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  • টমাস, হিউ (২০০১)। The Spanish Civil War। নিউ ইয়র্ক: মডার্ন লাইব্রেরি। আইএসবিএন 978-0-375-75515-6 
  • ট্রড, জো (২০০৭)। "Hemingway's Camera Eye: The Problems of Language and an Interwar Politics of Form"। দ্য হেমিংওয়ে রিভিউ২৬: ৭–২১। 
  • ন্যাজেল, জেমস (১৯৯৬)। Brett and the Other Women in The Sun Also Rises". in Donaldson, Scott (ed). The Cambridge Companion to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-45574-9 
  • পিজার, ডোনাল্ড (১৯৮৬)। "The Hemingway: Dos Passos Relationship"। জার্নাল অব মডার্ন লিটারেচার১৩: ১১১-১১৮। 
  • ফিডলার, লেসলি (১৯৭৫)। Love and Death in the American Novel। নিউ ইয়র্ক: স্টেইন অ্যান্ড ডে। আইএসবিএন 978-0-8128-1799-7 
  • বায়ম, নিনা (১৯৯০)। "Actually I Felt Sorry for the Lion". in Benson, Jackson J. (ed). New Critical Approaches to the Short Stories of Ernest Hemingway। ডুর্কহাম: ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8223-1067-9 
  • বিগেল, সুজান (১৯৯৬)। "Conclusion: The Critical Reputation". in Donaldson, Scott (ed). The Cambridge Companion to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-45574-9 
  • বিগেল, সুজান (২০০০)। Eye and Heart: Hemingway's Education as a Naturalist". in Wagner-Martin, Linda (ed). A Historical Guide to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-512152-0 
  • বেকার, কার্লোস (১৯৬৯)। Ernest Hemingway: A Life Story। নিউ ইয়র্ক: চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্স। আইএসবিএন 978-0-02-001690-8 
  • বেকার, কার্লোস (১৯৭২)। Hemingway: The Writer as Artist। প্রিন্সটন: প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-691-01305-3 
  • বেকার, কার্লোস (১৯৮১)। Introduction" in Ernest Hemingway Selected Letters 1917–1961। নিউ ইয়র্ক: চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্স। আইএসবিএন 978-0-684-16765-7 
  • বেনসন, জ্যাকসন (১৯৮৯)। Ernest Hemingway: The Life as Fiction and the Fiction as Lifeআমেরিকান লিটারেচার৬১। পৃষ্ঠা ৩৫৪–৩৫৮। 
  • বেনসন, জ্যাকসন (১৯৭৫)। The Short Stories of Ernest Hemingway: Critical Essays। ডুর্কহাম: ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8223-0320-6 
  • বারওয়েল, রোজ ম্যারি (১৯৯৬)। Hemingway: the Postwar Years and the Posthumous Novels। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-48199-1 
  • ব্যাঙ্কস, রাসেল (২০০৪)। "PEN/Hemingway Prize Speech"। দ্য হেমিংওয়ে রিভিউ২৪ (১): ৫৩–৬০। 
  • ম্যাকরমিক, জন (১৯৭১)। American Literature 1919–1932। লন্ডন: রুটলেজ। আইএসবিএন 978-0-7100-7052-4 
  • মিলার, লিন্ডা পিটারসন (২০০৬)। "From the African Book to Under Kilimanjaro"। দ্য হেমিংওয়ে রিভিউ২৫: ৭৮–৮১। 
  • মুলার, টিমো (২০১০)। "The Uses of Authenticity: Hemingway and the Literary Field, 1926–1936"। জার্নাল অব মডার্ন লিটারেচার৩৩: ২৮–৪২। 
  • মেলো, জেমস (১৯৯১)। Charmed Circle: Gertrude Stein and Company। বোস্টন: হৌটন মিফলিন। আইএসবিএন 978-0-395-47982-7 
  • মেলো, জেমস (১৯৯২)। Hemingway: A Life Without Consequences। বোস্টন: হৌটন মিফলিন। আইএসবিএন 978-0-395-37777-2 
  • মেয়ার্স, জেফ্রি (১৯৮৫)। Hemingway: A Biography। নিউ ইয়র্ক: ম্যাকমিলান। আইএসবিএন 978-0-333-42126-0 
  • রেনল্ডস, মাইকেল (২০০০)। "Ernest Hemingway, 1899–1961: A Brief Biography". in Wagner-Martin, Linda (ed). A Historical Guide to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-512152-0 
  • রেনল্ডস, মাইকেল (১৯৯৯)। Hemingway: The Final Years। নিউ ইয়র্ক: নর্টন। আইএসবিএন 978-0-393-32047-3 
  • রেনল্ডস, মাইকেল (১৯৮৯)। Hemingway: The Paris Years। নিউ ইয়র্ক: নর্টন। আইএসবিএন 978-0-393-31879-1 
  • রেনল্ডস, মাইকেল (১৯৯৮)। The Young Hemingway। নিউ ইয়র্ক: নর্টন। আইএসবিএন 978-0-393-31776-3 
  • লিন, কেনেথ (১৯৮৭)। Hemingway। ক্যামব্রিজ: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-674-38732-4 
  • শোলস, রবার্ট (১৯৯০)। "New Critical Approaches to the Short Stories of Ernest Hemingway". in Benson, Jackson J. Decoding Papa: 'A Very Short Story' as Work and Text। ডারহাম, নিউ জার্সি: ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৩–৪৭। আইএসবিএন 978-0-8223-1067-9 
  • সভোবদা, ফ্রেডেরিক (২০০০)। "The Great Themes in Hemingway". in Wagner-Martin, Linda (ed). A Historical Guide to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-512152-0 
  • স্টলৎজফাস, বেন (২০০৫)। "Sartre, "Nada," and Hemingway's African Stories"। Comparative Literature Studies৪২: ২০৫–২২৮। 
  • স্মিথ, পল (১৯৯৬)। "1924: Hemingway's Luggage and the Miraculous Year". in Donaldson, Scott (ed). The Cambridge Companion to Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-45574-9 
  • স্যান্ডারসন, রেনা (১৯৯৬)। "Hemingway and Gender History". in Donaldson, Scott (ed). The Cambridge Companion to Ernest Hemingway"। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-521-45574-9 
  • হেমিংওয়ে, আর্নেস্ট (১৯২৯)। আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস। নিউ ইয়র্ক: চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্স। আইএসবিএন 978-1-4767-6452-8 
  • হেমিংওয়ে, আর্নেস্ট (১৯৭৫)। "The Art of the Short Story in Benson", in Jackson (ed). New Critical Approaches to the Short Stories of Ernest Hemingway। ডুর্কহাম: ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8223-1067-9 
  • হেমিংওয়ে, লেস্টার (১৯৯৬)। My Brother, Ernest Hemingway। নিউ ইয়র্ক: ওয়ার্ল্ড পাবলিশিং কোম্পানি। আইএসবিএন 978-1-56164-098-0 
  • হোবেরেক, অ্যান্ড্রু (২০০৫)। Twilight of the Middle Class: Post World War II fiction and White Collar Work। নিউ ইয়র্ক: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 978-0-691-12145-1 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

জীবনীমূলক সম্পাদনা

ই-সংস্করণ সম্পাদনা