আইজাক বাবেল
আইজাক বাবেল (১৮৯৪-১৯৪০) একজন রুশ ছোটগল্পকার ও সাংবাদিক। তাকে বিংশ শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় ছোটগল্প লেখকদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়।[১]
আইজাক বাবেল | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | July 12 [পুরাতন শৈলী অনুযায়ী June 30] 1894 ওদেশা, রুশ সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | জানুয়ারি ২৭, ১৯৪০ বুতির্কা জেল, মস্কো, ইউএসএসআর | (বয়স ৪৫)
পেশা | সাংবাদিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকার |
নাগরিকত্ব | রুশ, সোভিয়েত |
প্রথম জীবনসম্পাদনা
আইজাক বাবেল ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ক্রিমিয়ার ওডেসা শহরে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় রাশিয়াতে ইহুদি বিদ্বেষ এবং নির্যাতন ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের নিধনযজ্ঞে (pogrom) তার এক পূর্বপুরুষ নিহত হয়।
বাবেল ছোটবেলায় ধর্ম,সঙ্গীত ও ফরাসি ভাষা-সাহিত্যে দীক্ষা লাভ করেন। বড় হয়ে কিয়েভ চলে যান হিসাববিজ্ঞান ও বাবসায় শিক্ষা ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করতে। সেখানে ইয়েভ্গেনিয়ার সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ইয়েভ্গেনিয়ার সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রী লাভ করার পর ইহুদিদের চলাফেরার ওপর আরোপিত সরকারি বাধানিষেধ অগ্রাহ্য করে তিনি পেত্রোগ্রাদে চলে যান। সেখানে প্রখ্যাত লেখক গোর্কির সাথে তার শখ্যতা হয়। গোর্কি তার সাহিত্য পত্রিকায় বাবেলের দুটি ছোটগল্প ছাপেন এবং তাকে উপদেশ দেন বাস্তব জীবন থেকে আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে।
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে রুশ বিপ্লবে সমগ্র দেশ তোলপাড় হয়। বাবেল এই অস্থির সময়ে রোমানিয়াতে যুদ্ধে অংশ নেন, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন এবং ওডেসা ও পিটার্সবুর্গে বলশেভিকদের পক্ষে কাজ করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ইয়েভ্গেনিয়া-কে বিয়ে করেন।
লাল সওয়ারসম্পাদনা
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে সেমিয়োন বুদিয়োন্নি-র অশ্বারোহী সৈন্যদলের সাথে তিনি পোল্যান্ডে প্রবেশ করেন প্রতিবেদক ও প্রচারকের (propagandist) ভূমিকায়। তার ছদ্মনাম দেয়া হয় কিরিল লিউতোভ্। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ভেতর দিয়ে কস্যাক্ ঘোড়সওয়ারদের সেই বর্বরোচিত অভিযান বাবেল অমর করে রেখে গেছেন তার লাল সওয়ার (Red Cavalry) গল্পগুচ্ছে।
লাল সওয়ার বই আকারে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তার আগে মায়াকোভস্কি কয়েকটি গল্প তার পত্রিকায় ছাপেন। বুদিয়োন্নি সহ অন্যান্য প্রভাবশালী লোকজন বাবেলের ওপর নাখোশ হলেও গোর্কির ছত্রছায়ায় বইটি প্রকাশিত হয় এবং কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯২০-এর দশকে বাবেলের ছোটগল্প তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়। এসময় তার স্ত্রী ফ্রান্সে চলে যায়।
পরবর্তী জীবনসম্পাদনা
ত্রিশের দশক গোড়াতে বাবেল লিখেন ওডেসা-র গল্প (Odessa Tales)। স্ত্রীকে দেখতে তিনি কয়েকবার ফ্রান্সে যাতায়াত করেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে শেষবারের মতো ইয়েভ্গেনিয়ার সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তিনি আন্তোনিয়া পিরোজ্কোভার সাথে সংসার শুরু করেন।
এ সময়ে তিনি ধীরে ধীরে জনজীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বাবেল বলশেভিক সরকারের চাটুকারিতা করতে অস্বীকার করেন। এতে স্টালিন তার বিরুদ্ধে ক্রমশ বৈরীভাবাপন্ন হতে থাকে।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে গোর্কির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বাবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এর পর তার পালা। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে অবশেষে তিনি গ্রেফতার হন। স্টালিনের মহাশুদ্ধিকরন (Great Purge) অভিযান ততদিনে সমগ্র রাশিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। বাবেলকে কুখ্যাত লুবিয়াংকা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গোপনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত আন্তোনিয়া বাবেলের পরিণতি জানতে পারেননি। সে বছর সোভিয়েত সরকার তাকে মরণোত্তর পুনর্বাসন প্রদান করে।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Neither and Both: Anthology. Joshua Cohen. The Jewish Daily Forward, July 6, 2007, p. B2.