অস্কার (নিষেবক বিড়াল)

নিষেবক বিড়াল

অস্কার (২০০৫ সালে জন্ম) একটি  নিষেবক বিড়াল যেটি রোগ উপশমে ব্যবহত হয়; এবং এটি, প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের  স্টিয়ার হাউস নার্সিং এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার  এ বাস করছে। এ হুলো বিড়ালটি ২০০৭ সালের জুলাইতে সবার নজরে আসে যখন এটাকে নিয়ে  ডেভিড ড'জা  নামের একজন জরারোগ বিশেষজ্ঞ একটি নিবন্ধ লিখেন, তিনি ব্রাউন ইউনিভার্সিটি  এর সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। নিবন্ধটি ছাপা হয়  নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন   সাময়িকীতে। ডেভিড ড'জার মতে, অস্কার দেখিয়েছে এটি জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর আসন্ন মৃত্যুর ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস দিতে পারে। এ ক্ষমতার ব্যাখা হল-মুমূর্ষু রোগীর নড়াচড়া করার অক্ষমতা, অথবা হতে পারে বিড়ালটি ঘ্রাণের মাধ্যমে কিটোন শনাক্ত করতে পারে, যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ মৃত কোষ থেকে নির্গত হয় [১]

অস্কারকে নিয়ে ২০১০ সালে একটি বই রচিত হয়, মেকিং রাউন্ডস্‌ উইথ অস্কার: দ্যা এক্সট্রাঅর্ডিনারী গিফট অফ এন অর্ডিনারী ক্যাট  নামে[২]

পটভূমি সম্পাদনা

অস্কার নামের এই বিড়ালটিকে শাবক থাকাকালে প্রাণী-আশ্রম থেকে পোষ্য নেয়া হয়। এটি বেড়ে উঠেছিল স্টিয়ার হাউস নার্সিং এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার এর তিনতলায় অবস্থিত মৃত্যু-পথযাত্রী  দুরারোগ্য ডিমেনশিয়া রোগীদের নিবাসস্থলে, চিকিৎসা কেন্দ্রটির অবস্থান প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ড । ৪১ শয্যা বিশিষ্ট বিভাগটি  আলঝেইমার’স, পারকিনসন রোগ এবং আরো নানাবিধ রোগে ভুগতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে, যাদের প্রায় সবাই জীবনের সায়াহ্নে এসে পড়েছেন এবং এরা কার্যত পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে খেয়াল রাখতে অক্ষম।

অস্কার ছিল ছয়টি বিড়ালের একটি, যেগুলোকে স্টিয়ার হাউস এ পোষ্য নেয়া হয়। এখানকার সংশ্লিষ্টরা স্টিয়ার হাউস কে পোষা প্রাণীর জন্য অতুলনীয় বলে দাবী করেন এবং এখানে অনেক পোষা প্রাণীর আগমন ঘটে ও বসবাস করে।[৩] মূলত আগের থেরাপী পেট হেনরী ( হেনরী জে. স্টিয়ার এর নাম অনুসারে নামকরণ করা) এর মৃত্যুর পর থেকে এ ধারা চলে আসছে।

মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পাদনা

প্রায় ছয় মাস যাবত দেখার পর, স্টিয়ার হাউসে কর্মরতরা লক্ষ্য করেন যে, চিকিৎসকসেবিকাদের মত অস্কার নিজে নিজে রোগীর শয্যা পাশে ঘুরে বেড়ায়। অস্কার রোগীদের পর্যবেক্ষণ করতো এবং শুঁকত,তারপরে একজনকে বেছে নিয়ে তারপাশে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পড়ত। যে রোগীর পাশে সে শুত তার কয়েক ঘণ্টা পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু ঘটত। সর্ব প্রথম ঘটনাটি ঘটতে দেখা যায়, কোন এক রোগিনীর সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার পা গুলো শীতল হয়ে যায়। এসময় অস্কার, রোগিনীর পা জড়িয়ে মৃত্যু অবধি তার পাশেই কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে ছিল।[৪] অন্য একটি ক্ষেত্রে, চিকিৎসক রোগীর হাল বিবেচনা করে মৃত্যু অবধারিত বলে দেন, কিন্তু অস্কার সেখান হতে চলে যায়, এতে চিকিৎসক ভেবে নেন অস্কারের এই অসাধারণ ক্ষমতা (সে সময় বারটি দৃষ্টান্ত ছিল) নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, পরে দেখা যায় প্রকৃতপক্ষে বার ঘণ্টা পূর্বেই চিকিৎসক ঘোষণাটি দিয়েছিলেন: পরে অস্কার সে রোগীর পাশে যায়, এবং তার দুই ঘণ্টা পরেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। [৫]

অস্কারের নির্ভুল দক্ষতা (যা একাধারে পঁচিশটি দৃষ্টান্ত পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছে  NEJM এর প্রবন্ধটি লেখা কালীন অবধি) নতুন ও অপ্রচলিত একটি রীতি চালু করতে বাধ্য করে: যেই মাত্র তাকে কোন রোগীর পাশে শুয়ে থাকতে দেখা যায়, কর্তব্যরতরা রোগীর স্বজনদের আসন্ন মৃত্যুর খবর দিয়ে জানিয়ে দিত।[৫]

বেশিরভাগ মৃত্যুর সময় অস্কার উপস্থিত থাকার সঙ্গে রোগীর পরিবার কোন প্রতিবাদ জানাত না। যেসব ক্ষেত্রে পরিবারের অণুরোধে বিড়ালটিকে কক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলা হত, সে ফিরে ফিরে কক্ষের দরোজার সামনে আসত এবং মৃদু স্বরে ডাকাডাকি করতো। এছাড়া অন্যসময় রোগীর সামনে অস্কার উপস্থিত থাকাকালে, মৃত্যু অবধি অবস্থান করতো, এবং মৃত্যুর পর নিঃশব্দে কক্ষ ত্যাগ করতো।

জানুয়ারী ২০১০ পর্যন্ত, অস্কার নির্ভুল ভাবে প্রায় পঞ্চাশ জন রোগীর মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়ে ছিল।[২]

সম্ভাব্য ব্যাখ্যা সম্পাদনা

প্রভিডেন্সে অবস্থিত ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে কমিউনিটি হেলথ এর অধ্যাপক ডঃ জোয়ান টেনো, যিনি স্টিয়ার হাউসের রোগীদের প্রতি খেয়াল রাখেন, তিনি বলেন-: "বিড়ালটি শুরু থেকে সেখানে থাকে ব্যাপারটি আসলে তেমন নয়। কিন্তু সে যেভাবে সর্বদাই উপস্থিতি নিশ্চিত করে, তা শেষ দু-ঘণ্টার মধ্যেই হয়ে থাকে।"[৬] অস্কারের জীবনের পুরোটাই কেটেছে মৃত্যু-পথযাত্রী দুরারোগ্য ডিমেনশিয়া রোগীদের নিবাসস্থলে যেখানে প্রায়শই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এবং এটি খুবই চেনা দৃশ্য।[৪]

ঘ্রাণশক্তি বা কোন গন্ধ নিসৃত হওয়ার ব্যাপারটি হয়তোবা একটি কারণ। ডাঃ ড্যানিয়েল ইস্তেপ,একজন পশু-আচরণ বিশেষজ্ঞ বলেন-" একটি বিষয় খুবই সাধারণ যে, মুমূর্ষু রোগীরা খুব কমই নড়াচড়া করে। হয়তোবা বিড়ালটি লক্ষ্য করে কোন রোগী তার বিছানায় নড়ছে না। তাই হতে পারে এটি ঘ্রাণশক্তি নয় বরং নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া"[৪]

জনপ্রিয়তা সম্পাদনা

  • ২০১০ সালে, ডাঃ ড'জা এর রচিত বইয়ের অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা শোনা যায়।[৭]
  • ডঃ স্লিপ নামে স্টিফেন কিং এর দ্যা শাইনিং উপন্যাসটির পরের খণ্ডে,একটি বিড়াল কে দেখা গিয়েছিল যে মানুষের মৃত্যুর ভবিষৎবানী দিয়ে থাকে। কিং বিবৃতি দেন অস্কারের ঘটনাকে উপজীব্য করে রচনাটি লেখা হয়।[৮]
  • অস্কার কে ডিস্কাভারী চ্যানেলের উইয়ার্ড অর হোয়াট? অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়।
  • টিভি ধারাবাহিক হাউস এর সিজন-৫, পর্ব-১৮, "হিয়ার কিটি" তে দেখানো হয়,একটি বিড়াল মানুষের মৃত্যুর ভবিষৎবানী দেয়।
  • টাওক্যাট নামে একটি পাঙ্ক-রক ব্যান্ড দল "Oscar" নামে একটি গান রচনা করে।
  • "জাস্ট বিফোর আই গো" নামে একটি চলচ্চিত্রে, গ্রেটার পিতামহীর মৃত্যুর সময়ে একটি বিড়াল কে তার পাশে কুন্ডলী পাকাতে দেখা যায়

আরো দেখা যেতে পারে সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Leonard, Tom.
  2. Henry, Ray (2010-01-31).
  3. "Pet therapy" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে.
  4. "Cat's "Sixth Sense" Predicting Death?"
  5. Dosa, DM (2007).
  6. Cat senses impending death The Register, July 26, 2007.
  7. McClintock, Pamela (২০১০-০৮-২০)। "Feline Oscar heads to big-screen"। Variety.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-০৭ 
  8. "Stephen King unearths origin of 'The Shining' sequel 'Doctor Sleep'"। EW.com। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 

তথ্যসংযোগ সম্পাদনা

  • Associated Press (২০০৭-০৭-৩০)। "When death comes calling, so does Oscar the cat"CNN। ২০০৮-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-১৯ 
  • Associated Press (২০০৭-০৭-২৫)। "Oscar the cat predicts patients' deaths"Yahoo! News। ২০০৭-০৭-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা