অল থিংস ফেয়ার (সুইডীয়: Lust och fägring stor, আক্ষরিক অর্থে "মহৎ কাম ও সৌন্দর্য", ইংরেজি: All Things Fair) হল একটি সুইডিশ কামোদ্দীপক ড্রামা চলচ্চিত্র। ১৯৯৫ সালের ৩ নভেম্বর সুইডেনে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।[১] বো ওয়াইডারবার্গ পরিচালিত এই ছবিটির মূল উপজীব্য বিষয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ সুইডেনে এক শিক্ষিকার সঙ্গে তার ১৫ বছর বয়সী ছাত্রের যৌন সম্পর্ক। বো ওয়াইডারবার্গের পুত্র জোহান ওয়াইডারবার্গ কিশোর ছাত্রটির ভূমিকায় এবং মারিকা ল্যাগারক্র্যান্টজ তার শিক্ষিকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবির মূল শিরোনামটি সুইডিশ স্তোত্র "ডেন ব্লোমস্টারটিড নু কোমার" থেকে গৃহীত। এই গানটি সেই দেশের ঐতিহ্য অনুসারে গ্রীষ্মাবকাশে স্কুল ছুটির পূর্বে এই গানটি গাওয়া হয়ে থাকে।

অল থিংস ফেয়ার
থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ পোস্টার
পরিচালকবো ওয়াইডারবার্গ
প্রযোজকপার হোলস্ট
রচয়িতাবো ওয়াইডারবার্গ
শ্রেষ্ঠাংশে
চিত্রগ্রাহকমর্টেন ব্রুস
মুক্তি
  • ৩ নভেম্বর ১৯৯৫ (1995-11-03)
স্থিতিকাল১৩০ মিনিট
দেশসুইডেন
ভাষাসুইডিশ ভাষা
নির্মাণব্যয়২৫ মিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোন

এই ছবিটিই ওয়াইডারবার্গ নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র। এটি একাধিক ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয় করেছিল এবং শ্রেষ্ট বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্যও মনোনয়ন লাভ করেছিল।[২]

কাহিনি-সারাংশ সম্পাদনা

১৯৪৩ সালের ম্যালমোর প্রেক্ষাপটে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। সেই সময় ইউরোপের অবশিষ্টাংশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত। ছবির মূল উপজীব্য বিষয় হল ৩৭ বছর বয়সী শিক্ষিকা ভায়োলার সঙ্গে তার ছাত্র ১৫ বছর বয়সী কিশোর স্টিগের প্রণয়াকর্ষণ। ছবির প্রথম দিকে স্টিগ ও ভায়োলার শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখানো হয়। তারপর দেখা যায়, ভায়োলার স্বামী ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে স্টিগের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে। ফ্র্যাঙ্ক পেশায় সেলসম্যান ও পানাসক্ত। নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে সে সব জেনেও তা আটকানোর জন্য কিছুই করত না।

এদিকে স্টিগের কুমারী প্রতিবেশিনী তথা সহপাঠিনী লিসবেট গোপনে তাকে ভালোবাসে। স্টিগের বাড়ির বাইরে আয়োজিত একটি পার্টিতে লিসবেট স্টিগকে বলে যে, সে তাকে কিছু দেখাতে চায় এবং এই কথা বলে স্টিগের ঘরে তার সঙ্গে উপস্থিত হয়। ঘরে ঢুকেই লিসবেট দরজা লক করে স্টিগকে চোখ বন্ধ করতে বলে। তারপর লিসবেট পোশাক খুলে নগ্ন হয়ে স্টিগকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে প্ররোচিত করে। স্টিগকে সে বালিশের তলায় লুকানো একটি কনডোম দেখায় এবং বিছানার তলায় একটি ন্যাকড়া দেখিয়ে বলে যে, যেহেতু সেই প্রথম সে যৌনসঙ্গম করবে, তাই কোনওরকম রক্তপাত হলে সেই ন্যাকড়া দিয়ে তা মুছে নেওয়া যাবে। কিন্তু স্টিগ লিসবেটের প্রস্তাবে রাজি হয় না। এতে অপমানিত হয়ে লিসবেট দ্রুত পোশাক পরে নিয়ে স্টিগকে কারণ ব্যাখ্যার কোনও সুযোগ না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

পরদিন স্কুলে স্টিগ লিসবেটের জিমনাস্টিকস ক্লাসের কাছে খেলাধূলার সরঞ্জামের একটি ভল্ট বক্সে লুকিয়ে থাকে। লিসবেটের দিকে সে একটি চিরকুট ছুঁড়ে দেয়। সেই চিরকুটে লিসবেটকে বক্সটির দিকে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। চিরকুটটি পড়ে লিসবেটতে তার বন্ধুকে বিশ্রামঘরে যেতে বলে। সে চলে গেলে লিসবেট স্টিগের সঙ্গে ভল্টে মিলিত হয়। স্টিগ ও লিসবেট যখন ভল্টে শুয়ে ছিল, তখন লিসবেটের বন্ধু ঘরটি খালি রেখেই বেরিয়ে যায়। হঠাৎ জানা যায়, পরবর্তী ক্লাস ভল্টটি ব্যবহার করবে। তাই দু-জনে তার ভিতর ক্লাসের শেষ পর্যন্ত সেখানে আটকে থাকে। ক্লাসের শেষে তারা যখন সেখান থেকে বের হয়, তখন জানা যায় যে তারা সেখানে প্রণয়ালাপ করছিল। স্টিগ ভায়োলার সঙ্গে তার সম্পর্কে ইতি টানে। এতে ক্লাস শুরুর আগে ভায়োলা রাগে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন।

একটি মুভি ক্লাস ইভেন্টের সময় লিসবেটকে জেনিটরের ঘরে স্টিগকে ভায়োলার সঙ্গে যৌনসঙ্গমরত অবস্থায় দেখতে পায়। স্টিগ তার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু লিসবেট প্রচণ্ড রাতে তাকে জানিয়ে দেয় যে, সেখানেই তাদে সম্পর্কের ইতি ঘটল এবং সে কোনওদিনই আর স্টিগের মুখদর্শন করতে চায় না।

অবশেষে ভায়োলাও তার স্বামীর মতো মদ্যপান শুরু করেন। একদিন একটি ভাঙা বোতল নিয়ে স্টিগকে ভয় দেখানোর পর তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। স্টিভ ভেঙে পড়ে। কারণ একদিকে সে তার যৌন সম্পর্কটি হারায়, এবং অন্যদিকে তার দাদা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায়। ভায়োলা ঠিক করে স্টিগকে পরীক্ষায় ফেল করাবেন, যাতে সে তৃতীয় বর্ষে আবার পড়াশোনা করতে বাধ্য হয়। র‍্যাপোর্ট ডে তে স্টিগ নিজের গোপনাঙ্গ দেখিয়ে ভায়োলার কুকীর্তি ফাঁস করে দেয় এবং নিজের র‍্যাপোর্ট গ্রহণ করে না। অধিকন্তু সে ভায়োলার অভিধানের সেটটিও চুরি করতে সক্ষম হয়।

কলাকুশলী সম্পাদনা

পুরস্কার ও মনোনয়ন সম্পাদনা

এই ছবিটি ৪৬তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জ্যুরি পুরস্কার রৌপ্য ভল্লুক ও ব্লু এঞ্জেল পুরস্কার[৩] এবং গথেনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকমণ্ডলী পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া এই ছবিটি রুয়েন নর্ডিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে (জোহান ওয়াইডারবার্গ) এবং ফেস্ট্রোইয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে (মারিকা ল্যাগারক্র্যান্টজ) পুরস্কারও জয় করে।[৪]

গাল্ডব্যাগ পুরস্কার অনুষ্ঠানে এই ছবিটি তিনটি বিভাগে পুরস্কার জয় করে: শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালনা ও শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা (টমাস ভন ব্রোমসেন)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগেও যথাক্রমে জোহান ওয়াইডারবার্গ ও মারিকা ল্যাগারক্র্যান্টজ মনোনয়ন লাভ করেছিলেন।[৫] ৬৮তম অ্যাকাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে এটি বিদেশি ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Lust och fägring stor" (English ভাষায়)। Swedish Film Database। ৩ নভেম্বর ১৯৯৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "The 68th Academy Awards (1996) Nominees and Winners"oscars.org। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৫ 
  3. "Berlinale: 1996 Prize Winners"berlinale.de। ২০১৮-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-০১ 
  4. Utmärkelser at the Swedish Film Institute (সুয়েডীয়)
  5. Guldbaggen: Vinnare och nominerade 1991-1999 at the Swedish Film Institute (সুয়েডীয়)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা