অপারেশন স্টর্মি নাইটস

অপারেশন স্টর্মি নাইটস হলো ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর অধীন একটি প্রাথমিক মানব-পাচারবিরোধী অভিযান। এ অপারেশনগুলি ওকলাহোমাতে সংঘটিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম্বারড হাইওয়েতে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী পাচারকারীদের সংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্ক সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছিল, যেখানে মেয়েরা ট্রাক চালকদের সেবায় পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয়েছিল।

শুরু

২০০৪ সালে অপারেশনটি করা হয়েছিল এবং এর ফলে ২৩ জন মেয়েকে শিশু পতিতাবৃত্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। বারোজন পিম্পকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই পাচারকৃতদের অধিকাংশেরই বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর ছিল। লেফটেন্যান্ট অ্যালান প্রিন্স বলেছিলেন যে, স্টর্মি নাইটসের মতো অপারেশনগুলি খুব কঠিন হয়। কারণ মেয়েরা সবসময় চলাফেরার মধ্যেই থাকে ... এবং যখন আপনি তাদের খুঁজে পাবেন তখন তাদের সাথে কথা বলা কঠিন হয়।" এই স্টিং অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন এফবিআই এজেন্ট মাইক বিভার, যিনি একজন গুপ্তচর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

যৌন পাচার

স্টর্মি নাইটসে উদ্ধার হওয়া মানব পাচারের শিকারদের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যাঞ্জি নামের একটি মেয়ে। বীভার অ্যাঞ্জিকে "অতি সাধারণ একজন আমেরিকান কিশোরী" বলেছিলেন। ক্যানসাসের উইচিতা থেকে আসা অ্যাঞ্জিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য -পশ্চিমাঞ্চলের মেলিসার আরেকটি মেয়ের সাথে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তারা দুজনেই তখন কিশোরী ছিল।

সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র

অ্যাঞ্জি তথ্যচলচিত্র নট মাই লাইফ -এ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে অ্যাঞ্জি ব্যাখ্যা করেছিলেন, কীভাবে তিনি এবং মেলিসা ট্রাক স্টপে ট্রাক চালকদের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া এবং তাদের অর্থ চুরি করার জন্য নিয়োজিত হতেন। অ্যাঞ্জি বলেছিলেন যে, এই চালকদের মানিব্যাগগুলির খুঁজতে গিয়ে একটির মধ্যে তিনি লোকটির নাতি-নাতনিদের ছবি খুঁজে পেয়েছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন চালকটি তাঁর ও মেলিসার দাদার (দাদু) বয়সী। তিনি বিতৃষ্ণার সঙ্গে ও প্রায় কান্নাকাটি করে এই গল্পটি বর্ণনা করেন এবং বলেন, "আমি মরতে চেয়েছিলাম।" ছবিতে বিভারও উপস্থিত হয়ে বলেন, "এটা শুধু ট্রাক ড্রাইভার নয়। আমরা তাদের আলাদা প্রশাসনিক পদস্থ কর্মী ও শ্রমিক শ্রেণীর ব্যক্তিদের দ্বারা কৃত ও নির্যাতিত হতে দেখছি।" চলচ্চিত্রের পরিচালক রবার্ট বিলহাইমার বলেছিলেন যে অ্যাঞ্জি যৌন পাচারের ঝুঁকিতে থাকার মত বাঁধাধরা গোত্রের নয়। সে হার্টল্যান্ডের অধিবাসি ছিল, একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়েছিল এবং যখন তার বাবা এবং মায়ের তালাক হয়ে গিয়েছিল, তখন সে অভিনয় করে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইত। ১২ বছর বয়সে একজন লোক তাকে অপহরণ করে এবং মান আইন লঙ্ঘন করে অন্য রাজ্যে নিয়ে যায়। তার দ্বারা যৌন পাচার শুরু করে। পাচারের সময়, অ্যাঞ্জি প্রতি রাতে ৪০ জনের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হবে বলে আশা করা হয়েছিল। তার দর ছিল মুখগত যৌনকর্মেরর জন্য ২০ ডলার, যোনিগত যৌনকর্মের জন্য ৪০ ডলার এবং উভয়ের জন্য ৮০ ডলার। তার পাচারকারী তাকে বলে, এই কাজ করতে সে অস্বীকার করলে তাকে হত্যা করা হবে। বিলহাইমার বলেছিলেন, যে ট্রাকচালকদের অ্যাঞ্জি পরিষেবা দিয়েছিলেন তাঁরা হয়ত জানতেন না বা জানতে চাইতেন না যে অ্যাঞ্জি তার উপার্জিত সমস্ত অর্থ নিজের দালালকে না দিলে তার কী হবে।

আরেকটি মেয়েকে দুর্যোগপূর্ণ রাতে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু উদ্ধার করেন এবং তাকে জেলা অ্যাটর্নির কাছে পাঠানো হয় যাতে তার আদেশে মেয়েটির সাক্ষ্যদানের প্রস্তুতিতে সহায়তার পাওয়া সহজতর হয়। কিন্তু ডিএ বলেছিলেন তিনি মেয়েটির সাথে কথা বলবেন না যতক্ষণ না সে তাঁকে শিশ্ন-মুখমৈথুন সেবা দিচ্ছে। বিলহাইমার বলেছিলেন, যদিও নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই যে এঞ্জির মতো কত মেয়ে যৌন পাচার হচ্ছে, "পরিশ্রমী লোকজন ন্যূনতম একটি সংখ্যায় পৌঁছেছেন... এক লক্ষ মেয়ে, তাদের মধ্যে আট থেকে দশ পনেরো জন প্রতিদিন দশজনকে যৌন সেবা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেছিলেন, প্রতিবছর এক বিলিয়ন যৌন সহিংসতার কোন শাস্তি হয়না। বিলহাইমার মধ্যপ্রাচ্যের একটি ট্রাক স্টপে বীভারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যেখানে অ্যাঞ্জিকে পাচার করা হয়েছিল। তখন কেউ বীভারের গাড়ির ধুলোর মধ্যে আঙুল চালিয়ে লিখেছিল "ফাক ইউ, অ্যাশহোল!" বিলহাইমার বলেছিলেন যে এই কাজটি প্রমাণ করে, অনেক ট্রাক চালক আইন প্রয়োগকারীকে ঘৃণা করে। যদিও তিনি বলেছিলেন যে "সেখানে কিছু ভাল ট্রাক চালকও আছে।" যেমন ট্রাকার্স এগেইনস্ট ট্রাফিকিং সংস্থা ট্রাক চালকদের মধ্যে মানব পাচারের বিরোধিতা করে। যখন স্টর্মি নাইটসের খবর প্রকাশ করা হয়, তখন দেশজুড়ে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই এফবিআই "ইনোসেন্স লস্ট" প্রতিষ্ঠা করে এবং এ নতুন বিভাগ শিশুদের পতিতাবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে কাজ করে।