অন্ধবিন্দু(Blind spot হল চোখের দৃষ্টিপটের মাঝামাঝি অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র অংশ যা আমরা আসলে দেখতে পাইনা (অন্ধ) কিন্তু চোখের অনবরত সামান্য নড়া চড়ার (মাইক্রো-স্যাক্ক্যাড) জন্য ক্ষণিক আগের সেই অংশটির ও তার আশেপাশের দৃশ্য দিয়ে মনের মধ্যে ভরাট করে নিই তাই এর অস্তিত্ব টের পাই না। অন্য চোখের

  • শারীরবৃত্তীয় অন্ধবিন্দু: শারীরস্থানিক অন্ধবিন্দু বা অপটিক ডিস্ক হল চক্ষুগোলকের সঙ্গে চক্ষুস্নায়ুর (অপটিক নার্ভ Optic nerve) সংযোগস্থল, যেখান থেকে গ্যাংলিয়ন কোষ (Ganglion cell) স্নায়ুতন্তুগুলো চোখ থেকে বের হয়ে চক্ষু স্নায়ু (অপটিক নার্ভ) গঠন করে। এখানে আলোক সংবেদী রডকোণ কোষগুলি নেই তাই এখানে রেটিনা কোন আলোক চিত্র গঠন করে না তাই এই বিশেষ অন্ধবিন্দুটি একটি শারীরবৃত্তীয় অন্ধবিন্দু। শারীরস্থানিক অন্ধবিন্দু চক্ষুগোলকের ফোভিয়ার কাছকাছি, একই তলে কিন্তু একটু নাকের দিকে অবস্থিত।
  • বিকার-জনিত অন্ধবিন্দু বা স্কোটোমা: রেটিনাইটিস ইত্যাদি কোন রোগজনিত কারণে রেটিনার কোন ছোট ছোট অংশের দৃষ্টিক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে ও তার চারিদিকের অংশে দৃষ্টি অটুট থাকলে তাকে বলে স্কোটোমা (Scotoma) বা বিকার-জনিত (প্যাথলজিকাল) অন্ধবিন্দু।
মানুষের চক্ষুগোলকের চিত্র; নিচের দিকে অপ্টিক ডিস্ক (Optic disc) চিহ্নিত অংশটি হল অন্ধবিন্দু

বিবর্তন

সম্পাদনা

সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর এই শারীরস্থানীয় অন্ধবিন্দু থাকলেও অক্টোপাস স্কুইড ইত্যাদি সেফালোপোডা জাতীয় প্রাণীদের চোখ যা বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা মেরুদণ্ডীদের চোখের মত, তাতে এরকম শারীরস্থানীয় অন্ধবিন্দু থাকে না। বিবর্তনবাদের ঐতিহাসিক বিতর্কে এটি যুক্তি হিসাবে ববহৃত হয়েছিল যে যদি বিশ্ববিধাতা ভগবান (creator god) আমাদের সর্বাঙ্গসুন্দর চোখ দিতে চাইতেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই এরকম অন্ধবিন্দুযুক্ত চোখ দিতেন না, যদি তিনি আমাদের থেকে অপেক্ষাকৃত অণুন্নত জীবদেরও ইতোমধ্যেই অন্ধবিন্দু বিহীন চোখ দিয়েছেন।

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৬৬০ সালে এডমে মেরিয়ট ফ্রান্সে অন্ধবিন্দু প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন। তার আগে মনে করা হত যে চক্ষুস্নায়ুর প্রবেশস্থলেই চক্ষুর সংবেদনশীলতা সবচেয়ে বেশি হবে। [১].

নিজে করে দেখুন

সম্পাদনা

নিজের অন্ধবিন্দু দেখা কিন্তু খুব সহজ। নিচে এটি দেখবার একটি পদ্ধতি দেওয়া হল। এই ছকটি বাম চোখের অন্ধবিন্দু দেখবার জন্য তৈরী। অন্ধবিন্দু ফোভিয়া থেকে নাকের দিকে অর্থাৎ বামচোখের ক্ষেত্রে অন্ধবিন্দু ফোভিয়ার ডান দিকে থাকবে। বাম চোখের ফোভিয়া যখন X কে দেখছে তখন চোখকে একটু সামনে পিছনে করলেই একসময় তার বাম দিকের -এর চিত্র বাম চোখের অন্ধবিন্দুর উপরে গঠিত হবে। আপনি জানেন যে ক লেখাটি সেখানে ছিল। কিন্তু লেখাটি অন্ধ বিন্দুতে পড়লে মনে হবে সেখা কিছু লেখা নেই -- সেখানকার চিত্র তখন তার চারপাশের মেলামেশানো পশ্চাৎপট।

নিজেই নিজের অন্ধবিন্দুর অস্তিত্ব দেখুন
X
নির্দেশ: আপনাকে এই স্ক্রীনের খুব কাছে মুখ করে থাকতে হবে। ডান চোখটিকে ডান হাতে বন্ধ করে বাম চোখ দিয়ে X-এ নজর কেন্দ্রীভূত করুন। এবার আস্তে আস্তে স্ক্রীন থেকে দূরে মুখ সরাতে থাকুন।
এক দেড় ফুট দূরে যাবার পর অদৃশ্য হয়ে যাবে কিন্তু তার থেকে দূরে স্থিত দেখতে পাওয়া যাবে। তার মানে সেই সময় আপনার বাম চোখের অন্ধবিন্দুতে পড়েছে (লক্ষ করুন যে আপনি কোন ছিদ্র বা কালো ছোপ দেখছেন না। বরং র বদলে আপনি প্রায় সমসত্ত্ব পশ্চাৎপট দেখছেন। আপনার দশ্যপটের ছিদ্র মনের মধ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।)

বহির্গামী যোগসূত্র

সম্পাদনা
ইন্দ্রিয় তন্ত্র - দর্শনেন্দ্রিয় - চোখ - সম্পাদনা
চক্ষুগোলকের আবরক: কনজাংটিভা | স্‌ক্লেরা | কর্নিয়া | শ্লেমের নালিকা | ট্রাবেকিউলার মেশওয়ার্ক 

ইউভেয়া: কোরয়েড | আইরিস | পিউপিল | সিলিয়ারি বডি 

রেটিনা : ম্যাকুলা | ফোভিয়া | অন্ধবিন্দু 

সম্মুখ অংশ (সম্মুখ প্রকোষ্ঠ, অ্যাকুয়াস হিউমার, পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠ, লেন্স) | পশ্চাৎ অংশ (ভিট্রেয়াস হিউমার)