অনিলকুমার দত্ত (১৫ এপ্রিল ১৯৩৩ – ১ সেপ্টেম্বর ২০০৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি শিল্পী এবং শিক্ষাবিদ। তিনি শিল্প ও সাহিত্য নামের এক সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক এবং একাডেমি অফ ক্রিয়েটিভ আর্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ ছিলেন।[১]

অনিলকুমার দত্ত
জন্ম(১৯৩৩-০৪-১৫)১৫ এপ্রিল ১৯৩৩
সাহানগর কলকাতা, বৃটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু১ সেপ্টেম্বর ২০০৬(2006-09-01) (বয়স ৭৩)
পেশাচিত্রশিল্পী, পত্রিকা সম্পাদক
পিতা-মাতাজ্ঞানরঞ্জন দত্ত (পিতা)
পারুলবালা দত্ত (মাতা)

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

অনিলকুমার দত্তের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল ( ১৩৪০ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা দক্ষিণ কলকাতার সাহানগরে।  জ্ঞানরঞ্জন দত্ত এবং পারুলবালা দত্তের সাত সন্তানের চতুর্থ সন্তান ছিলেন অনিলকুমার। যখন তার বয়স সাত বৎসর এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতার বয়স তিন বৎসর,  তখন তার পিতা ও মাতা ছয় মাসের ব্যবধানে দুজনেই  মারা যান। সেকারণে তারা সাত জনই পিতামহের কাছে প্রতিপালিত হন।

ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে ও কবিতা লিখতে ভালবাসতেন। স্কুলে পড়াল সময় থেকেই তিনি নিজের পাড়ায় একটি হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময়, তিনি নিজে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বারোয়ারি দুর্গাপূজা শুরু করেন। সেই বারোয়ারি পূজা কালক্রমে 'সাহানগর তরুণ সংঘের পূজা' হয়ে ওঠে।

সাহানগর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর  তিনি কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়। কিন্তু পরের বছর, তিনি ক্যালকাটা আর্ট স্কুলে (পরে কলকাতা আর্ট কলেজ নামে পরিচিত) ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীর স্নাতক হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। কলেজে সহপাঠীদের মধ্যে তিনি "কবি" হিসাবে পরিচিত  ছিলেন এবং সকলেই নিশ্চিন্ত ছিলেন যে,  তিনি শীর্ষ স্থান পাবেন।


পরীক্ষা পাশের পর তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে  'ডিজি প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সিন্ডিকেট'  নামে গ্রাফিক ডিজাইনের  ব্যবসা শুরু করেন।

শিল্পকর্ম সম্পাদনা

যদিও তিনি গ্রাফিক ডিজাইন এবং বাণিজ্যিক শিল্পের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, প্রতিকৃতি এবং তার প্রধান আগ্রহ, প্রতিকৃতি এবং  ভূদৃশ্য তথা ল্যান্ডস্কেপ অঙ্কনে তার প্রবল আগ্রহ ছিল।

স্বকালবেলা— সম্পাদনা

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে, তিনি সমসাময়িক একশত জনের প্রতিকৃতি আঁকার প্রকল্প "স্বকালবেলা"-র (অর্থাৎ নিজের সময়ে) পরিকল্পনা নেন।  এই প্রকল্পের  প্রতিকৃতিগুলি কোনোরকমের অঙ্কন বা স্কেচ ছাড়াই সরাসরি  তিনি ব্রাশ দিয়ে এক ঘন্টা বা দেড় ঘন্টায় দুটি বা তিনটি  বৈঠকে সম্পন্ন করতেন। এভাবে তিনি বাষট্টিটি প্রতিকৃতি তৈরি করেন। এই প্রতিকৃতিগুলির বিষয়বস্তু নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে  অনিলকুমার ''মুক্তপত্র'' নামে এক সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। পরে তিনি 'মুক্তপত্র পাবলিকেশন্স' নামেকরে এক প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাহিত্য পত্রিকাটির  নাম পরিবর্তন করেন ''শিল্প ও সাহিত্য'' রাখেন। পত্রিকাটির   সম্পাদক হিসাবে তিনি সবসময় নতুন ও স্বল্প পরিচিত  কবি, লেখক ও শিল্পীদের সুযোগ দিতেন।

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে, তিনি লিটল ম্যাগাজিনের জন্য বার্ষিক ''শিল্প ও সাহিত্য পুরস্কার'' -এর সূচনা করেন। দেশের যেকোনো স্থানে প্রকাশিত সকল বাংলা লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রচনার লেখকদের উৎসাহিত করা জন্য পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করেন। সেগুলি হল— সেরা কবিতা, সেরা ছোটগল্প, সেরা নন-ফিকশন, সেরা কভার ডিজাইন এবং সেরা সম্পাদনা।

শিল্প শিক্ষা সম্পাদনা

তিনি কলকাতার "অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস " এর পুনরুদ্ধারের  পরামর্শদাতা এবং এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি চারুকলা একাডেমিকে শিল্প শিক্ষার উপর একটি স্কুল চালু করার সুপারিশ করেন। এইভাবে, "ইনস্টিটিউট অফ ভিজ্যুয়াল আর্টস" প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তিনিই প্রতিষ্ঠানটির  প্রথম অধ্যক্ষ হন।

পরবর্তীতে, ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা "একাডেমি অফ ক্রিয়েটিভ আর্ট" প্রতিষ্ঠা করেন এবং এরও প্রথম অধ্যক্ষ হন। একাডেমি দুটি নতুন ও তরুণ শিল্পীদের জন্য শিল্প শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যবস্থা করেন। বরিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ শিল্পীদের শিক্ষকতার জন্য তিন বৎসরের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ শেষে ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

অনিলকুমার দত্ত ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর (১৪১২ বঙ্গাব্দের ১৫ ভাদ্র) কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Anil Kumar Dutta" (ইংরাজী ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা