সরযূবালা দেবী

বাংলা অভিনেত্রী ও গায়িকা

নাট্যসম্রাজ্ঞী সরযূবালা দেবী ( জানুয়ারি  ১৯১২ ― ২২ জুলাই ১৯৯৪) ছিলেন একজন খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেত্রী ও গায়িকা।[১]

সরযূবালা দেবী
জন্মজানুয়ারি ১৯১২
আড়িয়াদহ, চব্বিশ পরগনা বৃটিশ ভারত
মৃত্যু২২ জুলাই ১৯৯৪
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
পেশা
  • অভিনেত্রী
  • গায়িকা
পিতা-মাতাভূতনাথ দত্ত (পিতা)
পুরস্কারসংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
দীনবন্ধু পুরস্কার

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

সরযূবালার জন্ম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের   উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আড়িয়াদহে। তার পিতা ভূতনাথ দত্ত।[২] শৈশবে তার পিতৃবিয়োগ ঘটে। তাই সংসারের প্রয়োজনে মাত্র নয় বৎসর বয়সে সরযূবালা নাট্যমঞ্চে যোগ দেন।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

সরযূবালা এমিনেন্ট থিয়েটারে কুমারসিংহ নাটকে এক ভিক্ষু বালকের চরিত্রে প্রথম অভিনয়ে গায়কের ভূমিকায় গান গেয়েছিলেন ― পুরস্কার পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা আর একটি সোনার মেডেল। তারপর তিনি নির্মলেন্দু লাহিড়ীর ভ্রাম্যমাণ 'নিউ মনমোহন থিয়েটার'-এ পেশাদার দলে যুক্ত হন। তিনি 'মীরাবাঈ' নাটকে কৃষ্ণচরিত্রে অভিনয় করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি নিজের প্রতিভা আর পরিচালকের বিশেষ যত্নে সমসাময়িক  কুসুমকুমারী এবং তারাসুন্দরীর মতো বিশিষ্ট অভিনেত্রীরূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। পরে নির্মলেন্দুর সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল, যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।[২] মীরাবাঈ নাটকের পর ভ্রাম্যমাণ দল ছেড়ে তিনি দানীবাবুর দলে যোগদান করেন। চৌদ্দ বৎসর বয়সে তিনি দক্ষযজ্ঞ নাটকে দানীবাবুর সাথে সতী-র ভূমিকায় অভিনয় করেন। ঐ সময়েই তিনি বিষবৃক্ষ নাটকে কুন্দনন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন। তিনি  শিশিরকুমার ভাদুড়ী এবং দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতার সাথে চন্দ্রশেখর, গৈরিক পতাকা, মৃগয়া , মহুয়া এবং শ্যামলী প্রভৃতি নাটকে  নায়িকার ভূমিকায়  অভিনয় করেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শাজাহান নাটকে জাহানারা এবং শচীন সেনগুপ্তর সিরাজদ্দৌল্লা নাটকে লুৎফা চরিত্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রঙ্গমঞ্চে অভিনয় ছাড়াও তিনি ছায়াছবিতেও অভিনয় করেছেন। জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় দ্বিতীয় বাংলা সবাক চিত্র ঋষির প্রেম এবং ম্যাডানের প্রথম সবাক চিত্র কৃষ্ণকান্তের  উইল-এ রোহিনী-র ভূমিকায় অভিনয় করেন।

তিনি কৃষ্ণচন্দ্র দেকাজী নজরুল ইসলামের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা নেন ও গান করতেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তিনি কর্মজীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। রঙ্গমঞ্চে সফল অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নাট্যসম্রাজ্ঞী অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির দীনবন্ধু পুরস্কার লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিশেষ স্বর্ণপদক লাভ করেন।[৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

নাট্যসম্রাজ্ঞী সরযূবালা ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুলাই পরলোক গমন করেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cultural News from India (ইংরেজি ভাষায়)। Indian Council for Cultural Relations.। ১৯৭৭। পৃষ্ঠা ৩৮। 
  2.  অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয়  খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি  ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪২১,৪২২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. দুলাল ভৌমিক (২০১২)। "সরযূবালা দেবী"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743