পালমিরা

‘মরুর মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত পালমিরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
(Palmyra থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পালমিরা হচ্ছে প্রাচীন সেমিটিক শহর যা বর্তমান দিনে সিরিয়ার হমস প্রদেশে অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক গণ নিয়োলিথিক যুগের সন্ধান পেয়েছেন এখানে এবং নগরটি সম্পর্কে খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের প্রথমভাগে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ১ম শতাব্দীতে পালমিরা রোমানদের হাতে আসার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্রাটের হাতে এসেছে।

পালমিরা
(পালমিরাইন)
تدمر (আরবি)
Ruins of Palmyra
২০১০ সালে পালমিরার ধ্বংসাবশেষ
Palmyra is located in the center of Syria
Palmyra is located in the center of Syria
সিরিয়ায় অবস্থান
বিকল্প নামTadmor
অবস্থানতাদমোর জেলা, তাদমোর, হমস প্রদেশ, সিরিয়া
অঞ্চলসিরিয়া মরুভূমি
স্থানাঙ্ক৩৪°৩৩′০৫″ উত্তর ৩৮°১৬′০৫″ পূর্ব / ৩৪.৫৫১৩৯° উত্তর ৩৮.২৬৮০৬° পূর্ব / 34.55139; 38.26806
ধরনবসতি
যার অংশপালমিরা সাম্রাজ্য
এলাকা৮০ হেক্টর (২০০ একর)
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিতখ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ
পরিত্যক্ত১৯৩২ (1932)
সময়কালমধ্য ব্রোঞ্জ যুগ থেকে আধুনিক
সংস্কৃতিআরামিয়, আরবিয়, গ্রীকো রোমান যুগ
স্থান নোটসমূহ
অবস্থাধ্বংসাবশেষ
মালিকানাPublic
ব্যবস্থাপনাসংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সিরিয়া
জনসাধারণের প্রবেশাধিকারপ্রবেশ অযোগ্য (যুদ্ধক্ষেত্র)
প্রাতিষ্ঠানিক নামসাইট অভ পালমিরা
ধরনসাংস্কৃতিক
মানকi, ii, iv
অন্তর্ভুক্তির তারিখ১৯৮০ (1980) (4th Session)
রেফারেন্স নং23
RegionArab States
Endangered২০১৩ (2013)–present.[১]

নামকরণ সম্পাদনা

 
দামাস্কাস বন্দরের নিকটবর্তী পালমিরার ধ্বংসাবশেষ

তাদমোর নামটি দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম দিক থেকে পরিচিত ছিলো[২]; মারিতে প্রাপ্ত আঠারো খ্রিষ্টপূর্বাব্দের শিলালিপিতে একে উল্লেখ করা হয়েছে তা-আদ-মি-ইর, অন্যদিকে ১১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের আশারিয় লিপিতে লেখা হয়েছে তা-আদ-মার[৩]। আরামিক পালমারিন লিপিতে নামের দুটি ধরনের উল্লেখ আছে[৪][৫]: তাদমার এবং তাদমোর। নামের উৎপত্তি পরিষ্কার নয়। আলবার্ট স্কাল্টেনস সমর্থিত আদর্শ অনুবাদ খেঁজুরের সেমিটিক শব্দ তামারের[৬] সংগে যুক্ত করে যা দ্বারা বোঝা যায় শহরটিকে ঘিরে প্রচুর খেঁজুর গাছ বিদ্যমান ছিলো।[৭]

গ্রীক নাম Παλμύρα (লাতিন রূপ পালমিরা) প্রথম উল্লেখ করেন প্লিনি দ্যা এল্ডার ১ম খ্রিষ্টাব্দে[৮]। এটা গ্রীকো-রোমান বিশ্বে ব্যবহৃত হতো[৬]। এটা সাধারণত ভাবা হয়ে থাকে পালমিরা তাদমোর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ভাষাবিদেরা দুটি সম্ভাব্যতার কথা উল্লেখ করেছেন; একটি মতে পালমিরা তাদমোরের পরিবর্তেও ব্যবহৃত হতো[৬]। স্কালটেন্সের মতে তাদমোরে একটি ভগ্নরূপ তালমুরা যা লাতিন শব্দ পালমা'র (খেঁজুর) প্রভাবে পালমুরাতে পরিবর্তিত হয়েছে[২]। খেঁজুর গাছের জন্য শেষপর্যন্ত পালমিরা চূড়ান্ত নাম হিসেবে প্রচলিত হয়।[২][৭] দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে, যেমন জ্যঁ স্টারক্কির মতে, তাদমোরকে গ্রীকে অনুবাদ করার সময়ে তাদমোরকে এভাবে অনুবাদ করা হয় কারণ একে খেঁজুর ভাবা হয়।

অবস্থান সম্পাদনা

জনগোষ্ঠী, ভাষা, সমাজ সম্পাদনা

আইএসের নিয়ন্ত্রণ সম্পাদনা

২০১৪ সালে আইএস সারা বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ২০১৫ এর মে মাসে এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি পালমিরা দখল করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় তারা হাজার হাজার বছর পুরোনো নিদর্শনগুলো ধ্বংস করছে। জাদুঘরটিকে তারা ব্যবহার করেছে আদালত আর কারাগার হিসেবে, প্রাচীন রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারটাকে ব্যবহার করেছে জনসম্মুখে হত্যা করার জন্য।

পালমিরা ধ্বংস করার প্রথম খবর পাওয়া যায় স্যাটেলাইট ছবি থেকে। পরে আইএস নিজেরাই ভিডিও ছাড়ে। এ ভিডিগুলোর মধ্যে বোমা দিয়ে পুরো এলাকা ধ্বংসের চিত্র, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (ড্রিল, হাতুড়ি) দিয়ে স্থাপত্যগুলো ভাঙার চিত্র দেখা যায়।

২০১৬ সালের মার্চের ৮ তারিখ সিরিয়ার সেনাবাহিনী, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী, আর রাশিয়ার বিমান বাহিনী একত্রে আক্রমণ শুরু করে। প্রথমে আশেপাশের পাহাড়ি এলাকাতে আক্রমণ চালিয়ে অবশেষে ওরা আইএসের ঘাঁটিতে পৌঁছায়। মার্চের ২৭ তারিখ পালমিরাকে পুনর্দখলের ঘোষণা দেয় আসাদ বাহিনী। কিন্তু ততদিনে পালমিরার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে গর্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পালমিরার ভগ্নদশা তার করুণ উপাখ্যানের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Baghdadi 2015
  2. O'Connor 1988, পৃ. 238
  3. Limet 1977, পৃ. 104
  4. Bubeník 1989, পৃ. 229
  5. Wolfensohn 2016, পৃ. 118
  6. Charnock 1859, পৃ. 200
  7. O'Connor 1988, পৃ. 235
  8. O'Connor 1988, পৃ. 248