এফিড

(Aphid থেকে পুনর্নির্দেশিত)

এফিড (ইংরেজি: Aphid) হল রস-চোষক ক্ষুদ্র এক প্রকার পোকা যা উদ্ভিদের উকুন, গ্রীনফ্লাইস, ব্ল্যাকফ্লাইস, বা হোয়াইটফ্লাইজ হিসেবেও পরিচিত।[১] এরা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের আবাদ করা গাছপালার সংহারক পোকাদের মধ্যে অন্যতম। [১] প্রাণিবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই সফল একদল প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও প্রভূত ক্ষতি সাধনকারী হিসেবে বিশ্বজুড়ে কৃষকমালীদের কাছে এরা মূর্তিমান আতঙ্ক।[২] কয়েকটি প্রজাতির অযৌন প্রজননের সক্ষমতা, এদের সফলতার পেছনের বড় একটি কারণ।

এফিড
সময়গত পরিসীমা: Permian–present
মটরশুঁটি এফিড অ্যাক্রিথোসিফন পিসুম
মা এফিডকে ঘিরে নিম্ফ এফিডগুলো অপুংজনি এবংজরায়ুজ পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়েছে। স্বল্পদৈর্ঘ্যের সূর্যালোকের মাধ্যমে যৌন জনন সংঘটিত করা যায়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Hemiptera
উপবর্গ: Sternorrhyncha
মহাপরিবার: Aphidoidea
পরিবার: Aphididae

এফিডদের মধ্যে প্রায় ৪,৪০০ টি প্রজাতি রয়েছে যাদের সবগুলোই এফিডিডা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।[৩] বলা যায়, এদের ২৫০ টি প্রজাতি কৃষিবনবিদ্যার ভয়ানক বালাই, এছাড়া উদ্যানপালকদের বিষম জ্বালাতনের কারণ। দৈর্ঘ্যে এরা ১ থেকে ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এফিড প্রতি সেকেন্ডে চারশো বার ডানা নাড়ায়।

এফিড পোকাদের প্রাকৃতিক শত্রুদের মধ্যে রয়েছে শিকারী লেডিবার্ড পোকা, হোভারফ্লাইয়ের শূককীট, পরজীবী বোলতা, এফিড মিজ শূককীট, ক্র‍্যাব স্পাইডার বা কাঁকড়া মাকড়শা, লেইসউইং পোকা, এবং এন্টোমোপ্যাথজেনিক বা পোকাবিধ্বংসী ছত্রাক

বিস্তার সম্পাদনা

পৃথিবীজুড়ে এসব পোকা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেই এদেরকে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য প্রাণীদলের প্রজাতির বৈচিত্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি থাকলেও এফিডদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যাতিক্রম। নিষ্ক্রিয় পদ্ধতিতে, যেমন বাতাসে ভেসে, এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রব্রজন করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, নাসোনোভিয়া রিবিসনিগ্রি নামক এক প্রজাতির এফিড, নিউজিল্যান্ড থেকে তাসমানিয়াতে বাতাসে ভেসে ছড়িয়ে পড়েছিল।[৪] আক্রান্ত উদ্ভিদ-উপাদানে ভর করে মানুষের মাধ্যমেও এরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

নিয়ন্ত্রণ সম্পাদনা

এফিডপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ধরনের কীটনাশক রয়েছে। রাসায়নিক কীটনাশকের পাশাপাশি উদ্ভিদের নির্যাস ও উদ্ভিদজাত বস্তুও পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে এফিডের বিনাশ করে থাকে। নিমলান্টানা উদ্ভিদজাত দ্রব্য দিয়ে গাছকে এফিডের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।[৫] বাড়ির উঠোনের বাগানে সাধারণ আক্রমণের ক্ষেত্রে ওয়াটারজেট দিয়ে ভালোভাবে কয়েকদিন পানিপ্রবাহ দিলে গোলাপ ও অন্যান্য গাছকে এসব পোকা থেকে দূরে রাখা যায়।

কীটনাশক সাবানের দ্রবণ দিয়ে বাসাবাড়িতে এফিড অথবা অন্যান্য নরম দেহবিশিষ্ট কীটের প্রতিকার করা যায়। [৬][৭][৮] শুধুমাত্র স্পর্শের মাধ্যমেই এটি এফিডকে হত্যা করতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় অথবা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার উপরের অবস্থায় ব্যবহার করলে সাবানের স্প্রে উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

কয়েক ধরনের ছত্রাক প্রজাতি, যেমন লেকানিচিলিয়ুম লেকানি বা বিউভেরিয়া বাসসিয়ানা বা পিচিলোমিচেস ফুমোসোরোসেউস, জৈবিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করার মাধ্যমে নানান ধরনের এফিডপোকার সমণ্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব।

লেডি বিটলের মতো প্রাকৃতিক শত্রু অবমুক্ত করার মাধ্যমেও এফিডের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে অধিক সফলতার জন্য পরপর অধিক পরিমাণে এই শত্রুপোকা অবমুক্ত করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অধিকমাত্রায় আক্রান্ত একটি গোলাপের ঝোপের জন্য দুই কিস্তিতে ১৫০০ গুবরে পোকা অবমুক্ত করা লাগবে।[৬][৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. জর্জ সি ম্যাকগেভিন (১৯৯৩)। Bugs of the World। ইনফোবেইজ পাবলিশিং। আইএসবিএন 0-8160-2737-4 
  2. রস পাইপার (২০০৭)। Extraordinary Animals: An Encyclopedia of Curious and Unusual Animals। গ্রীনউড প্রেস। পৃষ্ঠা ৬–৯। আইএসবিএন 978-0-313-33922-6 
  3. এফিড স্পেসিজ ফাইল
  4. পিপ কোর্টনি (২০০৫) "Scientist battles lettuce aphid" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে। সংগৃহীতঃ ৮ মে, ২০১৫।
  5. Chongtham Narajyot Shreth, Kh. Ibohal & S. John William (২০০৯)। "Laboratory Evaluation of Certain Cow Urine Extract of Indigenous Plants Against Mustard Aphid, Lipaphis erysimi (Kaltenbach) Infesting Cabbage"। Hexapoda। পৃষ্ঠা ১১–১৩। 
  6. এফিডঃ সমণ্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সংগৃহীতঃ ৮ মে, ২০১৫।
  7. সাবান ও ডিটারজেন্ট দিয়ে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে। সংগৃহীতঃ ৮ মে, ২০১৫।
  8. বাগানের বালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক সাবান। সংগৃহীতঃ ৮ মে, ২০১৫।
  9. লেডিবার্ড গুবরে পোকা দিয়ে এফিড নিয়ন্ত্রণ।