হ্যামলেট

শেক্সপিয়ার রচিত সর্ববৃহৎ ট্রাজেডি নাটক

হ্যামলেট বা দ্য ট্র্যাজেডি অফ হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক সংক্ষেপে হ্যামলেট নামে বহুল পরিচিত একটি শেক্সপিয়রীয় ট্র্যাজেডি যা ১৫৯৯ এবং ১৬০১ সালের মাঝে কোন একসময় রচিত হয়েছিল। এটি ২৯,৫৫১ টি শব্দ নিয়ে শেক্সপিয়র রচিত সবচেয়ে দীর্ঘতম নাটক। ডেনমার্ক সাম্রাজ্যের পটভূমিতে রচিত নাটকটি যুবরাজ হ্যামলেট ও তার চাচা ক্লদিয়াসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ স্পৃহাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে যিনি সিংহাসন দখলের জন্য হ্যামলেটের পিতাকে হত্যা করেছিলেন এবং হ্যামলেটের জন্মদাত্রী মাকে বিয়ে করেছিলেন।

দ্য ট্র্যাজেডি অফ হ্যামলেট, প্রিন্স অফ ডেনমার্ক
হ্যামলেট চরিত্রে অভিনেতা এডউইন বুথ, আনুমানিক ১৮৭০
রচয়িতাউইলিয়াম শেকসপিয়র
চরিত্র
মূল ভাষাইংরেজি
বর্গশেকসপিয়রীয় বিয়োগান্ত নাটক
প্রেক্ষাপটডেনমার্ক

হ্যামলেট কে বিশ্ব সাহিত্যের একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাব বিস্তারকারী সৃষ্টিকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় যার গল্পটি অসংখ্যবার বলবার পরও এর মাধুর্য অনিঃশেষ। অনেকেই তাদের লেখনীতে এর গল্পকে নানাভাবে ধারণ বা আত্মীকরণ বা এডাপ্ট করেছেন।[১] শেক্সপিয়ারের জীবনে হ্যামলেট ছিল সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি নাটকগুলোর মধ্যে একটি।[২] সেই সাথে ১৮৭৯ সাল থেকে বর্তমান অব্দি রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানি ও এর উত্তরসূরি স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-এভন এর তালিকার শীর্ষে থাকা সবচেয়ে বেশিবার মঞ্চায়িত নাটকও এটি।[৩] জোহান ওলফগ্যাঙ ভন গ্যোয়েটে, চার্লস ডিকেন্স থেকে শুরু করে জেমস জথেস এবং আইরিস মুরডক পর্যন্ত বহু লেখক নাটকটি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সিনডারেলা র পর এটিই বিশ্বে সবচেয়ে বেশিবার চিত্রায়িত গল্প।[৪]

শেকসপিয়ারের হ্যামলেট এর মূল গল্পটি উৎসারিত হয়েছিল খুব সম্ভবত এমলেথ নামক একটি উপকথা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যা ১৩ শতকের কাহিনীকার স্যাক্সো গ্রামাটকাসের রচিত গেস্টা ডেনোরামে সংকলিত রয়েছে। পরবর্তীতে ১৬ শতকের পণ্ডিত ফ্রাঙ্কোয়েস ডি বেলফরেস্টও গল্পটি পুনরায় বলেছেন। শেকসপিয়ার সম্ভবত এলিজাবেথান নাটক 'উর-হ্যামলেট ' দ্বারাও আকৃষ্ট হয়ে থাকেতে পারেন। যদিও কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন শেকসপিয়ারই মূলত 'উর-হ্যামলেট ' রচনা করেছিলেন এবং পরে একে সংস্কার করে আজকের 'হ্যামলেট' নাটকে রূপদান করেন। তৎকালীন কিংবদন্তি অভিনেতা রিচার্ড বার্বেজকে মূল চরিত্র হিসেবে কল্পনা করে তিনি বিয়োগান্ত নাটকটি সাজিয়েছিলেন। আর রচিত হওয়ার পর গত চারশ বছর ধরে প্রতিটি শতাব্দীতে হ্যামলেট চরিত্রটি অগণিত কিংবদন্তি অভিনেতা স্বরূপ দিয়ে আসছেন।

নাটকটির ভিন্ন ভিন্ন তিনটি আদি ভার্সন বা রূপ এখন পর্যন্ত বর্তমান আছে: ফার্স্ট কোয়ার্টো (কিউ ১, ১৬০৩); সেকেন্ড কোয়ার্টো (কিউ ২, ১৬০৪) এবং ফার্স্ট ফোলিও (এফ ১, ১৬২৩)। প্রতিটি ভার্সন কথোপকথন ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন সংবলিত এবং পরস্পর থেকে পৃথক। নাটকটির কাঠামো ও চরিত্রায়নের গভীরতা স্বাভাবিকভাবেই সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণকে প্রাণিত করেছে। যেমন, হ্যামলেট কেন তার চাচাকে হত্যা করতে গিয়ে দ্বিধা করেছিলেন: শতাব্দী পুরোনো এই বিতর্কের প্রসঙ্গটিই উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে। অনেকের কাছে বিষয়টি নিতান্তই নাটকের প্লট প্রলম্বিত করবার একটি চেষ্টা মাত্র। আবার বাকিরা একে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা, পরিকল্পিত প্রতিশোধ এবং ব্যর্থ আকাঙ্খার মতো জটিল দার্শনিক ও নৈতিক বিষয়গুলোর নাট্যরূপ হিসেবেও ব্যাখ্যা করতে চাইছেন। খুব সম্প্রতি মনোবিশ্লেষণবাদী সমালোচকরা হ্যামলেটের অবচেতনামূলক বা অসচেতন আকাঙ্খাগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। অন্যদিকে ওফেলিয়া ও গারট্রুডের মতো প্রায়-হীনভাবে উপস্থাপিত চরিত্রগুলো নিয়েও নারীবাদী সমালোচকেরা নতুন করে ভাবছেন।

চরিত্রাবলী সম্পাদনা

  • যুবরাজ হ্যামলেট - ডেনমার্কের সাবেক রাজার পুত্র এবং বর্তমান রাজার ভ্রাতুষ্পুত্র।
  • রাজা ক্লদিয়াস - ডেনমার্কের রাজা এবং হ্যামলেটের কাকা।
  • গারট্রুড - ডেনমার্কের রানি এবং হ্যামলেটের মা।
  • পলোনিয়াস - রাজার প্রধান উপদেষ্টা।
  • ওফেলিয়া - পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা।
  • হোরাশিও - হ্যামলেটের বন্ধু।
  • লেয়ার্তেস - পলোনিয়াসের পুত্র।
  • ভল্টিমান্ড ও কর্নেলিয়াস - রাজসভাসদ
  • রোসেনক্রানৎজ ও গিল্ডেনস্টার্ন - রাজসভাসদ ও হ্যামলেটের বন্ধু।
  • অসরিক - রাজসভাসদ
  • মার্সেলাস - রাজ কর্মকর্তা
  • বার্নার্দো - রাজ কর্মকর্তা
  • ফ্রান্সিস্কো - সৈনিক
  • রেনাল্ডো - পলোনিয়াসের ভৃত্য
  • প্রেতাত্মা- হ্যামলেটের বাবার প্রেতাত্মা
  • ফোর্টিনব্রাস - নরওয়ের যুবরাজ
  • গ্রেভডিগার্স - গির্জার ঘণ্টাবাদক
  • প্লেয়ার কিং, প্লেয়ার কুইন, লুসিয়ানাস - বাদক দলের সদস্য।

গল্প সম্পাদনা

প্রথম অঙ্ক সম্পাদনা

হ্যামলেটের মূল চরিত্র ডেনমার্কের যুবরাজ হ্যামলেট সম্প্রতি নিহত রাজা হ্যামলেটের পুত্র এবং তার পিতার ভাই ও রাজ্যের উত্তরসূরি হিসেবে সদ্য রাজা হওয়া ক্লদিয়াসের ভাইপো। ক্লদিয়াস তাড়াহুড়ো করে যুবরাজ হ্যামলেটের মা গারট্রুডকে বিয়ে করেন এবং সিংহাসন দখল করে নেন। প্রতিবেশী রাজ্য নরওয়ের সাথে ডেনমার্কের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে। রাজা হ্যামলেট কয়েক বছর আগে সেখানে এক যুদ্ধে নরওয়ের রাজা ফোর্টিনব্রাসকে হত্যা করেছিলেন। যদিও ডেনমার্ক নরওয়েকে পরাজিত করেছিল এবং নরওয়েজিয়ান সিংহাসন কিং ফোর্টিনব্রাসের রুগ্ন ভাইয়ের দায়িত্বে পড়েছিল তবু ডেনমার্ক আশঙ্কা করেছিল যে মৃত নরওয়ের রাজার পুত্র প্রিন্স ফোর্টিনব্রাসের নেতৃত্বে একটি আক্রমণ শীঘ্রই আসন্ন।

একদিন এক শীতের রাতে ডেনিশ রাজদুর্গ এলসিনোরের উপদ্বীপে প্রহরী বার্নার্ডো আর মার্সেলাস তাদের সম্প্রতি দেখা এক প্রেতাত্মাকে নিয়ে আলোচনা করছিল যে কিনা হুবহু প্রয়াত রাজা হ্যামলেটের মতো দেখতে এবং এ ঘটনা দেখার জন্য তারা যুবরাজ হ্যামলেটের বন্ধু হোরেশিওকে ডেকে নিয়ে আসে। এরপর তিনজনই আবার সেই প্রেতাত্মাকে দেখতে পাওয়ার পর তারা বিষয়টি যুবরাজ হ্যামলেটকে জানানোর শপথ নেয়।

পরের দিন যখন রাজসভা সমবেত হচ্ছিল এবং রাজা ক্লদিয়াস ও রানি গারট্রুড তাদের প্রবীণ উপদেষ্টা পোলোনিয়াসের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন তখন হ্যামলেটকে বেশ আড়ষ্ট দেখাচ্ছিল। সভা চলাকালে ক্লদিয়াস পোলোনিয়াসের ছেলে লেয়ার্তেসকে ফ্রান্সের স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং নরওয়ের রাজাকে ফোর্টিনব্রাস সম্পর্কে অবহিত করার জন্য দূত প্রেরণ করেন। পিতা হারানোর শোকে খুব মুষড়ে পড়ায় হ্যামলেটকে খানিকটা তিরস্কারই করলেন ক্লদিয়াস এবং উইটেনবার্গে তার স্কুলে ফিরে যেতেও নিষেধ করলেন। সভা শেষ হওয়ার পরে, হ্যামলেট তার বাবার মৃত্যু এবং তার মায়ের তাৎক্ষণিক পুনর্বিবাহ সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করেন। পরে হোরেশিওর কাছ থেকে প্রেতাত্মা দেখার ঘটনাটি জানার পর হ্যামলেট নিজেই সেটি স্বচক্ষে দেখার সিদ্ধান্ত নেন।

হোরাটিও, হ্যামলেট, এবং ভূত (শিল্পী: হেনরি[৫]

এদিকে পোলোনিয়াসের পুত্র লেয়ার্তেস ফ্রান্সে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, পোলোনিয়াস তাকে পরামর্শ দিলেন তিনি যেন নিজের স্বার্থের কথা সবসময় চিন্তা করেন।[৬] পোলোনিয়াসের কন্যা ওফেলিয়া হ্যামলেটের প্রতি তার ভালোলাগা প্রকাশ করলে লেয়ার্টেস তাকে যুবরাজ থেকে দূরে থাকতে সাবধান করে দেন এবং পোলোনিয়াসও তাকে যুবরাজের সাহচর্য ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। সেই রাতে রাজদুর্গে হ্যামলেটের সামনে প্রেতাত্মা উপস্থিত হয়ে জানায় যে তাকে ক্লডিয়াস খুন করেছে এবং হ্যামলেটের উচিত এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা। হ্যামলেট সম্মত হলে প্রেতাত্মা অদৃশ্য হয়ে যায়। ‌এরপর যুবরাজ হোরেশিও এবং প্রহরীদের কাছে গিয়ে জানান যে এখন থেকে তিনি এলোমেলো আচরণ করার পরিকল্পনা করেছেন অর্থাৎ তিনি পাগল হয়ে গেছেন এমন ভান করবেন এবং হ্যামলেটের এই প্রতিশোধ পরিকল্পনা গোপনে রাখার জন্য তারা সবাই শপথ করে; যদিও প্রেতাত্মার কথার ওপর কতটা নির্ভর করা যায় সে বিষয়ে হ্যামলেট নিজেই অনিশ্চিত ছিলেন।

দ্বিতীয় অঙ্ক সম্পাদনা

এরপর ওফেলিয়া তার বাবার কাছে ছুটে আসেন এবং জানান যে হ্যামলেট গত রাতে তার বাড়িতে অর্ধ-পোশাক পরিহিত অবস্থায় এসেছিলেন এবং উদভ্রান্তের মতো আচরণ করছিলেন। পোলোনিয়াস হ্যামলেটের পাগলামীর জন্য তাদের প্রেমকে দোষারোপ করেন এবং ক্লদিয়াস ও গারট্রুডকে বিষয়টি জানানোর মনস্থ করেন। তিনি যখন সেজন্য সভায় প্রবেশ করলেন, রাজা এবং রানী রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিলডেনস্টার্ন নামে দুজন শিক্ষার্থীকে এলসিনোরে স্বাগত জানানো মাত্রই শেষ করেছেন যারা হ্যামলেটের সহপাঠী ছিল। রাজ দম্পতি হ্যামলেটের মেজাজ এবং আচরণের কারণগুলি তদন্ত করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন। এদিকে অপেক্ষারত পোলোনিয়াস শুনলেন নরওয়ের বার্তাবাহকরা ক্লদিয়াসকে জানাচ্ছে যে, নরওয়ের রাজা যুবরাজ ফোর্টিনব্রাসকে তার বাবার যুদ্ধ পুনরায় লড়াইয়ের চেষ্টার জন্য তিরস্কার করেছেন। ফোর্টিনব্রাস যে বাহিনীকে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করার জন্য নিযুক্ত করেছিল তাদের পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হবে, যদিও তাদের ডেনিশ অঞ্চল দিয়েই সেখানে পৌঁছুতে হবে।

পোলোনিয়াস ক্লদিয়াস ও গারট্রুডকে হ্যামলেটের আচরণ সম্পর্কিত তাঁর ধারণা জানান এবং আরও তথ্য জানতে রাজদুর্গের একটি হলে হ্যামলেটের সাথে কথা বলেন। হ্যামলেট উন্মাদের ভান করতে থাকেন এবং পোলোনিয়াসকে একরকম অপমানই করেন। রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টার্ন এলে হ্যামলেট তার "বন্ধুবান্ধব" কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান, তবে দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন যে তারা আসলে গুপ্তচর। হ্যামলেট স্বীকার করেন যে তিনি তার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ বিচলিত কিন্তু আসল কারণটি বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং মন্তব্য করেন "মানুষ কত অদ্ভুত!" রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টার্ন হ্যামলেটকে বলেন যে, তারা অভিনেতাদের একটি দল নিয়ে এসেছেন যাদের সাথে এলসিনোর ভ্রমণের সময়ই দেখা হয়েছিল। ছদ্মবেশী বন্ধুদের বিদায় দিয়ে অভিনেতাদের স্বাগত জানানোর পর হ্যামলেট তাদের ট্রোজান যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে রাজা প্রিয়াম এবং কুইন হেকুবার মৃত্যুর বিষয়ে সোলিলোকি বা একক কথোপকথন করতে বলেন। তাদের উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়ে হ্যামলেট "গনজাগো হত্যা" নাটকটি মঞ্চে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করেন, যেটি তার পিতাকে হত্যার অনুকরণে সাজানো হবে, যাতে প্রেতাত্মার গল্পের সত্যতা মেলে আবার ক্লদিয়াদসের প্রতিক্রিয়া দেখেও যেন বোঝা যায় তিনি কি সত্যিই অপরাধী নাকি নিরপরাধ।

তৃতীয় অঙ্ক সম্পাদনা

পোলোনিয়াস ওফেলিয়াকে হ্যামলেটের সব প্রেমের চিঠি এবং উপহার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। আর পুরো ব্যাপারটি তিনি এবং ক্লদিয়াস দূর থেকে প্রত্যক্ষ করেন হ্যামলেটের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার জন্য। হ্যামলেট হলে একাকী হাঁটছেন এবং এদিকে 'হবে কি হবে না' এই গভীর দ্বন্দ্বে রাজা ও পোলোনিয়াস ওফেলিয়ার প্রবেশের অপেক্ষায় । ওফেলিয়া যখন হ্যামলেটের কাছে জিনিসগুলো ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেন, হ্যামলেট তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ তোলেন এবং চিৎকার করে বললেন, 'যাও, পতিতালয়ে থাক গিয়ে!'। যদিও এটি স্পষ্ট নয় যে এটি কি উন্মাদনার প্রকাশ ছিল নাকি প্রকৃত হতাশার। এদিকে তাঁর প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্লদিয়াস নিশ্চিত হন যে হ্যামলেট প্রেমের জন্য পাগল নন। এর কিছু পরই, হ্যামলেট নির্দেশিত নাটকটি দেখার জন্য সবাই রাজসভায় সমবেত হল। সেখানে রাজা চরিত্রের অভিনেতার কানে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী কর্তৃক বিষ ঢালতে দেখে ক্লদিয়াস হঠাৎ উঠে পড়ে ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে যান; আর হ্যামলেটের জন্য এটিই ছিল তার চাচার অপরাধের প্রমাণ।

হ্যামলেট ভুলবশত পোলোনিয়াসকে ছুরিকাঘাত করে (শিল্পী: কোক স্মিথ, ঊনবিংশ শতাব্দী)।

এ আয়োজনের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য গারট্রুড হ্যামলেটকে তার চেম্বারে ডেকে পাঠান। এদিকে, ক্লদিয়াস নিজেই নিজের সাথে কথা বলছেন, যেহেতু এখনও তার অধিকারে অজস্র সম্পত্তি: তার ভাইয়ের মুকুট এবং স্ত্রী তার অধিকারে রয়েছে সেখানে তার তো অনুতপ্ত হওয়ার কোন সুযোগই নেই। । তিনি হাঁটু গেড়ে বসলেন। হ্যামলেট তার মায়ের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে, ক্লদিয়াসের পেছনে অলক্ষ্যে এসে দাঁড়ালেন কিন্তু তাকে হত্যা করলেন না, কারণ প্রার্থনারত ক্লদিয়াসকে হত্যা করলে খুব সহজেই তিনি স্বর্গে চলে যাবেন অথচ তার বাবার প্রেতাত্মা এখনও যন্ত্রণাতেই আটকে আছে। রানির শোবার ঘরে, হ্যামলেট এবং গারট্রুডের তীব্র লড়াই হল। এদিকে পর্দার আড়াল থেকে কান পেতে থাকা পোলোনিয়াস হঠাৎ সাহায্যের জন্য চিৎকার করে ওঠেন এবং গারট্রুডকে নিজের আত্মরক্ষা করতে বলেন, কারণ তার মনে হচ্ছিল হ্যামলেট গারট্রুডকে হত্যা করতে চাচ্ছেন।

হ্যামলেট, ক্লদিয়াস মনে করে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করলেন, কিন্তু পর্দা সরানোর পর দেখলেন ভুলবশত তিনি পোলোনিয়াসকে হত্যা করে ফেলেছেন। ক্রোধে হ্যামলেট তার মাকে নির্মমভাবে ক্লদিয়াসের কুচক্র সম্পর্কে অজ্ঞতার জন্য অপমান করে বসেন। কিন্তু এসময় প্রেতাত্মা প্রবেশ করে নিষ্ক্রিয়তা ও কঠোর শব্দ প্রয়োগের জন্য হ্যামলেটকে তিরস্কার করে। প্রেতাত্মাকে দেখতে বা শুনতে না পাওয়ায়, গারট্রুড হ্যামলেটের অদৃশ্যের সাথে কথোপকথনকে তার উন্মাদনারই আরেকটি প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেন। আর রানিকে ক্লদিয়াসের সাথে না ঘুমানোর জন্য অনুরোধ করে হ্যামলেট পোলোনিয়াসের মৃতদেহ টানতে টানতে প্রস্থান করেন।

চতুর্থ অঙ্ক সম্পাদনা

হ্যামলেট কোথায় পোলোনিয়াসের দেহটি লুকিয়ে রেখেছেন তা নিয়ে ক্লদিয়াসের সাথে কৌতুক করেন এবং এতে রাজা তার জীবনের আশঙ্কায় রোজক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টারকে ইংল্যান্ডে হ্যামলেটকে সঙ্গ দিতে পাঠান আর সাথে ইংরেজ রাজার জন্য একটি সিলযুক্ত চিঠি দিয়ে দেন যাতে হ্যামলেটকে দ্রুত মৃত্যুদণ্ড দেবার অনুরোধ করা হয়।

পোলোনিয়াসের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল ওফেলিয়া এলসিনোরে এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাবার মৃত্যু এবং বোনের পাগল হওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে লেয়ার্তেস ফ্রান্স থেকে ফিরে এলেন। ক্লদিয়াস লেয়ার্তেসকে নিশ্চিত করলেন যে হ্যামলেট এসব কিছুর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। তবে ক্লদিয়াসের পূর্ব পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে শীঘ্রই একটি চিঠি এল যে, হ্যামলেট ডেনমার্কে ফিরে ‌এসেছেন। ক্লদিয়াস তার কৌশল পরিবর্তন করলেন, দুজনের দ্বন্দ্ব মীমাংসার জন্য লেয়ার্তেস এবং হ্যামলেটের মধ্যে একটি অসি লড়াইয়ের প্রস্তাব দেন। লেয়ার্তেসকে একটি বিষযুক্ত তীক্ষ্ম তলোয়ার দেয়া হবে এবং যদি এটি ব্যর্থ হয় তবে ক্লদিয়াস হ্যামলেটকে অভিনন্দনের জন্য বিষযুক্ত ওয়াইন পান করতে দেবেন। এর মাঝে গারট্রুড এসে জানালেন যে ওফেলিয়া ডুবে গেছে, যদিও এটি আত্মহত্যা ছিল নাকি তার মানসিক বিকারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়।

কবর খননকারী দৃশ্য[ক] (শিল্পী: ইউজিন ডেলাক্রোইক্স, ১৮৩৯)

পঞ্চম অঙ্ক সম্পাদনা

হোরেশিও হ্যামলেটের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলেন, যাতে লেখা ছিল, যুবরাজ তার ইংল্যান্ডগামী জাহাজে যে জলদস্যুরা হামলা করার চেষ্টা করেছিল তাদের সাথে সমঝোতা করে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে দুই বন্ধু আবারও একত্রিত হন। দুজন গোরখোদক ওফেলিয়ার কবর খননের সময় তার আপাত আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা করছিল এমন সময় হ্যামলেট হোরেশিওকে নিয়ে সেখানে এলেন। গোরখোদকদের একজন কবর থেকে হ্যামলেটের ছোটবেলার এক ভাঁড়ের খুলি তুলে আনলে হ্যামলেট তা নিয়ে বিদ্রুপ করলেন। খুলিটি হাতে নিয়ে মৃত্যু নিয়ে গভীর চিন্তায় ধীরে ধীরে বললেন, "হায়! দুর্ভাগা ইওরিক"। ওফেলিয়ার শেষকৃত্য মিছিল লেয়ার্তেসের নেতৃত্বে অকুস্থলে পৌঁছাল। হ্যামলেট এবং হোরেশিও প্রথমদিকে লুকিয়েছিলেন, কিন্তু যখন হ্যামলেট বুঝতে পারলেন যে, ওফেলিয়াকে দাফন করতে আনা হয়েছে তখন তিনি আত্মপ্রাকাশ করলেন এবং তার প্রতি নিজের ভালবাসা প্রকাশ করলেন। লেয়ার্তেস ও হ্যামলেট ওফেলিয়ার কবরের পাশেই লড়াই শুরু করেন, কিন্তু লড়াই ভেঙে যায়।

এলিসিনোরে ফিরে, হ্যামলেট হোরেশিওকে বললেন যে, তিনি রোজক্র্যান্টজ এবং গিলডেনস্টার্নের জিনিসপত্রের সাথে ক্লদিয়াসের চিঠিটি পেয়েছিলেন এবং সেটি বদলে একটি জাল অনুলিপি রেখে দিয়েছিলেন যাতে তার পরিবর্তে তার প্রাক্তন বন্ধুদের হত্যা করার নির্দেশনা ছিল। তাদের কথোপকথনের মাঝে একজন দরবারি এসে হ্যামলেটকে মল্লযুদ্ধের বিষয়ে জানাতে আসে। হোরেশিওর আকুল অনুরোধ সত্ত্বেও হ্যামলেট চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। হ্যামলেট প্রথম দিকে ভালোই করছিলেন, কেউই কাউকে আঘাত করতে পারছিল না। গারট্রুড মুহূর্তটিকে উদ্‌যাপন করতে বিষাক্ত ওয়াইনের গ্লাস থেকে পান করতে শুরু করেন যেটি ক্লদিয়াস আগেই হ্যামলেটের জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন। ক্লদিয়াস তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন বটে কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। লেয়ার্তেস বুঝতে পারলেন তাদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাবে। লেয়ার্তেস হ্যামলেটকে তার বিষযুক্ত তলোয়ার দিয়ে আচমকা আঘাত হানলেন। দুজনে ধস্তাধস্তি শুরু হল আর তাতে তলোয়ার বদলে যায় এবং হ্যামলেট নিজের বিষযুক্ত তলোয়ার দিয়ে লেয়ারর্তেসকে আহত করেন। গারট্রুড তাঁকে বিষ দেয়া হয়েছে বলতে বলতে লুটিয়ে পড়েন এবং মারা যান। আর লেয়ার্তেস তার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে হ্যামলেটের সাথে বিরোধ ভুলে গিয়ে ক্লদিয়াসের পুরো পরিকল্পনা প্রকাশ করে দেন। হ্যামলেট ক্লদিয়াসের দিকে ছুটে আসেন এবং তাঁকে হত্যা করেন। বিষের কার্যকারিতা শুরুর পর, হ্যামলেট শুনতে পেলেন ফোর্টিনব্রাস এই অঞ্চল দিয়ে যাত্রা করছেন আর নরওয়েজিয়ান যুবরাজকে তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে ঘোষণা করছেন। এহেন অবস্থায় হোরেশিও হ্যামলেটকে ছাড়া একা বাঁচতে হবে এই হতাশায় গারট্রুডের পান করা বিষযুক্ত ওয়াইনের বাকিটুকু নিজে পান করে প্রাণত্যাগ করতে চান বললে হ্যামলেট তাকে বেঁচে থাকার জন্য অনুরোধ করেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা জানান। অবশেষে হোরেশিওর কোলে মাথা রেখে হ্যামলেট মারা যান এবং এক নিশ্ছিদ্র নীরবতা নেমে আসে। ফোর্টিনব্রাস, যিনি স্পষ্টতই তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে পোল্যান্ডের দিকে যাত্রা করেছিলেন, তিনি ইংরেজ রাষ্ট্রদূত সহ রোজক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টনের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে প্রাসাদে এসে উপস্থিত হন। হোরেশিও যেহেতু এ যাবত ঘটা সম্পূর্ণ ঘটনা জানাতে দায়বদ্ধ ছিলেন তিনি সবকিছু বিবৃত করেন ফর্টিনব্রাসরর কাছে। তিনি পুরো ডেনিশ রাজপরিবারকে মৃত দেখে নিজে সিংহাসন অধিকার করেন এবং হ্যামলেটের সম্মানে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের নির্দেশ দেন।

সূত্র সম্পাদনা

এমল্যাথের কিংবদন্তি সন্নিবেশিত স্যাক্সো গ্রামাটিকাস রচিত গেস্টা ডেনোরামের একটি অনুলিপি

হ্যামলেটের মতো কিংবদন্তিগুলি ইতালি, স্পেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, বাইজান্টিয়াম এবং আরবে এত ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় যে এর মূল "বোকাসোকা নায়ক" থিমটি হয়ত ইন্দো-ইউরোপীয় উৎস থেকেও এসে থাকতে পারে।[৮] হ্যামলেটের বেশ কয়েকটি প্রাচীন লিখিত পূর্বসূরীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমটি হোল্ফ ক্রাকির নামবিহীন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বীরত্বগাথা। এখানে নিহত রাজার দু্ই ছেলে হ্রোয়ার এবং হেলগি; গল্পের বেশিরভাগ অংশে পাগলামীর বদলে তাদের ছদ্মবেশ আর ছদ্মনামেই থাকতে দেখা যায় যা ঘটনার ধারাবাহিকতায় শেক্সপিয়র থেকে বেশ আলাদা।[৯]

দ্বিতীয়টি হল, ব্রুটাসের রোমান কিংবদন্তি, দুটি পৃথক লাতিন রচনায় যার দেখা মেলে। এর নায়ক ছিলেন লুসিয়াস ("উজ্জ্বল, হালকা") যিনি নিজের নাম ও ব্যক্তিত্বকে বদলে ব্রুটাস ("নিস্তেজ, বোকা") রাখেন এবং তার পিতা ও ভাইদের ভাগ্য এড়াতে বোকার অভিনয় করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তার পরিবারের হত্যাকারী রাজা তারকিনিয়াসকে হত্যা করেন। সতেরো শতকের একজন নর্ডিক পণ্ডিত, তরফিউস আইসল্যান্ডীয় বীর আমলোই (আমলোদি) এবং বীর যুবরাজ অ্যাম্বালেসকে (অ্যাম্বালেস বীরত্বগাথা থেকে) শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের সাথে তুলনা করেছিলেন। সাদৃশ্যগুলোর মধ্যে রাজপুত্রের কল্পিত উন্মাদনা, তাঁর মায়ের শোবার ঘরে রাজার পরামর্শদাতার দুর্ঘটনাক্রমে নিহত হওয়া এবং ঘটনাক্রমে তার চাচার হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[১০]

পূর্ববর্তী বহু কিংবদন্তি বিষয়াদি ১৩ শতকে স্যাক্সো গ্রামাতিকাস রচিত "আমলেথের জীবন" (লাতিন: ভিটা আমলেথি) এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল যা গেস্টা ড্যানোরামের অংশ ছিল।[১১] লাতিন ভাষায় রচিত, এটি পুণ্য এবং বীরত্বের ধ্রুপদী রোমান ধারণাগুলোকে প্রতিফলিত করে এবং শেক্সপিয়ারের সময় এটি ব্যাপকভাবে উপলভ্য ছিল।[১২] উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে যুবরাজের উন্মাদ হওয়ার অভিনয়, জবরদখলকারীর সাথে তার মায়ের তড়িঘড়ি বিয়ে, যুবরাজ কর্তৃক একজন আত্মগোপনে থাকা গুপ্তচরকে হত্যা আবার নিজেরই দুজন বিশ্বস্ত সহচরের ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করা। স্যাক্সোর গল্পের একটি যুক্তিসঙ্গত বিশ্বাসযোগ্য সংস্করণ ফরাসি ভাষায় ১৫৭০ সালে ফ্রাঙ্কোয়েস ডি বেলফরেস্ট তাঁর 'হিস্টোয়্যারস ট্রাজিক্সে' অনুবাদ করেছিলেন।[১৩] বেলফেরস্ট স্যাক্সোর লেখাকে যথেষ্ট অলঙ্কৃত করে এর দৈর্ঘ্য প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছিলেন এবং মূল নায়কের বিষাদপর্বের সূচনা করেছিলেন।[১৪]

একটি তত্ত্ব অনুসারে, শেকসপিয়ারের মূল উৎস হচ্ছে উর-হ্যামলেট নামে হারিয়ে যাওয়া একটি নাটক। সম্ভবত টমাস কিড বা এমনকি উইলিয়াম শেকসপিয়ারও উর-হ্যামলেট নাটকটি লিখে থাকতে পারেন যা ১৫৮৯ সালের দিকে বিদ্যমান ছিল এবং এর সাথে একটি প্রেতাত্মাও সংশ্লিষ্ট ছিল।[১৫] শেক্সপিয়ারের সংস্থা, চেম্বারলাইনস মেন, সম্ভবত নাটকটি কিনেছিল এবং কিছু সময়ের জন্য একটি সংস্করণ মঞ্চায়িতও করেছিল। পরে শেকসপিয়ার পুনরায় এর ওপর কাজ করেন।[১৬] তবে যেহেতু উর-হ্যামলেটটির কোনও অনুলিপি বেঁচে নেই, তাই এর ভাষা ও রীতির তুলনা এর অসামান্য লেখকদের অন্যান্য সুপরিচিত লেখার সাথে করাটা অসম্ভব। ফলে, কিড এটি লিখেছেন এজাতীয় কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ যেমন নেই, তেমনি নাটকটি শেক্সপিয়ারের রচিত হ্যামলেটের প্রাথমিক সংস্করণ নয়, এ বক্তব্যের পেছনেও শক্তিশালী কোন প্রমাণ নেই। এই পরবর্তী ধারণাটিই - হ্যামলেটকে তার সাধারণ স্বীকৃত তারিখের চেয়ে অনেক আগে স্থান দিয়েছে- তাতে করে কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণের সুযোগ হয়েছে।[১৭]

মোটকথা হল শেকসপিয়ার উর-হ্যামলেট থেকে কতটা উপাদান নিয়েছিলেন (যদি এটি কোনদিন থেকে থাকে), বেলফরেস্ট বা স্যাক্সোর কাছ থেকে কতটা, এবং অন্যান্য সমসাময়িক উৎস (যেমন কিডের স্প্যানিশ ট্র্যাজেডি)থেকে কতটুকু তা পণ্ডিতরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারেননা। শেকসপিয়ার স্যাক্সোর সংস্করণটির জন্য সরাসরি কোনও রেফারেন্স দিয়েছেন বলেও কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। যদিও, বেলফরেস্টের সংস্করণগুলোর উপাদানগুলো যা স্যাক্সোর গল্পে নেই, তা শেকসপিয়ারের নাটকে কিন্তু ঠিকই দেখা যায়। শেকসপিয়ার সরাসরি বেলফরেস্টের কাছ থেকে সেগুলো নিয়েছেন কিনা নাকি অনুমান নির্ভর উর-হ্যামলেট থেকে তা এখনও অস্পষ্ট।[১৮]

বেশিরভাগ পণ্ডিত এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন যে হ্যামলেট কোনওভাবে শেকসপিয়ারের একমাত্র পুত্র হ্যামনেটের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যিনি ১৫৯৬ সালে এগারো বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। প্রচলিত ধারনামতে, হ্যামলেট খুব স্পষ্টতই কিংবদন্তীর সাথে সংযুক্ত এবং হ্যামনেট নামটিও তখন বেশ জনপ্রিয় ছিল।[১৯] তবে স্টিফেন গ্রিনব্ল্যাট যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ছেলে হারানোর শোক আর নামের সাদৃশ্য, দুটোই কাকতালীয়ভাবে ট্র্যাজেডিটির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে নিহিত থাকতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, স্ট্রেটফোর্ডের প্রতিবেশী হ্যামনেট স্যাডলার, যার নামেই হ্যামনেটের নামকরণ হয়েছিল, তাকে প্রায়শই হ্যামলেট স্যাডলার হিসাবে লেখা হত এবং সেই সময়ের ঢিলেঢালা বানান পদ্ধতিতে নামগুলো কার্যতই বদলে যেতে পারত।[২০][২১]

পণ্ডিতরা প্রায়শই মনে করতেন, হ্যামলেটের পোলোনিয়াস চরিত্রটি হয়ত উইলিয়াম সিসিল (লর্ড বার্গলে) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল- যিনি ঊর্ধ্বতন কোষাধ্যক্ষ এবং প্রথম রানি এলিজাবেথের প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন। নাটকে ই.কে. চেম্বারস যেভাবে পোলোনিয়াসের পরামর্শ লেয়ার্তেসকে মেনে চলতে বলছেন তা যেন অনেকটাই পুত্র রবার্ট সিসিলের প্রতি বার্গলের উপদেশ প্রতিফলিত করেছে।[২২] জন ডোভার উইলসন এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই অনুভব করেছিলেন যে, নাটকে পোলোনিয়াসের চরিত্রটি বার্গলেকেই ব্যঙ্গ করেছে।[২৩] এ এল রোওসি অনুমান করেছিলেন যে, পোলোনিয়াসের ক্লান্তিকর বাগাড়ম্বর বার্গলের মতো হতে পারে।[২৪] লিলিয়ান উইনস্টলি ভেবেছিলেন, কোরাম্বিস নামটি (প্রথম কোয়ার্টোর মধ্যে) সিসিল এবং বার্গলেকে বুঝিয়েছে।[২৫] হ্যারল্ড জেনকিন্সও ধারণা করেছেন যে, পোলোনিয়াস সম্ভবত বার্গলের একটি আনুমানিক রূপ হতে পারে, যেহেতু তারা প্রত্যেকে সভায় একই ভূমিকা পালন করতেন এবং বার্গলে তাঁর ছেলেকে যেভাবে দশটি উপদেশ দিয়েছিলেন, নাটকে পোলোনিয়াসকেও পুত্র লেয়ার্তেসের প্রতি সেভাবেই উপদেশ দিতে দেখা যায়।[২৬] জি আর হিবার্ড অনুমান করেছেন যে প্রথম কোয়ার্তো এবং অন্যান্য সংস্করণের মধ্যে নামের যে পার্থক্য (কোরাম্বিস/পোলোনিয়াস: মন্টানো / রায়নল্ডো) দেখা যায়, তা হয়তো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের ক্ষেপিয়ে না তুলবার ইচ্ছে থেকেও হতে পারে।

সময়কাল সম্পাদনা

 
হ্যামলেট চরিত্রে জন ব্যারিমোর (১৯২২)

নিউ ক্যামব্রিজের সম্পাদক ফিলিপ এডওয়ার্ডস সতর্ক করে বলেছেন, "হ্যামলেটের যে কোনও ডেটিং বা সময়কাল অবশ্যই পরীক্ষণসাপেক্ষ হতে হবে"।[২৭] সবচেয়ে প্রথম দিকের প্রাক্কলন অনুযায়ী হ্যামলেটের সময়ের ইঙ্গিত বার বার শেকসপিয়রের জুলিয়াস সিজারের দিকে নির্দেশ করে যা নিজেই ১৫৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে রচিত হয়েছিল।[২৮][২৯] সর্বশেষ তারিখের প্রাক্কলনটি ২৬ জুলাই ১৬০২ সালের স্টেশনার্স কোম্পানির রেজিস্টারে একটি অন্তর্ভুক্তি উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয় যেখানে উল্লেখিত হয় হ্যামলেট, "লো: চেম্বারলিন ও তার সহকর্মীদের দ্বারা অভিনীত হয়েছিল"।

১৫৯৮ সালে ফ্রান্সিস মেরেস তাঁর 'পল্লাদিস তমিয়া' প্রকাশ করেছিলেন, যেটি জিওফ্রে চসার থেকে বর্তমান ইংলিশ সাহিত্যের একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে শেকসপিয়ারের বারোটি নাটকের নাম উল্লেখিত ছিল। হ্যামলেট সেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল না যা থেকে প্রমাণিত যে, এটি তখনও পর্যন্ত লেখা হয়নি। হ্যামলেট যেহেতু খুব জনপ্রিয় ছিল, নিউ সোয়ান-র সিরিজ সম্পাদক বার্নার্ড লট মনে করেন যে "তিনি [মেরেস] এত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সৃষ্টিকে অবহেলা করার কথা নয়"।[৩০]

প্রথম ফোলিও (এফ ১) এর "লিটল আয়াসেজ" [৩১] শব্দটি চিলড্রেন অফ দ্য চ্যাপেল নাটকের দিকে ইঙ্গিত করা যেতে পারে, লন্ডনে যার জনপ্রিয়তা গ্লোব সংস্থাকে প্রাদেশিক ভ্রমণে বাধ্য করেছিল।[৩২] এটি থিয়েটারের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল এবং ১৬০১ সালের সময়কালকে সমর্থন করে।[৩০] ক্যাথরিন ডানকান-জোনস হ্যামলেট রচনার তারিখের জন্য ১৬০০-০১ সালের অনুষঙ্গকে গ্রহণ করেন, তবে উল্লেখ করেন যে লর্ড চেম্বারলাইনের সহকর্মীরা, ৩০০০-ক্ষমতাসম্পন্ন গ্লোবে হ্যামলেট মঞ্চস্থ করেছেন, সেখানে চিলড্রেন অফ দ্য চ্যাপেল -এর সমতুল্য নাটক এন্টোনিও'স রিভেঞ্জ " এর সবে মাত্র একশো শ্রোতার দ্বারা তাদের কোনও অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা ছিল না; তিনি এও বিশ্বাস করেন যে শেক্সপিয়ার তাঁর নিজের কাজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে তাঁর বন্ধু জন মার্স্টনের অনুরূপ সৃষ্টির জন্য একটি কৌতুকপূর্ণ ও কৃপাপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।[৩৩]

শেকসপিয়ারের সমসাময়িক গ্যাব্রিয়েল হার্ভে চসারের সৃষ্টিকর্মের ১৫৯৮ এর সংস্করণের নিজস্ব কপির এক কোণে একটি নোট লিখেছিলেন, যা কিছু পণ্ডিত হ্যামলেটের সময়কালের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করেন। হার্ভির নোটে বলা হয়, "বুদ্ধিমানরা" হ্যামলেট উপভোগ করেছে এবং ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, ১৬০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহের জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আর্ল অফ এসেক্স তখনও বেঁচে ছিলেন। অন্যান্য পন্ডিতগণ যদিও একে বিবেচনাযোগ্য মনে করেন না। যেমন, এডওয়ার্ডস এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, "হার্ভে'র নোটে সময়ের বোধ এতটাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে যে হ্যামলেটের প্রকৃত তারিখ নির্ণয়ের চেষ্টা করাও বৃথা"। এর কারণ, হার্ভের একই নোটে স্পেনসার এবং ওয়াটসনকেও উল্লেখ করা হয়েছে যেন তারাও তখন জীবিত ছিল (অথচ এঁরা দুজনই ১৬০১ সালের আগে মারা গিয়েছিলেন), আবার ১৬০৭ সালে প্রকাশিত "ওভেনের নিউ এপিগ্রামের" (শ্লেষাত্মক ক্ষুদ্র কৌতুক কবিতা) এর উল্লেখও সেখানে রয়েছে।[৩৪]

হ্যামলেটের যত পাঠ্যরূপ (টেক্সটস) সম্পাদনা

অসমাপ্ত ও সংশয়ের অবকাশ রেখেই একটি মৌলিক রূপ দাঁড় করাতে এই নাটকের পান্ডুলিপির তিনটি প্রাথমিক সংস্করণ টিকে আছে এবং প্রত্যেকটিই একে অপর থেকে ভিন্ন।[৩৫][৩৬]

  • প্রথম কোয়ার্টো (কিউ ১): ১৬০৩ সালে বই বিক্রেতা নিকোলাস লিঙ এবং জন ট্রুন্ডেল প্রকাশ করেছিলেন এবং ভ্যালেন্টাইন সিমস মুদ্রণ করেছিলেন 'দ্যা ট্র্যাজিকাল হিস্টোরি অ্ফ হ্যামলেট প্রিন্স অফ ডেনমার্ক' নামে। এটি তথাকথিতভাবে 'খারাপ কোয়ার্তো' নামেও পরিচিত। কিউ ১- এ দ্বিতীয় কোয়ার্টোর অর্ধেকেরও বেশি পাঠ্যাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  • দ্বিতীয় কোয়ার্টো (কিউ ২): ১৬০৪ সালে নিকোলাস লিঙ প্রকাশ করেন, এবং জেমস রবার্টস মুদ্রণ করেন। প্রথম কোয়ার্টোর একই নামে ছাপা হয়েছিল এটি। ১৬০৫ সালেরও কিছু অনুলিপি পাওয়া যায় যা দ্বিতীয় মুদ্রিত সংস্করণও হতে পারে; ফলে, কিউ ২ এর সময়কাল প্রায়শই ১৬০৪/৫ বলা হয়। কিউ ২ সবচেয়ে দীর্ঘতম প্রাথমিক সংস্করণ, যদিও এফ ১ এর প্রায় ৭৭ টি লাইন এতে বাদ দেয়া হয়েছে (সম্ভবত প্রথম জেমসের রানী, অ্যান অফ ডেনমার্ককে মনঃক্ষুণ্ন না করতেই এগুলো বাদ দেয়া হয়েছিল।[৩৭]
  • প্রথম ফোলিও (এফ ১): ১৬২৩ সালে এডওয়ার্ড ব্লাউন্ট, উইলিয়াম এবং আইজ্যাক জাগার্ড শেক্সপিয়রের সম্পূর্ণ রচনার প্রথম সংস্করণ, দ্যা ট্র্যাজেডি অফ হ্যামলেট , প্রিন্স অফ ডেনমার্ক' নামে প্রথম ফোলিওতে প্রকাশ করেন।[৩৮]

পরবর্তীকালে অন্যান্য ফোলিও এবং কোয়ার্টো প্রকাশিত হয়েছিল - জন স্মেথউইকের কিউ ৩, কিউ ৪ এবং কিউ ৫ (১৬১১-৩৭ সহ - তবে এগুলোকে প্রথম তিনটি সংস্করণের অপভ্রংশই বলা যায়।[৩৮]

 
১৬২৩ সালে মুদ্রিত হ্যামলেটের ফার্স্ট ফোলিওর প্রথম পাতা

১৭০৯ সালে নিকোলাস রোয়ী এবং লিউয়িস থিওবাল্ড ১৭৩৩ সালে শেকসপিয়ারের রচনায় হ্যামলেটের দুটো প্রাথমিক সংস্করণ কিউ ২ ও এফ ১ কে একসাথে করে প্রকাশ করেছিলেন। দুটোতেই উপাদানগত ভিন্নতা তো ছিলই, সাথে প্রচুর ছোটখাটো শব্দগত ত্রুটিও ছিল। বড়জোর ২০০টি লাইনের সাদৃশ্য ছিল উভয়ের মধ্যে। সম্পাদকরা এগুলোকে সম্পূর্ণ পাঠ্যরূপে রূপান্তরিত করবার জন্য একত্রিত করেন যাতে করে শেক্সপিয়ারের মূল রচনার কল্পিত "আদর্শ" কে প্রতিফলিত করা যায়। থিওবাল্ডের সংস্করণটি অনেক দিন ধরে প্রমিত অবস্থানে ছিল,[৩৯] এবং তাঁর "সম্পূর্ণ পাঠ্যরূপ" তৈরির পদ্ধতি আজও সম্পাদকীয় অনুশীলনকে প্রভাবিত করে চলেছে। কিছু সমসাময়িক বিদ্যাবত্তাকে অবশ্য এই পদ্ধতি বাদ দিতে দেখা যায়, পরিবর্তে তাঁরা "একটি মৌলিক হ্যামলেটে র দুর্বোধ্য আদর্শকেই যথার্থ বলে বিবেচনা করেন ... ...যেখানে নাটকের পাঠ্য রয়েছে বটে তবে কোনও প্রকৃত পাঠ্যরূপ নেই"।[৪০] ২০০৬ সালে আর্ডেন শেক্সপিয়রের প্রকাশনায় বিভিন্ন খণ্ডে বিভিন্ন হ্যামলেট পাঠ্যরূপের প্রকাশনা সম্ভবত এই দৃষ্টিভঙ্গির স্থানান্তর এবং গুরুত্বারোপের প্রমাণ।[১৭] অন্যান্য সম্পাদকরা নাটকের সমস্ত সংস্করণ থেকে উপাদান গ্রহণ করে একটি সম্পূর্ণ সম্পাদিত সংস্করণের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যুক্তি অব্যাহত রেখেছেন। কলিন বুরো যুক্তি দেন যে "আমাদের বেশিরভাগেরই এমন একটি পাঠ্যরূপ পড়া উচিত যা তিনটি সংস্করণকে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমার সন্দেহ যে, বেশিরভাগ লোকই তিন-পাঠ্যরূপ বিশিষ্ট একটি নাটক পড়তে চাইবেন না ........ নাটকের বহু পাঠ্যরূপ বিশিষ্ট সংস্করণ বৃহত্তর জনগণের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও নাগালের থেকে যায়"।[৪১]

সাধারণভাবে, সম্পাদকগণ শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোকে পাঁচটি অঙ্কে বিভক্ত করেছেন। কিন্তু হ্যামলেটের প্রথম দিকের পাঠ্যরূপগুলোর কোনওটিই এইভাবে সাজানো হয়নি এবং নাটকটির অঙ্ক ও দৃশ্য বিভাজন ১৬৭৬ এর একটি কোয়ার্টো অনুসরণে এসেছে। আধুনিক সম্পাদকরা সাধারণত এই চিরাচরিত বিভাগ অনুসরণ করলেও একে অসন্তোষজনক বলে মনে করেন; উদাহরণস্বরূপ, হ্যামলেট পোলোনিয়াসের মৃতদেহ গারট্রুডের শয়নকক্ষ থেকে টেনে আনার পরে সেখানে একটি অঙ্ক-বিভাজিকা[৪২] রয়েছে যার পরে ক্রিয়াটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে দেখা যায়।[৪৩]

১৮২৩ সালে কিউ ১ এর আবিষ্কার - যার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ ছিলনা বললেই চলে- এটি সম্পাদকীয় অনুশীলন এবং রূপায়ণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপনের পাশাপাশি যথেষ্ট আগ্রহ এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। পণ্ডিতরা তখনই কিউ ১ এর আপাত ঘাটতিগুলি সনাক্ত করেছিলেন, যা শেকসপিয়ারের "খারাপ কোয়ার্টো"[৪৪] ধারণার বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। তবুও কিউ ১ এর যথেষ্ট মূল্য রয়েছে: কারণ এতে মঞ্চের দিকনির্দেশনা রয়েছে (যেমন ওফেলিয়ার বীনা হাতে এলোচুলে মঞ্চে প্রবেশ।) যা প্রকৃত মঞ্চ অনুশীলনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করে।[৪৫] কিউ ২ এবং এফ১ এ এগুলো অনুপস্থিত। আর পরবর্তী সংস্করণগুলির সাথে তুলনা করার জন্যও কিউ ১ গুরুত্বপূর্ণ । কিউ ১ এর প্রধান ঘাটতি ভাষার ক্ষেত্রে: যা মূলত 'হবে কি হবে না' এই বিখ্যাত সোলিলোকি বা একক কথোপকথনের প্রথম দিকের লাইনগুলোতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। যদিও, দৃশ্যের ক্রমবিন্যাসটি হ্যামলেটের কিউ ২ এবং এফ ১ এর মতো সমস্যাসংকুল নয় বরং আরও সুসংগত, যেখানে একটি দৃশ্যে কিছু করতে মনঃস্থ করবার পর পরবর্তী দৃশ্যেই গভীর অনিশ্চয়তায় হারাতে দেখা যায়। নিউ কেমব্রিজের সম্পাদক ক্যাথলিন আইরাস উল্লেখ করেন যে, "কিউ ১ এর আরও সরলরৈখিক প্লটের নকশা অনুসরণ করা অবশ্যই সহজ তবে কিউ ১ প্লটের বিন্যাসের সরলতা হ্যামলেটের মনমেজাজের সূক্ষ্ম পরিবর্তনকে প্রকাশ করে এমন প্লটকে অনেকটাই পাল্টে দেয় "।[৪৬]

কিউ ১ কিউ ২ বা এফ ১ এর তুলনায় যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত এবং সম্ভবত একটি স্মৃতি পুনর্গঠনমূলক নাটক যা শেকসপিয়ারের সংস্থা থেকে মার্সেলাস নামে এক অভিনেতা মঞ্চায়ন করেন যিনি খুবই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[৪৭] এখন স্মৃতি পুনর্গঠনটি বিনা অনুমতিতে নেয়া হয়েছিল নাকি অনুমোদিত হয়েছিল এ বিষয়ে পণ্ডিতরা একমত নন। আইরেসের মতে, কিউ ১ একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ যা বিশেষ করে ভ্রমণের সময় মঞ্চায়নের উপযোগী করে নির্মিত। সুতরাং দৈর্ঘ্যের প্রশ্নটি দুর্বল পাঠ্যরূপের বিষয় থেকে আলাদা করে বিবেচনা করা যেতে পারে।[৪৮][৪৯] এদিক থেকে কিউ ১ এ কিউ ২ এবং এফ ১ থেকে পৃথক জায়গাগুলোতে "সংশোধন" করে বা না করে সম্পাদনা করাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আইরেস কিউ ১ এর ভূমিকায় লিখেছিলেন যে "আমি যতটা সম্ভব অন্য পরিবর্তনগুলি এড়িয়ে চলেছি, কারণ পার্থক্যগুলি ... বিশেষত আকর্ষণীয়। কিউ ১ ত্রুটিযুক্ত নয় বরং তা মঞ্চায়নের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত বলেই ১৮৮১ সাল থেকে কিউ ১ এর ২৮ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রযোজনা সম্ভব হয়েছে।[৫০] অন্যান্য প্রযোজনাগুলি সম্ভবত কিউ ২ এবং ফোলিওর পাঠ্যরূপ ব্যবহার করেছে কিন্তু ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেছে কিউ ১ এর এবং বিশেষ করে ' হবে কি হবে না' এই সোলিলোকির অংশটুকু বাদ দিয়ে।[৫১] এ প্রসঙ্গেই জোনাথন বাট-এর মতো কিছু সম্পাদক যুক্তি দিয়েছেন যে, কিউ ২ হ্যামলেটের উপস্থাপনযোগ্য রূপের স্থলে পঠনযোগ্য রূপকে প্রতিফলিত করে যেভাবে ডিস্কে প্রকাশিত আধুনিক চলচ্চিত্রগুলোতে বাতিল করে দেয়া দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: অর্থাৎ এমন একটি সংস্করণ যেখানে শেক্সপিয়রের নাটকের সমস্ত উপকরণই আছে কিন্তু নাটকটি যেভাবে মঞ্চায়িত হতো সেভাবে উপস্থাপিত হয় নি।[৫২][৫৩]

ব্যাখ্যা ও সমালোচনা সম্পাদনা

জটিল ইতিহাস

সতেরো শতকের গোড়ার থেকেই, নাটকটি প্রেতাত্মা এবং বিষাদ ও উন্মাদনার প্রাণবন্ত নাটকীয়তার জন্য বিখ্যাত ছিল, যার ফলে জ্যাকোবিয়ান এবং ক্যারোলিন উন্মাদ ভাঁড় ও নারীদের মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল।[৫৪][৫৫] যদিও এটি ব্যাপক শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় ছিল তবে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে রেস্টোরেশনের সময়ের সমালোচকরা হ্যামলেটকে বেশ আদিম ও সেকেলে ভাবতে শুরু করেন এবং একে অসংবদ্ধতা ও ডেকোরামের অভাবের জন্য অনুমোদন করেন নি।[৫৬][৫৭] ১৮ শতকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দারুণভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, যখন সমালোচকরা হ্যামলেটকে - দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত একজন বুদ্ধিমান সৎ যুবক ও একজন নায়ক হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।[৫৮] তবে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, গথিক সাহিত্যের আবির্ভাব মনস্তাত্ত্বিক এবং রহস্যময় পাঠ্য বিষয়াদি নিয়ে আসলে উন্মাদনা আর প্রেতাত্মা জাতীয় বিষয়গুলো সর্বাগ্রে চলে আসে।[৫৯] অষ্টাদশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সমালোচক এবং অভিনেতারা হ্যামলেটকে বিভ্রান্তিকর বা অগোছালো ভাবতে শুরু করেন নি। তার আগে হ্যামলেট হয় পাগল, নাহলে হয় নায়ক , নাহলে এর কোনটিই নয় এমন অবস্থায় ছিলেন।[৬০] এই বিষয়গুলো সাহিত্য সমালোচনার একটি মৌলিক পরিবর্তনকে চিত্রায়িত করেছে, যা প্রেক্ষাপট বা পটভূমির চাইতে চরিত্রের দিকে বেশি মনোনিবেশ করে।[৬১] উনিশ শতকে, রোমান্টিক সমালোচকরা হ্যামলেটকে তার অন্তর্গত বিষয়ের জন্য গুরুত্ব দেন।[৬২] চরিত্র এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের উপর বিশেষ গুরুত্ব স্থাপন বিংশ শতাব্দীতেও অব্যাহত ছিল, যখন সমালোচনার বিচিত্র ধারা তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। নিম্নে প্রেক্ষিত ও ব্যাখ্যান অংশে এ প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।

নাটকীয় কাঠামো সম্পাদনা

হ্যামলেট নানাভাবে সমসাময়িক নাটকীয় ধারা থেকে ভিন্ন ছিল । উদাহরণস্বরূপ, শেক্সপিয়ারের সময় নাটকগুলি সাধারণত এরিস্টটলের 'পোয়েটিকস' এর উপদেশ অনুসরণ করে চলবে এটিই প্রত্যাশিত ছিল। আর সে উপদেশটি হল, একটি নাটকে চরিত্রের ওপর নয়, অভিনয় কলাকৌশলে মনোনিবেশ করা উচিত। হ্যামলেটে শেক্সপিয়ার সেই চিরায়ত ধারার বিপরীত কাজ করেছেন যেখানে ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নয় বরং সোলিলোকি বা একক কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শ্রোতারা হ্যামলেটের উদ্দেশ্য এবং চিন্তাভাবনাগুলো জানতে পারেন। নাটকটিকে এর 'খারাপ কোয়ার্টো' কে বাদ দিয়েও আপাতদৃষ্টিতে বিরক্তিকর ও ক্রিয়ার অনিয়মে পরিপূর্ণ বলা যায়। যেমন এক পর্যায়ে গোরখোদকের দৃশ্যে[৬৩] হ্যামলেটকে মনে হয় যেন তিনি ক্লদিয়াসকে হত্যা করতে মনঃস্থির করেছেন অথচ পরের দৃশ্যে, ক্লদিয়াস যখন সামনেই, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিচ্ছেন। পণ্ডিতরা এখনও এ ধরনের নাটকীয়তাগুলো নাটকের বিষয়বস্তুতে বিভ্রান্তি ও দ্বৈততা তৈরির জন্য ভুলবশত নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সংযুক্ত হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক করেন।[৬৪]

দৈর্ঘ্য সম্পাদনা

হ্যামলেট শেকসপিয়ারের দীর্ঘতম নাটক। এর পুনর্মার্জিত সংস্করণটি ২৯,৫৫১ টি শব্দযুক্ত এবং ৪,০৪২ টি সংলাপবিশিষ্ট, যা সাধারণত মঞ্চায়নে চার ঘণ্টারও বেশি সময় প্রয়োজন হয়।[৬৫][৬৬] নাটকটি কোন রকম সংক্ষিপ্তকরণ ছাড়াই মঞ্চায়িত হয়েছে এমনটি খুবই বিরল। কেবলমাত্র কেনেথ ব্রানাঘের ১৯৯৬ সালের সংস্করণে এর পূর্ণ পাঠ্যরূপের আত্মীকরণ করা হয়েছিল, যা মূলত একটি চলচ্চিত্র ছিল এবং দৈর্ঘ্য ছিল চার ঘন্টারও কিছু বেশি।

ভাষা সম্পাদনা

বালদাসার ক্যাস্টিগ্লিয়নের ১৫২৮ সালের শিষ্টাচার নির্দেশিকা 'দ্য কোর্টিয়ার' এ বলা হয়েছে, হ্যামলেটের বেশিরভাগ ভাষা সভ্য: বিস্তারিত, বুদ্ধিদীপ্ত ভাষ্যবিশিষ্ট। এখানে রাজ দরবারে আশ্রিতদের তাদের প্রভুর বিনোদনের জন্য বিচিত্র ভাষার ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিশেষত ওসরিক ও পোলোনিয়াস এর ব্যতিক্রম নন। ক্লদিয়াসের ভাষ্য যথেষ্ট অলঙ্কারবহুল, একই রকম হ্যামলেটের এমনকি কখনও কখনও ওফেলিয়ারও — কিন্তু হোরেশিও, প্রহরী এবং গোরখোদকদের ভাষা খুবই সরল। গ্রীক রাজনৈতিক বক্তৃতাগুলির সাথে মিলিয়ে ("আমরা" বা "আমাদের") জাতীয় উত্তম পুরুষ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লদিয়াসের উচ্চ মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।[৬৭] সমস্ত চরিত্রের মধ্যে, হ্যামলেটের সর্বাধিক অলঙ্করণ দক্ষতা রয়েছে। তিনি অত্যন্ত উন্নত স্টিকোমিথিয়া, মেটাফোর বা রূপক ব্যবহার করেন এবং নয়টি স্মরণীয় শব্দে তিনি আ্যানাফোর বা দ্বৈত শব্দায়ন এবং অ্যাসিন্ডিটন বা অব্যয় বিলোপ উভয়কেই স্থাপন করেছেন: "মরতে: ঘুমাতে / ঘুমাতে, স্বপ্নে বেঁচে থাকার জন্য" ইত্যাদি।[৬৮] বিপরীতে, পরিস্থিতির চাহিদায় তিনিই যথাযথ এবং সোজাসাপ্টা, যখন তিনি নিজের মায়ের কাছে মনের অনুভূতি ব্যাখ্যা করেন। আবার ওফেলিয়ার প্রতি "ন্যানারি" শব্দের ব্যবহার এক চূড়ান্ত নিষ্ঠুর দ্বৈত অর্থ বহন করে; একদিকে 'সন্ন্যাসী' আবার এলিযাবেথীয় যুগে 'পতিতালয়' বোঝাতে শ্লেষাত্মভাবে শব্দটি ব্যবহৃত হতো।[৬৯][৭০] হ্যামলেটকে শব্দ নিয়েও খেলা করতে দেখা যায়, ক্লদিয়াস যখন তাকে "আমার ভ্রাতুষ্পুত্র হ্যামলেট এবং আমার ছেলে" বলে সম্বোধন করেছিলেন তখন হ্যামলেট একপাশ থেকে বলেছিলেন: "আত্মীয়ের চেয়ে কিছু বেশি আবার অতটাও নয়।[৭১]

হ্যামলেটের সোলিলোকিগুলোও পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হ্যামলেট নিজেই নিজেকে বাধা দিচ্ছেন কখনো নিজের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে কখনওবা একমত হয়ে। সরাসরি নিজেকে প্রকাশ করতে তার অসুবিধা হয় অথচ তা সত্ত্বেও শব্দের খেলায় স্বচিন্তা প্রকাশে যেন অনেকটাই জোর তার। নাটকের প্রায় শেষ দিকে জলদস্যুদের সাথে তার অভিজ্ঞতার পরে, হ্যামলেট নিজের অনুভূতি নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে শুরু করেন।[৭২]

প্রসঙ্গ ও বিশদ ব্যাখ্যা সম্পাদনা

ধর্মীয় ব্যাখ্যা সম্পাদনা

 
চিত্র: ওফেলিয়া [[শিল্পীঃঃ জন এভেরেত মিল্লায়িস]' (১৮৫২)। এখাানে পানিতে ডুবে ওফেলিয়ার রহস্যময় মৃত্যুকে চিত্রাায়িত করা হয়েছে। নাটকে ওফেলিয়ার মৃত্যু আত্মহত্যা কিনা বা তার মৃতদেহ খৃষ্টীয় রীতিতে সৎকারযোগ্য কিনা তাই নিয়ে কেন্দ্র গোরখোদকদের আলোচনা করতে দেেখা যায়।

ধর্মীয় উত্থানের সময়ে এবং ইংরেজী সংস্কারের প্রেক্ষাপটে রচনা করা নাটকটি পর্যায়ক্রমে ক্যাথলিক (বা পবিত্রভাবে মধ্যযুগীয়) এবং প্রোটেস্ট্যান্ট (বা সচেতনভাবে আধুনিক)। প্রেতাত্মা নিজেকে প্রায়শ্চিত্তরত এবং শেষকৃত্য ছাড়া মারা যাওয়ার বর্ণনা দেয়। এ বিষয়টি এবং ওফেলিয়ার সমাধি অনুষ্ঠান, যা চরিত্রগতভাবে ক্যাথলিক তা এই নাটকের বেশিরভাগ ক্যাথলিক সংযোগকে তৈরি করেছে। কিছু পণ্ডিত পর্যবেক্ষণ করেছেন, ইতালি এবং স্পেনের মতো ক্যাথলিক দেশগুলি থেকে যে প্রতিশোধমূলক ট্র্যাজেডিগুলো এসেছে সেখানে ট্র্যাজেডিগুলোতে উদ্দেশ্যের দ্বন্দ্ব উপস্থাপন করা হয়।যেহেতু ক্যাথলিক মতবাদ অনুসারে, ঈশ্বর এবং পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালন সামাজিক ন্যায়বিচারের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই হ্যামলেটকে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়েও দ্বিধান্বিত হতে দেখা যায়; তার কি প্রতিশোধ নেয়া উচিত নাকি সে ভার ধর্মের নির্দেশমতো ঈশ্বরের হাতে অর্পণ করা উচিত।[৭৩]

নাটকের বেশিরভাগ প্রোটেস্ট্যান্ট সুরগুলি ডেনমার্কীয় কাঠামো থেকে উদ্ভূত হয়েছে - যা তৎকালে এবং এখনও প্রধানত একটি প্রোটেস্ট্যান্ট দেশ।[৭৪] যদিও নাটকের কাল্পনিক ডেনমার্ক এই অন্তর্নিহিত সত্যকে চিত্রিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। সংলাপগুলো জার্মান শহর উইটেনবার্গের প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষণ করে যেখানে হ্যামলেট, হোরেশিও, রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানেই প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারক মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালে 'নাইন্টি-ফাইভ থিসিস' উপস্থাপন করে গির্জাতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।[৭৫]

দার্শনিক ব্যাখ্যা সম্পাদনা

হ্যামলেটকে প্রায়শই একটি দার্শনিক চরিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়, আপেক্ষিকতাবাদী, অস্তিত্ববাদী এবং সংশয়বাদী। উদাহরণস্বরূপ, তিনি রোজেনক্র্যান্টজকে যখন বলেন: "ভাল বা খারাপ বলে কিছু নেই, চিন্তাভাবনার ধরনই একে তৈরি করে', তখন এর মধ্য দিয়ে তিনি অধ্যাত্মবাদী ধারণার প্রকাশ ঘটান।[৭৬] আসলে বাস্তব বলে কিছু নেই, যা আছে তা মূলত ব্যক্তির মানসিক, এই ধারনাটি গ্রীক সোফিস্ট উৎস থেকে এসেছে যার মূল হল, যেহেতু ইন্দ্রিয়ের মাধ্যম ছাড়া কোন কিছুই অনুধাবন করা যায় না - এবং যেহেতু সমস্ত ব্যক্তি উপলব্ধি করে, এবং বিষয়গুলি পৃথক পৃথকভাবে উপলব্ধি করে - তাই পরম সত্য বলে কিছু নেই, যা আছে তা হল আপেক্ষিক সত্য।[৭৭] অস্তিত্ববাদের সুস্পষ্ট কথিত উদাহরণটি হ'ল "হবে নাকি হবে না"[৭৮], যেখানে অনেকে মনে করেন হ্যামলেট জীবন ও কর্মের প্রকাশে "হওয়া" এবং মৃত্যু ও নিষ্ক্রিয়তার প্রকাশে 'না হওয়া" শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

হ্যামলেট ফরাসি রেনেসাঁর মানবতাবাদী মিশেল ডি মন্টেইন দ্বারা প্রচারিত সমসাময়িক সংশয়বাদকে প্রতিফলিত করে।[৭৯] মন্টেইনের পূর্বে, পিকো দেলা মিরান্ডোলার মতো মানবতাবাদীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মানুষ ঈশ্বরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সৃষ্টি এবং সে তার নিজস্ব প্রকৃতি বেছে নিতে সক্ষম। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পরবর্তীকালে মন্টেইনের 'এসেইস'' এ ১৫৮০ সালে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। হ্যামলেটের "মানুষ কত অদ্ভুত" উক্তিটি মন্টেইনের ধারণাকেই প্রতিধ্বনিত করে বলে মনে হয়। এখন শেকসপিয়ার সরাসরি মন্টেইন থেকে নিয়েছিলেন কিনা নাকি উভয় ব্যক্তিই সময়ের চেতনার সাথে একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে বিবিধ আলোচনা হয়েছে।[৮০][৮১][৮২]

মনোবিশ্লেষণমূলক ব্যাখ্যা সম্পাদনা

হ্যামলেট সম্পর্কিত সিগমুন্ড ফ্রয়েডের চিন্তা ভাবনা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর 'ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস (১৮৯৯) গ্রন্থে, 'সফোক্লিস' ট্র্যাজেডির ইডিপাস রেক্সের পাদটীকা হিসাবে। এগুলি সবই নিউরোসিসের কারণ সম্পর্কে তাঁর বিবেচনার অংশ। ফ্রয়েড নাটকগুলির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করেন নি, তবে দুটি ট্র্যাজেডিকে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বগুলোর চিত্রায়ন ও সমর্থন তৈরি করতে ব্যবহার করেন, যা তার রোগীদের চিকিত্সার উপর নির্ভর করে এবং তার গবেষণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। হ্যামলেটের প্রযোজনাগুলো ফ্রয়েডের ধারণাগুলোকে তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যার সমর্থনে ব্যবহার করেছে।[৮৩][৮৪] 'ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস ' গ্রন্থে ফ্রয়েড বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা অনুসারে "পিতামাতাই সব মানুষের শিশুতোষ মনস্তত্ত্ব গঠনে ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যারা পরবর্তীকালে সাইকোনিউরোটিক হয়ে ওঠে" এবং "একজন অভিভাবকের প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে পড়া এবং অপরকে অপছন্দ করা" এটি একটি সাধারণ প্রবণতা শৈশবকালে এবং এটিই "পরবর্তী স্নায়ুতন্ত্রের" গুরুত্বপূর্ণ উৎস উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। [৮৫] ফ্রয়েডের বিবেচনায়, সফোক্লিসের ট্র্যাজেডি, ইডিপাস রেক্সে পিতৃহত্যা ও অজাচারের যে গল্পটি রয়েছে তা আমাদের কিংবদন্তি বিষয় দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে এবং যা এই ধারণাকেও সুদৃঢ় করছে যে "পুরোনো কিংবদন্তির গভীর এবং সর্বজনীন বৈধতা" "শিশুতোষ মনোবিজ্ঞান" এর এই তত্ত্বগুলির বৈধতা অনুধাবনের মধ্য দিয়েই শুধুমাত্র বোধগম্য হওয়া সম্ভব।[৮৫] ফ্রয়েডের মনস্তাত্ত্বিক যে তত্ত্বগুলোকে তিনি ইডিপাস কমপ্লেক্স হিসেবে নামকরণ করেন সেগুলোকে এক পর্যায়ে 'হ্যামলেট কমপ্লেক্স' হিসেবেও বিবেচনা করতে শুরু করেন।[৮৬] তাঁর মতে, হ্যামলেট আর ইডিপাস দুজনের মনজাগতিক সূত্র একই কিন্তু প্রকাশ ভিন্ন রকম। একই বিষয়কে সামলে নিতে সময় ও সভ্যতার পরিবর্তনে মানুষের আবেগ দমনের প্রক্রিয়াটি সুস্পষ্ট দেখা যায় দুটো নাটকেই। ইডিপাসে অজাচার এবং হত্যা দুটোই স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিয়েছিল কিন্তু হ্যামলেট এ সে ধরনের তাড়না দমিতই থেকে গেছে অথচ ভিন্ন ধরনের প্রেক্ষাপটে হ্যামলেটকে যথেষ্ট আগ্রাসী আচরণেও দেখা গিয়েছে।

ফ্রয়েড বলছেন, হ্যামলেট চরিত্রটি এমন একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায় যেখানে তার তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাঁর মতে: ১) "নায়ক মানসিক বিকারগ্রস্ত নন, তবে নাটকের প্রবাহে তিনি তা হয়ে ওঠেন"। ২) "দমনকৃত বাসনা এমন একটি বিষয় যা আমাদের সবার মধ্যেই দমিত থাকে"। এই দমন "আমাদের স্বতন্ত্র বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত"। হ্যামলেটের চরিত্রতে শ্রোতারা একে সনাক্ত করেন, কারণ "আমরাও একই বিরোধের শিকার।" ৩) আর থিয়েটারে সাধারণত দমনকৃত আবেগের সংগ্রাম আবেগতাড়িত মঞ্চের নায়ক আর দর্শক উভয়ের মধ্যেই সচেতনভাবে উপস্থিত হয় যেমনটি "মনোবিশ্লেষণমূলক চিকিত্সায় দেখা যায়"।[৮৭]

ফ্রয়েড উল্লেখ করেছেন যে, হ্যামলেট একটি ব্যতিক্রম, কেননা সাইকোপ্যাথিক বা মানসিক বিকারগ্রস্ত চরিত্রগুলো সাধারণত মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে অকার্যকর থাকে; যদি না শ্রোতা চরিত্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সাথে পরিচিত থাকেন তারা "জীবনের জন্য যেমন মঞ্চের জন্যও ততটাই অকেজো হয়ে যায়", কারণ তারা অন্তর্দৃষ্টি বা সহানুভূতিকে অনুপ্রাণিত করে না। ফ্রয়েড বলছেন, "আর নাট্যকারের কাজ হল আমাদেরকেও একই মানসিক অস্বাভাবিকতায় নিয়ে যাওয়া ।"[৮৮]

টমাস হপকিনস পরিচালিত নিউ ইয়র্কে জন ব্যারিমোরের দীর্ঘকালীন ১৯২২ সালের অভিনয় ভিক্টোরিয়ানের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিদ্রোহকে সামনে রেখে "চরিত্রের প্রতি ফ্রয়েডিয়ান দৃষ্টিভঙ্গীর নতুন ভিত তৈরি করেছিল"।[৮৯] উনিশ শতকের প্রথাগত ভদ্র, মিষ্টি রাজপুত্রকে উপস্থাপন করার চেয়ে তাঁর "অস্পষ্ট অভিপ্রায়" ছিল, চরিত্রকে পৌরুষদীপ্ত এবং লালসামগ্ন করে তোলা।[৯০]

হ্যামলেটের ওপর ব্লুম'স শেক্সপিয়র থ্রু দ্য এইজেস ভলিউমটিতে, সম্পাদক ব্লুম এবং ফস্টার দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে ব্যক্ত করেছেন যে, সমস্ত ট্র্যাজেডি জুড়ে নাটকটিতে হ্যামলেটের চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে শেক্সপিয়ারের উদ্দেশ্য হ্যামলেটে চিত্রিত বৈশিষ্ট্যের পরিধিকে সম্পূর্ণভাবে পরিবেষ্টনের জন্য ফ্রয়েডের ওডিপাস কমপ্লেক্সের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে।[৯১]

জোশুয়া রথম্যান দ্য নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনে লিখেছেন যে " আমরা যখন বলি যে ফ্রয়েড হ্যামলেটকে বুঝতে ওডিপাস কমপ্লেক্সের ধারণাটি ব্যবহার করেছিলেন তখন আমরা ভুল বলি"। বিষয়টি আসলে অন্যভাবে হয়েছিল: হ্যামলেট ফ্রয়েডকে মনোবিশ্লেষণ বুঝতে এবং সম্ভবত আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছিল"। রথম্যান উপসংহারে বলেছিলেন, "ওডিপাস কমপ্লেক্স একটি অসম্পূর্ণ নাম। বরঞ্চ এটিকে 'হ্যামলেট কমপ্লেক্স' বলা উচিত।[৯২]

জ্যাকস লেকান সম্পাদনা

১৯৫০-এর দশকে ফরাসী মনোবিজ্ঞানী জ্যাক ল্যাকান হ্যামলেটকে তার কয়েকটি ধারণার সমর্থনে হ্যামলেট বিশ্লেষণ করেছিলেন। হ্যামলেট সম্পর্কে তাঁর কাঠামোগত তত্ত্বগুলি প্রথমে প্যারিসে কয়েকটি সেমিনারে উপস্থাপিত হয়েছিল এবং পরে " ডিজায়ার এন্ড দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অফ ডিজায়ার ইন হ্যামলেট" এ প্রকাশিত হয়েছিল। ল্যাকান দাবি করেন যে, মানুষের মানসিকতা ভাষার কাঠামো দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং হ্যামলেটের ভাষাগত কাঠামো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি আলোকপাত করে।[৯৩] ল্যাকানের বিশ্লেষণে, হ্যামলেট অসচেতনভাবে ফ্যালাসের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন - যা তার নিষ্ক্রিয়তার কারণ — এবং "শোক, কল্পনা, আত্মপ্রীতি এবং মনোব্যাধির" কারণে বাস্তবতা থেকেও ক্রমশ তার দূরত্ব বেড়েছে, যা তার মনের বাস্তব, কাল্পনিক এবং প্রতীকী বিষয়গুলোতে এক ধরনের শূণ্যতা তৈরি করেছে।[৯৩] লেকানের তত্ত্বগুলি মূলত হ্যামলেটের প্রতি তাঁর বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। নাটকটির মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট অন্বেষণে তাঁর শব্দার্থবিজ্ঞানের ব্যবহার হ্যামলেটের পরবর্তী সময়েও কিছু সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করেছিল।

নারীবাদী ব্যাখ্যা সম্পাদনা

বিংশ শতাব্দীতে, নারীবাদী সমালোচকরা গের্ট্রুড এবং ওফেলিয়ার প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত করেছিলেন। নব্য ইতিহাসবেত্তা ও সাংস্কৃতিক বস্তুবাদী সমালোচকরা নাটকটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা করেছেন এবং এর মূল সাংস্কৃতিক পরিবেশকে একত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।[৯৪] তারা আধুনিক ইংল্যান্ডের প্রথম দিকে দাসী, স্ত্রী বা বিধবা এই সাধারণ ত্রিত্বের দিকে এবং সেই স্টেরিওটাইপের বাইরে বেশ্যাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তৎকালীন লিঙ্গ ব্যবস্থার ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এই বিশ্লেষণে, হ্যামলেট চরিত্রের মূল মর্মার্থ যা দাঁড়ায় তা হল, রাজা হ্যামলেটের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে ব্যর্থ মায়ের প্রতি কেন্দ্রীয় চরিত্র তথা হ্যামলেটের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং তাকে স্খলিত নারী হিসেবে দেখা। ফলস্বরূপ, হ্যামলেট সমস্ত নারীর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং ওফেলিয়ার সাথেও এমন আচরণ করেন যেন তিনিও একজন স্খলিত নারী এবং হ্যামলেটের নিকট বিশ্বস্ত নন। কিছু সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে, ওফেলিয়াকে সৎ ও ন্যায্য হিসাবে দেখা যেতে পারে; তবে, এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে সংযুক্ত করা কার্যত অসম্ভব, কেননা 'ন্যায়পরায়ণতা' একটি বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, আর 'সততা' একটি অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য।[৯৫]

ক্যারোলিন হিলব্রুনের ১৯৫৭ র "হ্যামলেটের মায়ের চরিত্র" শীর্ষক প্রবন্ধে গারট্রুডের পক্ষে যুক্তি দেন যে, হ্যামলেট রচনার কোথাও রাজা হ্যামলেটকে ক্লদিয়াসের বিষপ্রয়োগে হত্যার বিষয়ে গারট্রুড অবগত ছিলেন এমন কোন ইঙ্গিত নেই। এই বিশ্লেষণটি বহু নারীবাদী সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। এই বর্ণনা অনুযায়ী, গারট্রুড নিজের মৃত স্বামীর ভাইকে বিয়ে করার যে নিকৃষ্ট অপরাধ করেছেন, তা মূলত ক্ষমতার শূণ্যতা পূরণের জন্য করেছেন। হতে পারে এজন্যই রাজা হ্যামলেটের প্রেতাত্মা হ্যামলেটকে গারট্রুডের ওপর প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। হত্যার ষড়যন্ত্রকারীর প্রতি এই অবাধ উদারতা প্রদর্শনের বিষয়টি নিয়েও কিছু সমালোচকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।[৯৬][৯৭][৯৮]

ওফেলিয়াকেও নারীবাদী সমালোচকদের পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ইলাইন শোয়াল্টারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৯৯] ওফেলিয়ার চারপাশেই কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অস্তিত্ব লক্ষ্যণীয়: তার বাবা, ভাই এবং হ্যামলেট। ‌এক পর্যায়ে তিনজনই অদৃশ্য হয়ে যায় এবং লেয়ার্তেসও বিদায় নেয়। এরপর হ্যামলেট তাকে পরিত্যাগ করে, ঘটনাক্রমে পোলোনিয়াস মারা যায়। প্রচলিত তত্ত্বগুলো যুক্তি দিচ্ছে, এই তিনজন শক্তিশালী ব্যক্তির সাহচর্য হারিয়ে ফেলায় ওফেলিয়ার মনোবিকার ঘটে।[১০০] নারীবাদী তাত্ত্বিকরা যুক্তি দেখান যে, হ্যামলেট ওফেলিয়ার বাবাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তাদের দুজনের একসঙ্গে থাকার পথে গুরুত্বপূর্ণ বাধা অপসারণ করেছিলেন। এ চিন্তায় মূলত অপরাধবোধের শিকার হয়ে ওফেলিয়া উন্মাদ হয়ে যান। শোয়াল্টার বলেন, ওফেলিয়া আধুনিক সংস্কৃতিতে এলোমেলো ও উদাসীন এক নারীর প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছেন।[১০১]

 
হ্যামলেট তার মা গারট্রুডকে তার পিতার প্রেতাত্মা দেখানোর চেষ্টা করছেন (শিল্পী: নিকোলাই এ. আবিল্দগার্দ ‌আনু-১৭৭৮).

প্রভাব সম্পাদনা

হ্যামলেট ইংরেজি ভাষার অন্যতম বহুল উদ্ধৃত একটি রচনা এবং প্রায়শই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।[১০২] পরবর্তী শতাব্দীগুলোর রচনার মধ্য দিয়ে বাবরবারই যেন এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। শিক্ষাবিদ লরি ওসবার্ন অসংখ্য আধুনিক আখ্যানে হ্যামলেটের প্রত্যক্ষ প্রভাব চিহ্নিত করেছেন এবং এটিকে চারটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত করেছেন: নাটকের রচনার কল্পিত বিবরণ, তরুণ পাঠকদের জন্য গল্পের সরলীকরণ, এক বা একাধিক চরিত্রের বিস্তার ঘটানো বিবিধ গল্প এবং নাটকের অভিনয়ের বর্ণনামূলক আখ্যান।[১০৩]

ইংরেজ কবি জন মিল্টন শেকসপিয়রের প্রথম সারির প্রশংসক এবং তাঁর কাজ থেকে স্পষ্ট অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। জন কেরিগান উল্লেখ করেছেন, মিল্টন মূলত তাঁর মহাকাব্য 'প্যারাডাইস লস্ট' (১৬৬৭) রচনাকে ট্র্যাজেডি হিসাবে রচনা করতে চেয়েছিলেন।[১০৪] কিন্তু মিল্টন শেষ পর্যন্ত সেই পথে যান নি, তবে কবিতাটিতে শেক্সপিয়ারের প্রতিশোধমূলক ট্রাজেডি এবং বিশেষত হ্যামলেটের সুর স্পষ্টতই প্রতিধ্বনিত হয়। পণ্ডিত ক্রিস্টোফার এন ওয়ারেন যুক্তি দেন যে, 'প্যারাডাইস লস্ট' কবিতায় শয়তানকে হ্যামলেট-এর মতোই প্রতিশোধগ্রহণকারী থেকে ক্লদিয়াসের দখলদার চরিত্রে রূপান্তরিত হতে দেখা যায়, যা মিল্টনের বৃহত্তর রিপাবলিকান আন্তর্জাতিকবাদী প্রকল্পকে সমর্থন করে।[১০৫] কবিতাটি হ্যামলেট এর নাট্য ভাষাকেও পুনরায় রচনা করেছে, বিশেষ কিছু নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘিরে। আর উভয় রচনাতেই ঈশ্বর ভীতি বিদ্যমান।[১০৬]

১৮৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে, পিয়েরিতে, হারমান মেলভিল লেখক হিসাবে হ্যামলেটের মতো দীর্ঘ চরিত্র চিত্রায়নের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন।[১০৭] দশ বছর পর ডিকেন্সের 'গ্রেট এক্সপেক্টেশনস' এও হ্যামলেট এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্লট উপাদান রয়েছে: এটিও প্রতিশোধ-অনুপ্রাণিত ক্রিয়াকলাপ দ্বারা পরিচালিত হয়, প্রেতাত্মার মতো চরিত্রও এতে রয়েছে (অ্যাবেল ম্যাগউইচ এবং মিস হাভিশাম), এবং নায়কের অপরাধবোধের ওপরেই জোর দেয়া হয়েছে।[১০৮] শিক্ষাবিদ আলেকজান্ডার ওয়েলশ উল্লেখ করেন যে, গ্রেট এক্সপেক্টেশনস' একটি "আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস" এবং "হ্যামলেটের মতো মনোবিশ্লেষণিক পাঠ হওয়াই এখানে প্রত্যাশিত"।[১০৯] প্রায় একই সময়ে, জর্জ এলিয়টের দ্য মিল অন দ্য ফ্লস প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে ম্যাগি টালিভার চরিত্রের মানসিক সুস্থতা থাকলেও তাকে খুব স্পষ্টভাবে হ্যামলেটের সাথে তুলনা করা যায়।[১১০]

১৯২০ এর দশকে, জেমস জয়েস হ্যামলেটের আরও উৎসাহী সংস্করণ তৈরি করেছিলেন 'ইউলিসিস' এর মধ্য দিয়ে। যদিও এর প্রধান সমান্তরাল হিসেবে হোমারের ওডিসির[৪] সাথে বিবেচনা করা হয়। নব্বইয়ের দশকে দুজন উপন্যাসিকের রচনা হ্যামলেট দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। অ্যাঞ্জেলা কার্টারের 'ওয়াইজ চিলড্রেন' এবং আইরিস মারড কের 'দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স'। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের উপন্যাস ইনফিনিট জেস্ট' হ্যামলেট থেকে ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছিল। নাটকটির পাঠ্যরূপ থেকে শিরোনাম নেয়া থেকে শুরু করে গোরখোদকের দৃশ্যের বিশেষ উল্লেখ, প্রধান চরিত্রের মায়ের সাথে তার চাচার বিয়ে এবং মূল চরিত্রের পিতার প্রেতাত্মার ভূমিকায় পুনরায় আবির্ভাব সবই ওয়ালেসের উপন্যাসে এসেছে।

একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, এক মহিলা হ্যামলেট নাটকটি প্রথমবার পড়ার পর বলেছিল, "মানুষ কেন এই নাটকটির এত প্রশংসা করে বুঝি না। এটিতো কতগুলো উক্তির মেলবন্ধন ছাড়া আর কিছুই নয়।"

    - আইজাক অসিমভ, 'আসিমভ'স গাইড টি শেক্সপিয়র', পৃ. ০৭, আভেনাল বুকস, ১৯৭০

মঞ্চায়নের ইতিহাস সম্পাদনা

শেক্সপিয়র প্রায় নিশ্চিতভাবেই রিচার্ড বার্বেজের[১১১][১১২] জন্য হ্যামলেট চরিত্রটি লিখেছিলেন। তিনি লর্ড চেম্বারলইন মেনের প্রধান ট্র্যাজেডিয়ান ছিলেন। সংলাপ মনে রাখার দারুণ স্মরণশক্তি এবং আবেগের বিস্তৃত পরিসীমা ছিল তাঁর। মুদ্রণের সংখ্যা বিচার করলে হ্যামলেট শেক্সপিয়ারের জীবদ্দশায় চতুর্থ সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ছিল। আর শুধুমাত্র চতুর্থ হেনরির প্রথম অংশ, তৃতীয় রিচার্ড এবং পেরিক্লিস এতটা জনপ্রিয় হয়েছিল।[২]

এই নাটকের একদম প্রথম দিকের মঞ্চায়নের নির্দিষ্ট প্রমাণ খুবই কম। যতটুকু জানা যায় তা হ'ল রেড ড্রাগন জাহাজের কর্মীরা, সিয়েরা লিওনের নোঙর করে ১৬০৭ সালের সেপ্টেম্বরে হ্যামলেট মঞ্চস্থ করেছিল। নাটকটি শেক্সপিয়ারের মৃত্যুর পাঁচ বছরের মধ্যে জার্মানিতে ভ্রমণ করেছিল এবং এটি ১৬১৯ সালে জেমস প্রথম এবং ১৬৩৭ সালে চার্লস এর সামনে মঞ্চায়িত হয়েছিল। অক্সফোর্ডের সম্পাদক জর্জ হিববার্ড যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যেহেতু সমসাময়িক সাহিত্যে হ্যামলেট সম্পর্কিত অনেকগুলি ধারণা ও উল্লেখ রয়েছে সেহিসেবে নাটকটি নিশ্চয়ই বারবার মঞ্চস্থ হয়েছিল যা ইতিহাসে সংরক্ষিত নেই।

ইনটারেগনামের সময় সমস্ত থিয়েটারগুলি পিউরিটান সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল।[১১৩] এমনকি এই সময়েও ড্রল নামে পরিচিত ছোট ছোট নাটিকা অবৈধভাবে মঞ্চস্থ হত, যার মধ্যে রয়েছে 'দ্য গ্রেভ-মেকারস' যা হ্যামলেটের পঞ্চম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যের ওপর এর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল।[১১৪]

রেস্টোরেশন বা পুনরুদ্ধার এবং আঠারো শতক সম্পাদনা

রেস্টোরেশনের সময় হ্যামলেট এর পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল। প্রাক-গৃহযুদ্ধকালীন নাটকের সম্ভার যখন দুটি নব্যসৃষ্ট পেটেন্ট থিয়েটার সংস্থার মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় তখন হ্যামলেটই একমাত্র নাটক ছিল যা স্যার উইলিয়াম ডেভেন্যান্টের ডিউকের কোম্পানী স্বঅধীনে রেখেছিলেন।[১১৫] লিংকনস' ইন এর মাঠের থিয়েটারে মঞ্চায়িত হওয়া শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম ছিল। ড্রুরি লেনে ডেভিড গারিক শেক্সপিয়ারকে যথেষ্ট আত্মীকরণ করে একটি সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন : "আমি শপথ করেছিলাম যে পঞ্চম অঙ্কের সমস্ত জঞ্জাল থেকে এই মহৎ নাটকটি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আমি মঞ্চ ছেড়ে যাব না। কবর খননকারীর কৌতুক, ওস্ট্রিক আর কোন মল্লযুদ্ধ ছাড়াই আমি এটিকে সামনে নিয়ে এসেছি।" ১৭৫৯ সালে 'আমেরিকান কোম্পানি' র প্রযোজনায় প্রথম আমেরিকান অভিনেতা হিসেবে হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তর আমেরিকার, লুইস হাল্লাম জুনিয়র।[১১৬]

 
ডেভিড গ্যারিকের হ্যামলেটের চরিত্রে প্রথমবার প্রেতাত্মার মুখোমুখি হয়ে আতঙ্কিত অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ।

জন ফিলিপ কেম্বেল ১৭৮৩ সালে হ্যামলেট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।[১১৭] তাঁর অভিনয় অন্য যে কারও চেয়ে বিশ মিনিট দীর্ঘ বলে মনে করা হয়েছিল এবং তার দীর্ঘ বিরতির জন্যই রিচার্ড ব্রিনসলে শেরিডানের পরামর্শ দিতে বাধ্য হন যে "শব্দের মাঝে মাঝে সংগীত বাজানো উচিত"।[১১৮] সারা সিডনস হ্যামলেট অভিনয় করার জন্য প্রথম নারী অভিনেত্রী; তারপরে অনেক নারীই প্রশংসনীয়ভাবে এ ভূমিকয় অভিনয় করেছেন।[১১৯] ১৭৪৮ সালে আলেকজান্ডার সুমারকোভ হ্যামলেটের একটি রাশিয়ান আত্মীকরণ লিখেছিলেন যেখানে ক্লদিয়াসের অত্যাচারের বিরোধী রূপ হিসাবে যুবরাজ হ্যামলেটকে মূল কেন্দ্রবিন্দু করে দেখানো হয়েছে।এধারা পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপীয় সংস্করণগুলিতে বিশ শতকে ফিরে আসতে দেখা যায়। [১২০] আমেরিকার স্বাধীনতার পরের বছরগুলিতে, তরুণ জাতির শীর্ষস্থানীয় ট্র্যাজেডিয়ান থমাস অ্যাথর্প কুপার ফিলাডেলফিয়ার চেস্টনট স্ট্রিট থিয়েটার এবং নিউ ইয়র্কের পার্ক থিয়েটারে অন্যান্য নাটকের সাথে হ্যামলেট পরিবেশন করেছিলেন। যদিও "শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতদের স্বীকৃতি" এবং "সংলাপ মনে রাখার অপর্যাপ্ত স্মৃতির" জন্য তাঁকে নিয়ে তামাশা করা হলেও তিনি জাতীয় খ্যাতিমান হয়েছিলেন।[১২১]

উনিশ শতক সম্পাদনা

 
হ্যামলেটের বিভিন্ন প্রধান দৃশ্যকে তুলে ধরে আমেরিকান প্রযোজনার একটি পোস্টার আনু-১৮৮৪

১৮১০ থেকে ১৮৪০ সাল থেকে, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক পরিচিত শেকসপীয়ার মঞ্চায়নগুলো হয়েছিল লন্ডনের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদের দ্বারা হয়েছিল যাদের মধ্যে ছিলেন জর্জ ফ্রেডেরিক কুক, জুনিয়াস ব্রুটাস বুথ, এডমন্ড কীন, উইলিয়াম চার্লস ম্যাকরেডি এবং চার্লস কেম্বেল। এদের মধ্যে বুথ জীবিকার তাগিদে আমেরিকাতেই থেকে যান। তিনি অভিনেতা জন ওয়াইকস বুথ (তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনকে হত্যা করেছিলেন) ও এডউইন বুথের (সবচেয়ে বিখ্যাত হ্যামলেট অভিনেতা) পিতা।[১২২] ১৮৭৫ সালে ফিফথ্ অ্যাভিনিউ থিয়েটারে অ্যাডউইন বুথের হ্যামলেটকে "... একটি কবিতার অন্ধকার, বিষাদগ্রস্ত, স্বপ্নালু, রহস্যময়ী নায়ক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। বুথ ১৮৬৪/৬৫র মৌসুমে আমেরিকাতে উইন্টার গার্ডেন থিয়েটারে ১০০টি রাতে হ্যামলেট মঞ্চস্থ করেছিলেন যা আমেরিকায় শেক্সপিয়রের দীর্ঘ যুগের সূচনা করেছিল।[১২৩]

যুক্তরাজ্যে, ভিক্টোরিয়ান যুগের অভিনেতা-পরিচালকগণ (কীন, স্যামুয়েল ফেল্পস, ম্যাকডিয়ার, এবং হেনরি ইরভিং সহ) বিস্তৃত দৃশ্য ‌আর পোশাকের সাহায্যে শেকসপিয়ারকে দুর্দান্তভাবে মঞ্চস্থ করেছিলেন।[১২৪] যদিও অভিনেতা-পরিচালকদের তাদের নিজস্ব কেন্দ্রীয় চরিত্রের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার প্রবণতা সবসময় সমালোচকদের মনমতো হয়নি।

ফ্রান্সে, চার্লস কেম্বেল শেকসপিয়ারের প্রতি বেশ উৎসাহ তৈরি করেছিলেন এবং ভিক্টর হুগো ও আলেকজান্দ্রে ডুমাসের মতো রোম্যান্টিক আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় সদস্যরা ১৮২৭ সালে প্যারিসে তাঁর হ্যামলেটের অভিনয় দেখেছিলেন এবং হ্যারিয়েট স্মিথসনের ওফেলিয়ার চরিত্রে অভিনয়কে বিশেষভাবে প্রশংসা করেছিলেন।[১২৫] জার্মানিতে, হ্যামলেট উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এতটাই সংমিশ্রিত হয়ে পড়েছিল যে কবি ফার্দিনান্দ ফ্রেইলিগ্রথ ঘোষণা করেছিলেন যে "জার্মানিই হ্যামলেট"। ১৮৫০ এর দশক থেকে, ভারতে পার্সি নাট্যধারা কয়েক ডজন গান যুক্ত করে হ্যামলেটকে লোক পরিবেশনাতে রূপান্তরিত করেছিল।[১২৬]

বিশ শতক সম্পাদনা

 
ওফেলিয়া চরিত্রে মিগনন নেভাদা, ১৯১০

পশ্চিমের সফরগুলো বাদ দিলে উনিশ শতকে জাপানেও হ্যামলেটের প্রথম পেশাদার পরিবেশনা করেছিল যাতে অভিনয় করেন ওটোজিরি কাওয়াকামি যা ১৯০৩ সালে তাঁর নতুন থিয়েটারের একটি আত্মীকরণ বা এডাপ্টেশন ছিল।[১২৭] তসুবুচি শোয়ো হ্যামলেট অনুবাদ করেছিলেন এবং ১৯১১ সালে শিনজেকি ("নতুন নাটক") এবং কাবুকির শৈলীর মিশ্রণে এমন একটি পরিবেশনা তৈরি করেছিলেন।[১২৭] ১৯৯৯ সালে, ইউকিয়ো নিনাগাওয়া হ্যামলেটের একটি প্রশংসিত সংস্করণ তৈরি করেছিলেন যা তিনি লন্ডনে নিয়ে গিয়েছিলেন।[১২৭]

হ্যামলেট প্রায়শই সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতিবাচক পরিস্থিতির সময় মঞ্চায়ন করা হয়েছে । বার্লিন স্টাটাথিয়েটারে ১৯২৬ সালে লিওপল্ড জেসনারের হ্যামলেট প্রযোজনায় ক্লদিয়াসের সভাকে কৌতুকপূর্ণ করে উপস্থাপন করেছিলেন যা অনেকটা কাইজার উইলহেমের দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্বল সভার প্রতি ইঙ্গিবহ ছিল।[১২৮] পোল্যান্ডে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে হ্যামলেটের অনেকগুলো প্রযোজনা হয়, যেহেতু এর রাজনৈতিক বিষয়স্তু (সন্দেহজনক অপরাধ, অভ্যুত্থান, নজরদারি) সুতরাং এটি সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১২৯] একইভাবে, চেক পরিচালকরা দখলের সময় নাটকটি ব্যবহার করেছেন ১৯৪১ সালে। চীনেও হ্যামলেটের অভিনয়গুলির প্রায়শই রাজনৈতিক তাৎপর্য থাকত।[১৩০][১৩১]

একুশ শতক সম্পাদনা

এ সময় হ্যামলেট নিয়মিত মঞ্চস্থ হতে থাকে। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন: সাইমন রাসেল বিয়েল, বেন হিশা, ডেভিড টেন্যান্ট, টম হিডলস্টন, অ্যাঞ্জেলা উইঙ্কলার, স্যামুয়েল ওয়েস্ট, ক্রিস্টোফার ইক্লেস্টন, ম্যাক্সাইন পিকে, ররি কিনার, অস্কার আইজ্যাক, মাইকেল শিন, ক্রিশ্চান কামারগো, পাপা এসিডেদু এবং মাইকেল উরি।[১৩২][১৩৩][১৩৪][১৩৫]

চলচ্চিত্র ও টিভি মঞ্চায়ন সম্পাদনা

পর্দায় হ্যামলেটের প্রথম সাফল্যটি এসেছিল সারাহ বার্নহার্টের ১৯০০ সালে মল্লযুদ্ধ নিয়ে তৈরি পাঁচ মিনিটের চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। শব্দ আর চিত্রের সংমিশ্রণে প্রথম একটি প্রয়াস ছিল এই চলচ্চিত্র। সংগীত এবং শব্দগুলো ফোনোগ্রাফের রেকর্ডে রেকর্ড করা হয়েছিল, যাতে চলচ্চিত্রের সাথে সমন্বয় করে বাজানো যায়।[১৩৬] শব্দবিহীন সংস্করণগুলো ১৯০৭, ১৯০৮, ১৯১০,১৯১৩, ১৯১৭ এবং ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।[১৩৬] ১৯২২ সালে হ্যামলেট ছবিতে ডেনিশ অভিনেত্রী আস্তা নেলসন একজন নারী হিসাবে হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যিনি পুরুষের ছদ্মবেশেই জীবন কাটিয়ে দেন।[১৩৬]

১৯৪৮ সালে লরেন্স অলিভিয়ের ভাবগম্ভীর সাদাকালো হ্যামলেট সেরা ছবির স্বীকৃতি পায় এবং তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে একাডেমি পুরস্কার জিতে নেন। ২০২০ সালের হিসেব পর্যন্ত, শেকসপিয়ারের এই ছবিটিই এতটা উচ্চতায় পৌছেছিল। এই ছবিতে ২৮ বছর বয়সী আইলিন হার্লি হ্যামলেটের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং ৪১ বছর বয়সী অলিভিয়ের হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[১৩৭]

১৯৫৩ সালে, অভিনেতা জ্যাক ম্যানিং এর হ্যামলেট চরিত্রে অভিনয় নিউইয়র্ক টাইমস টিভি সমালোচক জ্যাক গোল্ড হ্যামলেট কর্তৃক দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল।[১৩৮]

১৯৬৪ সালের সোভিয়েত চলচ্চিত্র হ্যামলেট বোরিস পাস্টারনাকের অনুবাদ অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছিল। এর পরিচালনা করেছিলেন গ্রিগরি কোজিন্তসেভ। হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইন্নোকেন্তি স্মোকতুনোভস্কি।

জন গিলগুড ১৯৬৪-৬৫ সালে লুন্ট-ফন্টেন থিয়েটারে ব্রডওয়ে প্রযোজনায় রিচার্ড বার্টনকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘতম হ্যামলেট। এই প্রযোজনাটি একাধিক ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে "ইলেক্ট্রনোভিশন" ব্যবহার করে সরাসরি রেকর্ডও করা হয়েছিল।[১৩৯] আইলিন হার্লি রানির চরিত্রে অলিভিয়েরের ফিল্ম সংস্করণ থেকে তার ভূমিকার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন এবং প্রেতাত্মা হিসেবে গিলগুড নিজেই কন্ঠ দিয়েছেন। গিলগুড/বার্টন প্রযোজনাটি সম্পূর্ণ রেকর্ড করা হয়েছিল এবং কলম্বিয়া মাস্টার ওয়ার্কস দ্বারা এলপিতে প্রকাশিত হয়েছিল।

হ্যামলেট প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রে আসে ১৯৬৯ সালে, টনি রিচার্ডসনের পরিচালনায়। এতে নিকোল উইলিয়ামসনের হ্যামলেট এবং মেরিয়েন ফেইথফুল ওফেলিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

 
ইয়োরিখের খুলি হাতে হ্যামলেটের চরিত্রে সারাহ বার্নহার্ড (চিত্রগ্রাহক: জেমস লাফায়েত্তে, আনু. ১৮৮৫-১৯০০)

১৯৯০ সালে ফ্রাঙ্কো জেফিরেল্লি, যার শেকসপিয়ার চলচ্চিত্রগুলি "যতটা না মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক তার চেয়ে বেশি ইন্দ্রিয়পরায়ন"[১৪০] হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি মেল গিবসনকে (তৎকালেম্যাড ম্যাক্সলেথাল ওয়েপন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন) মূল চরিত্রের জন্য এবং গ্লেন ক্লোজকে ( যিনিফ্যাটাল এট্রাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন) গারট্রুড[১৪১] চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। আর পল স্কোফিল্ড হ্যামলেটের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

কেনেথ ব্র্যানা ১৯৯৬ সালে হ্যামলেট কে চলচ্চিত্র সংস্করণে রূপান্তরিত, পরিচালিত এবং অভিনয় করেছিলেন যার মধ্যে প্রথম ফোলিও এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টোর উপাদানগুলো ছিল। ব্র্যানার হ্যামলেট চার ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে।[১৪২] ব্রানাঘ উনিশ শতকের শেষের দিকের পোশাক এবং গৃহসজ্জা ব্যবহার করে এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছিলেন। সে সময়ের রাশিয়ান উপন্যাসের বিভিন্ন দিককে স্মরণ করিয়ে দেয় এই প্রযোজনা;[১৪৩] আঠারো শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত ব্লেনহিম প্যালেসকে বাহ্যিক দৃশ্যে এলসিনোর ক্যাসলে পরিণত করা হয়েছিল। ফিল্মটির কাঠামো নির্মিত হয়েছিল একটি মহাকাব্যের মতো করে এবং নাটকে সুস্পষ্ট না হওয়া উপাদানগুলো স্পষ্ট করার জন্য এখানে ঘন ঘন ফ্ল্যাশব্যাকের ব্যবহার করে: যেমন- কেট উইনস্লেট অভিনীত ওফেলিয়ার সাথে হ্যামলেটের সম্পর্ক, বা ইয়োরিকের সাথে তার শৈশব ভালবাসা (কেন ডড অভিনীত)।[১৪৪]

২০০০ সালে, মাইকেল আলমেরেদা হ্যামলেট কে সমকালীন ম্যানহাটনে স্থাপন করেছিলেন, ইথান হওকে একজন চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসাবে হ্যামলেট চরিত্রে এতে অভিনয় করেছিলেন। আর ক্লদিয়াস চরিত্রে কাইল ম্যাকলালান অভিনয় করেছিলেন যিনি "ডেনমার্ক কর্পোরেশন" এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়েছিলেন। নিজের ভাইকে হত্যা করে তিনি সংস্থাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[১৪৫]

এমন বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও রয়েছে যা হ্যামলেট বা এর উপাদানগুলির সাধারণ কাহিনীকে অন্য কাঠামোতে স্থানান্তরিত করেছে। ২০১৪ সালের বলিউড ছবি হায়দার তেমনি একটি চলচ্চিত্র। এর মূল সেট ছিল কাশ্মীরে।[১৪৬]

এছাড়াও অনেকগুলো চলচ্চিত্র হয়েছে যেগুলোতে হ্যামলেট নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যের উপস্থাপন করা হয়েছে।

অনুকরণকৃত মঞ্চায়ন সম্পাদনা

হ্যামলেট অনুসরণে অনেকগুলো কাজ হয়েছে যেখানে এর গল্পটিকে ভিন্ন চারিত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে অথবা ভিন্নতর দৃশ্যায়ন বা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হ্যামলেট এর পূর্ব বা পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে রূপ দেয়া হয়েছে। এই ধরনের কাজ সাধারণত মঞ্চায়নের জন্যই করা হতো।

এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নাটকটির কথা জানা যায় ১৯৬৬ সালে, টম স্টপার্ড রচিত 'রোজেনক্র্যান্টজ এন্ড গিল্ডেস্টার্ন আর ডেড' যেখানে গল্পটির বিভিন্ন ঘটনাকে রোজেনক্র্যান্টজ আর গিল্ডেস্টার্নের দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে তাদের নিজেদের অতীত গল্পও রয়েছে। ১৯৯৫ থেকে বহুবার আমারিকান শেক্সপিয়র সেন্টারের নাট্যসূচিতে হ্যামলেটরোজেনক্র্যান্টজ এন্ড গিল্ডেস্টার্ন দুটোই অন্তর্ভুক্ত করেছিল এবং দুটোতেই একই অভিনেতাদের দ্বারা চরিত্রগুলো অভিনীত হতো। ২০০১ আর ২০০৯ মৌসুমে তারা দুটো নাটককে একসাথে পরিচালনা করেন, সমন্বয় করেন এবং অনুশীলন করেন যাতে করে দু'জায়গার একই দৃশ্য ও পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।[১৪৭]

ডব্লিউ এস গিলবার্ট রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিলডেনস্ট্রান নামে একটি ছোট্ট কৌতুক নাটক লিখেছিলেন, যেখানে হ্যামলেট নাটকটি ক্লদিয়াসের যৌবনে রচিত ট্র্যাজেডি হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত বিব্রত। হ্যামলেটের এর মঞ্চায়ন বেশ ঝামেলা তৈরি করেছিল, আবার গিল্ডেনস্টার্নকে দেখা যায় ওফেলিয়াকে বিয়ে করার জন্য রোজেনক্র্যান্টজকে হ্যামলেটের প্রতিদন্দ্বী হিসেবে সাহায্য করতে।[১৪৮]

লি ব্লেসিংয়ের ফোর্টিনব্রাস হ্যামলেটের একটি হাস্যরসাত্মক সিক্যুয়াল, যেখানে মৃত সমস্ত চরিত্রগুলি প্রেতাত্মা হয়ে ফিরে আসে। নিউইয়র্ক টাইমস নাটকটি পর্যালোচনা করে বলছে যে, এটি টম স্টপ্পার্ডের রোজেনক্র্যান্টজ এন্ড গিল্ডেস্টার্ন আর ডেড' নাটককেরই একটি বিস্তারিত কমেডি ছাড়া আর কিছুই নয়।[১৪৯]

ক্যারিডাড সুইচ-এর ১২ ওফেলিয়াস (বিচ্ছেদমূলক গানের নাটক) হ্যামলেট-র গল্পের উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছে বটে কিন্তু ওফেলিয়ার ওপরেই মনোনিবেশ বেশি ছিল। সুইচের নাটকে, ওফেলিয়ার পুনরুত্থান ঘটে এবং নাটকে মৃত্যুর পরে তিনি জলের একটি পুল থেকে উঠে আসেন। নাটকটি দৃশ্য ও গানের সমন্বয়ে একটি ধারাবাহিক এবং প্রথম ব্রুকলিনের একটি পাবলিক সুইমিং পুলে এটি মঞ্চস্থ হয়েছিল।[১৫০]

ডেভিড ডেভালোস উইটেনবার্গ হ্যামলেটের একটি "বিয়োগান্তক-কৌতুকপূর্ণ-ঐতিহাসিক" প্রিকোয়েল বা পূর্ব সংস্করণ যেখানে ডেনিশ রাজপুত্রকে উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে হ্যালে-উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত) একজন ছাত্র হিসাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে এবং যেখানে তিনি তাঁর পরামর্শদাতা জন ফাউস্টাস এবং মার্টিন লুথারের দ্বন্দ্বমূলক শিক্ষার মাঝে বিপর্যস্ত। নিউইয়র্ক টাইমস নাটকটি পর্যালোচনা করে বলেছে, নাটকটির এই অদ্ভুত সমীকরণ একে একটি নির্বোধ ক্যাম্পাস কমেডিতে রূপান্তরিত করেছে।[১৫১] আর এনওয়াইথিয়েটার ডটকমের পর্যালোচনাতে বলা হয়েছে যে, নাট্যকার "এক আকর্ষণীয় বিকল্প বাস্তবতা কল্পনা করেছেন, এবং খুব সম্ভবত কাল্পনিক হ্যামলেটকে এমন একটি পূর্ব গল্প দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল যা ভবিষ্যতের ভূমিকাটি নিশ্চিত করবে "।[১৫২]

কানাডিয়ান নাট্যকার মাইকেল ও'ব্রিয়েনের ম্যাড বয় ক্রনিকল কিছুটা হ্যামলেটের উপর ভিত্তি করে রচিত একটি ডার্ক কমেডি, যা ৯৯৯ সালে ভাইকিং ডেনমার্কে সেট করা হয়েছিল।[১৫৩]

টীকা ও তথ্যসূত্র সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. The gravedigger scene is in Hamlet 5.1.1–205.[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

All references to Hamlet, unless otherwise specified, are taken from the Arden Shakespeare Q2.[১৫৪] Under their referencing system, 3.1.55 means act 3, scene 1, line 55. References to the First Quarto and First Folio are marked Hamlet Q1 and Hamlet F1, respectively, and are taken from the Arden Shakespeare Hamlet: the texts of 1603 and 1623.[১৫৫] Their referencing system for Q1 has no act breaks, so 7.115 means scene 7, line 115.

  1. [Thompson, Ann; Taylor, Neil, eds. (2006). Hamlet. The Arden Shakespeare, "Hompson, Davi Det"] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)Benezit Dictionary of Artists। Oxford University Press। ২০১৪-০৯-১৯। 
  2. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  3. Crystal, David (২০০৫)। The Shakespeare miscellany। Ben Crystal। London: Penguin। আইএসবিএন 0-14-051555-0ওসিএলসি 57380999 
  4. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  5. Hamlet 1.4.
  6. Trilling, Lionel (১৯৭২)। Sincerity and authenticity। Cambridge, MA: Harvard University Press। আইএসবিএন 0-674-50419-4ওসিএলসি 1162009889 
  7. Hamlet 5.1.1–205
  8. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  9. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ১৬–২৫। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  10. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ৫–১৫। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  11. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ১–৫। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  12. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ২৫–৩৭। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  13. Shakespeare, William (১৯৮৫)। Hamlet, Prince of Denmark। Philip Edwards। Cambridge [Cambridgeshire]: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ১–২। আইএসবিএন 0-521-22151-Xওসিএলসি 11067270 
  14. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ৬৬–৬৭। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  15. Shakespeare, William (২০০১)। Hamlet। Harold Jenkins। London: Thomson Learning। পৃষ্ঠা ৮২–৮৫। আইএসবিএন 0-416-17910-Xওসিএলসি 50239027 
  16. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ৬৭। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  17. "Hamlet (The Second Quarto, 1604-05, Arden Shakespeare Third Series)"Hamlet। ২০০৬-০৩-২০। ডিওআই:10.5040/9781408160404.00000005 
  18. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ৬৬–৬৮। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  19. Saxo, Grammaticus,approximately 1204 (১৯৮৩)। Saxo Grammaticus & the life of Hamlet : a translation, history, and commentary। William F. Hansen। Lincoln: University of Nebraska Press। পৃষ্ঠা ৬। আইএসবিএন 0-8032-2318-8ওসিএলসি 8473675 
  20. Greenblatt, Stephen (২০০৪)। Will in the World : How Shakespeare Became Shakespeare (First edition সংস্করণ)। New York। পৃষ্ঠা ৩১১। আইএসবিএন 0-393-05057-2ওসিএলসি 55286224 
  21. Coleman, P. (২০০৪-০২-০১)। "Review: Dead Good * Stephen Greenblatt: Hamlet In Purgatory"The Cambridge Quarterly33 (2): 173–177। আইএসএসএন 0008-199Xডিওআই:10.1093/camqtly/33.2.173 
  22. Chambers, E. K. (১৯৮৮)। William Shakespeare : a study of facts and problems। Oxford [England]: Clarendon Press। পৃষ্ঠা ৪১১। আইএসবিএন 0-19-811773-6ওসিএলসি 18588397 
  23. 1881-1969., Wilson, John Dover, (১৯৬৪)। The essential Shakespeare : a biographical adventure। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ১০৪। ওসিএলসি 849984478 
  24. Rowse, A. L. (১৯৯৫)। William Shakespeare : a biography। New York: Barnes & Noble Books। পৃষ্ঠা ৩২৩। আইএসবিএন 1-56619-804-6ওসিএলসি 34082451 
  25. Winstanley, Lilian (১৯৭৭)। Hamlet and the Scottish succession, being an examination of the relations of the play of Hamlet to the Scottish succession and the Essex conspiracy। Philadelphia: R. West। পৃষ্ঠা ১১৪। আইএসবিএন 0-8492-2912-Xওসিএলসি 3240955 
  26. "Craik, Sir Henry, first baronet (1846–1927)"Oxford Dictionary of National Biography। Oxford University Press। ২০১৮-০২-০৬। 
  27. "Letters to the Editor"Journal of American History84 (4): 1600–1601। ১৯৯৮-০৩-০১। আইএসএসএন 0021-8723ডিওআই:10.1093/jahist/84.4.1600 
  28. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ১২–১৩। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  29. Shakespeare, William (১৯৮৫)। Hamlet, Prince of Denmark। Philip Edwards। Cambridge [Cambridgeshire]: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ৫–৬। আইএসবিএন 0-521-22151-Xওসিএলসি 11067270 
  30. Shakespeare, William (১৯৬৮)। Hamlet;। Bernard Lott। Harlow,: Longmans। পৃষ্ঠা xlvi। আইএসবিএন 0-582-52742-2ওসিএলসি 138796 
  31. Hamlet F1 2.2.337.
  32. Megna, Paul (২০১৯)। Hamlet and Emotions। Cham: Springer International Publishing। পৃষ্ঠা 289–315। আইএসবিএন 978-3-030-03794-9 
  33. Duncan-Jones, Katherine (২০০১)। Ungentle Shakespeare : scenes from his life। London: AS [Arden Shakespeare]। পৃষ্ঠা 143–149। আইএসবিএন 1-903436-26-5ওসিএলসি 51683239 
  34. Shakespeare, William (১৯৮৫)। Hamlet, Prince of Denmark। Philip Edwards। Cambridge [Cambridgeshire]: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 0-521-22151-Xওসিএলসি 11067270 
  35. Chambers, E. K. (২০০৯)। The Elizabethan stage। Oxford: Clarendon Press। পৃষ্ঠা ৪৮৬–৮৭। আইএসবিএন 978-0-19-956748-5ওসিএলসি 429032987 
  36. Halliday, F. E. (১৯৬৪)। A Shakespeare companion, 1564-1964 (Revised edition সংস্করণ)। Baltimore, Md.। পৃষ্ঠা ২০৪–০৫। আইএসবিএন 0-14-053011-8ওসিএলসি 683393 
  37. Halliday, F. E. (১৯৬৪)। A Shakespeare companion, 1564-1964 (Revised edition সংস্করণ)। Baltimore, Md.। পৃষ্ঠা ২০৪। আইএসবিএন 0-14-053011-8ওসিএলসি 683393 
  38. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ৭৮। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  39. Shakespeare, William (১৯৯৮)। Hamlet। G. R. Hibbard। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা ২২–২৩। আইএসবিএন 0-19-283416-9ওসিএলসি 39842740 
  40. Hattaway, Michael (১৯৮৭)। Hamlet। Basingstoke, Hampshire: Macmillan। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 0-333-38524-1ওসিএলসি 15197414 
  41. Mboti, Nyasha (২০১৭-০৩-০৫)। "May the Real Ubuntu Please Stand Up?"dx.doi.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১০ 
  42. Hamlet 3.4 and 4.1
  43. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ৫৪৩–৫২। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  44. Shakespeare, William (২০০১)। Hamlet। Harold Jenkins। London: Thomson Learning। পৃষ্ঠা ১৪। আইএসবিএন 0-416-17910-Xওসিএলসি 50239027 
  45. Hamlet Q1 14
  46. Shakespeare, William (১৯৯৮)। The first quarto of Hamlet। Kathleen O. Irace। New York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ১–৩৪। আইএসবিএন 0-521-65390-8ওসিএলসি 36549046 
  47. The Cambridge Companion to Shakespeare Studies। Stanley Wells। Cambridge [Cambridgeshire]: Cambridge University Press। ১৯৮৬। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 0-521-26737-4ওসিএলসি 12945372 
  48. Shakespeare, William (১৯৯৮)। The first quarto of Hamlet। Kathleen O. Irace। New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-65390-8ওসিএলসি 36549046 
  49. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ৮৫–৮৬। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  50. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet : the texts of 1603 and 1623। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ৩৬–৩৯। আইএসবিএন 978-1-904271-55-0ওসিএলসি 68266363 
  51. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ১৮–১৯। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  52. Shakespeare, William (২০০৮)। Hamlet। Jonathan Bate, Eric Rasmussen, Royal Shakespeare Company (New ed. সংস্করণ)। Basingstoke: Macmillan। পৃষ্ঠা ১১। আইএসবিএন 978-0-230-21786-7ওসিএলসি 231883703 
  53. Crowl, Samuel (২০১৪)। Shakespeare's Hamlet : the relationship between text and film। New York। পৃষ্ঠা ৫–৬। আইএসবিএন 978-1-4725-3893-2ওসিএলসি 868980188 
  54. Shakespeare, William (১৯৯৪)। Hamlet : complete, authoritative text with biographical and historical contexts, critical history, and essays from five contemporary critical perspectives। Susanne Lindgren Wofford। Boston: Bedford Books of St. Martin's Press। আইএসবিএন 0-312-08986-4ওসিএলসি 28909974 
  55. Kirsch, Arthur C. (1969-02-XX)। "A Caroline Commentary on the Drama"Modern Philology66 (3): 256–261। আইএসএসএন 0026-8232ডিওআই:10.1086/390087  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  56. William Shakespeare : the critical heritage। Brian Vickers। London: Routledge। (1995 [printing])। পৃষ্ঠা ৪৪৭। আইএসবিএন 0-415-13403-Xওসিএলসি 35209014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  57. William Shakespeare. Volume 4, 1753-1765 : the critical heritage। Brian Vickers (New ed সংস্করণ)। London: Taylor & Francis। ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ৯২। আইএসবিএন 0-415-13407-2ওসিএলসি 264476965 
  58. Shakespeare, William (১৯৯৪)। Hamlet : complete, authoritative text with biographical and historical contexts, critical history, and essays from five contemporary critical perspectives। Susanne Lindgren Wofford। Boston: Bedford Books of St. Martin's Press। পৃষ্ঠা ১৮৪–৮৫। আইএসবিএন 0-312-08986-4ওসিএলসি 28909974 
  59. William Shakespeare : the critical heritage। Brian Vickers। London: Routledge। (1995 [printing])। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 0-415-13403-Xওসিএলসি 35209014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  60. Shakespeare, William (১৯৯৪)। Hamlet : complete, authoritative text with biographical and historical contexts, critical history, and essays from five contemporary critical perspectives। Susanne Lindgren Wofford। Boston: Bedford Books of St. Martin's Press। পৃষ্ঠা ১৮৫। আইএসবিএন 0-312-08986-4ওসিএলসি 28909974 
  61. Shakespeare, William (১৯৯৪)। Hamlet : complete, authoritative text with biographical and historical contexts, critical history, and essays from five contemporary critical perspectives। Susanne Lindgren Wofford। Boston: Bedford Books of St. Martin's Press। পৃষ্ঠা ১৮৬। আইএসবিএন 0-312-08986-4ওসিএলসি 28909974 
  62. Rosenberg, Marvin (১৯৯২)। The masks of Hamlet। Newark: University of Delaware Press। পৃষ্ঠা ১৭৯। আইএসবিএন 0-87413-480-3ওসিএলসি 26096206 
  63. Hamlet, Prinz von Dänmark। Berlin, Boston: De Gruyter। ১৮৬৯-১২-৩১। পৃষ্ঠা 205–211। আইএসবিএন 978-3-11-144008-8 
  64. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৬৭–৭২। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  65. Shakespeare, William (১৯৭৪)। The Riverside Shakespeare। G. Blakemore Evans। Boston: Houghton Mifflin। আইএসবিএন 0-395-04402-2ওসিএলসি 804947 
  66. Michael J. Hirrel (২০১০)। "Duration of Performances and Lengths of Plays: How Shall We Beguile the Lazy Time?"Shakespeare Quarterly61 (2): 159–182। আইএসএসএন 1538-3555ডিওআই:10.1353/shq.0.0140 
  67. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৮৪–৮৫। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  68. Hamlet 3.1.63–64
  69. Yacovazzi, Cassandra L. (২০১৮-০৯-২০)। "The Nunnery Sleuths"Oxford Scholarship Onlineডিওআই:10.1093/oso/9780190881009.003.0007 
  70. Shakespeare, William (২০০১)। Hamlet। Harold Jenkins। London: Thomson Learning। পৃষ্ঠা ৪৯৩–৯৫। আইএসবিএন 0-416-17910-Xওসিএলসি 50239027 
  71. Hamlet 2.1.63–65.
  72. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৯১–৯৩। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  73. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৩৭–৩৮। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  74. Experiences of War and Nationality in Denmark and Norway, 1807-1815। Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-1-137-31389-8 
  75. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৩৮। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  76. Jenkins, Harold (১৯৮৩)। ""Hamlet" and the Distracted Globe (by Andrew Gurr)"Shakespeare Quarterly34 (2): 247–248। আইএসএসএন 0037-3222ডিওআই:10.2307/2869849 
  77. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৪৭–৪৮। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  78. Hamlet 3.1.55–87.
  79. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ৪৯। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  80. Knowles, Ronald (১৯৯৯)। "Hamlet and Counter-Humanism"Renaissance Quarterly52 (4): 1046–1069। আইএসএসএন 0034-4338ডিওআই:10.2307/2901835 
  81. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ৭৩–৭৪। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  82. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  83. Bloom, Harold (১৯৯৫)। The Western canon : the books and school of the ages (1st Riverhead ed সংস্করণ)। New York: Riverhead Books। পৃষ্ঠা ৩৮১। আইএসবিএন 1-57322-514-2ওসিএলসি 32013000 
  84. Freud, Sigmund (১৯৯১)। The interpretation of dreams। James Strachey, Angela Richards। London: Penguin। পৃষ্ঠা ৩৬৭–৬৮। আইএসবিএন 0-14-013794-7ওসিএলসি 26285443 
  85. Freud, Sigmund (১৯৯৫)। The basic writings of Sigmund Freud। A. A. Brill (Modern Library ed সংস্করণ)। New York: Modern Library। পৃষ্ঠা ২৭৪–৭৯। আইএসবিএন 0-679-60166-Xওসিএলসি 32349979 
  86. Introducing psychoanalysis : essential themes and topics। Susan Budd, Richard Rusbridger। London: Routledge। ২০০৫। পৃষ্ঠা ১১২। আইএসবিএন 0-203-00130-3ওসিএলসি 62083380 
  87. Freud, Sigmund; Bunker, Henry Alden (1960-03-XX)। "Psychopathic Characters on the Stage"The Tulane Drama Review4 (3): 144, ১৪৭। আইএসএসএন 0886-800Xডিওআই:10.2307/1124852  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  88. Freud, Sigmund; Bunker, Henry Alden (1960-03-XX)। "Psychopathic Characters on the Stage"The Tulane Drama Review4 (3): 144। আইএসএসএন 0886-800Xডিওআই:10.2307/1124852  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  89. Morrison, Michael A. (১৯৯৭)। John Barrymore, Shakespearean actor। Cambridge [England]: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ১২৯–৩০। আইএসবিএন 0-521-62028-7ওসিএলসি 36549135 
  90. Cotsell, Michael (২০০৫)। The theater of trauma : American modernist drama and the psychological struggle for the American mind, 1900-1930। New York: Peter Lang। পৃষ্ঠা ১৯১। আইএসবিএন 0-8204-7466-5ওসিএলসি 56517393 
  91. Hamlet। Harold Bloom, Brett Foster। New York: Bloom's Literary Criticism। ২০০৮। পৃষ্ঠা p. xii। আইএসবিএন 978-0-7910-9592-8ওসিএলসি 185021499 
  92. The Barter Theatre Story। Appalachian State University। পৃষ্ঠা 21–28। আইএসবিএন 978-1-4696-3815-7 
  93. Britton, Celia (1995-08-31)। The Cambridge History of Literary Criticism। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 197–252। আইএসবিএন 978-1-139-05536-9  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |year= / |date= mismatch (সাহায্য)
  94. Shakespeare, William (১৯৯৪)। Hamlet : complete, authoritative text with biographical and historical contexts, critical history, and essays from five contemporary critical perspectives। Susanne Lindgren Wofford। Boston: Bedford Books of St. Martin's Press। পৃষ্ঠা ১৯৯–২০২। আইএসবিএন 0-312-08986-4ওসিএলসি 28909974 
  95. Shakespeare : an Oxford guide। Stanley Wells, Lena Cowen Orlin। Oxford: Oxford University Press। ২০০৩। পৃষ্ঠা ৪১১–১৫। আইএসবিএন 0-19-924522-3ওসিএলসি 50920674 
  96. Heilbrun, Carolyn (১৯৫৭)। "The Character of Hamlet's Mother"Shakespeare Quarterly8 (2): 201। আইএসএসএন 0037-3222ডিওআই:10.2307/2866964 
  97. Bloom, Harold (২০০৩)। Hamlet : poem unlimited। Edinburgh: Canongate। পৃষ্ঠা ৫৮–৫৯। আইএসবিএন 1-84195-461-6ওসিএলসি 52359623 
  98. Shakespeare and sexuality। Catherine M. S. Alexander, Stanley Wells। Cambridge: Cambridge University Press। ২০০১। পৃষ্ঠা ৪। আইএসবিএন 0-521-80031-5ওসিএলসি 46565146 
  99. Shakespeare and the question of theory। Patricia A. Parker, Geoffrey H. Hartman। New York: Methuen। ১৯৮৫। আইএসবিএন 0-203-41474-8ওসিএলসি 59109055 
  100. Bloom, Harold (২০০৩)। Hamlet : poem unlimited। Edinburgh: Canongate। পৃষ্ঠা ৫৭। আইএসবিএন 1-84195-461-6ওসিএলসি 52359623 
  101. MacCary, W. Thomas (১৯৯৮)। Hamlet : a guide to the play। Westport, Conn.: Greenwood Press। পৃষ্ঠা ১১১–১৩। আইএসবিএন 0-313-30082-8ওসিএলসি 37843724 
  102. "Oxford Dictionary of Quotations"। ২০০৯-০১-০১। ডিওআই:10.1093/acref/9780199237173.001.0001 
  103. Osborne, Laurie (২০০৭-০৬-২৮)। The Cambridge Companion to Shakespeare and Popular Culture। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 114–133। আইএসবিএন 978-0-521-84429-1 
  104. )., Kerrigan, John (1956- (১৯৯৬)। Revenge tragedy : Aeschylus to Armageddon। Clarendon Press। পৃষ্ঠা ১২২। আইএসবিএন 0-19-812186-5ওসিএলসি 823583258 
  105. Warren, Christopher N. (২০১৬)। "Big Leagues: Specters of Milton and Republican International Justice between Shakespeare and Marx"Humanity: An International Journal of Human Rights, Humanitarianism, and Development7 (3): 365–389, ৩৬৭। আইএসএসএন 2151-4372ডিওআই:10.1353/hum.2016.0020 
  106. Warren, Christopher N. (২০১৬)। "Big Leagues: Specters of Milton and Republican International Justice between Shakespeare and Marx"Humanity: An International Journal of Human Rights, Humanitarianism, and Development7 (3): 365–389, ৩৭৯। আইএসএসএন 2151-4372ডিওআই:10.1353/hum.2016.0020 
  107. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ১২৩–২৬। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  108. "Hamlet (The Second Quarto, 1604-05, Arden Shakespeare Third Series)"Hamlet pp. 123–26। ২০০৬-০৩-২০। ডিওআই:10.5040/9781408160404.00000005 
  109. Welsh, Alexander (২০০১)। Hamlet in his modern guises। Princeton, N.J.: Princeton University Press। পৃষ্ঠা ১৩১। আইএসবিএন 1-4008-1480-4ওসিএলসি 52245240 
  110. Shakespeare, William (২০০৬)। Hamlet। Ann Thompson, Neil Taylor। London: Arden Shakespeare। পৃষ্ঠা ১২৬–৩১। আইএসবিএন 1-904271-32-4ওসিএলসি 69253066 
  111. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ৪। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  112. The Cambridge Guide to Theatre। Martin Banham (New ed সংস্করণ)। Cambridge: Cambridge University Press। ১৯৯৫। পৃষ্ঠা ১৪১। আইএসবিএন 0-521-43437-8ওসিএলসি 31971388 
  113. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২১। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  114. The Cambridge companion to Shakespeare and popular culture। Robert Shaughnessy (1st ed সংস্করণ)। Cambridge। ২০০৭। পৃষ্ঠা ৩৪। আইএসবিএন 978-0-521-84429-1ওসিএলসি 123113778 
  115. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২১–২২। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  116. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২৩১। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  117. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ৪১। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  118. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ৪৪। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  119. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ১৫৯। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  120. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ১৮৫–৮৭। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  121. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২৩২–৩৩। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  122. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২৩৫–৩৭। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  123. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২৪১। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  124. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ৫৮–৭৫। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  125. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২০৩–০৫। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  126. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ১৮৮। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  127. Gillies, John; Minami, Ryuta; Li, Ruru; Trivedi, Poonam (২০০২-০৫-৩০)। The Cambridge Companion to Shakespeare on Stage। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 259–৬২। আইএসবিএন 978-0-521-79711-5 
  128. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২১৪। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  129. Hortmann, Wilhelm (২০০২-০৫-৩০)। The Cambridge Companion to Shakespeare on Stage। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ২২৩। আইএসবিএন 978-0-521-79711-5 
  130. Foreign Shakespeare : contemporary performance। Dennis Kennedy। Cambridge [England]: Cambridge University Press। ১৯৯৩। আইএসবিএন 0-521-42025-3ওসিএলসি 27265411 
  131. The Cambridge companion to Shakespeare on stage। Stanley Wells, Sarah Stanton। Cambridge, United Kingdom। ২০০২। পৃষ্ঠা ২২৪–২৫। আইএসবিএন 0-521-79295-9ওসিএলসি 48140822 
  132. Chernaik, Warren (2011-04)। "Review of Shakespeare'sAntony and Cleopatra(directed by Michael Boyd for the Royal Shakespeare Company) at the Courtyard Theatre, Stratford-upon-Avon, 27 May 2010"Shakespeare7 (1): 92–95। আইএসএসএন 1745-0918ডিওআই:10.1080/17450918.2011.557510  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  133. Willie, Rachel (2012-04)। "Review of Shakespeare'sKing Lear(directed by Ian Brown), the West Yorkshire Playhouse, Leeds, 12 October 2011"Shakespeare8 (1): 87–91। আইএসএসএন 1745-0918ডিওআই:10.1080/17450918.2012.660284  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  134. Kirwan, Peter (2008-12)। "Review of Shakespeare'sA Midsummer Night's Dream(directed by Gregory Doran for the Royal Shakespeare Company) at the Courtyard Theatre, Stratford-upon-Avon, August 2008"Shakespeare4 (4): 455–458। আইএসএসএন 1745-0918ডিওআই:10.1080/17450910802501238  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  135. Osanai, Kaoru; Tsubaki, Andrew T. (1968-12-XX)। "Gordon Craig's Production of "Hamlet" at the Moscow Art Theatre"Educational Theatre Journal20 (4): 586। আইএসএসএন 0013-1989ডিওআই:10.2307/3205002  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  136. Brode, Douglas (২০০১)। Shakespeare in the movies : from the silent era to today। New York: Berkley Boulevard Books। পৃষ্ঠা ১১৭–১৮। আইএসবিএন 0-425-18176-6ওসিএলসি 46822465 
  137. The Cambridge companion to Shakespeare on film। Russell Jackson। Cambridge, UK: Cambridge University Press। ২০০০। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 0-521-63023-1ওসিএলসি 43487271 
  138. "New York Times New York City Poll, September 2003"ICPSR Data Holdings। ২০০৪-০৪-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১০ 
  139. Brode, Douglas (২০০১)। Shakespeare in the movies : from the silent era to today। New York: Berkley Boulevard Books। পৃষ্ঠা ১২৫–২৭। আইএসবিএন 0-425-18176-6ওসিএলসি 46822465 
  140. The Cambridge companion to Shakespeare on film। Russell Jackson। Cambridge, UK: Cambridge University Press। ২০০০। পৃষ্ঠা ২১২। আইএসবিএন 0-521-63023-1ওসিএলসি 43487271 
  141. The Cambridge companion to Shakespeare on film। Russell Jackson। Cambridge, UK: Cambridge University Press। ২০০০। পৃষ্ঠা ১২১–২২। আইএসবিএন 0-521-63023-1ওসিএলসি 43487271 
  142. The Cambridge companion to Shakespeare on film। Russell Jackson। Cambridge, UK: Cambridge University Press। ২০০০। পৃষ্ঠা ২৩২। আইএসবিএন 0-521-63023-1ওসিএলসি 43487271 
  143. Shakespeare and appropriation। Christy Desmet, Robert Sawyer। London: Routledge। ১৯৯৯। পৃষ্ঠা ২৭২। আইএসবিএন 0-203-21892-2ওসিএলসি 50572930 
  144. The Cambridge companion to Shakespeare on film। Russell Jackson। Cambridge, UK: Cambridge University Press। ২০০০। পৃষ্ঠা ৭৮–৭৯। আইএসবিএন 0-521-63023-1ওসিএলসি 43487271 
  145. Burnett, Mark Thornton (২০০৩)। ""To Hear and See the Matter": Communicating Technology in Michael Almereyda's Hamlet (2000)"Cinema Journal42 (3): 48–69। আইএসএসএন 1527-2087ডিওআই:10.1353/cj.2003.0007 
  146. Ankit, Rakesh (২০২০-০১-০১)। "India in The Pakistan Times, September 1950-February 1951"India Review19 (1): 52–84। আইএসএসএন 1473-6489ডিওআই:10.1080/14736489.2019.1710084 
  147. Shvets, Gennady (২০১২-০৭-১৬)। "Not Every Exit is an Entrance"Physics5আইএসএসএন 1943-2879ডিওআই:10.1103/physics.5.78 
  148. "Rosencrantz and Guildenstern Are Dead pp. 349–66."Rosencrantz and Guildenstern are Dead। ১৯৭৩-০১-০১। ডিওআই:10.5040/9780571289844.00000004 
  149. Solomon, A. (১৯৯৩-১২-০১)। "A New York (Theater) Diary, 1992"Theater24 (1): 7–18। আইএসএসএন 0161-0775ডিওআই:10.1215/01610775-24-1-7 
  150. Alexandrowicz, Conrad; Fancy, David (২০২১-০৩-১১)। Theatre Pedagogy in the Era of Climate Crisis। Abingdon, Oxon ; New York : Routledge, 2021. | Series: Research and teaching in environmental studies: Routledge। পৃষ্ঠা 77–85। আইএসবিএন 978-1-003-08782-3 
  151. Smith, C. S. (২০১৪-১০-১৩)। "The New York Times Theater Reviews 1997-1998"ডিওআই:10.4324/9780203820452 
  152. Cox, Aimee; Davis, Dana-Ain (২০১১-০৩-১১)। "HOMECOMING"Transforming Anthropology19 (1): 1–2। আইএসএসএন 1051-0559ডিওআই:10.1111/j.1548-7466.2011.01108.x 
  153. "Mad Boy Chronicle"Mad Boy Chronicle। ২০১২-০৮-১৫। ডিওআই:10.5040/9781770916333.00000003 
  154. Thompson ও Taylor 2006a
  155. Thompson ও Taylor 2006b

উৎস সম্পাদনা

হ্যামলেট-এর সংস্করণ সমূহ সম্পাদনা

দ্বিতীয় উৎস সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা