হ্যানসেল ও গ্রেটেল

জার্মান রুপকথা

হ্যানসেল ও গ্রেটেল ( ইংরেজিতে Hansel and Gretel, এছাড়াও Hansel and Grettel, Hansel and Grethel, or Little Brother and Little Sister নামে পরিচিত ) (/ˈhænsəl/ বা /ˈhɑːnsəl/ এবং /ˈɡrɛtəl/; জার্মান ভাষায়ঃ Hänsel und Gretel (Hänsel und Grethel [ক] [ˈhɛnzl̩ ʊnt ˈɡʁeːtl̩]) হলো জার্মানির একটি সুপরিচিত রূপকথার গল্প। এর কাহিনী গ্রিম ভাতৃদ্বয় সংগ্রহ করেছেন। ১৮১২ সালে এটি প্রকাশিত হয়। হ্যানসেল ও গ্রেটেল হলো দুই ভাই বোন। তাদের একজন জাদুকরী রাক্ষসী অপহরণ করে। তাদের ঘন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে বন্দী করে রাখে। ঘরটি কেক ও মিষ্টি জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরী। একদিন বাচ্চা দুইটি রাক্ষসীর চোখে ধোকা দিয়ে পালিয়ে যায়। এই গল্পটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এঙ্গেল্বার্ট হাম্পারডিঙ্কের অপেরা "হ্যানসেল ও গ্রেটেল" ১৮৯৩ সালে প্রচারিত হয়।

আর্থার রকহামের চিত্রকর্ম (১৯০৯)

গল্প সম্পাদনা

গল্পের পটভূমি জার্মানিতে। হ্যানসেল ও গ্রেটেল হলো একজন গরীব কাঠুরিয়ার সন্তান। তাদের দেশে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। কাঠুরিয়ার স্ত্রী হ্যানসেল ও গ্রেটেলকে বনে রেখে আসার পরিকল্পনা করলো। কারণ তার বাচ্চারা অনেক বেশি খাবার খেতো। দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে স্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কাঠুরিয়া মেনে নিলো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো। পাশের ঘর থেকে হ্যানসেল ও গ্রেটেল তার পিতা-মাতার এই পরিকল্পনার কথা শুনে ফেললো, যা তার পিতা-মাতা জানতো না। যখন তারা ঘুমাতে গেলো, তখন হ্যানসেল বাড়ির বাইরে এসে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করতে লাগলো। তার পক্ষে যতটা সম্ভব নুড়ি পাথর নিয়ে সে বাড়িতে ফিরে এলো।

পরের দিন তাদের মা-বাবা তাদেরকে ঘন জঙ্গলে রেখে এলো। যাত্রাপথে হ্যানসেল নুড়ি পাথর গুলো পথে রেখে দিচ্ছিলো। অবশেষে নির্ধারিত স্থানে এসে তাদের মা-বাবা তাদেরকে রেখে বাড়িতে ফিরে গেলো। তারপর হ্যানসেল ও গ্রেটেল সেই নুড়ি পাথরের চিহ্ন খুঁজে খুঁজে বাড়িতে ফিরে এলো। তাদের দেখে বাড়ির সবাই অগ্নিশর্মা হয়ে গেলো। তাদেরকে একটি ঘরে বন্দী রাখা হলো। এবার হ্যানসেল আর কোন নুড়ি পাথর সংগ্রহ করতে পারলো না।

পরের দিন সকালে পরিবারের লোকজন হ্যানসেল ও গ্রেটেলকে আবার বনে রেখে আসে। এইবার হ্যানসেল এক টুকরো রুটি দিয়ে পথে চিহ্ন দিয়ে আসে, যেন তারা আবার ঐ পথ-চিহ্নের মাধ্যমে বাড়িতে ফিরে আসতে পারে। তারা বাড়ি ফিরে আসার সময় লক্ষ্য করলো কিছু পাখি সেই রুটির টুকরো গুলো খেয়ে ফেলেছে। ফলে তারা বনে পথ হারিয়ে ফেললো। আর কোন ভাবেই বাড়িতে আসার রাস্তা খুঁজে পেলো না। ঘুরতে ঘুরতে তারা একটি সুন্দর সাদা পাখি দেখতে পেলো। একই সাথে তারা একটি বিশাল কুটির খুঁজে পেলো। সেই কুটিরটি রুটি, কেক, মিছরি ইত্যাদি দিয়ে তৈরী। তারা খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিলো। তাই কুটিরের দেয়াল, ছাদ ইত্যাদি খাওয়া শুরু করলো। এরপর কুটিরের দরজা খুলে গেলো। ভেতর থেকে একজন অত্যন্ত বৃদ্ধ মহিলা বের হয়ে তাদেরকে কুটিরে প্রবেশ করতে বললো। বৃদ্ধ মহিলা তাদের আরো আকর্ষনীয় খাবার খেতে দেয়ার লোভ দেখালো। হ্যানসেল ও গ্রেটেল বৃদ্ধাকে বিশ্বাস করে ভেতরে প্রবেশ করলো। তারা জানতেও পারলো না যে বৃদ্ধাটি একজন রাক্ষসী, সে ছোট শিশুদের রান্না করে খেতে পছন্দ করে। 

পরের দিন সকালে, জাদুকরী রাক্ষসী বাগানে রাখা খাঁচা থেকে তার পূর্ববর্তী বন্দীকে বের করে দিয়ে হ্যানসেলকে প্রেরণ করে এবং গ্রেটেলকে তার দাসী বানিয়ে রাখে। সে প্রতিদিন হ্যানসেলকে অনেক খাবার খেতে দিতো, যেন সে তাড়াতাড়ি মোটা হতে পারে। হ্যানসেল অনেক চালাক। যখন রাক্ষসী তার স্বাস্থ্যের স্থূলতা পরীক্ষার জন্য আঙ্গুল দেখাতে বলতো, তখন হ্যানসেল একটি হাড় বের করে দেখাতো, যা সে উক্ত খাঁচায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো। ফলে তাকে খেতে না পেরে রাক্ষসী হতাশ হয়ে ফিরে যেতো। সে খুব অধীর এবং উদ্গ্রীব ছিলো হ্যানসেল খাওয়ার জন্য।.

পরের দিন, জাদুকরী রাক্ষসী তার চুলা প্রস্তুত করলো হ্যানসেলকে রান্না করার জন্য। কিন্তু হঠাৎ সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গ্রেটেলকে খেতে মনস্থির করলো। গ্রেটেলকে ডেকে সে বললো চুলার সামনে ঝুঁকে বসতে এবং চুলার আগুন রান্নার জন্য যথেষ্ট গরম হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে। গ্রেটেল রাক্ষসীর মনোভাব বুঝতে পেরেছিলো। তাই সে এমন ভাব করলো যেন রাক্ষসীর কথাটি সে বুঝতে পারেনি। তাই কীভাবে কাজটি করতে হবে তা রাক্ষসী নিজে অভিনয় করে দেখানোর জন্য চুলার সামনে গেলো। আর তখনি গ্রেটেল তাকে ধাক্কা দিয়ে চুলায় ফেলে দিলো। চুলার প্রখর আগুনে রাক্ষসী পুড়ে মারা গেলো। এরপর গ্রেটেল এসে হ্যানসেলকে উদ্ধার করে। তারা খাঁচায় অনেক মূল্যবান পাথর ও মনিমুক্তা দেখতে পেলো। তারা নিজেদের পোশাক ভর্তি করে তা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। 

ফেরার পথে একটি হাঁস তাদের বিশাল জলরাশি পার হতে সাহায্য করলো। বাড়িতে ফিরে এসে দেখলো সেখানে শুধু তাদের বাবা আছে। তাদের মা অজানা কোন কারণে মারা গেছে। তার বাবা সন্তানদের জন্য সারাদিন কান্নাকাটি করে জীবন কাটাতো। হ্যানসেল ও গ্রেটেল ফিরে এসে তার বাবার দুঃখ দূর করলো এবং রাক্ষসীর কাছ থেকে পাওয়া সম্পদ দিয়ে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।

ইতিহাস ও বিশ্লেষণ সম্পাদনা

 
থিয়েডোর হ্যোসম্যানের চিত্রকর্ম

জ্যাকব ও উইলহেম গ্রিম গল্পটি শুনেছেন উইলহেম এর একজন বন্ধুর কাছ থেকে। উইলহেম পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেন। গল্পটি ১৮১২ সালে প্রকাশিত হয়।[১]

সাংস্কৃতিক তাত্পর্য সম্পাদনা

 
স্ট্যাটোসপার ভিন, ২০১৫

হ্যানসেল ও গ্রেটেল গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মঞ্চনাটক, নাটক, চলচ্চিত্র, চিত্রকর্ম, গান, কবিতা ইত্যাদি লেখা হয়েছে। এই গল্প নিয়ে তৈরী অপেরাও অনেক বিখ্যাত  হয়েছিলো। এটি জার্মানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অপেরা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।[২]

আরো দেখুন সম্পাদনা

নোট সম্পাদনা

  1. In German, the names are diminutives of Johannes ("John") and Margarete ("Margaret"), respectively

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Tatar (2002), p. 44
  2. Upton, George Putnam (১৮৯৭)। The Standard Operas (Google book) (12th সংস্করণ)। Chicago: McClurg। পৃষ্ঠা 125–129। আইএসবিএন 1-60303-367-X। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৭ 

উৎস সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা