হেফেইস্টিয়া

গ্রিসের লেমনোসে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

হেফেইস্টিয়া (Hephaestia) ( প্রাচীন গ্রিকἩφαιστία) ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি নগর। বর্তমানে এটি উত্তর ঈজিয়ান সাগরে অবস্থিত লেমনস দ্বীপের উপকূলে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল।[১] নগরটির নামকরণ হয়েছিল ধাতববিদ্যার গ্রীক দেবতা হেফাইস্টসের সম্মানে, এই দ্বীপটিতে হেফেইস্টোসের কাল্ট বা উপাসক সম্প্রদায় ও পূজাও বজায় ছিল। এই নগর খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকে দ্বীপটির রাজধানী ছিল, বর্তমানে যার কেবল ধ্বংসাবশেষই অবশিষ্ট রয়েছে।

হেফেইস্টিয়ার প্রাচীন নাট্যমঞ্চ

এই গ্রীক নাট্যমঞ্চটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের শেষ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকের প্রথম দিককার। এটি ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল অবধি পুনর্গঠনের মধ্যে ছিল, এবং ২৫০০ বছর পর ২০১০ সালে এখানে প্রথম নাট্য প্রদর্শনী হয় ( সোফোক্লেসের ইডিপাস রেক্স )। এই থিয়েটারের ধারণক্ষমতা ছিল মুল স্থানে ২০০ জন, এবং বাইরে অতিরিক্ত ১০০০ জন।[২][৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের মতে লেমনোস, হেফেসেটিয়া এবং মাইরিনায় পেলাসজীয়রা বসবাস করত। এই পেলাসজীয়রা এথেনীয়দেরকে কথা দিয়েছিল যে, কোন এথেনীয় জাহাজ যদি উত্তরা বায়ুর ঠেলায় নয় দিনের মধ্যে এই দ্বীপে প্রবেশ করতে পারে তাহলে তারা দ্বীপটিকে এথেনীয়দেরকে দিয়ে দেবে। অনেক বছর পর মিলটিয়াডিসের অধীনে এথেনীয়রা আট দিনের মধ্যে এথেন্স থেকে দ্বীপটিতে পৌঁছে। এর ফলে হেফেইস্টিয়ার পেলাসজীয় বাসিন্দারা এই দ্বীপটি ছেড়ে চলে গিয়েছিল তবে মাইরিনার লোকেরা প্রতিরোধ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত তাদের ঘেরাও করে রাখা হয়।

এই শহরটির কথা পরবর্তীকালের লেখকগণ যেমন প্লিনি দ্য এল্ডার, টলেমি, এবং বাইজান্টিয়ামের স্টেফানাস নথিভূক্ত করেন।

হেফেইস্টিয়ার মুদ্রা এখনও টিকে আছে। [৪]

আবিষ্কার সম্পাদনা

১৯২৬ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ইতালিয়ান স্কুল অফ আর্কিওলজি অ্যাট অ্যাথেন্স এই দ্বীপে খনন কার্য চালায়।[৫] খননের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই দ্বীপের "এট্রুস্কো-পেলাসজীয়" সভ্যতা সম্পর্কিত তথ্যের অনুসন্ধান। হেফেইস্টিয়া নগরের নিকটের স্থলে (যেমন পেলিয়াওপলিস) খননকার্য করা হয়, হেরোডোটাসের মতে যেখানে মিলটিয়াডিসের কাছে পেলাসজীয়রা আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেখানে খ্রিস্টপূর্ব ৯ম থেকে ৮ম শতকের একটি নেক্রোপলিস আবিষ্কৃত হয়, যেখানে ব্রোঞ্জের বস্তু, পাত্র এবং ১৩০ টির বেশি ওসুয়ারি (সমাধিস্থল, যেখানে মৃতদেহকে রাখা হয়, দেয়াল, বাক্স সহ বিভিন্ন স্থান হতে পারে) আবিষ্কৃত হয়। ওসুয়ারিগুলোতে বৈশিষ্ট্যমূলক নারী ও পুরুষের অন্ত্যেষ্টিমূলক গহনা বা সাজসজ্জা ছিল। পুরুষের ওসুয়ারিতে ছুড়ি ও কুঠার ছিল, যেখানে নারীর ওসুয়ারিতে কানের দুল, ব্রোঞ্জের পিন, গলার হাড়, সোনার মুকুট ও ব্রেসলেট ছিল। কোন কোন সোনার বস্তুর মধ্যে মাইসিনীয় উদ্ভূত সর্পিল বৈশিষ্ট্য ছিল, কিন্তু সেগুলোতে কোনরকম জ্যামিতিক আকার ছিল না। তাদের মতে এখানে উদ্ধার করা পাত্রগুলো জ্যামিতিক পর্যায়ের সময়কার। কিন্তু এই পাত্রগুলোতে সর্পিল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো মাইসিনীয় শিল্পকে নির্দেশ করে। এই খননের ফলগুলো নির্দেশ করে, লেমনসের এই প্রাথমিক লৌহযুগের অধিবাসীরা মাইসিনীয় জনসংখ্যার অবশেষ হয়ে থাকতে পারে, এছাড়া লেমনসের সর্বপ্রথম সত্যায়িত উল্লেখ ছিল মাইসিনীয় গ্রিক ভাষায় - "ra-mi-ni-ja", যার অর্থ লেমনস দ্বীপের নারী। কথাটি রচিত হয়েছিল লিনিয়ার বি লিপিতে।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Hephaistia"। Pleiades, directory of Ancient Places। 
  2. Georg Gerster। "BF5660"। Photo Researchers। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০ 
  3. "Ancient theatre on Limnos opens after 2,500 years"। ANA। ১২ আগস্ট ২০১০। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. টেমপ্লেট:Cite DGRG
  5. A short account of their excavations appeared in the Messager d'Athènes for January 3, 1927.
  6. Palaeolexicon, Word study tool of ancient languages

বহিঃস্থ সূত্র সম্পাদনা