'সাপ্রোলাইট' একধরনের রাসায়নিকভাবে ক্ষয়ে যাওয়া পাথর। সাপ্রোলাইট মাটির নিচের অংশে গঠিত হয় করে এবং এটি বেডরকের উপরপৃষ্ঠ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে হয়। অধিকাংশ উদ্গত স্তরে এর রঙ লৌহ যৌগ থেকে আসে। মহাদেশীয় ভূমিতে এরকম দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ে যাওয়া স্তর ৩৫° উত্তর এবং ৩৫° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত।

This is a diagram and related photograph of soil layers from bedrock to soil.
A দেখাচ্ছে মাটি; B দেখাচ্ছে ল্যাটেরাইট, একধরনের রেগোলিথ; C দেখাচ্ছে সাপ্রোলাইট, তুলনামুলক কম ক্ষয়ে যাওয়া রেগোলিথ; C এর নিচে বেডরক.

এরকম দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ে যাওয়া রেগোলিথ গঠনের জন্য মোটামুটি উচ্চতায় যথেষ্ট সমতল ভূমির দরকার যা সাধারণ ভূমিক্ষয় রোধ করে ও রাসায়নিক ক্ষয়কারী পদার্থ মাটির ভেতর প্রবেশে করতে দেয়। দ্বিতীয় শর্ত হল দীর্ঘ সময় টেকটনিক স্থিতিশীলতা কারণ টেকটনিক সক্রিয়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সাধারণ ক্ষয় ঘটাতে পারে। তৃতীয় শর্ত হল ওই যায়গায় আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু থেকে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু হওয়া।

সল্পভাবে ক্ষয়ে যাওয়া সাপ্রোলাইটের কঙ্কর ভূগর্ভস্থ পানি ধারণ করতে সক্ষম, যা গবাদি পশুর জন্য উপযুক্ত। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ের ফলে অনেক গৌণ এবং সুপারজিন আকরিক তৈরি হয় যেমন অ্যালুমিনিয়ম-আকরিক, লৌহ আকরিক, সাপ্রোলাইটিক সোনা, সুপারজিন তামা, ইউরেনিয়াম এবং অবশিষ্ট জমে ভারী খনিজ পদার্থ হিসেবে[১]

সংজ্ঞা, বর্ণনা এবং অবস্থান সম্পাদনা

 
সাপ্রোলাইট ল্যাটারলাইটের মত এত ক্ষয়ে যাওয়া নয়; সাপ্রোলাইটের উপরের স্তর থেকে ল্যাটারলাইট পর্যন্ত ধারাবাহিকতা আছে।.

সাপ্রোলাইট একটি রাসায়নিকভাবে ক্ষয়ে যাওয়া পাথর (আক্ষরিক অর্থে এর মানে "পচা পাথর")। আরো তীব্রভাবে ক্ষয়ে গেলে সাপ্রোলাইট থেকে ল্যাটেরাইটে পরিনত হয়।

সাপ্রোলাইট মাটির স্তরের শেষ প্রান্তে গঠিত হয়[১] এবং এর উপস্থিতি বেডরকের উপরপৃষ্ঠ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ে যাওয়া নির্দেশ করে[২]। ল্যাটেরাইটিক রেগোলিথের ক্ষেত্রে - রেগোলিথগুলি পাথরের একটি আলগা স্তর হিসেবে বেডরকের উপরে থাকে - স্যাপ্রোলাইটগুলি ল্যাটেরাইটের অবশিষ্টাংশের শেষ অংশের উপরের স্তর দ্বারা আবৃত হতে পারে; মূল প্রোফাইলের বেশিরভাগ অংশ অবশিষ্ট মাটি দ্বারা বা অন্য স্থান থেকে আসা মাটির ভার দ্বারা সংরক্ষিত থাকে[১]। সুইডেনে, এভাবে ক্ষয়ের ফলে ১০০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে পাতলা কাওলিনিটিক স্যাপ্রোলাইটের স্তর গঠিত হয়; ২০০ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পুরু কাওলিনিটিক স্যাপ্রোলাইটের স্তর গঠিত হয়; এবং ৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে মাঝারি-পুরু অপরিপক্ক স্যাপ্রোলাইটের স্তর গঠিত হয়[২]

লৌহ যৌগের উপস্থিতি সাপ্রোলাইটের প্রধান রঙের উৎস[৩]। বেশিরভাগ উদ্গত স্তরে, লৌহ যৌগের উপস্থিতির কারণে রঙিন দেথায় যা খনিজের কণার আকারের উপর নির্ভর করে[৩]। যেমন মাইক্রন থেকে ছোট আকারের গোথাইট হলুদ; বড় গোথাইট বাদামী। মাইক্রন থেকে ছোট আকারের হেমাটাইট লাল; বড় হেমাটাইট ধূসর থেকে কালো রঙের হয়[৩]

রেগোলিথের পুরুত্ব কয়েক মিটার থেকে দে়ড়শ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা স্থলপৃষ্ঠের বয়স, টেকটনিক সক্রিয়তা, জলবায়ু, অতীতের জলবায়ুর এবং বেডরকের গঠনের উপর নির্ভর করে[১]। এই তীব্রভাবে ক্ষয়ে ভূখণ্ডগুলি এখন উষ্ণ আর্দ্র থেকে শুষ্ক, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় থেকে নাতিশীতোষ্ণ, বিভিন্ন রকম জলবায়ুতে গঠিত হয়, তারা অতীতে একই পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছিল[১]। আফ্রিকা, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, রেগোলিথ প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর ধরে একটানা গঠিত হয়ে চলেছে[১]। আন্তঃ-ক্রান্তীয় বেল্টে গভীরভাবে ক্ষয়ে যাওয়া রেগোলিথগুলি বিস্তৃত, বিশেষত মহাদেশীয় স্থলভাগে ৩৫° উত্তর এবং ৩৫° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে। অনুরূপ ক্ষয়ে যাওয়া রেগোলিথগুলি উচ্চ অক্ষাংশে পাওয়া যায় - দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া (ভিক্টোরিয়া এবং তাসমানিয়া) এ ৩৫-৪২° দক্ষিণে, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০-৪৫° উত্তরে এবং ইউরোপে (উত্তর আয়ারল্যান্ড, জার্মানি) ৫৫° উত্তরে - যদিও খুব বেশি এলাকা জুড়ে পাওয়া যায় না[১]। কিছু এলাকায় স্যাপ্রোলাইটের বয়স তুলনামূলকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব কারণ স্যাপ্রোলাইটের বয়স অবশ্যই মূল উপাদানের চেয়ে কম বয়সী হবে এবং উপরের অন্য স্তরের যেমন একটি লাভা বা পলল শিলার চেয়ে বেশি বয়সী হবে। এই নীতিটি কিছু ক্ষেত্রে উপযোগী তবে অন্য ক্ষেত্রে মধ্যে যেমন সুইডেনের নির্দিষ্ট কিছু অংশে যেখানে এটি প্রিক্রাম্বিয়ান পাথর থেকে গঠিত এবং কোয়ার্টানারি ডিপোজিটের নিচে রয়েছে, এটির উপযোগীতা খুব কম[৪]

গঠন সম্পাদনা

একটি অঞ্চলের রেগোলিথ, তার দীর্ঘ সময় ক্ষয়ের ফসল; আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে, রাসায়নিক পদার্থ বেশি পরিবমান চুয়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যবহারসমূহ সম্পাদনা

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাকুইফারগুলি প্রধানত সাপোলাইটের কাঁকর দ্বারা তৈরি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Butt, C. R. M; Lintern, M. J; Anand, R. R (১ জুন ২০০০)। "Evolution of regoliths and landscapes in deeply weathered terrain — implications for geochemical exploration"Ore Geology Reviews16: 167-183। ডিওআই:https://doi.org/10.1016/S0169-1368(99)00029-3 |doi= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  2. Lidmar-Bergström, Karna; Olsson, Siv; Olvmo, Mats (১৯৯৭)। "Palaeosurfaces and associated saprolites in southern Sweden"। Geological Society, London, Special Publications120: 95–124। ডিওআই:http://dx.doi.org/10.1144/GSL.SP.1997.120.01.07 |doi= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  3. Hurst, Vernon J. (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭)। "Visual estimation of iron in saprolite"। GSA Bulletin88: 174–176। ডিওআই:https://doi.org/10.1130/0016-7606(1977)88<174:VEOIIS>2.0.CO;2 |doi= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  4. Migoń, Piotr; Lidmar-Bergström, Karna (৩১ আগস্ট ২০০২)। "Deep weathering through time in central and northwestern Europe: problems of dating and interpretation of geological record"। CATENA49: 25–40। ডিওআই:https://doi.org/10.1016/S0341-8162(02)00015-2 |doi= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)