স্মারক দুর্ঘটনা একটি স্মৃতি স্থাপনা যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করা হয়। [] এটি একটি সড়ক স্থাপত্য যার উদ্দেশ্য হলো বিধ্বস্ত এই গাড়িটি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পথচারীদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতনতার সৃষ্টি করা। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারীদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের উচ্চহারের সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে নীতি, আইন ও অবকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে এই স্থাপনা বৃহত্তর কোন আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠবে।

স্মারক দুর্ঘটনা
স্মারক দুর্ঘটনা
নকশাকারকসালাউদ্দিন আহমেদ
সম্পূর্ণতা তারিখ২০১৪
খোলার তারিখ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
নিবেদিততারেক মাসুদ
মিশুক মুনীর

ইতিহাস

সম্পাদনা

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অগাস্ট তারিখে ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর এর অকাল প্রয়াণ ঘটে। ঐ দুঘটর্নায় প্রয়াতদের যাত্রসঙ্গী চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন ও ছিলেন। তারা একটি মাইক্রোবাস যোগে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় বিদ্ধস্থ ঐ মাইক্রোবাসটি পরে ঢাকায় আনা হয় এবং ঢালী আল মামুন ঐ বিদ্ধস্থ মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের পাশের সড়কদ্বীপে তৈরি করেন এই ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতিস্থাপনা’। শিল্পী ঢালী আল মামুনের পরিকল্পনায় এই স্থাপত্যের নকশা প্রণয়ন করেন শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। এই স্থাপনা নির্মানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ব্র্যাংক ব্যাংক। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে এই স্মারক স্থাপনাটির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই স্মৃতিস্থাপনা উৎসর্গ করা হয়েছে। []

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের পাশের সড়কদ্বীপে তৈরি সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতিস্থাপনাটি অবস্থিত। পথচারী দেখতে পাবেন, রাস্তার পাশের একটি বিধ্বস্ত সাদা মাইক্রোবাসের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মাইক্রোবাসটির চাকাগুলোও আলগা হয়ে পড়ে আছে। ছিটকে পড়া দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ইঞ্জিন, তেলের ট্যাংক, সিটগুলো এলোপাতাড়ি পড়ে আছে। দেখলে মনে হয়, খানিক আগেই ঘটে গেছে কোনো বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা। মাইক্রোবাসের অভ্যন্তরেপাঁচটি হাত রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে দাঁড়ালে সেগুলো পথচারীর দৃষ্টিগোচর হবে। []

সমালোচনা ও নির্মাতার ভাষ্য

সম্পাদনা

এই কাজটিকে একটি কম্পোজিশন হিসেবে বিবেচনা করা যায় যার মাঝখান দিয়ে একটি রেখা টানা সম্ভব, অরথাৎ এটি একটি centralized composition যার মধ্যভাগে সংস্থাপিত হয়েছে একটি বৃহদাকার ‘ফর্ম’। এই সড়ক স্তাপত্যের সকল উপকরণই দুর্ঘটনায় কবলিত গাড়িটির অসহায় ধ্বংসাবশেষ।

এই সড়ক স্থাপত্যের পরিকল্পনাকারী ঢালী আল মামুন বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম পুরো গাড়িই মুড়ে ফেলতে, যেন গাড়িটা নিজেই আহত। এতে দুর্ঘটনার পর গাড়িটির মধ্যে যে একটি ভায়োলেন্স প্রতিভাত হচ্ছে বা বিবৃত রয়েছে, সেটিকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। ওটা থাকবে ভেতরে। কিন্তু বাইরে সে পৃথক হয়ে যাবে। কিন্তু টেকনিক্যাল আসপেক্টের কারণে সেটা সম্ভব হয় নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাড়িটিতে পাঁচটা হাত রয়েছে - দুর্ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচজন - একটি রেফারেন্স রয়েছে। আবার হাতগুলো কিন্তু হঠাৎ গাড়ির সঙ্গে লেগে থাকা, এটি গাড়ির বাস্তবতাকে পালটে দিয়েছে।’ কিন্তু দোমড়ানো মাইক্রোবাসের অভ্যন্তরে যে-হাতের ফর্মগুলো ব্যবহার করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে না দাঁড়ালে সেগুলো দৃষ্টি গোচর হয় না। এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, তিনি হাতগুলো পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে চান নি। তিনি একটি বিস্ময় সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সর্বোপরি সাদা রংয়ের গাঢ় ব্যবহারের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন যে সাদা রংটি বৈশ্বিকভাবে সম্মত। যে-কোনো দুর্ঘটনাসৌধের রং সাদা হয়ে থাকে। সাদা রংয়ের কারণে দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ীতে প্রতিবিম্বিত ভায়োলেন্সটা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে মামুন বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, গাড়ীর বিধ্বস্ত সিটগুলোই এক-একটি ভাস্কর্য। যদি দুঁশ্যাম্পের ‘ইউরিনাল’ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে এটা সে অর্থে ডকুমেন্টারি। এটা একই সঙ্গে আমার মতে - মেমোরিয়াল, মনুমেন্ট ও মিউজিয়াম। মানে একটা ওপেন উন্মুক্ত জাদুঘর’। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "'স্মারক দুর্ঘটনা' স্মৃতিস্থাপনার উদ্বোধন ঢাবিতে"। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  2. "ধ্বংসাবশেষই স্মৃতির স্মারক"। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. একটু আগেই কি ঘটে গেল দুর্ঘটনা![স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. ‘স্মারক দুর্ঘটনা’ ও ঢালী আল মামুন

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা