সোলতানিহ গম্বুজ উত্তর-পশ্চিম ইরানের জান্‌জন প্রদেশের সোলতানিহ শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ঐতিহ্যগতভাবে তথাকথিত, মঙ্গোল শাসক ইলখানাত ওলজেইতুর সমাধিকে কেন্দ্র করে নির্মিত কমপ্লেক্সটি বর্তমানে ধ্বংসাবশেষ, যা মুহাম্মদ খোদাবন্দেহ নামেও পরিচিত। আনুমানিক ২০০-টন ওজনের গম্বুজটি এর ভিত্তি থেকে ৪৯ মি (১৬১ ফু) লম্বা। বর্তমানে এটি ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। সোলতানিহ গম্বুজটি এছাড়াও ওলজেইতু গম্বুজ, সুলতানিয়ার গম্বুজ, ওলজেইতুর সমাধি এবং গনবাদ-ই-সোলতানিহ নামেও পরিচিত।

সোলতানিহ গম্বুজ
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
অবস্থানসোলতানিহ, জান্‌জন প্রদেশ, ইরান
এর অংশসোলতানিহ
মানদণ্ডসাংস্কৃতিক: (ii), (iii), (iv)
সূত্র1188-001
তালিকাভুক্তকরণ২০০৫ (২৯তম সভা)
আয়তন১৪.৮ হেক্টর (৩৭ একর)
স্থানাঙ্ক৩৬°২৬′২.৩″ উত্তর ৪৮°৪৭′৪৫.৭″ পূর্ব / ৩৬.৪৩৩৯৭২° উত্তর ৪৮.৭৯৬০২৮° পূর্ব / 36.433972; 48.796028
সোলতানিহ গম্বুজ ইরান-এ অবস্থিত
সোলতানিহ গম্বুজ
ইরানে সোলতানিহ গম্বুজের অবস্থান

কমপ্লেক্সের প্রধান ভবনটি, ১৩০২ থেকে ১৩১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত, যেখানে ইরানের প্রাচীনতম ডবল-শেল গম্বুজ থাকতে পারে,[১] যা ছিল পণ্ডিত মার্সেল-অগাস্ট ডিউলাফয় দ্বারা উত্থাপিত নির্মাণ সম্পর্কে একটি ধারণা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ইটের গম্বুজগুলির মধ্যে একটি। ইটের গম্বুজের তাত্ত্বিক প্রকৌশল সীমানুসারে, ফ্লোরেন্স ক্যাথিড্রাল এবং আয়া সোফিয়ার গম্বুজের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গম্বুজ এটি। এর বাহ্যিক অলঙ্করণের বেশিরভাগই বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ দুর্দান্ত মোজাইক, ফ্যায়েন্স এবং ম্যুরাল এখনও টিকে রয়েছে। সোলতানিহ গম্বুজটি পারস্যের দুনিয়ায় এরচে দু:সাহসী ইরানি-শৈলীর গম্বুজ নির্মাণের পথ প্রশস্ত করেছিল, যেমন খাজা আহমদ ইয়াসাভীর সমাধি এবং তাজমহল। ইসলামি বিশ্বে এর গুরুত্বকে খ্রিস্টান স্থাপত্যের হিসাবে ব্রুনেলেসচির কুপোলার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।[২]

ইতিহাস এবং পৃষ্ঠপোষকতা সম্পাদনা

ইসলামি বিশ্বে মঙ্গোলদের আক্রমণ ১২২১ সালে পূর্ব ইরানের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং আব্বাসীয় শাসনামলে (৭৫০-১২৫৮) শেষ হয়েছিল। মঙ্গোলরা পশ্চিম এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ জয় করে নিয়েছিল এবং ইলখানাত (১২৫৬-১৩৫৩) নামে পরিচিত রাজবংশের একটি শাখা ইরানে তাদের বেশিরভাগ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছিল।[৩] যদিও এই বিজয় প্রাথমিকভাবে একটি ধ্বংসাত্মক ইতিহাসের সুচনা করেছিল, পাশাপাশি ইলখানিদের যুগে শিল্প ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের উন্নতি ঘটেছিল। স্থাপত্যের মাস্টারপিসের ক্ষ্যত সোলতানিহ গম্বুজ ইলখানিদদের নির্মাণ দক্ষতা প্রমাণ করেছিল।

ইরানে ঐতিহ্যবাহী শহরগুলি থেকে দূরে সরে গিয়ে চারণভূমিতে প্রবেশের উপর জোর দিয়ে একটি কৃষি পশ্চিমাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল শহরগুলিতে মঙ্গোলদের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছিল।[১] এই নতুন ধরনের মঙ্গোল শহরের উদাহরণ ছিল উত্তর-পশ্চিম ইরানের সোলতানিহ শহর। তৎকালীন ইরানের ইলখানিদ শাসক আরঘুন তার গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে সোলতানিহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পুত্র, মুহাম্মদ ওলজিতু খুদাবান্দা, শহরের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়েছিলেন এবং এটিকে সাম্রাজ্যের রাজধানীতে রূপান্তরিত করেছিলেন। ওলজেইতুর মৃত্যুর পর, শহরটির অবিচ্ছিন্ন পতন শুরু হয়। বর্তমানে, শুধুমাত্র দুটি ভবন অবশিষ্ট রয়েছে যা সোলতানিহর প্রাক্তন সম্পদ এবং গুরুত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ। এখানে রয়েছে সোলতানিয়াহ গম্বুজের অষ্টভুজাকৃতির সমাধি এবং একটি সংলগ্ন খানকাহ, একটি আধ্যাত্মিক পশ্চাদপসরণ হিসাবে সুফি সমাবেশের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা ভবন। সংরক্ষিত সমাধিটির গুণমান সুলতান ওলজেইতুর পৃষ্ঠপোষকতার সমৃদ্ধির প্রমাণ দেয়।[৪]

বিশাল গম্বুজযুক্ত ওলজেইতুর সমাধিটি ১১৫৭ সালে মারভে সেলজুক সুলতান সানজা কর্তৃক নির্মিত, যেটি সে সময়ের বিশাল সমাধির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ওলজেইতুর সমাধির একটি অষ্টভুজাকৃতির পরিকল্পনা ছিল, যেমন আহমেদ সানজার সমাধি। উভয় কমপ্লেক্স ইলখানিদ আদালত দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ভবন হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।[৫]

২০০৫ সালে গনবাদ-ই-সোলতানিহ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। এটি চারটি বৈশিষ্ট্যের ভূ-দৃশ্যের জন্য ইউনেস্কোর নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক মানদণ্ড অনুসরণ করে: প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, খামার, শহুরে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সোলতানিহর ঐতিহাসিক ঘাস।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ব্লেয়ার ১৯৮৬, পৃ. ১৩৯।
  2. ইরানি, আলী (২০১৫)। "Structural Assessment and Historical Review of the Dome at Soltaniyeh" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। Massachusetts Institute of Technology। ৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২২ 
  3. ইয়ালমান, সুজান। "The Art of the Ilkhanid Period (1256-1353)" (Heilbrunn Timeline of Art History) (ইংরেজি ভাষায়)। New York: The Metropolitan Museum of Art। 
  4. ব্লেয়ার ১৯৮৬, পৃ. ১৪২।
  5. কমরফ, লিন্ডা; কার্বোনি, স্টেফানো (২০০১)। "The legacy of Genghis Khan: Courtly Art and Culture in Western Asia, 1256-1353" (ইংরেজি ভাষায়)। Metropolitan Museum of Art। পৃষ্ঠা ১২৩। 
  6. সাইহ, আলী (২০১৯)। Sustainable building for a cleaner environment: selected papers from the World Renewable Energy Network's Med Green Forum 2017। Ali Sayigh, World Renewable Energy Network's Med Green Forum। চ্যাম, সুইজারল্যান্ড: Springer International Publishing। আইএসবিএন 978-3-319-94595-8ওসিএলসি 1044756877ডিওআই:10.1007/978-3-319-94595-8 
সূত্র

ব্লেয়ার, শিলা এস. (১৯৮৬)। "The Mongol Capital of Sulṭāniyya, "The Imperial""ইরান (ইংরেজি ভাষায়)। ইরান: Taylor & Francis। ২৪: ১৩৯-১৫১। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা