সেম্বাওয়াং উদ্যান

সেম্বাওয়াং উদ্যান ( চাইনিজ : 三 巴 旺 公园; মালয়: Taman Sembawang) হলো ১৫-হেক্টর জায়গাজুড়ে বিদ্যমান একটি উদ্যান। উদ্যানটি সিঙ্গাপুরের উত্তরে সিম্বাওয়াংয়ে অবস্থিত। এটি সেম্বাওয়াং রোডের শেষ প্রান্তে অবস্থিত, যেখানে আগে সেম্বাওয়াং রাস্তার শেষে বাস টার্মিনাল ছিল।

ইতিহাস সম্পাদনা

সেম্বাওয়াং উদ্যান নামটি সেম্বাওয়াং ট্রি (মেসুয়া ফেরুগিনিয়া) থেকে পেয়েছে। সেম্বাওয়াং বাস টার্মিনালের নিকটে একটি সেম্বাওয়াং গাছ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের অতীত ইতিহাসের সাথে সেম্বাওয়াং উদ্যানের অনেক আকর্ষণীয় সংযোগ রয়েছে। উদ্যানের অভ্যন্তরের পথগুলি পুরানো, যা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুর নেভাল বেস সম্পাদনা

উদ্যানের পশ্চিমে অবস্থিত সেম্বাওয়াং শিপইয়ার্ড, যা ১৯২০ এর দশক থেকে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা অবধি ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির মহামহিমের নেভাল বেস (এইচএম নেভাল বেস) ছিল। সিঙ্গাপুরে ব্যস্ত এবং ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক বন্দর এবং একটি নৌ ঘাঁটির জরুরি প্রয়োজনে ব্রিটিশদের সিঙ্গাপুরে নৌঘাঁটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯২৩ সালে, নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজটি শুরু হয়েছিল এবং ১৯৩৮ সালে এটি সমাপ্ত হয়েছিল। তৎকালীন সিঙ্গাপুরের গভর্নর স্যার শ্যান্টন টমাস ১৯৩৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেছিলেন; এটি ছিল ব্রিটিশ নেভাল বেসের বাইরের বৃহত্তম ডকইয়ার্ড। রণতরী এইচএমএসপ্রিন্স অফ ওয়েলস এবং ব্যাটলক্রুইজার এইচএমএস রিপালস চারটি ধ্বংসকারী সহকারে "জেড" বাহিনী নিয়ে ১৯৪১ সালের ২রা ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের নৌঘাঁটিতে এসেছিল। পার্ল হারবার আক্রমণের পরে, জাপানিরাও নৌঘাঁটির ঠিক সামনের জোহর উপকূলরেখা কিনে দুটি যুদ্ধজাহাজকে অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণ করেছিল। দুটি যুদ্ধজাহাজই ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ডুবে যায়, যার স্মৃতিতে ২০০৫ সালে সেম্বাওয়াং ওয়ার্ভেতে একটি সেম্বাওয়াং স্মৃতি ফলক উন্মোচন করা হয়েছে।

জাপানিরা নৌঘাঁটি ব্যবহার করতে পারে তা বুঝতে পেরে ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে ডকইয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশরা ১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, যার বিবরণ মেমোরিজ এট ওল্ড ফোর্ড ফ্যাক্টরী মিউজিয়ামে পাওয়া যেতে পারে। যেখানে আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরের তিন বছরের জন্য, ১৯৪৫ অবধি জাপানিরা নৌ-ঘাঁটিটিকে তাদের নৌযানগুলি মেরামত করতে ব্যবহার করেছিল। ১৯৪৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাপানিরা সেম্বাবাংয়ের বহরের তীরে থাকার ব্যবস্থাপনায় ব্রিটিশদের কাছে বশ্যতাস্বীকার করে, এখন যা এইচএমএস টেরর নামে পরিচিত। ১৯৬৮ সাল থেকে, নৌ ঘাঁটি রূপান্তরিত হয়ে সেম্বাওয়াং শিপইয়ার্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেম্বাওয়াং নেভাল বেসের আক্রমণ এবং অপারেশনগুলি জেটি, পিয়ের এবং সেম্বাওয়াং উদ্যানের আবাসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

আকর্ষণ সম্পাদনা

 
সেম্বাওয়াং সমুদ্রসৈকত

সেম্বাওয়াং জেটি সম্পাদনা

১৯৪০-এর দশকে, ব্রিটিশরা ৩০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ শুরু করে এবং পরে জাপানিদের দখলের সময় এটি ত্যাগ করে। জাপানিরা জেটির নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এখন এটি একটি জনপ্রিয় মাছ ধরার জায়গা।

সেলেটার পিয়ার সম্পাদনা

১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে নেভাল বেইজ নির্মাণের সময় সেলেটার পিয়ার নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারী, জাপানিরা পিয়ারটির উপর বোমা মেরেছিল এবং সেম্বাওয়াং রাস্তার শেষপ্রান্তে সেলেটার পিয়ারের কেবল অবশেষ রয়েছে।

সেম্বাওয়াং বিচ সম্পাদনা

সিঙ্গাপুরে কয়েকটি প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকতের অন্যতম সেম্বাওয়াং বিচ। অন্য প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকতটি হলো চাঙ্গি বিচ। ল্যাব্রাডর বিচটি প্রাকৃতিক তবে পাথুরে।

বিউলিউ হাউস সম্পাদনা

বিউলিউ হাউস ১৯১০-এর দশকে ডেভিড পরিবারের জন্য সমুদ্র উপকূলীয় ঘর হিসাবে নির্মিত একটি বাড়ি। ১৯৩৩ সালে যখন সেম্বাওয়াং নেভাল বেস নির্মাণ শুরু হয়, ব্রিটিশরা বাড়িটি দখল করে নেয়। এটি নির্মাণের সময় বা অন্যান্য বিভিন্ন সময়ে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার / ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়ীটি ব্যবহার করেন। এখন, বাড়িটি আরবান রিডেভেলপমেন্ট অথরিটি কর্তৃক সংরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে গেজেট করা হয়েছে। এটি বিবাহের এবং পার্টির জন্য সমুদ্র উপকূলবর্তী রেস্তোঁরা এবং ভেন্যু হিসাবে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সংস্কার সম্পাদনা

২০১১ সালে, জাতীয় উদ্যান বোর্ড সমুদ্র সৈকতসহ সেম্বাওয়াং উদ্যানের সংস্কার শুরু করেছিল। [১]

চারপাশের আগ্রহের ক্ষেত্রগুলি সম্পাদনা

সেম্বাওয়াং উদ্যান এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি ঘিরে রয়েছে এমন জায়গাগুলি যেখানে কাম্পং ওয়াক হাসান ছিল, সেখানে পুরানো মালয় কাম্পং বাড়ি এবং পুরানো এবং সাদা-কালো উপনিবেশিক ঘর সহ অনেকগুলি রাস্তা। এখানে প্রায় ২০ টি রাস্তা রয়েছে যা দিল্লি রোড, পাকিস্তান রোড, কেনিয়া ক্রিসেন্ট, মাদ্রাজ রোড, আফ্রিকা রোড ইত্যাদির মতো ব্রিটিশ উপনিবেশের নামে নামকরণ করেছে।

নেভির যাদুঘরটি সিঙ্গাপুরের নৌবাহিনী এবং রয়েল নেভির সংগ্রহ সংরক্ষণ করে। যাদুঘরে নেভাল বেসের ঐতিহাসিক প্রদর্শনী, ফটোগ্রাফ, ব্যাজ, মেডেল, নথি এবং নটিক্যাল অবজেক্ট রয়েছে।

সেম্বাওয়াং রোডের ঠিক পশ্চিমে অ্যান্ড্রু অ্যাভিনিউ থেকে বোতল গাছের গ্রামের কাছের নির্জন রাস্তাটি খুঁজে পাওয়া যায়। পথে, মেলু পেরেমপ্যাটান নামে একটি মসজিদ রয়েছে যা ১৯৭০-এর দশকে নির্মিত।

ওল্ড অ্যাডমিরাল্টি হাউস যা সিঙ্গাপুরের ৫২ জাতীয় স্মৃতিসৌধগুলির মধ্যে একটি, বর্তমানে পুরাতন নেলসন রোডের উদ্যান থেকে ৩.৫ কিমি দূরে। স্যার এডউইন লুটিয়েনসের ডিজাইন করা বিল্ডিংটি এখন অ্যাডমিরাল হিল কান্ট্রি ক্লাব নামে পরিচিত একটি স্পা রিসোর্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবং ১৯৪১ সালে জাপানের আক্রমণে ডুবে যাওয়া দুটি এইচএমএস যুদ্ধ ক্রুজারের বীর সেনাদের স্মরণে ২০০৩ সালে জাহাজ ঘাটায় খোলা হয়েছিল সেম্বাওয়াং স্মৃতিসৌধ

প্রাণিকুল ও উদ্ভিদকুল সম্পাদনা

সিঙ্গাপুরের নেচার সোসাইটি দ্বারা ওই অঞ্চলে ৪০ টিরও বেশি পাখির প্রজাতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। [২] ক্যাননবল গাছ উদ্যানে একটি বিরাট আকর্ষণ, যদিও এটি স্থানীয় না।

আরো দেখুন সম্পাদনা

  • সিঙ্গাপুর উদ্যানের তালিকা
  • জাতীয় উদ্যান বোর্ড

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. From this ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে, "Sembawang Park will be undergoing re-development."
  2. Recordings of species in Sembawang Park

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা