সেতু পার্বতী বাঈ

(সেতু পার্বতী বাই থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মূলম তিরুনাল সেতু পার্বতী বাই (১৮৯৬–-১৯৮৩), যিনি আম্মা মহারাণী হিসাবে বেশি পরিচিত, ছিলেন ত্রিবাঙ্কুরের যুব-মহারাণী (রানী) এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন প্রচারক। তিনি ছিলেন ত্রিবাঙ্কুরের শেষ রাজা চিতিরা তিরুনল বলরাম বর্মার রাজমাতা।

মূলম তিরুনল সেতু পার্বতী বাই
ত্রিবাঙ্কুরের মহারাণী
জন্ম(১৮৯৬-১১-০৭)৭ নভেম্বর ১৮৯৬
ত্রিবাঙ্কুর
মৃত্যু৪ এপ্রিল ১৯৮৩(1983-04-04) (বয়স ৮৬)
তিরুবনন্তপুরম
দাম্পত্য সঙ্গীশ্রী পুরম নল রবি বর্মা কোচু কয়ই থাম্পুরান
পূর্ণ নাম
শ্রী পদ্মনাভসেবিনী মহারাণী মূলম তিরুনল সেতু পার্বতী বাই
রাজ্যের নাম
শ্রী পদ্মনাভসেবিনী ভঞ্চিপাল দিউমণি রাজ রাজেশ্বরী মহারাণী মুলাম তিরুনল সেতু পার্বতী বাই
ত্রিবাঙ্কুরের যুব-মহারাণী
রাজবংশবিনোদ স্বরূপম
পিতাশ্রী তিরুবনমা নল কেরল বর্মা তাম্পুরন
মাতামাভেলিকারা রাজবাড়ির শ্রীমতী তিরুবাদির নল ভাগীরথী বাই উমা কোচুকুঞ্জি আম্মা থামপুরাতি
ধর্মহিন্দু
পেশাত্রিবাঙ্কুরের যুব-মহারাণী এবং ত্রিবাঙ্কুরের রানী মা, অখণ্ড মহিলা মহিলা সামাজিক সম্মেলনের কলকাতা (১৯২৯) এবং ত্রিভেন্দ্রম (১৯৩৭) এর সভাপতি, ভারতের জাতীয় মহিলা পরিষদের সভাপতি এবং পৃষ্ঠপোষক (১৯৪০), শ্রী মুলাম ক্লাব (ত্রিভেন্দ্রম) এর উপ-পৃষ্ঠপোষক (১৯৪০-১৯৮৩), ত্রিবাঙ্কুর বিশ্ববিদ্যালয্যের উপাধ্যক্ষ্য (১৯৩৭-১৯৪৯), অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের আজীবন সদস্য

সেতু পার্বতী বাই ত্রিবাঙ্কুরের রাজবংশের এক রাজকন্যার মাধ্যমে রাজবাড়ির সাথে দূর সম্পর্কিত ছিলেন। ১৯০০ সালে, ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারে উত্তরাধিকারী না থাকায় তাঁকে এবং তাঁর মাসতুতো দিদি সেতু লক্ষীবাইকে, তাঁর এক সম্পর্কিত প্রমাতামহী দত্তক গ্রহণ করেছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে সেতু পার্বতী বাই যুব মহারাণী হয়েছিলেন। সেতু পার্বতী বাই কিলিমানুর প্রাসাদের শ্রী পুরম নল রবি বর্মা থাম্পুরানকে তাঁর স্বামী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, কারণ মহারাজ ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। তাঁদের বিবাহ হয়েছিল ১৯০৭ সালে। ১৯১২ সালে পনেরো বছর বয়সে প্রকৃত উত্তরাধিকারী শ্রী চিতিরা তিরুনলের জন্মের পরে তিনি আম্মা (মা) মহারাণী (রানী) বা ত্রিবাঙ্কুরের রানী মা হন।

সেতু পার্বতী বাই একজন দক্ষ বীণা বাদক ছিলেন, এবং কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং অন্যান্য ধ্রুপদী শিল্পের পৃষ্ঠপোষক এবং প্রচারক ছিলেন[১]। ত্রিবাঙ্কুর রাজবংশের পূর্বপুরুষ মহারাজ স্বাতী তিরুনল রামা বর্মার রচনাগুলিকে বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে পুনরায় লোকচক্ষুর সামনে আনতে, তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন[২]। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী, রাজা রবি বর্মার নাতনী[৩]

.

জন্ম এবং দত্তকের ইতিহাস সম্পাদনা

শেঠু পার্বতী বাইয়ের জন্ম ১৮৯৬ সালের ৭ই নভেম্বর, পালিয়াক্কারের পূর্ব প্রাসাদের মাভেলিক্কার রাজপরিবারের উৎসবমডম শাখার তিরুবতী নল ভাগীরথি বাই উমা কোচুকুঞ্জি আম্মা থাম্পুরাত্তি এবং শ্রী তিরুওনাম নল কেরল বর্মা থামপুরানের ঘরে। তাঁর চার ভাই ও তিন বোন ছিল। তাঁর দুই বোন, শ্রীমতি অবিত্তম নল ভবানী আম্মা থাম্পুরাত্তি (শিল্পী ও চিত্রকর) এবং শ্রীমতি মকায়িরাম নল রাজাম্মা আম্মা থাম্পুরাত্তি (আম্মা থাম্পুরান নাম নিয়ে ভূদৃশ্য শিল্পী) ছিলেন শিল্পী। সেতু পার্বতী বাইয়ের ঠাকুরমা ছিলেন ত্রিবাঙ্কুরের কোলাথুনাড়ু রাজবংশের কন্যা। শ্রীমথি মকায়িরাম নল রাজাম্মা আম্মা থাম্পুরাত্তির নাতনি লেখা বর্মাও ১৯৯৬ সালে ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারে দত্তক গৃহীত হয়েছিলেন[৪]

সেতু পার্বতী বাই ছিলেন কিলিমানুর প্রাসাদের বিশ্বখ্যাত শিল্পী শ্রী রাজা রবি বর্মার ছোট নাতনী।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

দশ বছর বয়সে প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে সেতু পার্বতী বাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্র অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। স্বয়ম্বরের জন্যে, উচ্চ বংশীয় এবং উচ্চ কৃতিত্বের যুবকদের একটি নির্বাচিত তালিকা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল পতি নির্বাচনের জন্যে। তিনি একুশ বছর বয়সী স্নাতক এবং সংস্কৃত পণ্ডিত, কিলিমানুর রাজবংশের শ্রী পুরম নল রবি বর্মা থাম্পুরানকে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর বুদ্ধি এবং তাঁর উচ্চ স্তরের শিক্ষা (কলেজের স্নাতক সে দিনগুলিতে বিরলতা ছিল) তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। ১৯০৭ সালে তাঁদের বিবাহ হয়েছিল; ১৯১১-এ যখন তিনি চৌদ্দ বছর বয়সী হয়েছিলেন, তখন তিনি পতিগৃহে যাত্রা করেন। ১৯১২ সালে তিনি তাঁর প্রথম পুত্র, তৎকালীন যুবরাজ এবং ত্রিবাঙ্কুরের সর্বশেষ শাসক মহারাজ (রাজা), শ্রী চিতিরা তিরুনল বলরাম বর্মার জন্ম দেন। এভাবে তিনি পনেরো বছর বয়সে ত্রিবাঙ্কুরের রানী মা হন। এরপর তিনি আরও তিন সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর দ্বিতীয় সন্তান, জন্মের সাথে সাথেই মারা যায়। তাঁর বাকি দুই সন্তান ছিলেন কার্তিকা তিরুনল লক্ষ্মী বাই (জন্ম-১৯১৬) এবং উত্রাদম তিরুনল মার্তন্ড বর্মা (জন্ম- ১৯২২)[৫]

অবদান সম্পাদনা

সেতু পার্বতী বাই কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে খুব আগ্রহী ছিলেন এবং অল্প বয়স থেকেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং বীণা শিখতে শুরু করেছিলেন। সংগীতবিদ ও গবেষকদের মতে, তিনি বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে, স্বাতী তিরুনলের রচনাগুলি নতুন করে তৈরি করে, এবং সেম্মাগুন্ডি শ্রীনিবাস আইয়ার এবং মুথিয়াহ ভগবথারের মতো সংগীতশিল্পীদের প্রচারের মাধ্যমে কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে স্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন[৬]। সেতু পার্বতী বাইয়ের বড় ছেলে, ত্রিবাঙ্কুরের তদানীন্তন মহারাজ শ্রী চিতিরা তিরুনল বলরাম বর্মা ১৯৩৯ সালে স্বাতী তিরুনল সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মুথিয়ায় ভাগবতার এই মহাবিদ্যালয়ের প্রথম অধ্যক্ষ হন[৭]। পরবর্তীতে এই দায়িত্বটিই কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ শ্রী সেম্মাগুন্ডি শ্রীনিবাস আইয়ারের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। সেতু পার্বতী বাইয়ের প্রচেষ্টার কারণে ১৯৩০ এর দশকের পরে নবরাত্রি সঙ্গীত উৎব একটি বিশাল অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। পূর্বে উৎসবে শুধুমাত্র মুল্লামুডু ভাগবতীদের গান করার অনুমতি ছিল। তিনি মুথিয়ায় ভাগবতার, সেম্মাগুন্ডি শ্রীনীবাস আইয়ার, এম. ডি. রমনাথন এবং অন্যান্যদের সেখানে গান করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।[১][২][৩]

অভিযোগ ও বিতর্ক সম্পাদনা

সেতু পার্বতী বাই শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানা যায়, যদিও বিধিমতে এই মন্দিরে ঋতুস্রাবী বয়সী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ[৮]। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দশক পরে, রাজপ্রাসাদ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, যে সেতু পার্বতী বাই ঋতুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ৫৩ বছর বয়সে মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন[৯]। তবে, মন্দিরের রেকর্ড অনুযায়ী, এই প্রবেশ ছিল ১৯৪০ সালে, যখন তাঁর বয়স মাত্র ৪৪ বছর ছিল[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. CHATTERJEE, PARTHA। ""Versatile genius" ...... Amongst the adherents of the late Maharaja was the latter-day master of Carnatic vocal Semmangudi Srinivasa Iyer, who shifted to Travancore in 1940 to assist Mutthiah Bhagavathar to bring to light the kritis of Swati Tirunal with the approval of Maharani Sethu Parvathi Bayi who was a connoisseur of music"। 
  2. J. Weidman, Amanda (২০০৬)। Singing the Classical, Voicing the Modern: The Postcolonial Politics of Music in South India। Duke University Press। 
  3. Of India, The Times। "THE REBEL PRINCE OF TRAVANCORE : Rema Nagarajan Meets Prince Ashwathy Thirunal Rama Varma, Who Dared Defy Tradition To Pursue His Passion For Music"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০২০ 
  4. Buyers, Christopher। "TRAVANCORE/The Kulasekhara Dynasty - GENEALOGY"/www.royalark.net। Christopher Buyers। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  5. Arun, Mohan। "Sree Chithira Thirunal Balarama Varma Maharaja Travancore History"। etrivandrum.com। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৪ 
  6. RAMNARAYAN, GOWRI। "OBITUARY - The pitamaha of Carnatic music : " Semmangudi was invited to Travancore to assist the Bhagavatar edit, notate and publish the compositions of Swati Thirunal. Succeeding the senior as Principal of the Swati Tirunal College of Music, Semmangudi left a lasting influence on the Carnatic music scene in Kerala. The Travancore royal family became his life-long patrons.""। THE HINDU। FRONTLINE। 
  7. .com, angelfire। "Sangeetha Kalanidhi Gayaka Sikhamani Dr. Harikeshanallur L Muthaiah Bhagavathar"angelfire.com 
  8. "Don't drag Travancore royal family into Sabarimala women's entry row: Kerala Kshatriya Kshema Sabha"The New Indian Express। ২২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  9. "Palace clarification"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জুলাই ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  10. P.M., Jithesh। "Appropriation of Ayyappa Cult: The History and Hinduisation of Sabarimala Temple"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮