সুধীরকুমার চট্টোপাধ্যায়

ভারতীয় ফুটবলার

সুধীরকুমার চট্টোপাধ্যায়, রেভারেন্ড (১২ নভেম্বর ১৮৮৩ - ১২ এপ্রিল, ১৯৬৬) ছিলেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে আইএফএ শীল্ড বিজয়ী মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের খেলোয়াড়দের অন্যতম।[১] খ্রিস্টীয় ধর্মযাজক এবং শিক্ষাব্রতী হিসাবেও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

সুধীরকুমার চট্টোপাধ্যায়
সুধীরকুমার চট্টোপাধ্যায় - ১৯১১ খ্রি আইএফএ শীল্ড জয়ী দলে দণ্ডায়মান বাঁদিক হতে পঞ্চম
জন্ম(১৮৮৩-১১-১২)১২ নভেম্বর ১৮৮৩
মৃত্যু১২ এপ্রিল ১৯৬৬(1966-04-12) (বয়স ৮২)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৮৩-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৬৬)
পেশাঅধ্যাপক, ধর্মযাজক

জীবনী সম্পাদনা

সুধীরকুমারের পড়াশোনা কলকাতায়। পড়াশোনার সঙ্গে তিনি নিয়মিত ফুটবল খেলার অনুশীলন করতেন এবং প্রথমদিকে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনে খেলতেন। তিনি আগেই শিক্ষা বিষয়ে লন্ডন থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতার বিশপস কলেজে ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।[১] ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবে যোগ দেন। আর এই সময় তিনি কলকাতার লন্ডন মিশনারি সোসাইটি কলেজে ইংরাজী ও ইতিহাসের সুপ্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক ছিলেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব আইএফএ শীল্ডের খেলায় ব্রিটিশ দল ইষ্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট দল-কে ২-১ গোলে পরাজিত করে ঐতিহাসিক শীল্ড জয় করে। এই খেলায় লেফ্ট-ব্যাকে খেলার সময় একমাত্র তিনিই বুট পরে খেলেছিলেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ব্ল্যাক ওয়ার দলের সঙ্গে আইএফএ শীল্ডের খেলার হাঁটুতে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় ফুটবল খেলা থেকে অবসর নেন। শেষে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডন যান এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষণ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন এবং কিছুদিন ট্রিনিটি কলেজে প্রভাষকের কাজ করেন।

দেশে ফিরে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরে এক আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিষ্ণুপুর শিক্ষা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ উইমেনস কলেজ সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[২] শেষ জীবনে তিনি একজন ধর্মযাজক হন। ভারতবর্ষীয় চার্চ অফ ইংল্যান্ডে তিনি বিশেষ উচ্চ পদে ছিলেন। 'দ্য রেভারেন্ড' এবং 'দ্য রাইট রেভারেন্ড'-এর ধাপ পেরিয়ে শেষজীবনে তিনি ছিলেন- 'দ্য ভেরি রেভারেন্ড ডক্টর' তথা ডক্টর অফ ডিভিনিটি। তিনি বেঙ্গল ক্রিশ্চিয়ান কাউন্সিলের সম্পাদক এবং পরে সভাপতি এবং ইউনাইটেড চার্চ অফ নর্দান ইন্ডিয়ার মডারেটার হয়েছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক মিশনারি সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ফুটবল ও দেশের প্রতি ভালোবাসা সম্পাদনা

শান্ত মেজাজ, সদ্ব্যবহার আর উদার মনের জন্য দলে সতীর্থদের কাছে সুধীরকুমার যেমন সম্মানিত ও জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনই ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য দলের প্রধান ডিফেন্ডার ছিলেন। প্রতিপক্ষ বৃটিশ দল তাকে অনেক ভাবে মোহনবাগান দলে না খেলার চেষ্টা করেছে। ফাইনাল খেলার দিন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তিনি যথাসময়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। অবসরের পরও সুধীরকুমারের ফুটবল খেলা এবং মোহন বাগান ক্লাবের প্রতি ভালবাসা অপরিবর্তিত ছিল। দীর্ঘ ৩৬ বৎসর পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যখন মোহনবাগান আইএফএ শীল্ডের ফাইনাল খেলায় জয়ী হয় এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনের সময় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের সেই বিজিত ফুটবল দলের একমাত্র জীবিত খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে পাওয়া স্বর্ণপদক নিলামের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ জাতীয় প্রতিরক্ষা ফান্ডে দান করেন।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের প্রথম আইএফএ শীল্ড জয়ী দলের সকল সদস্যদের সঙ্গে সুধীরকুমার চট্টোপাধ্যায়কে মরণোত্তর "মোহনবাগান রত্ন" সম্মানে ভূষিত করে।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৭৯৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "The death anniversary of indian Football's first legend"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২৭ 
  3. "অফিসিয়াল ওয়েবসাইট-মোহনবাগান রত্ন প্রাপকেরা(ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১১