সীমা রাও, যাঁকে আমরা ভারতের বিস্ময়কর নারী বলেও জানি,[১][২][৩] তিনি ভারতের প্রথম মহিলা কমান্ডো প্রশিক্ষক।[৪] তিনি গত ১৮ বছর ধরে ভারতের বিশেষ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন কোন আর্থিক অনুদান ছাড়াই।[৫] তিনি মুখোমুখি যুদ্ধের (সিকিউবি) [৬] — অর্থাৎ সামনাসামনি যুদ্ধ নৈপুণ্যের একজন পথপ্রদর্শক — এবং বিভিন্ন ভারতীয় বাহিনীর প্রশিক্ষণের সঙ্গে তিনি জড়িত।[৭] মেজর দীপক রাও তার এই কাজে তার সহকর্মী। মেজর, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে এই বিশেষ ধরনের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে, একজন পথপ্রদর্শক হিসাবে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি সম্মান পদক পেয়েছেন। [৮][৯]

সীমা রাও
সীমা রাও
কর্পস ব্যাটল স্কুলে সীমা রাও
জন্মমুম্বই
ওয়েবসাইটhttp://www.commandocombat.com

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

ভারতের এক স্বাধীনতা সংগ্রামী অধ্যাপক রমাকান্ত সিনারির সন্তান, সীমা, দেশের সেবা করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে বড় হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করে, তিনি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির একজন চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনায় (ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট) তার এমবিএ ডিগ্রিও আছে। তার স্বামী মেজর দীপক রাওকে সঙ্গে নিয়ে, তিনি আধুনিক মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য ১৫,০০০ সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। [১০][১১]


শ্রীমতি রাও ভারতীয় বিমান বাহিনীর শিক্ষণে স্কাই ডাইভিং করে তার প্যারা উইংসটি অর্জন করেন। তিনি, একাধারে যুদ্ধের সময় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার প্রশিক্ষক, আর্মি পর্বতারোহণ প্রশিক্ষালয় এইচএমআই এর পদকবিজেতা, এবং সামরিক মার্শাল আর্টে একজন ৭ম ডিগ্রি ব্ল্যাকবেল্টধারী। তিনি বিশ্বের মাত্র কয়েকজন প্রশিক্ষকদের মধ্যে একজন, যিনি জীত কুন ডো শেখানোর জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত।[১২] তিনি আবার মিসেস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্বের প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন। তিনি পেশাদারি সামরিক যুদ্ধের এক উদাহরণ। তার বংশের সূত্র পাওয়া যায় রিচার্ড বাস্টিলোর কাছে, যিনি জীত কুন ডো শেখার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি ব্রুস লি র আসল শিষ্য। [১৩]

তাকে বলা হয় ভারতের প্রথম মহিলা কমান্ডো প্রশিক্ষক, এবং তার মহিলাদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত কিছু নিবন্ধ রয়েছে যেগুলি তার ওপরেই লেখা।[১৪][১৫][১৬]

যুদ্ধ আধুনিকীকরণ বিষয়ক কাজ সম্পাদনা

যুদ্ধের সময় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে, রাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে, তিনি একটি নতুন নিক্ষেপ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যাকে বলা হয় প্রতিবর্তী ক্রিয়ায় গুলি নিক্ষেপের রাও পদ্ধতি (রাও সিস্টেম অফ রিফ্লেক্স ফায়ার),[১৭][১৮] — এটি খুব কাছ থেকে গুলি করার একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। এই পদ্ধতির পেটেন্ট (পিপি) নেওয়া হয়েছে এবং পরখ করে দেখা গেছে প্রচলিত গুলি নিক্ষেপ পদ্ধতির থেকে এটি ভাল পদ্ধতি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরে, এই পদ্ধতিটি যোগ্য সম্মান দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী কমান্ডের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে তিনি ও তার স্বামী দীপক রাও তিন জন সেনা কমান্ডারের উদ্ধৃতি লাভ করেছেন।

রাও দম্পতি, ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে, সিকিউবি বাহিনীর ১৫ হাজার সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিন সেনা প্রধানের উদ্ধৃতির প্রাপক হয়েছেন।[১৯]। তারা ভারতীয় আধা সামরিক বিশেষ বাহিনী, কমান্ডো উইং, সৈন্য যুদ্ধশিক্ষা কেন্দ্র, নৌবাহিনী মার্কোস সামুদ্রিক কমান্ডো বাহিনী, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) ব্ল্যাক ক্যাট, এয়ার ফোর্স গড়ুর, ইন্দো টিবেট বর্ডার ফোর্স (আইটিবিপি), আধাসামরিক, পুলিশ সহ প্রত্যেক অভিজাত ভারতীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা জাতীয় পুলিশ একাডেমি, সেনা কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ একাডেমী, ইত্যাদির জন্য অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। সিকিউবি এর প্রশিক্ষণকে পূর্ণসময়ের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তিনি ব্যক্তিগত জীবনকে একপাশে রেখে, দূরবর্তী স্থানগুলিতে সারা বছর ধরে কাজ করেন।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি সম্পাদনা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরম, শ্রীমতি রাও ও মেজর দীপক রাওকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্থান হিসাবে অনুমোদন করেছেন, কোন আর্থিক অনুদান ছাড়াই সব রাজ্যের পুলিশকে সিকিউবিতে প্রশিক্ষণ দিতে। ইতিমধ্যেই ১৬টি রাজ্য প্রশিক্ষণ পেয়ে গেছে। বিধান না থাকার কারণে শ্রীমতি রাও রাষ্ট্রপতি পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, কিন্তু অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে তিনি এটি মেনে নিয়েছেন। তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন — বিশ্ব শান্তি কংগ্রেস দিয়েছে বিশ্ব শান্তি পুরস্কার, ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অবদান রাখার জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাকে পুরস্কৃত করেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাসেবক সেবা পুরস্কার, তিন সেনা প্রধানের উদ্ধৃতি, নিকট যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ জাতীয় সেবার জন্য ২০০৯ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসাসূচক চিঠি, ভারত সরকারের থেকে ১০০০ অভিনন্দন। কিন্তু সোসাইটি, স্যাভি, ইন্ডিয়া টুডে, ফেমিনা, নিউ ওম্যান, জাতীয় সংবাদপত্র, দূরদর্শন[২০] ইত্যাদির মত বিখ্যাত মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ গুণসম্পন্ন মহিলা ঘোষিত হওয়া সত্তেও তিনি এখনো খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা থেকে দূরে থাকাই পছন্দ করেন এবং সামাজিক খ্যাতি এড়িয়ে চলেন[২১][২২][২৩][২৪]। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে, হিন্দুস্তান টাইমস[২৫] ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কিছু অর্জন করার জন্য তাকে নিয়ে লেখা প্রকাশ করেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া[২৬] টাইমস নিউজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সীমা ও কোমল রাও, এই মাতা-কন্যা জুটিকে নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

লেখক সম্পাদনা

শ্রীমতি রাও প্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ক্লোজ কমব্যাট অপস বিশ্বের প্রশিক্ষণ এর সহ লেখক, সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় বাহিনীর জন্য রচিত। এছাড়া তিনি বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের প্রথম ভারতীয় বই — এ কম্প্রিহেন্সিভ অ্যানালাইসিস অফ ওয়ার্ল্ড টেররিজম এবং কম্যান্ডো ম্যানুয়াল অফ আনআর্মড কমব্যাটএর ওপর প্রথম বই লেখেন। তার বই এফবিআই, ইন্টারপোল, জাতিসংঘ, এবং সোয়াট (SWAT) পুলিশের মত সংস্থার গ্রন্থাগারে জায়গা করে নিয়েছে। তিনি প্রচুর লেখেন এবং এখনো পর্যন্ত তার আটটি লেখা আছে। .

বইয়ের শিরোনাম আইএসবিএন
হ্যান্ডবুক অফ ওয়ার্ল্ড টেররিজম ৯৭৮-৯৩-৩১৩-১৭৭৯-৭
দ্য আর্ট অফ সাক্সেস ৯৭৮-৯৩-৩১৩-১৬৯৯-৮
মাইন্ড রেঞ্জ ৯৭৮-৮১-৯০৭৭৬৫-১-৬
টেররিজম: এ কম্প্রিহেন্সিভ অ্যানালাইসিস অফ ওয়ার্ল্ড টেররিজম ৮১-৭৬৪৮-৫২৭-৬
এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ক্লোজ কমব্যাট অপস. ৯৭৮-৮১-৯০৭৭৬৫-০-৯
কম্যান্ডো ম্যানুয়াল অফ আনআর্মড কমব্যাট ৯৭৮-৮১-৯০৭৭৬৫-৯-২
হোয়াট ইজ দিস থিং ইউ ডু? ইন ক্যান্টনিজ, জীত কুন ডো! ৯৭৮-৮১-৯০৭৭৬৫-৭-৮
কিং স্পার্ম ৯৭৮-৮১-৯০৭৭৬৫-২-৩

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "India's wonder woman"। Deccan Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  2. "India's Wonder Woman"। The Asian Age। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  3. "India's Wonder Woman Seema Rao: The only Female Combat Trainer in the Country"। Being Indian। ২০১৭-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৬ 
  4. "Interview with Dr. Seema Rao"। naaree.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-১১ 
  5. "Shy Another Day"। DNA। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  6. "Dr Seema Rao Commando Trainer"। indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  7. "Training the Indian Forces"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  8. "Indian Super Woman Dr. Seema Rao"। Deccan Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-২১ 
  9. }
  10. "India's only female commando trainer"। storypick। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-১১ 
  11. "COMBAT SPECIALIST SEEMA RAO"। Verve Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১২ 
  12. "Jeet Kune Do Instructor - Dr Seema Rao"। LokMarg। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৫ 
  13. "Dr Seema Rao - India's only commando trainer"। indiatimes। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-১১ 
  14. "India's 1st woman commando trainer's tips to prevent rape"। uni,webindia123.com। ২০১৮-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  15. "India's 1st woman commando trainer on women empowerment"। uni,webindia123.com। ২০১৮-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  16. "India's 1st woman commando trainer's film on empowerment to release soon"। indorecity.co। ২০১৪-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-০৮ 
  17. "Reflex Fire of ACCS"। usadojo.com। ২০০৮-১১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০ 
  18. "International Institute of Security & safety Management"। iissm.com। ২০০৯-০৮-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-৩০ 
  19. "Unstoppables Combat Couple"। indiatoday.intoday.in। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৪ 
  20. "Seema Rao Role Model"। Dainik Bhaskar। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫ 
  21. "Woman Of Substance"। defactoindia.com। ২০১৩-০১-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-১৫ 
  22. "Dr Seema Rao Doordarshan interview for News program Tejaswani"। DD News। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-২৮ 
  23. "India's Only Female Commando Trainer, Who's Also A Firefighter & A Filmmaker"। IndiaTimes। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৬ 
  24. "Meet Dr.Seema Rao"। SBS Australia। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৬ 
  25. "International Women's Day: Seema Rao, India's First Woman Commando Trainer"। hindustantimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৮ 
  26. "The Maa-Beti Wonder Women: Seema and Komal Rao"। timesofindia.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-০৮