সিমলাপাল মদনমোহন হাই স্কুল

সিমলাপাল মদনমোহন হাই স্কুল: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে অন্যতম সেরা স্কুল এটি। বাঁকুড়া জেলার সিমলাপালে অবস্থিত । এই স্কুল বাঁকুড়া শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে নয় নম্বর রাজ্য সড়কের পাশে অবস্থিত। এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী আছেন ৫৭ জন। ১৯৮৮ সালে এই স্কুলের পঞ্চাশ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান হয়। ২০১৩ সালে স্কুল ৭৫ বছরে পদার্পণ করে। মহা সমারোহে সেই সময় প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপিত হয়।

প্রতিষ্ঠা বর্ষ: ১৯৩৮

U DISE CODE: 19132004504

Email id: simlapalmmhs@gmail.com

Board's Index No: U1 080

Council code no: 14065

অবস্থান:২২°৫৫` উ:-৮৭°০৪`পূ:

মৌজা: সিমলাপাল, ব্লক: সিমলাপাল, থানা: সিমলাপাল, ডাকঘর: সিমলাপাল, চক্র: সিমলাপাল, জেলা: বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিন কোড:৭২২১৫১

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

সম্পাদনা

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার হয়। উচ্চ প্রাথমিক ও নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল এবং ১০১টি। এই স্কুলের তদারকির জন্য বাঁকুড়া জেলা বোর্ড ১১ জন পরিদর্শক পণ্ডিত নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুসলমান ও আদিবাসীদের জন্য আলাদা স্কুল ছিল।

সিমলাপালের আদি মিডল ইংলিশ স্কুল ছিল রাজবাড়ি সংলগ্ন দোলমঞ্চের উত্তরপূর্ব দিকে। এই এম ই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। স্কুলের নিজস্ব ছাত্রাবাস ছিল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন প্রফুল্লকুমার পাত্র। সেই সময় সিমলাপালের বুকে কোনো হাইস্কুল ছিল না। হাইস্কুল ছিল খাতড়া, হাড়মাসড়া, এবং বাঁকুড়ায়। অনেক দূরে স্কুল। পথ ছিল দুর্গম, অরণ্য আবৃত। তাই এই এলাকার মানুষকে হাইস্কুলে পড়ার মানসিকতাই ত্যাগ করতে হত।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা। মেদিনীপুর জেলার হুমগড় চাঁদাবিলা হাইস্কুলের শিক্ষকদের সাথে পরিচালন সমিতির মনোমালিন্য হয়। ওই স্কুলে তখনকার শিক্ষক আশুতোষ পাত্র, রাধাবল্লভ সিংহমহাপাত্র, বিশ্বেশ্বর ষন্নিগ্রহী গোপালচন্দ্র ষন্নিগ্রহী সিমলাপাল রাজবাড়িতে আসেন তাঁরা রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরীকে সিমলাপালে হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ দেন। শিক্ষা প্রসারের জন্য রাজা মদনমোহন সিমলাপালে হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন বলে স্থির করেন। হাই ইংলিশ স্কুলের নিজস্ব বাড়ি ছিল না। তাই ঠিক হল সিমলাপালের কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও গঙ্গাবিষ্ণু রায়ের বাড়ির ওপর তলায় ক্লাস হবে। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাই ইংলিশ স্কুলের সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী। উদ্বোধনের দিনে ছাত্র সংখ্যা ছিল এইরকম, সপ্তম শ্রেণিতে ১০জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৬জন, নবম শ্রেণিতে ২জন মোট ১৮ জন। অবশ্য কিছুদিন বাদে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে হল ১২০ জন। সেই সময় এম ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আশুতোষ পাত্র, সহ শিক্ষক ছিলেন বিশ্বেশ্বর ষন্নিগ্রহী, রাধাবল্লভ সিংহমহাপাত্র এবং রাখালচন্দ্র নায়ক। শিক্ষাকর্মী ছিলেন গোপালচন্দ্র ষন্নিগ্রহী ও তারাপদ নায়ক। ১৯৩৬ সালে প্রথম যে স্কুল পরিচালন কমিটি গঠিত হয় তার সদস্যরা ছিলেন, বাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী, গোকুলচন্দ্র সিংহবাবু, বলগোবিন্দ সিংহবাবু, নিত্যানন্দ সিংহমহাপাত্র এবং ভাগবৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সিমলাপাল হাই ইংলিশ স্কুল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। ১৯৪১ সালে প্রথম ছাত্রদল ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বসে। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুল। ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন পাশ করেন। প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন শ্যামাপদ সৎপথী এবং চণ্ডীচরণ রায়। দেবীপদ পাঠক, ভাস্করচন্দ্র সেন, জগদানন্দ দাস, নারায়ণচন্দ্র মাঝি প্রমুখ পাশ করেছিলেন দ্বিতীয় বিভাগে। পরে সিমলাপালের বনকুলে রাজাদের জায়গায় (৭.৩৫ একর) আট হাজার টাকা খরচ করে খড়ের চালযুক্ত মাটির লম্বা লম্বা ঘর তৈরি করা হয়। একদিকে স্কুল, অন্যদিকে বোর্ডিং হাউস। ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে স্কুল প্রথম গ্রান্ট ইন এড পায় ১২০ টাকা। ১৯৫৪ সালে রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী পরলোকগমন করেন। তখন শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী স্কুলের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। স্কুলের নাম হয় সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল। ১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানভবন, কলাভবন, নির্মাণ করা হয়। শিক্ষকগণের আবাস ও ছাত্রাবাস সেই সময়েই নির্মিত।

তখন জেনারেটারের সাহায্যে আলো জ্বালানো হত। ১৯৭৬ সালে এই স্কুল দ্বাদশ শ্রেণিযুক্ত স্কুল হিসেবে উন্নীত হয়।[১]

পরিচালন কমিটি

সম্পাদনা

প্রথম কমিটি (অ্যাড হক)

২০.০১.৩৮-০৬.০১.৫০

মহকুমা শাসক, বাঁকুড়া (সভাপতি)

গোকুলচন্দ্র সিংহবাবু (সহ-সভাপতি), রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী - সম্পাদক আশুতোষ পাত্র, জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার, যুগলকিশোর চ্যাটার্জী, নৃপেন্দ্রনাথ গোস্বামী - প্র.শি। বলগোবিন্দ সিংহবাবু, নিত্যানন্দ সিংহমহাপাত্র, ভাগবত বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ জয়দেব সরকার। বিশ্বেশ্বর যন্নিগ্রহী, গোলোকবিহারী সিংহমহাপাত্র - শিক্ষক

দ্বিতীয় কমিটি (নির্বাচিত)

০৭.০১.৫০-০৪.১১.৬২

মহকুমা শাসক, বাঁকুড়া (সভাপতি)

গোকুলচন্দ্র সিংহবাবু (সহ-সভাপতি)

রাজা মদনমোহন সিংহচৌধুরী সম্পাদক, অক্টোবর ১৯৫৪ পর্যন্ত। রাজা শ্যামসুন্দর সিংহ চৌধুরী, সম্পাদক, অক্টোবর,১৯৫৪ হতে। বিধুভূষণ সিংহবাবু, শশাঙ্কশেখর সিংহ বাবু, নিত্যানন্দ সিংহমহাপাত্র, গঙ্গাবিষ্ণু রায়, ডাঃ জয়দেব সরকার, হরসুন্দর সিংহহিকিম, গোলোকবিহারী সিংহমহাপাত্র, বিশ্বেশ্বর ষন্নিগ্রহী, নৃপেন্দ্রনাথ গোস্বামী, রবীন্দ্রচন্দ্র রায় (প্র.শি)।

তৃতীয় কমিটি (নির্বাচিত) -

৫.১১.৬২ - ৪.১১.৬৭

বি.ডি.ও. সিমলাপাল (সভাপতি)

গোকুল চন্দ্র সিংহবাবু (সহ-সভাপতি) শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী (সম্পাদক) হরসুন্দর সিংহহিকিম, শশাঙ্কশেখর সিংহবাবু, বিধুভূষণ সিংহ বাবু, ডাঃ জয়দেব সরকার, রবীন্দ্রচন্দ্র রায় (প্র.শি)। রঘুনন্দন সৎপথী, বনমালী সিংহমহাপাত্র।

৫.১১.৬৭-৬.৮.৭০ বি.ডি.ও সিমলাপাল প্রশাসক।[২]

শ্রেণি,বিভাগ ও শাখা সমূহ

সম্পাদনা
  • পঞ্চম
  • ষষ্ঠ
  • সপ্তম
  • অষ্টম
  • নবম
  • দশম
  • একাদশ শ্রেণি:
বিভাগ- কলা,বিজ্ঞান,বাণিজ্য।
  • দ্বাদশ শ্রেণি:

বিভাগ-কলা,বিজ্ঞান,বাণিজ্য।

  • বৃত্তিমূলক শাখা


গবেষণাগার

সম্পাদনা

ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কলমে শিক্ষার জন্য এই বিদ্যালয়ে উপযুক্ত গবেষণাগার আছে। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং ভূগোল বিষয়ে গবেষণাগার এই বিদ্যালয়ে আছে। উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি এবং উপযুক্ত নমুনা ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীরা উপযুক্ত শিক্ষা পায়।

স্কুলের সাফল্য

সম্পাদনা
জেলা ও রাজ্যস্তরে সাফল্য

উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম দশ জনে

২০১২- সুমন সিংমহাপাত্র (রাজ্যে নবম) (৪৬৮/৫০০)

২০১৩- রামানুজ সিংহমহাপাত্র (রাজ্যে প্রথম) (৪৭৭/৫০০)

২০১৪- সৌরভ ঘোষ (রাজ্যে অষ্টম) (৪৬৯/৫০০)

২০০৯-এ এর জেলা ফুটবল চ্যাম্পিয়ন (সিনিয়র টিম)।

২০০৯-এ যুব সংসদ ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় জেলা স্তরে প্রথম হয়ে রাজ্য স্তরে অংশগ্রহণ- সন্দীপন সিংহমহাপাত্র ও শিবরাম যন্নিগ্রহী।

২০১১ যুব সংসদ ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় রাজ্যে প্রথম- সুমন সিংহমহাপাত্র ও পূর্ণেন্দু পাঠক।

ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় ২০১১ সালে রাজ্যে প্রথম: সুমন সিংহমহাপাত্র।

২০১১-এ বাঁকুড়া জেলা ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় জেলায় প্রথম- পূর্ণেন্দু পাঠক ও দেবার্ঘ্য পাল।

২০১৪ ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগের ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় জেলায় প্রথম- সোহম দে, প্রসুন পতি ও সুমন সিংহবাবু।

রাজ্যস্তরে সফল হয়ে জাতীয় স্তরে অংশগ্রহণ-

দৌড়- ফাল্গুনী মণ্ডল, হাইজাম্প- রূপবান খাঁন।

২০১৫- ক্যুইজ (ক্রেতা সুরক্ষা বিভাগে রাজ্যে তৃতীয়)- সোহম দে ও প্রসূন পতি। ক্যুইজ যুব সংসদে বর্ধমান বিভাগে প্রথম- বিশ্বরূপ পাত্র ও জ্যোতির্ময় পতি।

২০১৭- ক্যুইজ- জাতীয় ভোটার দিবস- জেলায় প্রথম (সর্বোচ্চ) অর্পণ সিংহমহাপাত্র (দ্বাদশ, বিজ্ঞান) ও শীর্ষেন্দু পাঠক (দশম শ্রেণি)।

১৫০০ মি. রানে জেলায় প্রথম- কিঙ্কর দুলে।

ক্যুইজ- যুব সংসদ বিভাগে জেলায় তৃতীয়- প্রসূন পতি ও সায়ন সিংহবাবু (একাদশ শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ - ২০১৭)

বিজ্ঞানের মডেল নির্মাণ:জেলায় তৃতীয়: সৈকত সিংহমহাপাত্র, ঋতম লাহা, প্রকাশ পতি (অষ্টম শ্রেণি- ২০১৭)।

ড.বি. আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার (২০১৭): অরিত্র মণ্ডল

২০১৮- রাজ্য উ.মা. দশম: তন্ময় পতি (৪৮১/৫০০) রাজ্যে মাধ্যমিক অষ্টম- রূপ সিংহবাবু (৬৮২/৭০০)।[৩]

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

সম্পাদনা

সাধারণ পঠন-পাঠনের পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ে সারা বছর ধরেই বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে। এতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রী সকলেই অংশ নেন। নেতাজির জন্ম দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্র জয়ন্তী, শহীদ দিবস, শিক্ষক দিবস সাড়ম্বরে পালিত হয়। স্কুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সরস্বতী পূজা। মহা সমারোহে এই পূজার সাথে সাথে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদি পরিবেশিত হয়।

তথ্য সূত্র

সম্পাদনা
  1. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি=সিমলাপাল বইমেলা স্মারক গ্রন্থ
  2. টেমপ্লেট:বই উদ্ধৃতি=সিমলাপাল মদন মোহন হাই স্কুল পত্রিকা
  3. পরিচালক কমিটি (২০১৮)। Prospectus। Simlapal Madan Mohan High School। পৃষ্ঠা ১০।