ধস-গহ্বর

ভূগর্ভের কোনও স্তর ধসে যাবার কারণে ভূ-পৃষ্ঠতলে সৃষ্ট অবনমন বা গহ্বর
(সিঙ্কহোল থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ধস-গহ্বর বা সিঙ্কহোল হল কোনও কারণে ভূগর্ভের কোনও স্তর ধসে যাবার কারণে ভূ-পৃষ্ঠতলে সৃষ্ট অবনমন বা গহ্বর (গর্ত)। খোলা জায়গায় যেখানে পৃষ্ঠের জল/মাটি ভূগর্ভস্থ স্তরে প্রবেশ করে যা পোনার, সোয়ালো হোল বা সোয়ালেট নামেও পরিচিত।[১][২][৩][৪]

লাল হ্রদ ধস-গহ্বর বা সিঙ্কহোল,ক্রোয়েশিয়া

কারণ সম্পাদনা

প্রাকৃতিক কারণ সম্পাদনা

ধস-গহ্বর বা সিঙ্কহোলগুলি চলমান বা স্থায়ী জল থেকে পৃষ্ঠের নিষ্কাশনকে ধরে রাখতে পারে, তবে নির্দিষ্ট স্থানে উচ্চ এবং শুষ্ক স্থানেও তৈরি হতে পারে। ভূপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে পানির প্রবাহ (যেখান থেকে আমার গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে পানি উঠাতে পারি)। মাটির একদম নিচের স্তর বা ভূগর্ভস্থ পানির উপরিভাগে রয়েছে অনেক পাথর যাদের বলা হয় কার্বনেট বেরক বা বেডরক[৫] বছরের পর বছর বিভিন্ন জায়গায় মাটির নিচে পানি প্রবাহ চলমান থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে ছোট পাথরগুলি সরে যেতে শুরু করে। পীঠশিলাগুলি (বেডরক) সরে যেতে যেতে মাটির তলদেশে এক সময় বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়।[৬] বহু বছর ধরে তৈরি হওয়া গর্ত যখন বড় হতে থাকে তখন তার চারপাশের মাটি এবং পাথর সেই গর্তে নিমজ্জিত হতে শুরু করে। ফলস্বরূপ একসময় ভূগর্ভস্থ সেই গর্তের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। উপরিভাগের জমি যখন আর সেই চাপ সহ্য করতে পারে না তখনই হঠাৎ মাটির উপরিভাগের বিশাল এলাকা সাথে নিয়ে সেটি মাটির তলদেশে বিলীন হয়ে যায়। এইভাবেই সৃষ্টি হয় দানব আকৃতির বড় বড় সব সিঙ্কহোল। একটি সিঙ্কহোল আয়তনের দিক থেকে ১ ফিট থেকে ১০০ একরের বেশি পর্যন্ত এবং উচ্চতায় দিক থেকে ১০০ ফিট পর্যন্ত হতে পারে। [৭]

মানবসৃষ্ট কারণ সম্পাদনা

বর্তমান সময়ে মানবসৃষ্ট ধস-গহ্বর বা সিঙ্কহোলের সংখ্যাও কম নয়। ২০১৬ সালে জাপানের টোকিও নগরীতে সৃষ্ট হওয়া ধস-গহ্বরটি ছিল একটি মানবসৃষ্ট ধস-গহ্বর।[৮] তবে জাপানিরা এক সপ্তাহের মধ্যে সেই রাস্তা ঠিক করে ফেলে। মানবসৃষ্ট ধস-গহ্বরগুলি মূলত ঘনবসতির কারণে তৈরি হয়।[৯] জায়গা বাঁচানোর জন্যে মাটির নিচ দিয়ে যখন পানির নল নেওয়া হয়, তখন মাঝেমধ্যেই এসব নলে দুর্ঘটনাবশত ছিদ্র হয়ে যায়। এর ফলে সেখান থেকে ধীরে ধীরে পানি নিঃসৃত হয়ে ভূগর্ভে গর্তের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ভূপৃষ্ঠের বৃষ্টির পানি সেখানে জমা হয় এবং গর্তের আয়তন আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ভূপৃষ্ঠকে ঠেকা বা অবলম্বন দিতে না পেরে মাটি ধসে ধস-গহ্বরের সৃষ্টি হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Williams, Paul (২০০৪)। "Dolines"। Gunn, John। Encyclopedia of Caves and Karst Science (ইংরেজি ভাষায়)। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 628–642। আইএসবিএন 978-1-57958-399-6 
  2. Kohl, Martin (২০০১)। "Subsidence and sinkholes in East Tennessee. A field guide to holes in the ground" (পিডিএফ)। State of Tennessee। ১৪ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  3. Thomas, David; Goudie, Andrew, সম্পাদকগণ (২০০৯)। The Dictionary of Physical Geography (3rd সংস্করণ)। Chichester: John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 440। আইএসবিএন 978-1444313161 
  4. Monroe, Watson Hiner (১৯৭০)। "A glossary of Karst terminology"। U.S. Geological Survey Water Supply Paper। 1899-K। ডিওআই:10.3133/wsp1899k  
  5. "Sinkholes in Washington County - Utah Geological Survey"web.archive.org। ২০১১-০৩-২৩। ২০১১-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৭ 
  6. Friend, Sandra (২০০২)। Sinkholes। Internet Archive। Sarasota, Fla. : Pineapple Press। আইএসবিএন 978-1-56164-258-8 
  7. "Sinkholes | U.S. Geological Survey"www.usgs.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৭ 
  8. Plaugic, Lizzie (২০১৬-১১-১৫)। "A 98-foot-wide sinkhole in Japan was repaired in one week"The Verge (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৭ 
  9. Epstein, Lloyd Lee, Jake। "Sinkholes around the world, manmade and natural, show what happens when earth opens up"Insider (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৭