সিংজু (ইংরেজি: Singju) ভারতের মণিপুর রাজ্যে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার। মূলত মৈতৈ সংস্কৃতি থেকে এর উৎপত্তি হয়েছিল, তবে বর্তমানে মণিপুরের বেশিরভাগ সম্প্রদায় ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যে এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে যা প্রায়ই মসলাযুক্ত গৌণ খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এটি দ্বিপ্রহরের বা সন্ধ্যার জলপান হিসেবেও জনপ্রিয়।[১]

সিংজু
ইয়ংচাক সিংজু
উৎপত্তিস্থলভারত
অঞ্চল বা রাজ্যমণিপুর
ভিন্নতামৌসুমি শাকসবজি

এর মুখ্য উপাদান হচ্ছে মরসুমি শাকসবজি। স্থানভেদে সিংজুর কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। অবশ্য নগারি-জাত ও থইডিং-বেচন-জাত নামে এর দুটো মুখ্য প্রকারভেদ রয়েছে। নগারি হল এক প্রকারের গাঁজানো মাছ ও এটির গন্ধ মণিপুরী রন্ধনশৈলীর মেরুদণ্ডস্বরূপ। ভাজা নগারি-জাত সিংজু অধিক জনপ্রিয়। অবশ্য সাধারণত স্থানীয় সিংজু বিক্রেতারা নাগারির উচ্চ ব্যয়ের জন্য এটি বিক্রি করে না।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
মুখ্য উপাদান হিসেবে পদ্মের মূলযুক্ত নিরামিষ সিংজু

১৯৪৯ সালে ভারতের অংশ হওয়ার পূর্বে মণিপুর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল যেখানে বহু স্বকীয় স্থানীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের প্রচলন ছিল। এর ফলে মণিপুরের সংস্কৃতিতে বিভিন্ন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। "সিংজু" শব্দটি "মনা-মাসিং" ও "সুবা" শব্দ দুটোর সমষ্টি। "মনা-মাসিং" অর্থ হচ্ছে মরসুমি শাকসবজি ও "সুবা" অর্থ হচ্ছে একত্রিত করা। পরবর্তীকালে দ্রুত উচ্চারণের জন্য "মনা-মাসিং" শব্দটি কেবল "সিং" হয়ে যায় ও "সুবা" শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে "জু"- তে রূপান্তরিত হয়। ফলস্বরূপ "সিংজু" শব্দটির জন্ম হয়েছিল।[৩]

এটি একটি বহুমুখী খাবার যা নিরামিষ ও আমিষ দুইভাবেই তৈরি করা যায়। সিংজু প্ৰস্তুত করার দুটি পৃথক উপায় আছে।[৪][৫]

সিংজুর সাধারণ উপাদানসমূহ সম্পাদনা

 
মুখ্য উপাদান হিসেবে পদ্মের মূলযুক্ত আমিষ সিংজু

সিংজু তৈরিতে যে কোনও সবজি ব্যবহার করা যেতে পারে তবে কিছু কিছু সবজি অন্যগুলোর চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। জনপ্রিয় সবজির মধ্যে রয়েছে:

  • পদ্মের মূল (থামবৌ)
  • মণিপুরী শিম (ইয়ংচাক)
  • বাঁধাকপি (কবিফুল)
  • ফুলকপি (কোবি-লাই)
  • হাওয়াই দেবি বা তেবি
  • হাওয়াই মাটন
  • কাঁচা পেঁপে (আওয়া থাবি)
  • কলার ফুল(লাপু থারু)
  • বরবটি (চখাওয়াই)
  • পেঁয়াজ (টিলহৌ)[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা