সর্বোচ্চ মুসলিম পরিষদ

ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন মুসলিম সম্প্রদায় বিষয়ক সর্বোচ্চ সংস্থা

সুপ্রীম মুসলিম কাউন্সিল (SMC- Supreme Muslim Council; আরবি: المجلس الإسلامي الاعلى) ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন মুসলিম সম্প্রদায় বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ সংস্থা। এটি মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা সংস্থা তৈরি করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুসলিম নেতারা, (বিশেষ করে ধর্মীয় ট্রাস্ট (ওয়াকফ) এবং শরিয়াহ আদালত) ব্রিটিশদের নিকট তাদের সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় সংক্রান্ত তত্ত্বাবধানের জন্য একটি স্বাধীন কাউন্সিল তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। ব্রিটিশরা এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয় এবং এসএমসি (SMC) গঠন করে যা ওয়াকফ তহবিল, এতিম তহবিল ও শরীয়াহ আদালত নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিক্ষক ও প্রচারক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এসএমসি ১৯৫১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত কার্যকর ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি জর্ডান দ্বারা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং এর কার্যকারিতা জর্ডানের আওকাফ মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়।

সর্বোচ্চ মুসলিম পরিষদ
Supreme Muslim Council
المجلس الإسلامي الاعلى
সংক্ষেপেএসএমসি (SMC)
প্রতিষ্ঠাস্থানফিলিস্তিন
বিলীন হয়েছেজানুয়ারি, ১৯৫১
সদরদপ্তরকর্তৃত্বপ্রাপ্ত শক্তির অধীন ফিলিস্তিন

ইসরায়েলের স্বীকারোক্তিমূলক সম্প্রদায় ব্যবস্থার অধীনে ইসরায়েলের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে ১৯৬৭ সালে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে একটি এসএমসি (SMC) পুনর্গঠন করা হয়।[১]

বেশ কয়েকটি সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল রয়েছে যা বিভিন্ন দেশে মুসলিম বিষয়গোলি পরিচালনা করেযেমনূপ রাশিয়ান ফেডারেশন[২] এবং কেনিয়াত।ে[৩]

ব্রিটিশ ফিলিস্তিন আমল সম্পাদনা

ফিলিস্তিনের হাই কমিশনার হার্বার্ট স্যামুয়েল ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনের আদালত একটি আদেশ জারি করেন এবং সমস্ত মুসলিম ওয়াকফ ও শরিয়ার উপর ভিত্তি করে একটি সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে। এটি পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় যার মধ্যে একজন সভাপতি এবং চারজন সদস্য ছিল। সদস্যদের মধ্যে দুজন জেরুজালেমের অটোমান জেলার প্রতিনিধিত্ব করত এবং বাকি দুইজন নাবলুস ও একরের অটোমান জেলাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করত। সব সরকারি ও ওয়াকফ তহবিল থেকে এর বাজেট পরিশোধ করা হতো। এসএমসি (SMC) এর প্রথম বাজেট ছিল £৫০,০০০।

সর্বশেষ অটোমান পার্লামেন্টের ৫৩ জন প্রাক্তন নির্বাচক, ৯ জানুয়ারী ১৯২২-এ অনুষ্ঠিত সংগঠনটির প্রথম নির্বাচনে, ৪৭ টির মধ্যে ৪০ ভোটে হজ আমিন আল-হুসেইনি কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। অন্য সদস্যদের মধ্যে মুহাম্মদ ইফেন্দি মুরাদ,  আবদ আল-লতিফ বে সালাহ, সাঈদ আল-শাওয়া এবং আব্দ আল-লতিফ আল-দাজানি ছিলেন। আমিন আল-হুসাইনি এর সৎ ভাই কামিল আল-হুসাইনির মৃত্যুর পর স্যামুয়েল ৩১ মার্চ ১৯২১-এ তাকে জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করেছিল। আমিন আল-হুসাইনি যখন বিদেশে ছিল তখন আমিন আল-তামিমিকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয় এবং নিযুক্ত সচিবরা হলেন আব্দুল্লাহ শফিক এবং মুহাম্মদ আল'আফফি। ১৯২৮-১৯৩০ সাল পর্যন্ত সচিব ছিলেন আমিনের আত্মীয় জামাল আল-হুসাইনি, সা'দ আল-দীন আল-খাতিব এবং পরবর্তীতে আমিন আল-হুসাইনির আত্মীয় আলী-হাইনি আল-হাইনি, আজাজ নাওহিদ সচিব ছিল।

 
আমিন আল-হুসাইনিকে সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল থেকে বরখাস্ত করে আরব উচ্চ কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়

১৯২৪ সালে, এসএমসি আল আকসা মসজিদের রক্ষক হিসাবে মক্কার শরীফ হুসেইন বিন আলীকে গ্রহণ করে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক হাশেমাইট এর উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠে যা পরপর জর্ডানের রাজাদের দ্বারা পরিচালিত হত।[৪] ফিলিস্তিন জুড়ে সমস্ত মুসলিম কর্মকর্তাদের উপর SMC-এর সভাপতির নিয়োগের ক্ষমতা ছিল।[৫] অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি একে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মেশিন বলে অভিহিত করে।[৬] আমিন খুব কমই কর্তৃত্ব অর্পণ করত এবং SMC-এর বেশিরভাগ নির্বাহী কাজ আমিন আল-হুসাইনি দ্বারা সম্পাদিত হত।[৬] স্বজনপ্রীতি এবং পক্ষপাতিত্ব এসএমসির সভাপতি হিসেবে আমিন আল-হুসাইনির মেয়াদে একটি প্রধান মাধ্যমে হিসেবে কাজ করেছিল।

পরবর্তী নির্বাচনগুলো ১৯২৬, ১৯২৯ এবং ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত হয়, যদিও ১৯২৬ সালের নির্বাচন হাইকোর্ট অফ জাস্টিস এবং বাধ্যতামূলক সরকার দ্বারা নির্বাচিত সদস্যরা বাতিল করে।

১৯৩৬-৩৯ সালের আরব বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ২৫ এপ্রিল ১৯৩৬ সালে আরব উচ্চ কমিটি (Arab High Commission-AHC) প্রতিষ্ঠিত হয়। আমিন আল-হুসাইনি এর রাষ্ট্রপতি হয় এবং জামাল আল-হুসাইনি ও ইয়াকুব আল-গুসাইন সহ সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিলের বেশ কয়েকজন সদস্যকে তিনি কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর আল-কাসাম গ্রুপের গ্যালিলিয়ান সদস্যদের দ্বারা গ্যালিলির ভারপ্রাপ্ত জেলা কমিশনার লুইস ইয়েল্যান্ড অ্যান্ড্রুজকে হত্যার পর ১ অক্টোবর ১৯৩৭-এ এএইচসিকে বেআইনি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশরা AHC-এর সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে, যার মধ্যে SMC-এর সদস্যরা যারা AHC-তে ছিলেন তার মধ্যে আমিন আল-হুসাইনি গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে আমিন আল-হুসাইনির পদ বাতিল করা হয়। এই ঘটনার পরও SMC কাজ করতে থাকে, কিন্তু এর কর্তৃত্ব এবং কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়। ওয়াকফ ও শরিয়া আদালত ব্যবস্থার সরকারি তত্ত্বাবধান চালু করা হয় এবং হাইকমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষে সমস্ত ধর্মীয় পদে নিয়োগ করার আইন করা হয়।[৭]

পোস্ট-ম্যানডেট সময়কাল সম্পাদনা

এসএমসি বৃটিশদের অধীনে বিদ্যমান ছিল কিন্তু ১৯৪৮ সালে জর্ডান জেরুজালেম দখল করার পর এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৫১ সালের জানুয়ারিতে জর্ডান কর্তৃক সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল ভেঙে দেওয়া হয় এবং সমস্ত ফিলিস্তিনি ওয়াকফ (দাতব্য প্রতিষ্ঠান) ও বিচার ব্যবস্থা জর্ডানের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এসএমসি ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পরিণত হওয়া এলাকায় বিশাল সম্পত্তির ক্ষতির কারণে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল।[৮]

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর জেরুজালেমে ইসরায়েলি শাসনের অধীনে সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল পুনর্গঠিত হয়। এটি ইসরায়েলের স্বীকারোক্তিমূলক সম্প্রদায় ব্যবস্থার অধীনে তার সদস্যদের ব্যক্তিগত অবস্থার বিষয়ে ইসরায়েলের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিচারিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে।

হাসান তাহবুব SMC-এর প্রধান (১৯৯৩-৯৮) এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (১৯৯৪-৯৮) এর ওয়াকফ ও ধর্মীয় বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।[৯] ২০০৬ সালে, নায়েফ রাজউব ফিলিস্তিনি মন্ত্রী হিসেবে ওয়াকফের দায়িত্বে ছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Israel and the Palestinians: Key terms, BBC
  2. "RUSSIA – ISLAM Supreme Muslim Council of Russia to stop extremism"। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২২ 
  3. "Kenya's Supreme Muslim Council 'bans' DStv in North Eastern"। ৩ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২২ 
  4. "Amid Temple Mount tumult, the who, what and why of its Waqf rulers"Dov Lieber। The Times of Israel। ২০ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ 
  5. UN Doc ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
  6. Kupferschmidt, Uri M. (1987) pp 66-67
  7. Islam Under the Palestine Mandate : Colonialism and the Supreme Muslim Council Nicholas E. Roberts
  8. Journal of Middle East Policy Council: Volume VII, June 2000, Number 3 - Islamic Politics in Palestine, by Beverly Milton-Edwards. London: I.B. Tauris, 1999 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ জুন ২০০৬ তারিখে
  9. "pmo.gov.ps"। ৪ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • "সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল: ইসলাম আন্ডার দ্য ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ফর প্যালেস্টাইন" উরি এম কুপফারসমিড, ব্রিল একাডেমিক পাবলিশার্স, আইএসবিএন ৯০-০৪-০৭৯২৯-৭.
  • মার্ক টেসলারের লেখা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাস[১]