শ্বেতাম্বর

জৈন ধর্মের দুটি প্রধান ধারার একটি

শ্বেতাম্বর (/ʃwɛˈtʌmbərə/ ; সংস্কৃত: श्वेतांबर বা श्वेतपट) জৈনধর্মের দুটি প্রধান শাখার অন্যতম, অন্যটি হচ্ছে দিগম্বর। শ্বেতাম্বর "সাদা পরিহিত" শব্দটি সাদা কাপড় পড়তে অভ্যস্ত সন্ন্যাসীদের বর্ণনা করে, যা তাদেরকে দিগম্বর "আকাশ পরিহিত" জৈনদের থেকে ভিন্ন করে, যে সন্ন্যাসীরা নগ্ন থাকে। দিগম্বরদের বিপরীতে শ্বেতাম্বররা সন্ন্যাসী বা মুনিদের জন্য নগ্নতা চর্চা অত্যাবশ্যক মনে করেন না। [১] শ্বেতাম্বরগণএও বিশ্বাস করে যে নারীরা মোক্ষ অর্জন করতে সক্ষম। শ্বেতাম্বররা মনে করেন যে ১৯ তম তীর্থংকর, মালিনাথ, একজন নারী ছিলেন।

ইতিহাস সম্পাদনা

শ্বেতাম্বর প্রথা স্থুলভদ্রর পরম্পরা অনুসরণ করে।কাল্প সূত্রে প্রাচীন কালের কয়েকটি পরম্পরার উল্লেখ রয়েছে। শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় মূলত ৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ সম্প্রদায়ের শাখা। চিরাচরিত সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আজকের দিনে সর্বাধিক বিখ্যাত হচ্ছে খরতর (১০২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত), তপ গচ্ছ (১২২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) এবং ত্রিস্তুতিক গচ্ছ।

১৪৭৬ সালে লৌঙ্কাশাহের দ্বারা একটি বড় রকমের বিতর্ক শুরু হয়। লৌঙ্কাশাহ শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায়ের ভেতর মূর্তিপূজা বিরোধী আন্দোলনের গোড়া পত্তন করেন। স্থানকবাসীতেরাপন্থী সম্প্রদায় এই আন্দোলনের শাখা।১৮৮০ সালে তপ সম্প্রদায়ের বিজয়ানন্দ সুরির সংস্কার ভিক্ষু গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সূচনা করে, যা যতি সংঘগুলির অদূরবর্তী বিলুপ্তির সূচনা করে। রাজেন্দ্রসুরি ত্রিস্তুতিক গচ্ছর শ্রমণ সংঘ পুন:প্রতিষ্ঠা করেন।কিছু শ্বেতাম্বর সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী তাদের মুখ সাদা কাপড় বা মুহপট্টি দিয়ে ঢেকে রাখে যাতে তারা কথা বলার সময়ও অহিংসা চর্চা করতে পারে। এভাবে তারা শ্বসনের কারণে ক্ষুদ্র জীবের হত্যার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

উপসম্প্রদায় সম্পাদনা

 
প্রিন্স অফ ওয়েলস যাদুঘর, মুম্বাইতে তীর্থ পট প্রদর্শন

শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। ১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কিছু সন্ত শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় ত্যাগ করে লোনকা সম্প্রদায় গড়ে তোলে, যা অবশেষে ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে স্থানকবাসী সম্প্রদায়ের রুপ লাভ করে। ১৭৬০ সালে ১৩ জন সন্ন্যাসী তাদের নিজস্ব পন্থা শুরু করেন যা তেরাপন্থ নামে পরিচিত।[২]

বর্তমানে শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ে তিনটি উপদল রয়েছে: মূর্তিপুজক (ডেরাবাসী), স্থানকবাসী ও তেরাপন্থ। স্থানকবাসী মন্দিরের মূর্তির পরিবর্তে সাধুর কাছে প্রার্থনায় বিশ্বাস রাখে, তেরাপন্থও একই দর্শন ধারণ করে। ডেরাবাসী জৈন ও স্থানকবাসী জৈনদের মধ্যে অন্য পার্থক্য হল, ডেরাবাসী সন্ন্যাসীরা তাদের মুখে মুহপট্টি পরে না, তারা এটা হাতে রাখে। স্থানকবাসীতেরাপন্থী সন্ন্যাসীরা মুহপট্টি পরেন, যা সাদা সুতা দ্বারা কানে বাঁধা হয়। তারা তাদের জৈন মন্দিরে মূর্তি রাখে না কিন্তু পঞ্চ মহামন্তরের প্রার্থনা এবং কুর্ণিশ করে। মূর্তিপুজকগণ তাদের মন্দিরে তীর্থঙ্করদের মূর্তি রাখে এবং পূজাও করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dundas 2002, পৃ. 45।
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৯