শিল্প বিপ্লবের সময় পোশাক উৎপাদন

শিল্পবিপ্লবকালীন ব্রিটেনে মূলত দক্ষিণ ল্যাঙ্কাশায়ার এবং পেন নদীর দুই তীরবর্তী শহরেই বস্ত্র উৎপাদনের কাজ সীমাবদ্ধ ছিল।আবার জার্মানিতে শিল্পবিপ্লবের সময় উপর উপত্যকা ,রূঢ় অঞ্চলেই এবং উত্তর সাইলেশিয়ায় বস্ত্র উৎপাদনের কেন্দ্রগুলো গড়ে উঠেছিল।আমেরিকার ক্ষেত্রে নিউ ইংল্যান্ড ছিল বস্ত্র উৎপাদনের ভরকেন্দ্র।বস্ত্র উৎপাদন, লৌহ উৎপাদন, বাষ্পীয় শক্তি এবং সস্তা শ্রমশক্তি-এই চারটিই ছিল শিল্প বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি। অষ্টাদশ শতকের পূর্বে বুননকার্য ও বস্ত্র উৎপাদনে যুক্ত মানুষজন নিজেদের বাড়িতেই বস্ত্র তৈরী করতো। সেই বস্ত্র ঘোড়ায় টানা পণ্যবাহী ছোট ছোট শকটে ,কখনোবা নদী পথে আবার কখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা খালপথে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যেই চাহিদানুসারে বিক্রি করা হতো।অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে এই কাজে যুক্ত কারিগরেরা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করা শুরু করেন।রেশম, পশম বা ফুস্তিয়ান কাপড়ের চাহিদা কমে আসে সুতির কাপড়ের তুলনায়।এই শতকে তুঙ্গে ওঠে সুতিবস্ত্রের জনপ্রিয়তা। শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতমানের ঢালাই লোহার প্রচলন বৃদ্ধি পাবার ফলে কাস্টিং এবং স্পিনিং মেশিনের মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত হয় যা বস্ত্রশিল্পকে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করে। এই পথ ধরেই বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সোপান সংযোজিত হয় স্পিনিং মিউল এবং ওয়াটার ফ্রেমের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।এইসময় যন্ত্রগুলি মূলত চালিত হতো বাষ্পীয় শক্তি পরিচালিত কারখানায়। কিন্তু চাহিদানুসারে এর কিছুদিনের মধ্যেই আরো উন্নতমানের অধিক শক্তিশালী চালিকাশক্তির প্রয়োজন হওয়াতে বাজারে এলো বাস্পীয়শক্তিচালিত স্টিম ইঞ্জিন এবং রোটেটিভ মিল ইঞ্জিন যার মাধ্যমে কর্মশালার প্রতি অংশে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট পাইপলাইনে পৌঁছে যেত প্রয়োজনীয় শক্তি। অতিরিক্ত শক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হলো আরো উন্নতমানের যন্ত্রচালিত তাঁত।শিল্প নগরী ম্যানচেস্টার এবং তত-সংলগ্ন শহরতলিতে অন্যান্য শিল্পের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল সুতি বস্ত্র-বাণিজ্যের বহর। পূর্বাপেক্ষা আরো বড় পরিসরে বস্ত্র উৎপাদন ও গুদামজাতকরনের জন্য প্রথাগত শৈলী ছেড়ে বাণিজ্যিক ধাঁচে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছিলো।ইয়র্কশায়ারের ওয়েস্টরিডিং অঞ্চলে পশমজাত বস্ত্রের উৎপাদনেও শুরু হয় প্রযুক্তির ব্যবহার।

শিল্পবিপ্লবের উপাদান সম্পাদনা

সুতিবস্ত্র উৎপাদন পদ্ধতি সম্পাদনা

শিল্প এবং শিল্পোদ্ভাবন সম্পাদনা

প্রাথমিক পর্বের আবিষ্কারসমূহ সম্পাদনা

ব্রিটেন সম্পাদনা

আবিষ্কারসমূহের সময়কাল সম্পাদনা

শিল্পবিপ্লবের সূচনা সম্পাদনা

শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ের উদ্ভাবনসমূহ সম্পাদনা

রবার্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত যন্ত্রচালিত তাঁত সম্পাদনা

রবার্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত স্বয়ংক্রিয় তাঁত সম্পাদনা

কর্ম সংস্কৃতি সম্পাদনা

একটি মধ্য শতকীয় সুতাকলে দাবি দাওয়া সংক্রান্ত গণ প্রতিবেদন ,১৭৭১ সম্পাদনা

একটি মধ্য শতকীয় সুতাকলে দাবি দাওয়া সংক্রান্ত গণ প্রতিবেদন ,১৮৪০ সম্পাদনা

প্রযুক্তি-ভাবনার রপ্তানীকরণ সম্পাদনা

শিল্প এবং সাহিত্য সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

শিল্পবিপ্লবের উপাদান সংযোজন

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে বেশ কিছু নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হয় যার সঙ্গে শিল্পবিপ্লবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

বয়নশিল্প- ১৭৩৩ সালে জন কে আবিষ্কৃত ফ্লাইয়িং শাটলের ব্যবহার বয়নশিল্পে অভাবনীয় গতি সঞ্চার করে। এই যন্ত্রের সাহায্যে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি পরিমান কাপড় বোনা সম্ভব হয় এবং বয়নশিল্প ক্রমশ শ্রমনির্ভরতা ত্যাগ করে যন্ত্রনির্ভর হয়ে ওঠে।সুতো কাঁটার ক্ষেত্রে রিচার্ড আর্করাইটের ওয়াটার ফ্রেমের ব্যবহার ,জেমস হারগ্রিভসের স্পিনিং জেনির ব্যবহার এবং এই দুই যন্ত্রের সমন্বয়ে তৈরী স্যামুয়েল ক্রম্পটনের স্পিনিং মিউলের ব্যবহার বয়নশিল্পে নতুন ভাবে প্রাণসঞ্চার করে। ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে স্পিনিং মিউলের আবিষ্কার হলেও সুতাকলগুলিতে এটির বহুল ভাবে ব্যবহার শুরু হয় ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে।লিনেন বস্ত্র উৎপাদনক্ষেত্রেও সুতো কাঁটার প্রয়োজনে সুতাকলগুলিতে এই ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্রমেই বাড়তে থাকে। বাষ্পীয় শক্তি-জেমস ওয়াট আরো উন্নতমানের স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন যেটি ১৭৭৫ সালে তার উদ্ভাবন হিসেবে বাজারে আসে।প্রাথমিক ভাবে এটি মূলত খনিজপদার্থ নির্গমনের কাজেই ব্যবহার হতো। কিন্তু ১৭৮০ সাল থেকে এটি পাওয়ার মেশিন চালানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে থাকে। এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষত যে অঞ্চলে জলবিদ্যুত্শক্তির অভাব ছিল সেইরকম স্থানে অর্ধ-স্বয়ংক্রিয় কারখানার পূর্বাপেক্ষা দ্রুত গতিতে উন্নতির পথ প্রশস্ত করে। লৌহ-শিল্প- লৌহোৎপাদনের ক্ষেত্রে লোহা গলানোর প্রয়োজনে কাঠ-কয়লার বদলে কোক-কয়লার ব্যবহার শুরু হয়।যদিও এর অনেক আগে থেকেই ব্লাস্ট ফার্নেসে সীসা,তামা ও পিগ-আয়রন বা কাঁচা লোহা উৎপাদনের জন্য কোক-কয়লা ব্যবহৃত হতো। ১৭৮৩-৮৪ সালে হেনরি কর্ট উদ্ভাবিত পাডলিং ও পটিং -স্টাম্পিং (যার আবিষ্কারের স্বত্বাধিকার ছিল ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দ অবধি) এর কাজে ব্যবহৃত বার-আয়রন বা লোহার পাত প্রস্তুতির দ্বিতীয় পর্যায়ে কোক-কয়লা ব্যবহৃত হতো।বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহারের ফলে বস্ত্রোৎপাদন ও লৌহোৎপাদনের গতি ত্বরান্বিত হওয়ায় প্রথাগত জলশক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস পায় এবং তুলনামূলক সুবিধাজনক স্থানে কারখানাগুলি গড়ে উঠতে থাকে।

সুতিবস্ত্র উৎপাদন পদ্ধতি উৎস সংযোজন বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক তন্তু হলো তুলো।হিসেব অনুযায়ী ২০০৭ সালে ৫০টিরও বেশি দেশে ছড়ানো ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২৫ মিলিয়ন টন তুলো উৎপাদন হয়েছিল। তুলো থেকে বস্ত্রোৎপাদনের ৫টি পর্যায় যথাক্রমে নিম্নরূপ- বীজ বপন ও ফলন প্রস্তুতিপর্ব সুতো কাটা সুতো বোনা উৎপাদন সম্পন্ন করা

শিল্প এবং উদ্ভাবন উৎস সংযোজন ১৭৬০ সালের পূর্বে বস্ত্রোৎপাদনকে মূলত কুটির শিল্পের পর্যায়ভুক্ত করা হতো এবং এতে মূলত শোন এবং পশম ব্যবহৃত হতো। সে সময় প্রথাগত ভাবে বস্ত্রোৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলি এক হাতে চালিত তাঁত ব্যবহার করতো। শিল্পী নিজে মূলত স্ত্রী-কন্যা বা অন্য কোনো মহিলা বা পুরুষের সাহায্য নিয়ে কাজটি করতেন। সাহায্যকারী ব্যক্তি শিল্পীকে কাপড় বোনার সময় তাঁতে প্রয়োজনমতো সুতো সরবরাহ করতেন। বহু শতাব্দী পূর্ব হতেই মানুষ রপ্ত করে ফেলেছিলো বস্ত্রবয়ন পদ্ধতি।ভারতেও তুলো থেকে সুতিবস্ত্র উৎপাদিত হতো।ইউরোপ যখন প্রথম কাঁচা তুলো রপ্তানি হওয়া শুরু হয় তখন তা সেসকল দেশে ফুস্তিয়ান তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে সুতো কাটা হতো: সাধারণ চরকার সাহায্যে যা যুগের সাথে সাথে আরো পরিমার্জিত হয় এবং স্যাক্সনি চরকার সাহায্যে যার সাথে যুক্ত ছিল উন্নত মানের মাকু এবং সুতো ববিনে অনবরত যোগান দেবার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লায়ার। তবে এই দুই পদ্ধতি হস্তচালিত তাঁতের ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র ব্যবহারোপযোগী ছিল। তবে ১৭৩৪ সালে জন কে উদ্ভাবিত ফ্লাইং শাটল -এর ব্যবহারের ফলে সুতো কাটার কাজে যেমন গতি আসে তেমনি তাঁতকলগুলিতেও দ্বিগুন পরিমান বস্ত্রোৎপাদন হতে থাকে। আর কুটির শিল্পের পরিধিতে আবদ্ধ না থেকে বস্ত্রোৎপাদন বৃহৎ কর্মশালায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর তালিকাভুক্ত হয়।সুতো কাটার জন্য সুতাকল পত্তনই ছিল এর প্রথম সোপান।পরবর্তীকালে সুতো বয়নের কাজ হতো কারখানাতে।১৮২০ সল্ নাগাদ সমস্ত ধরনের রেশম,পশম এবং সুতি বস্ত্র তৈরী হতো বৃহৎ তাঁতকলগুলিতে।বস্ত্রোৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিক যন্ত্রনির্ভরতার ফলে বয়নকার্যে বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন।তারা পুনরায় নিজেদের বাড়িতে ছোট পরিসরে সুতো বোনার কাজ শুরু করেন। মূলত বুননকার্যে ব্যবহৃত কোনো তাঁতকলকে সেই সময় বলা হতো উইভিং শেড বা তাঁতকল। গোড়ার দিকের আবিষ্কারসমূহ উৎস সংযোজন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উৎস সংযোজন

অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শিল্প বিপ্লবের সূচনার পূর্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বস্তু ছিল মুঘল শাসনাধীন ভারতে প্রস্তুত দ্রব্যসামগ্রী। সস্মিক কালে গোটা বিশ্বে সমগ্র শিল্পোৎপাদনের ২৫%ছিল ভারতীয় শিল্পসামগ্রী। তৎকালীন ভারতবর্ষে বঙ্গদেশে উৎপাদিত বস্ত্রপন্যের আন্তর্জাতিক বস্ত্রবাজারে বিশেষ খ্যাতি ছিল।অষ্টাদশ শতকে দক্ষিণ ভারতে এবং সুদূর দক্ষিণ ইংল্যান্ডে শ্রমিকদের মজুরি প্রায় সমান ছিল। প্রাক আধুনিক ইউরোপে মুঘল ভারতে উৎপাদিত বস্ত্র সামগ্রীর বিশেষত সুতি এবং রেশম বস্ত্রের বিপুল চাহিদা ছিল। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় রুচি তখন অনেকটাই মুঘল ভারতে উৎপাদিত বস্ত্র ও বস্ত্রশৈলীর উপর নির্ভরশীল ছিল।সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে এবং অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটেনে এশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রীর ৯৫% ই ছিল মুঘল ভারতে উৎপাদিত দ্রব্য। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলোতে ব্রিটেনের বাজারের চাহিদানুসারে প্রচুর পরিমানে সুতি বস্ত্র উৎপাদন শুরু হয়। স্থানীয় ভাবে প্রস্তুত পশম এবং লিনেন বস্ত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আমদানিকৃত ক্যালিকো এবং ছাপা ছিট কাপড়ের চাহিদা।এর ফলে বস্ত্রোৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় কৃষক,মেষপালক, রঞ্জনকার,তাঁতি,দর্জিরা বিক্ষোভ জানায় ব্রিটেনে সাংসদদের কাছে।ফলস্বরূপ ইংরেজ সরকার অবাধে সুতিবস্ত্র আমদানি এবং বেচা-কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ এবং ১৭২১ খ্রিষ্টাব্দে ক্যালিকো আইনের মাধ্যমে বয়নশিল্পের সাথে জড়িত স্থানীয় ইংল্যান্ডবাসীর স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।এই আইনে তুলো থেকে উৎপাদিত সুতি বস্ত্র আমদানি এবং বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় যদিও কাপড় বোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা তুলো আমদানিকরণ বা ফাস্টিং তৈরি বা বিক্রির ওপর কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয় নি।কাঁচা তুলো আমদানির উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রতি বছর এশিয়া ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ড-হাজার বস্তা করে কাঁচা তুলো আমদানি করা হতো। এর ফলে স্থানীয় বাজারে প্রাথমিক ভাবে ফুস্তিয়ান তৈরী ও যোগান বৃদ্ধি পেলেও কাঁচা তুলোর এই অতিরিক্ত যোগান সমপরিমানে বস্ত্রোৎপাদনের তাগিদে সুতো কাটা ও বোনার ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করে। নতুন তৈরী সুতাকলগুলি ছিল মূলত যন্ত্র নির্ভর। এর ফলে ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায় চাহিদানুসারে কাঁচা তুলো আমদানির পরিমান। ১৭৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে এই আমদানির পরিমান ছিল বছরে সাত হাজার বস্তা।কাপড়কলের মালিকদের তরফে ইংল্যান্ডের আইন সভার উপর ক্রমাগত চাপ বাড়তে থাকে সুতি বস্ত্রের উৎপাদন ও বিক্রয়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার জন্য।এর পিছনে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমদানিকৃত বস্ত্রদ্রব্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নামা। যদিও ঊনবিংশ শতাব্দী অবধি ভারতীয় সুতিবস্ত্র বিশেষত বাংলায় তৈরী কাপড় তাদের চাহিদা একইভাবে ধরে রাখতে পেরেছিলো। ভারতের সাথে মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটেন কম শ্রমসাধ্য প্রযুক্তিগত উন্নতির সাহায্য নেয় এবং সেইসাথে ভারতীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানির ওপর শুল্ক এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করে ইংল্যান্ডের দেশীয় শিল্পকে রক্ষার নীতি নেয়।একই সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ভারতে আইন করে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ব্রিটেনে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বিজয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা থেকে লুন্ঠিত অর্থ বিনিয়োগ করে ব্রিটেনে শিল্পক্ষেত্রে যেমন বস্ত্রশিল্পে। ফলে বহুগুনে বৃদ্ধি পে ইংল্যান্ডের সম্পদ যাকিনা শিল্প বিপ্লবের রসদ জুগিয়েছিল।

ব্রিটেন উৎস সংযোজন

অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে ল্যাটিন আমেরিকাতে ক্রীতদাসদের দ্বারা কর্ষিত জমি থেকে উৎপাদিত তুলো আমদানি হতো।আমেরিকায় স্বাধীনতার যুদ্ধ ও পরবর্তীকালে গৃহযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্রিটেন নিজেদের সুতিবস্ত্র শিল্পের বিকাশের জন্য অনেক বেশি পরিমানে নির্ভর করতো ঔপনিবেশিক ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর।ব্রিটেনের পশ্চিম উপকূলবর্তী বন্দরসমূহ যেমন লিভারপুল, ব্রিস্টল, গ্লাসগো ক্রমে সুতি বস্ত্রশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। উদীয়মান সুতি বস্ত্রশিল্পের প্রাণকেন্দ্র ছিল ল্যাঙ্কাশায়ার কারণ ওই অঞ্চলের স্যাঁতস্যেতে আবহাওয়া সুতো কাটার সহায়ক ছিল।তুলো থেকে তৈরী সুতো যেহেতু যথেষ্ট শক্তপোক্ত ছিল না তাই পশম, লিনেন বা ফুস্তিয়ান ব্যবহার করতে হতো।পশম বস্ত্র কেন্দ্র হিসেবে ল্যাঙ্কাশায়ার পূর্বপরিচিত ছিল। একইভাবে এই স্যাঁতস্যেতে আবহাওয়ার সুবিধা পেয়েছিলো গ্লাসগো শহরও। সুতোর পরিমান মতো যোগান না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাহত হয়েছিল বয়নশিল্পের গতি।ধীর গতিতে সুতো কাটা হতো এবং একেকটি পরিবারে যত পরিমানে পশম এবং তুলো উৎপাদিত হতো সুতো তৈরির জন্য তার থেকে বেশি পরিমানে সুতোর চাহিদা তৈরী হয় বয়নশিল্পীদের কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে।