শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১১ জুলাই, ১৮৯৭ - ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২) একজন বাঙালি শ্রমিক নেতা, সাম্যবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সোসালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সদস্য ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাশিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তার পিতার নাম ছিল দ্বারকানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোটবেলায় হুগলী জেলায় চলে আসেন। হুগলী মহসিন কলেজে পড়া শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি পাশ করেন গণিতে। পড়াকালীন প্রবাসীনী দেবীকে বিবাহ করেন তিনি। ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।[১]
বিপ্লবী কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার চেষ্টায় তিনি ১৯২১ সালে সোভিয়েত রাশিয়া চলে যান আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে। এই সময় তিনি দীর্ঘ পথ পদব্রজে অতিক্র্ম করেছিলেন। মস্কোতে লেনিনের মরদেহ নিয়ে যেদিন শোকমিছিল বের হয় সেইদিন তিনি সেখানে পৌছান ও মিছিলে যোগদান করেন। আফগানিস্তানে থাকাকালীন সেখানকার হাবিবিয়া কলেজে বিজ্ঞানের অধ্যাপনা করতেন, রাজা আমানুল্লার সাথে তার আলাপ হয়। কাবুলে ব্রিটিশবিরোধী অস্থায়ী ভারত সরকার গঠনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান স্থপতি। মস্কোতে থাকাকালীন প্রায় সব বলশেভিক নেতার সংস্পর্শে আসেন তিনি। মস্কোর টয়লার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। পূর্ব ইউরোপের অনেক জায়গা ঘুরে ১৯২৪ সালে লন্ডন যান। সেখান থেকে ফেরার পথে পাসপোর্টের সমস্যায় থেকে যান ও সাপুরজি সাকলাওয়াতের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সংগী হন শিবনাথ। শ্রমিক নেতা ক্লিমেন্ট এট্লির সহযোগীতায় ১৯২৫ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফেরার পর মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী বলে অভিযুক্ত করা হয় তাকে।[২]
শ্রমিক আন্দোলন
সম্পাদনাশিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৯ সালে লিলুয়ায় রেলওয়ে ধর্মঘট পরিচালনা করেন ও ১৯৩৩ সালে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের কানপুর সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে ঐতিহাসিক চটকল শ্রমিক ধর্মঘট পরিচালনা করেন। বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবে তিনি অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন, হিন্দু মজদুর সভা, ক্যালকাটা ট্রাম শ্রমিক সংগঠন, বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন। রেল শ্রমিক সংগঠন ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। কলকাতার ধাঙড় আন্দোলনেও তিনি নেতার ভূমিকায় ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে প্রায় দশ বছর কারাবাস করেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সরকারী আমন্ত্রণে চীন ভ্রমণ করেন ১৯৭৫ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সামাজিক ও ত্রাণমূলক কাজ করতেন। চটকল শ্রমিকদের জন্য গড়ে তোলেন ভাটপাড়া-নৈহাটি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনাশিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২ সালে মারা যান।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "শ্রমিক নেতা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারী ২০১৮।
- ↑ ক খ প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাংগালী চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫২২। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
- ↑ "কাজাখস্তানের স্বাধীনতা বিদস"। দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারী ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]