শিকল বিক্রিয়া

প্রতিক্রিয়ার ক্রম

শিকল বিক্রিয়া হলো এক ধরনের বিশেষ বিক্রিয়া যেখানে বিক্রিয়ক পদার্থ কিংবা উৎপাদ পদার্থ ক্রমাগত শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে বিক্রিয়া করতেই থাকে। শিকল বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ার উৎপাদ স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে ও কোনো প্রভাবকের হস্তক্ষেপ ছাড়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।

নিউক্লিয়ার ফিশন শিকল বিক্রিয়া

কোনো সিস্টেমের রূদ্ধতাপীয় অবস্থা এমন থাকে যেন সিস্টেম কোনো তাপ বা শক্তি পরিবেশে স্থানান্তর করতে না পারে অর্থাৎ এনট্রপি বৃদ্ধি করতে পারে না ও উচ্চতর এনট্রপি অবস্থায় পৌঁছাতে পারে না। এ প্রক্রিয়াটিতে এনট্রপি স্থির থাকে। উদাহরণ হিসেবে, যদি কোনো সিস্টেম এমন হয় যে তার উপর এমন বাঁধা দান করা হয়েছে যে সেই সিস্টেম উচ্চতর শক্তি অবস্থা থেকে শক্তি পরিবেশে মুক্ত করে নিম্নতর অবস্থায় যেতে পারবে না কিন্তু যদি কোনোভাবে ক্ষুদ্র পরিমাণে শক্তিও মুক্ত হয়ে যায় তবে তা আরো অধিক পরিমাণ শক্তি পরিবেশে মুক্ত করতে চাইবে। এমতাবস্থায় সমগ্র সিস্টেম শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ক্রমাগত শক্তি মুক্ত করতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সিস্টেমটির সম্পূর্ণ শক্তি পরিবেশে বিমুক্ত না হয়৷ অর্থাৎ সমগ্র সিস্টেম বিস্ফোরিত হবে।

কোনো ক্ষুদ্র তুষারবল কর্তৃক বিশালকায় তুষারবল সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়াকে শিকল বিক্রিয়ার রূপক হিসেবে দেখানো যেতে পারে৷ কোনো তুষারবল ধীরে ধীরে বড় তুষারবলের পরিণত হতে থাকে এবং একসময় সমগ্র বলটিই ভেংগে পড়ে৷ এরূপ হয় কারন মহাকর্ষীয় বিভব শক্তি সবসময়ই ঘর্ষণের বিরুদ্ধে বিমুক্ত হওয়ার একটি পথ খুঁজে। পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে, কোনো নিউট্রন যদি এলোপাথাড়িভাবে ছুটে যায় তাহলে তা প্রম্পট ক্রিটিকাল প্রক্রিয়ার সূচনা করবে। যা এতই শক্তিশালী যে তা থেকে ভয়াবহ পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটতে পারে৷

একাধিক শিকল বিক্রিয়ার প্রক্রিয়া মার্কভ শিকল মডেল,(যা মূলত একটি গাণিতিক মডেল)দ্বারা উপস্থাপন করা যায়।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯১৩ সালে জার্মান রসায়নবিদ ম্যাক্স বোদেনস্টেইন শিকল বিক্রিয়ার সম্পর্কে ধারণা দেন। দুটি কণা যখন বিক্রিয়া করে তখন যে শুধু উৎপাদ গঠিত হয় তাই নয়, উৎপাদের পাশাপাশি আরো অস্থায়ী অণুকণা তৈরি হতে পারে যা শুরুর বিক্রিয়ক কণার সাথে পুনরায় বিক্রিয়া করে আবার নতুন উৎপাদ গঠন করতে পারে৷ (নতুন বিক্রিয়াটিতে, স্থায়ী অণুকণা বা উৎপাদের পাশাপাশি আরো অস্থায়ী অণুকণা তৈরি হয়।)

১৯১৮ সালে আরেক জার্মান রসায়নবিদ ওয়ালদার নার্নস্ট কোয়ান্টাম ফলন (ইংরেজিঃ কোয়ান্টাম ইয়েল্ড) প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন যে হাইড্রোজেনক্লোরিন-এর ফটোকেমিক্যাল বিক্রিয়া একটি শিকল বিক্রিয়া। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, আলোর একটি ফোটন কণা উৎপাদ হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ১০ অণু সৃষ্টির জন্য দায়ী। নার্নস্ট বলেন যে, ফোটন কণা একটি ক্লোরিন অণুকে দুইটি ক্লোরিন পরমাণুতে বিভক্ত করে যার প্রতিটি ক্লোরিনই হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরি করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ শিকল বিক্রিয়ার সূচনা করে।