শাহ আলী বাগদাদী
সৈয়দ শাহ আলী বাগদাদী ছিলেন তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশে আরবাঞ্চল হতে ধর্ম প্রচারার্থে আগত সুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি একশত[১] সঙ্গী নিয়ে এতদাঞ্চলে আগমন করেন। তার নামানুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুর-এক নম্বরে তার সমাধি রয়েছে।[২][৩][৪]
জন্ম
সম্পাদনাসৈয়দ শাহ আলীর জন্ম, দিল্লী ও বাংলাদেশ আগমন এবং মৃত্যু নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে সকলের ঐকমত্য্যের বিষয়টি হল: তার জন্ম বাগদাদের ফোরাত নদীর তীরবর্তী একটি কসবাতে।
বংশ পরিচিতি
সম্পাদনাতিনি হযরত আলী এঁর বংশধর। হযরত ইমাম হোসাইন হতে ইমাম আলী নকীর পিতা পর্যন্ত তার পূর্বপুরুষগনের মধ্যে সকলেই বসবাস করতেন মদিনায়। তার বংশ হতে শাহ সৈয়দ সুলতান আলী সর্বপ্রথম বাগদাদে আসেন, যিনি ছিলেন ইমাম আলী নকীর ছোট ভাই। পরবর্তীতে তিনি দিল্লীর সুলতাদের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।[৫] বাগদাদের বাদশাহ সৈয়দ ফখরুদ্দিন রাজির জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন সৈয়দ শাহ আলী বোগদাদী।
তরীকার ধারা
সম্পাদনাপূর্ব হতে তিনি কাদেরীয়া তরীকা অনুসরণ করে থাকলেও সমসাময়িককালে ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকার প্রসিদ্ধ চিস্তিয়া সুফি শাহ মোহাম্মদ বাহারের আস্তানায় গিয়ে তার নিকট চিশতিয়া তরিকা গ্রহণ করেন।[৫][৬] অতপর তিনি ঢাকায় ইসলাম প্রচারকালে মিরপুরের এক স্থানে একটি জরাজীর্ণ মসজিদের সন্ধান পান। সে মসজিদ সংলগ্ন স্থানটিকে তার ইবাদত বন্দেগীর স্থান হিসাবে গ্রহণ করেন।
মৃত্যু
সম্পাদনাপরবর্তীকালে ফার্সি ভাষায় খোদাই করা একটি শিলালিপি উক্ত মাসজিদে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী ঐ শিলালিপিতে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয় শাহ আলী বোগদাদী ১৫৭৭ সালে মোঘল আমলে মৃত্যুবরণ করেন। সন্ধান পাওয়া ঐ ধ্বংসপ্রায় জরাজীর্ণ মসজিদের চর্তুদিকে বন্ধ অবস্থায় চল্লিশ দিনের চিল্লা ব্রত পালন কালে তিনি মারা যান।[৬][৭]
ঐতিহাসিক পটভূমী
সম্পাদনাশিয়া এবং সুন্নীদের ধর্ম বিরোধের সময় তিনি বাগদাদ নগরী হতে প্রস্থান করেন। অন্যদিকে দিল্লীর শাসকদের মধ্যে যখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমাকার ধারণ করে তখন দিল্লীও ত্যাগ করেন। তিনি বাগদাদ হতে আসার পথে শেষ নবী মোহাম্মদের কেশধাম, হোসাইনের জুলফ, আবদুল কাদির জিলানীর পিরহান্ বংশগত উত্তরাধিকার হিসাবে সাথে এনেছিলেন।[৬]
১৪৮৯ সালে শাহ আলী বাংলায় পর্দাপন করেন। দিল্লী হতে তিনি প্রথমে ফরিদপুরের গেদ্দায়[৬] নামক স্থানে আসেন। অতপর ঢাকার আশে-পাশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এমতাবস্থায় শাহ আলী যখন মিরপুরাঞ্চলে এসে উপস্থিত হন তখন সেখানে ঐ জরার্জীর্ন অবস্থায় প্রায় ধংসোন্মুখ মসজিদটি দেখতে পান। বাহিরে তার অনুসারীগণ অবস্থান করলেও তিনি মসজিদের দরজা বন্ধ করে ভিতরে একা ৪০ দিনের মেয়াদে চিল্লায় বসেন। ভিতরে যতকিছুই হোক না কেন, তিনি তার মুরীদগণকে চিল্লার চল্লিশ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন অবস্থায়ই ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। চিল্লার শেষ পর্যায়ে ৩৯ তম দিনে ভিতর হতে ভয়ংকর অওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। যাতে মনে হচ্ছিল ভিতরে দুইট সত্ত্বার মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে। একা পক্ষ আর্তচিৎকার করছে। ফলে অসহায় হয়ে তার অনুসারীগণ দরজা ভেঙ্গে ফেলেন। দরজা ভাঙ্গার সাথে সাথে ভিতরের আওয়াজও বন্ধ হয়ে যায়[৬]। অথচ সেখানে তারা তার রক্তাক্ত ছিন্ন বিচ্ছ্নি দেহ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি। সে সাথে একটি দৈববানী শুনতে পান যাতে বলা হয়, ‘যেখানে পড়ে আছে সেখানেই দাফন কর’। অতপর তাকে উক্ত মসজিদের ভিতরেই দাফন করা হয়। তখন হতে এ মসজিদটি তার দরগা শরীফে পরিণত হয়। সাধারণত আর কোন সুফি-দরবেশের এরুপ মাজার কোথাও চোখে পড়েনা। তৎকালীন বাদশাহ নাসিরুল মুলকের আমলে প্রায় ১৮০৭ সালে (হিজরী ১২২১ সালে) মুহম্মদী শাহ নামক অপর এক সুফি ব্যক্তিত্ব উক্ত স্মাধিকে তৃতীয় বারের মত পূণনির্মাণ করেন।[৫][৬]
শাহ আলীর মসজিদ
সম্পাদনাশাহ আলীর স্মাধি যে মসজিদে অবস্থিত তা তার নামে শাহ আলী মসজিদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত তা তার আগমনপূর্ব একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। দিল্লী সম্রাট কর্তৃক মিরপুরে মসজিদটি নির্মিত হয়। একটি ঐতিহাসিক সূত্র হতে জানা যায়, বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে (১৪৭৪-১৪৮১) এ অঞ্চলের গভর্নর জহিরউদ্দীন খান ১৪৮০ খৃষ্টাব্ধে এটি নির্মাণ করেন। ঢাকায় আদি ইট নির্মিত যে সকল পুরার্কীতি বা ঐতিহাসিক স্থাপত্য[৫] দেখা যায় তার মধ্যে বিনতা বিবির মসজিদটি (১৪৫৭) সর্বপ্রথম নির্মিত হয়। এরপরই নির্মিত হয় শাহ আলীর মসজিদ।
শাহ আলী থানা ও কলেজ
সম্পাদনাঢাকার মিরপুরে তার নামানুসারে শাহ আলী থানা ও শাহ আলী মহিলা কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।[৮][৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক সংগ্রাম। "মিরপুর: আনন্দ-বেদনার সাতকাহন, লেখক: সাজজাদ হোসাইন খান"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "শাহ আলী বাগদাদী (রঃ) - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-০২।
- ↑ "শাহ আলী বাগদাদী"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ দৈনিক ডিএমপি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম। "ভাব-গম্ভীর পরিবেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল বরাত"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;S Ali Biborton
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;S Ali father
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ নিউজপোর্টাল বহুমাত্রীক ডট কম। "শীতলক্ষ্যার তীর থেকে সখ্যতায়-শত্রুতায় মোঘল আর গাজী, সম্পাদনায়: ড. রফিকুল মোহাম্মদ"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ বাংলাপিডিয়া। "শাহ আলী থানা,"।[অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ দৈনিক জনকন্ঠ। "শাহ আলীতে বৃদ্ধাকে জবাই, বাথরুম থেকে লাশ উদ্ধার,"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]