শাসিতের সম্মতি
রাজনৈতিক দর্শনের আলোচনায় শাসিতের সম্মতি বলতে এমন একটি ধারণাকে বোঝায় যা অনুসারে কোনও সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের নৈতিক অধিকার কেবলমাত্র তখনই ন্যায্য হবে, যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার অধীনস্থ জনগণ বা সমাজ তাতে সম্মতি দেবে। সম্মতির এই তত্ত্বটি ঐতিহাসিকভাবে রাজাদের দৈব অধিকার ধারণাটির বিপরীত এবং প্রায়শই উপনিবেশবাদের বৈধতার বিরুদ্ধে এই তত্ত্বটির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২১নং দফায় বলা হয়েছে "জনগণের সংকল্পই কোনও সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি হবে"।
প্রকৌশলজাত সম্মতি
সম্পাদনাউদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাবিদ এডওয়ার্ড বার্নেস জনসংযোগ কৌশল বিষয়ে তাঁর নিবন্ধ ও গ্রন্থ দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং অভ কনসেন্ট-এ (১৯৫৫) লেখেন যে জনগণকে স্বার্থ হাসিলের জন্য কৌশলে এমনভাবে পরিচালিত করা যায়, যাতে তারা অবচেতনভাবে একজন রাজনৈতিক প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে চায়। এভাবে প্রাপ্ত সম্মতি সরকারের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বার্নেস দাবী করেন যে "মূল নীতিটি সরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ: যদি জনগণের মতামত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে সরকার জনগণের মতামতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।"[১]
এডওয়ার্ড এস. হার্মান ও নোম চম্স্কি তাঁদের গ্রন্থ ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট-এ (১৯৮৮, "সম্মতির শিল্পোৎপাদন") মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলির উপরে প্রযোজ্য একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার প্রতিমান প্রস্তাব করেন।[২] তাদের মতে বৃহৎ কোম্পানি বা কর্পোরেশনগুলি এবং রাষ্ট্রযন্ত্র নিজে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রতিবেদনগুলিকে এমনভাবে বিকৃত করে যাতে শাসিতের সম্মতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিল্পের মতো উৎপাদিত হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ John C. Livingston & Robert G. Thompson (1966) The Consent of the Governed, 2nd edition, page 457, Collier Macmillan
- ↑ Edward S. Herman & Noam Chomsky (1988) Manufacturing Consent, Pantheon Books