ল্যুক মোঁতাইনিয়ে
ল্যুক অঁতোয়ান মোঁতাইনিয়ে (ফরাসি: Luc Antoine Montagnier; জন্ম: ১৮ই আগস্ট, ১৯৩২) একজন ফরাসি ভাইরাসবিজ্ঞানী। এইডস নামক মারাত্মক রোগের জন্য দায়ী মানবদেহে অনাক্রম্যতার অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস (হিউম্যান ইমিউনো-ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস, সংক্ষেপে এইচআইভি) আবিষ্কারের জন্য[২] তিনি ফরাসি ভাইরাসবিজ্ঞানী ফ্রঁসোয়াজ বারে-সিনুসি এবং জার্মান ভাইরাসবিজ্ঞানী হারাল্ড সুর হাউজেনের সঙ্গে ২০০৮ সালে যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি চীনের সাংহাইয়ের চিয়াও থুং বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন অধ্যাপক ছিলেন।[৩] তিনি ফ্রান্সের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি ও জাতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য।
ল্যুক মোঁতাইনিয়ে | |
---|---|
![]() ল্যুক মোঁতাইনিয়ে, ২০০৮ | |
জন্ম | ল্যুক অঁতোয়ান মোঁতাইনিয়ে ১৮ আগস্ট ১৯৩২ শেব্রি, কেন্দ্রীয় অঞ্চল, ফ্রান্স |
জাতীয়তা | ফরাসি |
মাতৃশিক্ষায়তন | প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | এইচআইভি আবিষ্কার |
পুরস্কার | |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | ভাইরাসবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ |
মোঁতাইনিয়ে অবসর গ্রহণের পরে ২১শ শতকের প্রথম দুই দশকে তাঁর বিশেষায়িত ক্ষেত্রের বাইরে অবস্থিত বেশ কিছু ক্ষেত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য রেখে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে নিন্দিত হন। এদের মধ্যে জলস্মৃতি (হোমিও চিকিৎসার ব্যাখ্যাস্বরূপ), ডিএনএ-দূরপরিবহন, টিকা-বিরোধিতা, ইত্যাদি উল্লেখ্য।
এইচআইভি আবিষ্কারের ইতিহাসসম্পাদনা
১৯৮২ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ওপিটাল বিশা (Hôpital Bichat) হাসপাতালের চিকিৎসক উইলি রোজেনবাম মোঁতাইনিয়েকে নতুন একটি রোগ বা সংলক্ষণ (সিন্ড্রোম) সৃষ্টির কারণ নির্ণয়ে সাহায্য করতে বলেন। বৈজ্ঞানিক সভায় রোজেনবাম বলেন, বিশেষ এক ধরনের রেট্রোভাইরাস এর জন্য দায়ী। মোঁতাইনিয়ে ও পাস্তুর ইনস্টিটিউটে তার সহকর্মী ফ্রঁসোয়াজ বারে সিনুসি ও জঁ ক্লোদ শেরম্যান রেট্রোভাইরাসের কার্যপ্রণালী নিয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। রোজেনবামের এইডস রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মোঁতাইনিয়ে ও তার দলের মানুষ পরীক্ষা করেন। তারা একে "লিম্ফাডেনোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস" (লসিকার্বুদরোগ-সংশ্লিষ্ট ভাইরাস) বা এলএভি নাম দেন। ১৯৮৩ সালের ২০শে মে তারিখে সায়েন্স গবেষণা সাময়িকীতে তাঁরা তাঁদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।[৪]
রবার্ট গ্যালোর নেতৃত্বাধীন একটি দল সায়েন্স গবেষণা সাময়িকীর একটি সংখ্যায় এটি নিশ্চিত করে। তিনি প্রমাণ উপস্থাপনপূর্বক বলেন, এটিই এইডস। গ্যালো এর নাম দেন হিউম্যান টি লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস টাইপ থ্রি। [৫] মোঁতাইনিয়ে নাকি গ্যালোর দল প্রথম এইচআইভি আবিষ্কার করে এটি নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক ছিল।
১৯৯০ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সাধুতা দপ্তর পাস্তুর ইনস্টিটিউট ও টিউমার কোষ জীববিজ্ঞান বিজ্ঞানাগারে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করে বিষয়টি মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নমুনাগুলো ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে সংগৃহীত হয়। শেং ইয়াং ছাংয়ের নেতৃত্বে গবেষণা দল ১৯৯৩ সালে সায়েন্স পত্রিকায় অভিমত প্রকাশ করে - মোঁতাইনিয়ের গবেষণাগার হতেই গ্যালো নমুনা সংগ্রহ করেন।
আজ প্রায় সর্বসম্মতভাবে ধারণা করা হয়, মোঁতাইনিয়ে ও তার দল এইচআইভি আবিষ্কার করেন। [৬] তবে গ্যালোর বৈজ্ঞানিক দলই সর্বপ্রথম অনুধাবন করে, এইচআইভি ভাইরাস এইডস সৃষ্টি করে ।
এইচআইভি কে আবিষ্কার করেন, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েই যায়। ১৯৮৭ সালে ফরাসি ও মার্কিন সরকার এ নিয়ে বিবাদ নিরসনের চেষ্টা করে। তারা গ্যালো ও মোঁতাইনিয়ে-কে এইচআইভির সহ-আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান এ সম্পর্কে বিবাদ নিরসনের উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে দেখা করেন। ১৯৮৬ সালে ফরাসি ও মার্কিন নাম এলএভি ও এইচএলভি-২ বর্জন করা হয় এবং এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) নামটি প্রবর্তন করা হয়।
করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যসম্পাদনা
ল্যুক মোঁতাইনিয়ে দাবি করেন, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কোনো একটি বিজ্ঞানাগারে হয়েছে। তার মতে, এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার করতে গিয়েই কোভিড-১৯ সৃষ্টি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভাইরাসের উৎপত্তি কোনো বিজ্ঞানাগারে ঘটেছে কিনা, এ নিয়ে তদন্ত করার সময় তিনি এ অভিযোগ উত্থাপন করেন। মোঁতাইনিয়ে বলেন, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুর জিনোমে যে সকল পদার্থের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়, করোনাভাইরাসের জিনোমেও এরকম পদার্থ বিদ্যমান। [৭] ফরাসি সরকারকে করোনাভাইরাস নিয়ে উপদেশ দেওয়া বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান এবং রোগ প্রতিরোধবিজ্ঞানী জঁ ফ্রাসোয়াঁ ডেলবাসি বলেন, এটি এক ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব, বিজ্ঞানের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। দি ওয়্যার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা কীভাবে মোঁতাইনিয়ে-র যুক্তি খণ্ডন করেছেন।[৮]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Year: 1986"।
- ↑ "Nobel prize for viral discoveries"। 6 অক্টোবর, 2008 – news.bbc.co.uk-এর মাধ্যমে। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ Barre-Sinoussi, F.; Chermann, J. C.; Rey, F.; Nugeyre, M. T.; Chamaret, S.; Gruest, J.; Dauguet, C.; Axler-Blin, C.; Vezinet-Brun, F.; Rouzioux, C.; Rozenbaum, W.; Montagnier, L. (11 মে, 1983)। "Isolation of a T-Lymphotropic Retrovirus from a Patient at Risk for Acquired Immune Deficiency Syndrome (AIDS)"। Science। 220 (4599): 868–871। ডিওআই:10.1126/science.6189183 – ui.adsabs.harvard.edu-এর মাধ্যমে। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Popovic, Mikulas; Sarngadharan, M. G.; Read, Elizabeth; Gallo, Robert C. (11 মে, 1984)। "Detection, Isolation, and Continuous Production of Cytopathic Retroviruses (HTLV-III) from Patients with AIDS and Pre-AIDS"। Science। 224 (4648): 497–500। ডিওআই:10.1126/science.6200935 – ui.adsabs.harvard.edu-এর মাধ্যমে। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ http://sciencenow.sciencemag.org/cgi/content/full/2008/1006/1
- ↑ Perez, Jean Claude; Montagnier, Luc (1 আগস্ট, 2020)। "COVID-19, SARS AND BATS CORONAVIRUSES GENOMES PECULIAR HOMOLOGOUS RNA SEQUENCES"। International Journal of Research -GRANTHAALAYAH। 8 (7): 217–263। ডিওআই:10.29121/granthaalayah.v8.i7.2020.678 – www.granthaalayahpublication.org-এর মাধ্যমে। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Bast, Felix (22 এপ্রিল, 2020)। "A Nobel Laureate Said the New Coronavirus Was Made in a Lab. He's Wrong."। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- The discovery of the AIDS virus in 1983 – Official position of the Pasteur Institute.
- Nobelprize.org-এ ল্যুক মোঁতাইনিয়ে (ইংরেজি) including the Nobel lecture 7 December 2008 25 Years after HIV Discovery: Prospects for Cure and Vaccine
- PROFILE: Luc Montagnier, Francoise Barre-Sinoussi – AIDS pioneers
- Luc Montagnier Foundation