লুর্দের রানী মা মারিয়ার ধর্মপল্লী, নাটোর

লুর্দের রাণী মা মারীয়া ধর্মপল্লী যীশু খ্রিস্টের জাগতিক জননী মারীয়া বা মরিয়ম-এর পূণ্য নামের স্মৃতিতে উৎসর্গিত একটি ধর্মপল্লি।[১] খ্রিস্টধর্ম পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে বলা হয় খ্রিস্টমন্ডলী বা সংক্ষিপ্তাকারে শুধু মন্ডলী। মন্ডলী কর্তৃপক্ষের মূল পরিচালনা কেন্দ্র ভাটিকান বা রোম। স্থানীয়ভাবে খিস্টধর্ম বিশ্বাসী জনসাধারনকে পরিচালনা ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যা করা/সেবা দানের উদ্দেশ্যে গঠিত/পরিচালিত একটি সাংগঠনিক কর্মএলাকাকে ধর্মপল্লী বলা হয়।

অবস্থান সম্পাদনা

নাটোর জেলার দক্ষিণ সিমানায় বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার ৫টি ও ১ নং জোয়াড়ী ও ৫ নং মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ২টি সহ মোট ০৭টি গ্রাম নিয়ে এই ধর্ম পল্লী প্রতিষ্ঠিত। ঐতিহ্যবাহী বড়াল নদীর দক্ষিণে বনপাড়া নামক একটি গ্রামে ধর্মপল্লীর জন্য নির্ধারিত র্গীজাটি অবস্থিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইতালীয় বংশোদ্ভূত ধর্মযাজক ফাদার থমাস কাত্তান সর্বপ্রথম এই নাটোর অঞ্চলে  আসেন। ধারণা করা হয় ১৯৫৮-১৯৫৯  খ্রিস্টাব্দের দিকে  লুর্দের রানী মা মারিয়া ধর্মপল্লীর এই গির্জাটি স্থাপিত হয়। এই ধর্মপল্লীর অন্তর্গত মোট সাতটি গ্রামে প্রায় আট হাজার ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করেন।[২]

বর্ণনা সম্পাদনা

ধর্মপল্লীর অর্ন্তগত গ্রামগুলিতে প্রায় ৭ হাজার ক্যাথমিক খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসী মানুষ বসবাস করেন। খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাঙ্গালী এবং ৫ শতাংশ সাঁওতাল ও অন্যান্য আদিবাসী। সাধারণত, খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণ এলাকার গ্রামগুলোতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণের সাথে (ইসলাম ধর্মাবলম্বী- মুসলমান ও সনাতন ধর্মাবলম্বী-হিন্দু) মিলেমিশে পাশাপাশি বসত করেন।

ধর্মপল্লী বা গির্জা প্রশাসনের অধিনে একটি হাই স্কুল (সেন্ট যোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয়) ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়) পরিচালিত হয়। এছাড়া প্রায় ৪৫০ দরিদ্র আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর অবস্থানের জন্য পৃথক ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস পরিচালিত হয়। এলাকার হাজার হাজার দরিদ্র নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য একটি সেলাই কেন্দ্র পরিচালিত হয়। এছাড়া এলাকার প্রসূতি মায়েদের সেবা দানের জন্য উনিশ শ ষাটের দশকে এখানে স্থাপিত হয় দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র যা এলাকার হাজার হাজার প্রসূতি মাকে নিরাপদ মাতৃত্বে সহায়তা প্রদান করেছে। ধর্মপল্লী কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগীতায় এখানে বহু ব্রীজ-কালভাট ও রাস্তাঘাট নির্মিত রয়েছে। মূলত এ এলাকার শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নে এখানকার গির্জা কর্তৃপক্ষ ও খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. travelnews; travelnews (২০১৯-০৮-২২)। "লুর্দের রাণী মা মারিয়ার ধর্মপল্লী"Travel News Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১ 
  2. "বনপাড়া লুর্দের রানী মা মারিয়া ধর্মপল্লী – অচিন দেশে"। ২০২০-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১ 
  3. "নাটোর জেলা"। ২০২০-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১