লুপৌরত্ন তুলাধর

নেপালি ব্যবসায়ী
(লুপৌ রত্ন তুলাধর থেকে পুনর্নির্দেশিত)

লুপৌ রত্ন তুলাধর (দেবনাগরী: लुपौ रत्न तुलाधर) (২২ জুন ১৯১৮ – ২ জুন ১৯৯৩) হলেন একজন নেপালি ব্যবসায়ী, যিনি নেপালের পরিবহন সেবার অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত হন।[১] তিনি এবং তার ভাই করুণা রত্ন তুলাধর একত্রে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে নেপালে সর্বপ্রথম নিয়মিত বাস পরিবহন সেবা চালু হয়।[২][৩]

লুপৌ রত্ন তুলাধর
নেপালের পরিবহন সেবায় ১৯৫৯ মডেলের শ্যাভরোলে ভাইকিং বাস, ১৯৬১ এর চিত্র
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ডাকটিকিটে করুণা রত্ন ও লুপৌ রত্ন তুলাধর

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

লুপৌ রত্ন কাঠমান্ডুর অসন ধলাসিক্ব এলাকার তুলাধর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম পুষ্প সুন্দর তুলাধর এবং মায়ের নাম ধন মায়া তুলাধর। লুপৌ রত্ন তার পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তুলাধরেরা বংশপরম্পরায় ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং তিব্বতের লাসায় ঘোরাসিয়র নামে তাদের একটি বাণিজ্য কুঠি ছিল। তারা খচ্চর চালিত ট্রেনের মাধ্যমে হিমালয় পাড়ি দিয়ে নেপাল, তিব্বত ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য পরিচালনা করতেন।

লুপৌ রত্ন কাঠমান্ডুতে গৃহ শিক্ষকের নিকট অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে কলকাতায় একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লাসায় যান এবং পৈতৃক ব্যবসায়ে নিযুক্ত হন। তিনি কাঠমান্ডু থেকে উত্তর দিকে নিয়ালাম (কুটি) হয়ে হিমালয় পাড়ি দিয়ে তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী পথে গমন করেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

তুলাধর পৈতৃক বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে লাসায় অবস্থান করেন। এরপর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাঠমান্ডুতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি তিনি কাঠমান্ডুর মরু নামক এলাকার হর্খা শোভার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার ভারতীয় দিক সামলানোর জন্য ভারতে গমন করেন। ভারতে অবস্থানকালীন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও কালিম্পংয়ে সময় অতিবাহিত করেন। কালিম্পং সে সময় তাদের লাসা কেন্দ্রিক বাণিজ্য যাত্রার আদিবিন্দু এবং অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।[৫]

১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে লুপৌ রত্ন কালিম্পংয়ের ব্যবসা গুটিয়ে কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন এবং নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু করেন।[৬][৭] ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানও গুটিয়ে নেওয়া হয়।

লুপৌ রত্ন ১৯৪০ এর দশকে ধর্মোদয় নামক সাময়িকীতে ধর্ম সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।[৮]

ডাকটিকিট প্রকাশ সম্পাদনা

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নেপাল সরকারের ডাক সেবা বিভাগ দেশের প্রতি করুণা রত্ন ও লুপৌ রত্ন তুলাধরের অবদানের স্মরণে তাদের চিত্র সংবলিত একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ডাকটিকিটে নেপাল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে ব্যবহৃত ১৯৫৯ মডেলের একটি শেভরোলে বাসের চিত্রও দেখা যায়।[৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Shrestha, Krishna। "Time For Comprehensive Urban Transport Policy"Gorkhapatra Online। জুন ২৪, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৪, ২০১৩ 
  2. Tuladhar, Kamal Ratna (২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Nepal took the bus half a century ago"The Kathmandu Post। ২৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১২ 
  3. Shrestha, Bijaya Lal (11 August 1989). "All Those Years Ago: A trip through the early days of bus transport", The Rising Nepal.
  4. Tuladhar, Kamal Ratna (2011) Caravan to Lhasa: A Merchant of Kathmandu in Traditional Tibet. Kathmandu: Lijala & Tisa. আইএসবিএন ৯৯৯৪৬-৫৮-৯১-৩. Page 37.
  5. Kalimpong. New Delhi: Nest & Wings. আইএসবিএন ৮১-৮৭৫৯২-০১-X. Page 20.
  6. "1959 Chevrolet Viking Bus – Nepal Transport"। Classic Bus Depot.com। ৫ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১২ 
  7. Bajracharya, Himesh (২৩ জানুয়ারি ২০১০)। "Bas Yatayatko 50 Barsha ("Fifty Years of Bus Transport")"Kantipur। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Page 23.
  8. Bajracharya, Phanindra Ratna (2003). Who's Who in Nepal Bhasha. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬০-০-X. Page 214.
  9. "Commemorative stamps issued"The Kathmandu Post। ১ জানুয়ারি ২০১৩। ২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৩