লুডু খেলা বিশ্বের অন্যতম বিনোদন হিসেবে বিবেচিত।[১] বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষেরা এই খেলা খেলে থাকেন, এই খেলা মানুষের একটি জনপ্রিয় খেলা বললেও চলে, ঘরে বিছানায় অথবা মাটিতে মাদুর পেতে যে কোন বয়সের বিশেষ করে কৈশোর অতিক্রান্ত ছেলে মেয়েরা এ খেলাটি খেলে অবসর সময় পার করে থাকে। এই খেলাটির সরঞ্জাম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়। গ্রামের বিবাহিত মহিলারাও অবসর সময়ে এই খেলাটি খেলতে পছন্দ করে থাকে।

লুডু খেলার ছক এবং সরঞ্জাম

মেয়েরা এ খেলাটি খেলে অবসর সময় পার করে থাকে। এই খেলাটির সরঞ্জাম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়। গ্রামের বিবাহিত মহিলারাও অবসর সময়ে এই খেলাটি খেলতে পছন্দ করে থাকে।

প্ৰকারভেদ

সম্পাদনা

লুডু বিভিন্ন প্ৰকার হয়ে থাকে। যে সকল লুডু খেলার প্ৰচলন বাংলাদেশে দেখা যায় তা হলো:

  • ঘর লুডু
  • সাপ লুডু
  • পৃথিবী ভ্ৰমণ লুডু

নিয়মাবলী

সম্পাদনা
দুই/তিন/চারজন প্রতিযোগীর জন্য
  • এই খেলায় প্রতিটি প্রতিযোগীর চারটা করে গুটি থাকে, প্রত্যেকের গুটির রং ভিন্ন। প্রতিটি খেলোয়াড় একটি নির্দিষ্ট রঙের ঘর দখল করে, একে স্টপেজ বলে, মোট স্টপেজ চারটি, স্টপেজ এ কারো গুটি খাওয়া যায় না। প্রত্যেক প্রতিযোগী ক্লক ওয়াইস একবার করে ডাই গড়িয়ে মারতে পারেন। দান ছক্কা পড়লেই কেবল কোন প্রতিযোগীর খেলা শুরু হয়, তার আগে নয়। যে প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথম ছক্কা ফেলতে পারে সে তার ঘর থেকে প্রথম গুটি বের করে যাত্রা শুরু করতে পারে।
  • পরপর তিন ছক্কা পড়লে দান বাতিল হয়, পুনরায় তাকে ডাই চালতে হয়। প্রতিটি প্রতিযোগীর এভাবে ঘর থেকে গুটি বের হয়ে পুরো ছক অতিক্রম করে নিজের ঘরের/স্টপেজ এর দুইঘর আগে পাকানোর পথে/হোমে নিয়ে গুটি পাকাতে হয়। যার সবগুলো গুটি অন্যদের আগে পাকার ঘরে পৌঁছিয়ে আগে পাকে সে প্রথম হয়। বাকীরা পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়।
গুটি খাওয়ার নিয়ম
  • বোর্ডে সিঙেল গুটি থাকলে সে অন্যের কোনো গুটি খেতে পারবে না। একটি গুটি খাওয়ার সময় গুটিটি খেয়ে বাকী গুটি দিয়ে দান কমপ্লিট করার পর মারতি দান চালবে, দান হাতে জমিয়ে রাখতে পারবে না।
  • একজনের বোর্ডে একটা গুটি আছে, তার একঘর সামনেই প্রতিপক্ষের গুটি, এই মুহুর্তে দান "ছয় পুট" পড়লো, তখন সে আগে ছয় দিয়ে নতুন গুুটি বোর্ডে তুলবে, তারপর পুুুট (এক) দিয়ে সামনে থাকা অন্যের গুুুটি কাটবে, তার দান কমপ্লিট হলো, এখন সে মারতি দান চালবে।
অঞ্চল ভেদে কিছুটা ভিন্নতা
  • সিঙেল গুটি দিয়েও গুটি কাটা এবং মারতি দান যাচাই করার (যদি ছয় পড়ে এবং নতুন গুটি তোলা যায়) এমন একটা নিয়ম কিছু এলাকায় আছে।
  • অন্যের গুটি খেতে/মারতে হলে নিজের কমপক্ষে দুইটি গুটি বোর্ডে থাকতে হয় অথবা সিঙেল গুটি দিয়ে খেতে চাইলে মারতি দানে ছয় ফেলে নতুন গুটি বোর্ডে ওঠাতে হয়। তারপর সে গুটি দিয়ে বাকী দানগুলো দিতে হয়, সে দানেও কোন গুটি কাটা/খাওয়ার উপযোগী হলে আবার মারতি দানে ছয় ফেলে নতুন গুটি বোর্ডে নামাতে হবে। না নামাতে পারলে দ্বিতীয় গুটিটি কাটা বাতিল হয়ে যাবে। শুধু প্রথম গুটি কাটা বৈধ হবে। যে গুটি দিয়ে খাওয়া হয়েছে ঐ চলতি দানে সে গুটি দিয়ে আর কোনো চাল দেয়া যাবে না।
  • কারো তিনটা গুটি পেকে গেলে সে অন্যের গুটি খাওয়ার/কাটার যোগ্যতা হারায়। জোড় গুটি খেতে হলে বিপক্ষের প্রতিযোগীর জোড় গুটি দ্বারা খেতে হবে। জোড় গুটি শুধুমাত্র জোড় দানে চলবে। জোড় গুটি অন্য সকল প্রতিযোগীর গুটির জন্য স্টপেজ সমতুল্য। জোড় গুটিকে বিপক্ষের কোনো সিঙেল গুটি ডিঙিয়ে যেতে পারবে না। আগে জোড়ের উপর উঠতে হবে, তারপর যেতে হবে, অন্যথায় পিছনে আটকে থাকবে। কোনো জোড় কোনো ক্রমে বিজোড় অবস্থায় (তিনটি একসাথে) থাকলে অন্য যে কোনো গুটি তখন ঐ জোড়কে অতিক্রম করে যেতে পারবে৷ এছাড়া, কেবল একটি জোড় আরেকটি জোড়কে ডিঙিয়ে যেতে পারবে।
গুটি ব্যাক করা/ কাঁচা করা
  • পাকানোর ঘরে আছে কিন্তু পাকে নাই এমন নিজের গুটি চাইলে কোনো প্রতিযোগী যখন তখন কাঁচা করতে পারবে/উল্টো ঘুরাতে পারবে। সে গুটিকে তখন পুরো ছক আবার ঘুরে এসে পাকতে হবে।
  • অবশ্য দুইজন প্রতিযোগী প্রত্যেকে আটটি করে গুটি নিয়েও খেলতে পারেন।
  • বিপরীত দিকের ঘরের দুইজন জুটি বেধেও খেলতে পারেন, সেক্ষেত্রে দুইজনের আলাদা ভাবে প্রথম গুটি বোর্ডে ওঠার পরেই কেবল একে অন্যের দান ব্যবহার করতে পারবেন। আবার, একজনের চারটা গুুুুটি পেকে গেলে আর তার দান পার্টনার ব্যবহার করতে পারবেন না।
গুটি জোর করার নিয়ম

আপনার ঘর থেকে কোনো গুটি জোর হবেনা। প্রথমে আপনাকে একটি চাল দিতে হবে এবং পরবর্তী চাল দিয়ে গুটি জোর করতে হবে।

সাপ লুডু

সম্পাদনা

লুডু খেলার ছকের পেছনে সাপ খেলার ঘর আঁকা থাকে। এই খেলায় যে প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথমে ১ (এক) ফেলতে পারে সে ঘর থেকে বের হবার সুযোগ পায়। এক থেকে একশ পর্যন্ত যে প্রতিযোগী যেতে পারে সে জয়ী হয়। যে গুটি সাপের মুখে এসে পড়ে সাপ তাকে কেটে দেয় অর্থাৎ সাপের মুখ থেকে লেজ অঙ্কিত ঘরে পিছিয়ে আসে এবং যে গুটি মই এর গোড়া অঙ্কিত ঘরে আসে সেটি মই বেয়ে মই এর উপরের ঘরটিতে পৌঁছে যায়। আর যার গুটি তাড়াতাড়ি ১০০ নম্বর ঘরে পৌঁছাবে তাকে বিজয়ী হিসেবে ধরা হবে।

পৃথিবী ভ্ৰমণ লুডু

সম্পাদনা

পৃথিবী ভ্ৰমণ লুডুর মাধ্যমে বিশ্বকে জানা যায়। এ লুডুও একইভাবে খেলা হয়। বোর্ডে উড়োজাহাজ, ট্ৰেন, বাস ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। ছক্কায় এক ফোঁটা উঠলে গুটি ঘর থেকে বের হবে। এরপরে ছক্কায় যে নম্বরের ফোঁটা উঠবে সে নম্বরের সাহায্যে খেলোয়াড় সেই দেশে যাবে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শুরু করে সারা পৃথিবী ঘুরে যে সকলের আগে পাক্কা ঘরে পৌঁছাবে সেই জয়ী হবে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশের খেলাধুলা, রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমী