লুইস ইভান্স

ওয়েলসের জরিপকারী এবং ভূগোলবিদ

লুইস ইভান্স (জন্ম: আনুমানিক ১৭০০, মৃত্যু: ১২ জুন ১৭৫৬)[১] ওয়েলসের একজন জরিপকারীভূগোলবিদ ছিলেন। তার ভাইয়ের নাম জন। ইভান্স ১৭৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ আমেরিকায় চলে যান এবং ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৭৫৫ সালে তার অঙ্কিত মধ্য ব্রিটিশ কলোনিসমূহের মানচিত্রের জন্য বিখ্যাত।

ইভান্সের আমেরিকায় মধ্য ব্রিটিশ কলোনিসমূহের সাধারণ মানচিত্র, ১৭৫৫ সালে থমাস পাওনালের সহযোগিতায় প্রকাশিত ও তার প্রতি উৎসর্গীকৃত।

জীবনী সম্পাদনা

লুইস ইভান্স ওয়েলসের কার্নারভনশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি উত্তর আমেরিকার ব্রিটিশ কলোনিতে চলে যান এবং ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস শুরু করেন। ১৭৩৬ সালে তিনি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন নামের এক ছাপাখানার মালিকের কাছ থেকে একটি বই কেনেন, এখান থেকেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু হয়। ফ্রাঙ্কলিন সবসময় ইভান্সের ভূতাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উৎসাহ দিতেন। ১৭৪৩ সালে ইভান্স ফ্রাঙ্কলিনের স্ত্রী দেবোরাহ রিড ফ্রাঙ্কলিনের বান্ধবী মার্থা হসকিন্সকে বিবাহ করেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়, তার নাম অ্যামেলিয়া। ১৭৫৪ সালে মার্থা মৃত্যুবরণ করেন, তখন অ্যামেলিয়ার বয়স ছিল মাত্র দশ বছর।[২]

ইভান্স জরিপ কাজে পশ্চিম নিউ ইয়র্কের ইরোকুয়োসের ওনোন্দাগায় ভ্রমণ করেন। তার সাথে ছিলেন বিশিষ্ট অনুবাদক কনরাড ওয়াইসার, যিনি তরুণ বয়সে মোহক জনগোষ্ঠীর সাথে বসবাস করেছেন, এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী জন বারট্রাম। এই ভ্রমণ থেকে তিনি নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সিডেলাওয়্যার এর মানচিত্র প্রকাশ করেন। মানচিত্রটিতে পরে পেনসিলভানিয়া যুক্ত করে পেনসিলভানিয়া, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি ও ডেলাওয়্যারের তিনটি কাউন্টির মানচিত্র (১৭৪৯, সংশোধিত সংস্করণ ১৭৫২) নামে প্রকাশ করা হয়।[৩]

জানা যায়, ১৭৫১ সালে ইভান্স ফিলাডেলফিয়া, নেওয়ার্ক ও নিউ ইয়র্কে ভূগোল ও প্রাকৃতিক দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।[২]

তার আমেরিকায় মধ্য ব্রিটিশ কলোনিসমূহের সাধারণ মানচিত্র (১৭৫৫)-এ তিনি পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ডনিউ ইংল্যান্ডের কিছু অংশের অবস্থান উল্লেখ করেন। তিনি এ মানচিত্রটি তার ভৌগোলিক রচনাবলি গ্রন্থে প্রকাশ করেন। ১৭৫৫ সালে ফ্রাঙ্কলিন ও ডেভিড হলও মানচিত্রটি প্রকাশ করেছিলেন।[২]

নিউ ইয়র্কের গভর্নর ড্যানভার্স অসবর্নের সচিব ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পর্যবেক্ষক থমাস পাওনাল। ১৭৫৩ সালে অসবর্নের মৃত্যুর পরও পাওনাল সেখানেই থেকে যান। তিনি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং লুইস ইভান্সের তৈরি মানচিত্র প্রকাশে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধের সময় ঔপনিবেশিক এলাকাগুলোতে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেই যুদ্ধে জেনারেল এডওয়ার্ড ব্র্যাডক ইভান্সের তৈরি মানচিত্রটি ব্যবহার করেন এবং এর ব্যাপক প্রশংসা করেন। সেসময় এর জন্য জনসাধারণের প্রশংসার বেশিরভাগই পেয়েছিলেন পাওনাল।[৪]

১৭৫৬ সালের জুন মাসে নিউ ইয়র্কে লুইস ইভান্স মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ ফিলাডেলফিয়ায় নিয়ে আসা হয় এবং প্রসিদ্ধ ক্রাইস্ট চার্চ বেরিয়াল গ্রাউন্ডে তাকে সমাহিত করা হয়। এটি বর্তমানে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ হিস্টোরিক প্লেসেস এর তালিকাভুক্ত একটি জায়গা।

পরিবার সম্পাদনা

১৭৫৪ সালে ইভান্সের স্ত্রী মার্থা মৃত্যুবরণ করেন। ইভান্স তার ভাই জন ইভান্সকে কন্যা অ্যামেলিয়ার (ফিলাডেলফিয়া, ১৭৪৪-হাইথ, সাউদাম্পটন, ১৮৩৫) লালন-পালনের দায়িত্ব দেন। জনও লুইস ইভান্সের সাথে ফিলাডেলফিয়ায় এসেছিলেন। জন ইভান্স ১৭৫৯ সালে মারা যান। এরপর দেবোরাহ এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন অ্যামেলিয়ার দেখাশোনা করেন। আঠারো বছর বয়সে অ্যামেলিয়া কিছু সময়ের জন্য লন্ডনে যান, পরবর্তীতে তিনি তিউনিসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জেমস ট্রেইল ও তার স্ত্রীর তিন কন্যার গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[২]

সেখানে অ্যামেলিয়ার সাথে দেখা হয় আইরিশ মার্চেন্ট মেরিনের ক্যাপ্টেন ডেভিড ব্যারির এবং ১৭৭০ সালে তাদের বিয়ে হয়। বর্ডাক্স ও মেডোক এলাকার সাথে ব্যারির ভালো পরিচিতি ছিল, কারণ এখান থেকেই জাহাজে করে আয়ারল্যান্ডে ওয়াইনস নিয়ে যাওয়া হতো। তাদের পাঁচ সন্তান ছিল, এদের একজনের নাম অ্যানা আফ্রিকানা ব্যারি। ১৭৮১ সালে ডেভিড ব্যারি পিসায় মৃত্যুবরণ করেন, তাকে লিভোর্নোর ওল্ড ইংলিশ সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

বিধবা অ্যামেলিয়া ইভান্স ব্যারি ১৭৯০ সালে নিজের নাম অপ্রকাশিত রেখে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। উপন্যাসটির নাম মেমোয়ার্স অফ মারিয়া, এ পারসিয়ান স্লেভ। জানা যায়, তার আরও কিছু পুরনো সাহিত্যকর্ম ছিল, সেগুলোতেও তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি এবং বেশিরভাগই খুঁজে পাওয়া যায়নি।[২]

চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর আলফ্রেডো মুলার (১৮৬৯-১৯৩৯) এবং তার ভাই সাইক্লিং চ্যাম্পিয়ন রডল্ফো (১৮৭৬-১৯৪৭) অ্যামেলিয়ার বংশধর। তারা ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক, তাদের জন্মস্থান হেরিসাউ, কান্তন দ্য ল'অ্যাপেনজেল দেস রোডস এক্সতেরিউরেস। আলফ্রেডো পরবর্তীতে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পান।[৫]

প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পাদনা

 
পেনসিলভানিয়া, নিউ-জার্সি, নিউ-ইয়র্ক এবং ডেলাওয়্যারের তিনটি কাউন্টির মানচিত্র, লুইস ইভান্স, ১৭৪৯
  • ইভান্স, লুইস, ব্রিফ অ্যাকাউন্ট অফ পেনসিলভানিয়া, ১৭৫৩
  • ইভান্স, লুইস, জিওগ্রাফিকাল, হিস্টরিকাল, পলিটিকাল, ফিলোসোফিকাল অ্যান্ড মেকানিকাল এসেস, ফিলাডেলফিয়া, ১৭৫৫ এবং লন্ডন, ১৭৫৬
  • জিপসন, লরেন্স হেনরি, লুইস ইভান্স, ফিলাডেলফিয়া, ১৯৩৯ (জীবনী)

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mary Gwyneth Lewis। "Evans, Lewis (c.1700-1756), cartographer"Dictionary of Welsh Biography। National Library of Wales। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৯ 
  2. Hélène Koehl, Matteo Giunti, "Amelia Evans Barry (1744-1835) ou quand Livourne décidait d'un destin de femme et d'écrivain", Nuovi Studi Livornesi, XIV, 2007, pp.95-118 (ফরাসি ভাষায়).
  3. Evans, Lewis (১৭৪৯)। A Map of Pensilvania, New-Jersey, New-York, and the Three Delaware Counties (মানচিত্র)। Philadelphia। 
  4. Schutz, John (১৯৫১)। Thomas Pownall, British Defender of American Liberty; a Study of Anglo-American Relations in the Eighteenth Century । Glendale, CA: A. H. Clark। পৃষ্ঠা 53hdl:2027/mdp.39015027048787ওসিএলসি 296382778 
  5. "Alfredo Müller, un toscan aux racines internationales…", Alfredo Müller website

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা