লিপষ্টিক নারীবাদ (একই সাথে গার্লি Girly/Girlie নারীবাদ নামেও পরিচিত)[১][২] নারীবাদের একটি প্রকরণ। এই নারীবাদ নারীত্বের প্রচলিত ধারণাকে ধারণ করে, যার মধ্যে চিরাচরিত নারীবাদী ধারণার সাথে সাথে নারীর যৌন ক্ষমতাও যুক্ত। নারীবাদের তৃতীয় তরঙ্গের সময়কালে এই ধারণার উদ্ভব হয়, পূববর্তী আন্দোলনগুলোর আদর্শের প্রতি একধরণের উত্তর হিসেবে, যেখানে নারী মনে করে যে, সে একইসাথে নারী ও নারীসুলভ হতে পারে না।[৩][৪]

পূর্ববর্তী নারীবাদী কর্মসূচীগুলো নারীর মৌলিক অধিকারের প্রতি জোর দিয়েছিল, যার সূচনা হয়েছিল নারীর সাফরেজ মুভমেন্টের মধ্য দিয়ে। লিপষ্টিক নারীবাদ প্রমাণ করতে চায় যে, নারী তার নারীত্ব ও যৌনতাকে বাতিল না করেও অথবা অবহেলা না করেও নিজের নারীবাদী সত্ত্বা ধরে রাখতে পারে।

নারীবাদকে ঘিরে প্রচলিত নির্দিষ্ট ধ্যানধারণা এবং সেই সময়ের নারীবাদ নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সামাজিক বয়ান থাকা সত্ত্বেও জোরা নিয়েল হার্সটন ও এমা গোল্ডম্যান যুক্তি দেখান যে, নারীত্বের ধারণা ও নান্দনিকতার দার্শনিক ধারণাকে ব্যবহার করে প্রাত্যহিক জীবনে ক্রিয়াশীল লিঙ্গীয় সম্পর্ককে বিশ্লেষণ ও ক্ষমতায়িত করা সম্ভব। লিপষ্টিক নারীবাদ নারীত্ব এর আদর্শ ও নারীর যৌনচাহিদাকে ধারণ করে। লিপষ্টিক নারীবাদের বিষয়ে যারা জ্ঞান রাখেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, নারীর অধিকার রয়েছে তার আবেগ ও যৌনতা অনুযায়ী আচরণ করার।[৫][৬] এক অর্থে বলা যায় যে, নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সাফল্যের কারণে নারীত্বের যে বিষয়গুলোকে পূর্বে ক্ষমতাহীন বলে মনে করা হতো, যেমন মেক-আপ, ষ্টিলেটো প্রভৃতিকে নারীত্বের বিষয় বলে দাবী করা সম্ভব হয়েছে।[৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় তরঙ্গের নারীবাদের একটি আন্দোলন হল লিপষ্টিক নারীবাদ। নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের উত্থান ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৬০ সালের দিকে। এই তরঙ্গ আমেরিকার সৌন্দর্য শিল্প ও তার মানদন্ডগুলোপ প্রতি আপত্তি উত্থাপন করে নারীসুলভ সামগ্রী ব্যবহার বর্জন করার মাধ্যমে। এই সামগ্রীগুলোর মধ্যে ছিল বক্ষবন্ধনী, কোমরবন্ধ, চুল কুঞ্চনকারী যন্ত্র, কৃত্রিম চোখের পাতা এবং নারীদের জন্য প্রকাশিত ম্যাগাজিন। এই সামগ্রীগুলো বর্জনের পাশাপাশি যা নারীসুলভ নয় সেইসব অপ্রচলিত কর্মকান্ড দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদের নারী স্বাধীনতার চিহ্ন হয়ে ওঠে। যেমন পায়ের লোম না কামানো কিংবা কোন মেকআপ ব্যবহার না করা। প্রথমদিকের সাহিত্য হতে এই সময় পর্যন্ত, নারীত্বের প্রকাশ নারীবাদের সাথে এক বিপরীত অবস্থানের সম্পর্ক ধরে রেখেছে। অষ্টাদশ শতকে উলস্টোনক্রাফট তার লেখায় যে সকল নারী তাদের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিত তাদের সমালোচনা করেছেন “পালকযুক্ত পাখী” বলে, যারা পালক ছাড়া আর কিছু্ই নয়। কিছুকাল পরে সিমোনে দ্য ব্যুভোর নারীদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তাদের আবেগের প্রতি সাড়া না দিয়ে এবং সৌন্দর্যের কৃত্ত্বিমতার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে নিজের শরীর সর্বস্ব ভাবনার উর্ব্ধে ওঠার জন্য।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Writings of the Third Wave: Young Feminists in Conversation"। American Library Association। 
  2. Foss, Karen A.; Foss, Sonja K.; Ruggerio, Alena Amato (2022) (২০২১)। Feminism in Practice: Communication Strategies for Making Change: Long Grove, IL। Waveland Press. p. 12.। আইএসবিএন ISBN 978-1-4786-4758-4 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  3. Hillman, Betty Luther (২০১৩)। ""The Clothes I Wear Help Me to Know My Own Power": The Politics of Gender Presentation in the Era of Women's Liberation"Frontiers: A Journal of Women Studies34 (2): 155–185। আইএসএসএন 0160-9009ডিওআই:10.5250/fronjwomestud.34.2.0155 
  4. Gurrieri, Lauren; Drenten, Jenna (২০২১-০৫-০৪)। "The feminist politics of choice: lipstick as a marketplace icon"Consumption Markets & Culture (ইংরেজি ভাষায়)। 24 (3): 225–240। আইএসএসএন 1025-3866ডিওআই:10.1080/10253866.2019.1670649 
  5. Sweeney, Fionnghuala। "'Beautiful, radiant things': Aesthetics, experience and feminist practice a response to Kathy Davis" 
  6. "Lipstick feminism"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০১-৩১। 
  7. Natasha Walters, Living Dolls: The Return of Sexism (2010) p. 129