লায়ন (২০১৬-এর চলচ্চিত্র)

লায়ন (ইংরেজি: Lion; বাংলা অনুবাদ: সিংহ) গার্থ ডেভিস পরিচালিত ২০১৬ সালের অস্ট্রেলীয়-ব্রিটিশ জীবনীমূলক চলচ্চিত্র। এটি গার্থ ডেভিস পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। সারু ব্রায়ার্লিল্যারি বুট্রুস রচিত জীবনীমূলক আ লং ওয়ে হোম অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন লুক ডেভিস। এতে সারু ব্রায়ার্লি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানি পাওয়ার (কিশোর সারু) এবং দেব প্যাটেল (যুবক সারু)। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুনি মারা, ডেভিড ওয়েনহাম এবং নিকোল কিডম্যান

লায়ন
অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তির পোস্টার
Lion
পরিচালকগার্থ ডেভিস
প্রযোজক
  • ইয়ান ক্যানিং
  • অ্যাঙ্গি ফিল্ডার
  • এমিলি শারম্যান
চিত্রনাট্যকারলুক ডেভিস
উৎসসারু ব্রায়ার্লিল্যারি বুট্রুস কর্তৃক 
আ লং ওয়ে হোম
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকার
  • হশকা
  • ডাস্টিন ওহারোলান
চিত্রগ্রাহকগ্রেগ ফ্রেজার
সম্পাদকআলেসান্দ্রে দে ফ্রঁসেস্কি
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশক
  • দি ওয়েনস্টেইন কোম্পানি (যুক্তরাষ্ট্র)
  • ট্রান্সমিশন ফিল্মস (অস্ট্রেলিয়া)
  • এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর্স (যুক্তরাজ্য)
মুক্তি
  • ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ (2016-09-10) (টরোন্টো)
  • ২৫ নভেম্বর ২০১৬ (2016-11-25) (যুক্তরাষ্ট্র)
  • ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ (2017-01-19) (অস্ট্রেলিয়া)
  • ২০ জানুয়ারি ২০১৭ (2017-01-20) (যুক্তরাজ্য)
স্থিতিকাল১১৮ মিনিট[১]
দেশঅস্ট্রেলিয়া
যুক্তরাজ্য
ভাষাইংরেজি
হিন্দি
বাংলা
নির্মাণব্যয়$১২ মিলিয়ন[২]
আয়$১৩৯.৯ মিলিয়ন[৩]

চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ টরোন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত পরিসরে মুক্তি দেয় দি ওয়েনস্টেইন কোম্পানি এবং পরে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি বৃহৎ পরিসরে মুক্তি দেওয়া হয়। ছবিটি ২০১৭ সালে ১৯ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় এবং ২০ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে মুক্তি দেওয়া হয়। লায়ন ছবিটি ৮৯তম একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীসহ মোট ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে। ছবিটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা এবং শ্রেষ্ঠ গৃহীত চিত্রনাট্য বিভাগে দুটি বাফটা পুরস্কার লাভ করে।

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

১৯৮৬ সালে সারু নামে পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে তার ভাই গুড্ডু, তার মা এবং তার ছোট বোন শাকিলার সাথে ভারতের খান্দোয়ায় বাস করত। গুড্ডু ও সারু মালবাহী রেলগাড়ি থেকে কয়লা চুরি করে দুধ এবং খাবার কিনত। একদিন সারু গুড্ডুর সাথে পীড়াপীড়ি করে রাতে তার সাথে নিকটস্থ একটি রেল স্টেশনে বেড়িয়ে যায়। সারু স্টেশনে ঘুমিয়ে পড়লে গুড্ডু তাকে জাগিয়ে বলে যায় সেখান থেকে কোথাও না যেতে। সারু ঘুম থেকে উঠে গুড্ডুকে না পেয়ে গুড্ডু রেলগাড়িতে আছে মনে করে একটি রেলগাড়িতে ওঠে যায়। সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে সে দেখে রেলগাড়ি চলছে। সে নামার চেষ্টা করে কিন্তু দরজা আটকানো থাকার কারণে সে নামতে পারে না। দুইদিন পর সে কলকাতায় পৌঁছে। সেখানে সে বাংলা ভাষা বুঝতে পারে না। সে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে তার গ্রামের নাম বলে। কিন্তু টিকেট বিক্রেতা তার গ্রামের নাম 'গণেশতলি' চিনতে পারে না। সে স্টেশনে আরও বাচ্চাদের সাথে রাত কাটায়। কিন্তু মাঝ রাতে সজাগ হয়ে সে দেখে কয়েকজন মানুষ তাদের অপহরণ করার চেষ্টা করছে। সারু সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

শহরে ঘুরতে ঘুরতে তার নূর নামে এক মহিলার সাথে দেখা হয়। নূর বন্ধুভাবাপন্ন মহিলা। সে সারুকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। নূর তাকে বলে যে রাম নামে একজন আসবে এবং তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিবে। কিন্তু পরদিন রাম আসলে সারু নূর এবং রামের মতিগতি বুঝতে পারে এবং আবার পালিয়ে যায়। হাওড়া ব্রিজের পাশে দুই মাসের মত কাটানোর পর এক যুবক তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। পুলিশ তার পরিবারের সন্ধান করতে না পেরে তাকে এতিমখানায় দিয়ে দেয়। তিন মাস পর মিসেস সুদ সারুকে জানায় তিনি কয়েকটি সংবাদপত্রে তার ছবি ছাপিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কিন্তু কেউ সাড়া দেয় নি। সুদ তাকে বলে জন এবং সু নামক এক অস্ট্রেলীয় দম্পতি তাকে দত্তক নিতে চায় এবং তাকে অস্ত্রেলিয়া নিয়ে যেতে চায়। মিসেস সুদ তাকে ইংরেজি শিখান। ১৯৮৭ সালে সারু তাসমানিয়ার হোবার্টে জন এবং সু ব্রায়ার্লির কাছে পৌঁছে। এক বছর পর ব্রায়ার্লি দম্পতি ম্যান্টোশ নামে আরেকটি ছেলে দত্তক নেয়। ম্যান্টোশের নতুন বাড়িতে মানিয়ে নিয়ে কষ্ট হয়।

২০ বছর পর সারু এখন পরিপূর্ণ যুবক। সে হোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়তে মেলবোর্ন যাচ্ছে। সেখানে তার কলেজের বান্ধবী লুসির সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন তার ভারতীয় কয়েকজন বন্ধুর সাথে ভোজনে শরিক হতে গিয়ে সে জিলাপী খুঁজে পায়, যা তার শৈশবে না খাওয়ার ক্ষেদ ছিল। সে তার বন্ধুদের জানায় তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল এবং তার বন্ধুরা ভারতে তার শহর খুঁজতে তাকে গুগল আর্থের সাহায্য নিতে বলে। সারু তার খোঁজা শুরু করে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে লুসির কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। সারু তার মা সুকে দেখতে যায়। সুয়ের স্বাস্থ্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে সু আসলে বন্ধ্যা নয়। সু নিজেই দত্তক নেয় কারণ সে মনে করে পৃথিবীতে এমনিতেই অনেক মানুষ রয়েছে।

সারু গুগল আর্থে তার শহর খোঁজা চালিয়ে যায়। এক সন্ধ্যায় সে তার র‍্যাডিয়াসের বাইরে স্ক্যান করতে গিয়ে শিলাগঠিত পর্বত অঞ্চল দেখতে পায়, যেখানে তার মা কাজ করত। সে কোথায় থাকত তা খুঁজে পায়। তার শহরের নাম গণেশ তলাই, যা খান্দোয়া জেলায় অবস্থিত। সে উৎফুল্ল হয়ে তার বান্ধবী লুসিকে তা জানায় এবং তাকে দত্তক নেয়া মাকে এ ব্যাপারে জানায়। সু তার কাজে সমর্থন দেন। সারু তার নিজ শহরে ফিরে যায় এবং তার প্রকৃত মা এবং বোনের দেখা পায়। কিন্তু সে জানতে পারে তার বড় ভাই গুড্ডু সে রাতেই রেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মারা যায়। সারুর মা সারু ফিরে আসবে এই আশা ছাড়ে নি এবং সে স্থানও ত্যাগ করে নি। সারু পরে জানতে পারে তার নাম আসলে ভুলভাবে উচ্চারিত হয়ে আসছিল। তার আসল নাম 'শেরু', যা 'শের' শব্দ থেকে এসেছে এবং হিন্দি শব্দ 'শের' অর্থ 'সিংহ'।

কুশীলব সম্পাদনা

নির্মাণ সম্পাদনা

চরিত্রায়ণ সম্পাদনা

২০১৪ সালের অক্টোবরে দেব প্যাটেল এবং নিকোল কিডম্যানকে প্রধান চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়, যদিও তারা দুজনেই পার্শ্ব অভিনয়ের জন্য একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৪] ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, প্রিয়াঙ্কা বোস, তনিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়, এবং দীপ্তি নাভাল তাদের স্ব-স্ব চরিত্রে যোগ দেন।[৫] ২০১৫ সালের এপ্রিলে রুনি মারা, ডেভিড ওয়েনহাম এবং ডিভিয়ান লাডওয়া তাদের চরিত্রে যোগ দেন।[৬] পল্লবী শারদাও সারুর কলেজের বন্ধু চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যোগ দেন।[৭]

চিত্রগ্রহণ সম্পাদনা

চলচ্চিত্রটির প্রধান চিত্রগ্রহণ শুরু হয় ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে ভারতের কলকাতায়।[৫] এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এবং পরে হোবার্টসহ তাসমানিয়ার কয়েকটি স্থানে চিত্রায়িত হয়।[৮] কিডম্যানের দৃশ্যগুলো অস্ট্রেলিয়ায় ধারণ করা হয়।[৬][৯]

সঙ্গীত সম্পাদনা

চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন হশকা এবং ডাস্টিন ওহ্যারোলান।[১০] সিয়া এই চলচ্চিত্রের জন্য "নেভার গিভ আপ" গানটি রচনা করেন।[১১] ছবিতে প্রখ্যাত গীতিকার জিমি র‍্যাডক্লিফ রচিত "দ্য সান, দ্য স্যান্ড অ্যান্ড দ্য সি" গানটি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় সুরকার এ আর রহমান "উর্বশী উর্বশী" গানের সুর করেছেন।

পুরস্কার ও মনোনয়ন সম্পাদনা

৮৯তম একাডেমি পুরস্কার
৭০তম বাফটা পুরস্কার
৭৪তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার
শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • বিজয়ী: দর্শক পছন্দ - লায়ন
ভার্জিনিয়া চলচ্চিত্র উৎসব
  • বিজয়ী: দর্শক পছন্দ - লায়ন
হলিউড চলচ্চিত্র পুরস্কার

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Lion (PG)"ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন। ২ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  2. "Lion, Starring Dev Patel, Nicole Kidman, and Rooney Mara, Notches Four Golden Globe Nominations (Including Best Picture) and Zurich Film Festival Diversity in Film Award"ভ্যানিটি ফেয়ার। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  3. "Lion (2016)"বক্স অফিস মোজো। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  4. Roxborough, Scott (৩০ অক্টোবর ২০১৪)। "AFM: Dev Patel Attached to Star in The Weinstein Co.'s 'Lion' (Exclusive)"দ্য হলিউড রিপোর্টার। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  5. Frater, Patrick (১৪ জানুয়ারি ২০১৫)। "Nicole Kidman, Dev Patel to Roar in India-set Survival Tale 'Lion'"ভ্যারাইটি। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  6. Barraclough, Leo (৭ এপ্রিল ২০১৫)। "Rooney Mara Joins Nicole Kidman, Dev Patel in 'Lion'"ভ্যারাইটি। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  7. "Pallavi Sharda in Dev Patel, Nicole Kidman starrer 'Lion'"ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। আগস্ট ২২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  8. Rizzo, Cailey (জানুয়ারি ২০১৬)। "Where 'Lion' Shot All Those Incredible Tasmanian Scenes"Travel + Leisure। TIME Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  9. "Lion: Tasmanian farmer hosts Nicole Kidman, Dev Patel for filming of Saroo Brierley story"abc.net.au। ১৪ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  10. "Dustin O'Halloran & Hauschka Scoring Garth Davis's Lion"Film Music Reporter। মার্চ ২, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৭ 
  11. Helman, Peter (১০ নভেম্বর ২০১৬)। "Sia - Never Give Up"Stereogum। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা