লাচিত বরফুকন

আহোম সাম্রাজ্যের সেনাপতি

লাচিত বরফুকন সম্পূৰ্ণ নাম - চাও লাচিত ফুকনলুং (অসমীয়া: লাচিত বৰফুকন) আহোম সাম্রাজ্যের সাহসি ও পরাক্রমী সেনাপতি ছিলেন। ১৬৬৯ সনে তিনি আহোম সেনার দ্বারা বিশাল মোগল সেনা বাহিনীকে পরাজিত করে মোগল সাম্রাজ্যকে চিরকালের জন্য আসাম থেকে দূর করে দিয়েছিলেন। শরাইঘাটের যুদ্ধের পরাক্রমের জন্য আসামর ইতিহাসে লাচিত বরফুকনের নাম উজ্জ্বলিত হয়ে আছে। লাচিত বরফুকনের বীরত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর তারিখ অসমে লাচিত দিবস পালন করা হয়।[১][২]

লাচিত বরফুকন / চাও লাচিত ফুকনলুং
লাচিত লাও
জোরহাটে লাচিত বরফুকন-এর ভাস্কর্য
জন্ম
লাচিত লাও

২৪ নবেম্বর, ১৬২২
ছেং-লুঙ-মুঙ , চে-রাই-ডয়
মৃত্যু১৬৭১
হোলোঙাপার, যোরহাট, অসম
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণফুকনলুং
উল্লেখযোগ্য কর্ম
১৬৭১-এর মোঘলবিরোধী যুদ্ধ
আদি নিবাসচে-রাই-ডয়
উপাধিফুকনলুং
পিতা-মাতাছেঙ-কালুক মছাই (পিতৃ) , কুন্টী মরণ (মাতৃ)
আত্মীয়ভাতৃ - মবাও-লাও, লাপেট-লাও,ভগ্নী -লাইছেং

জীবনী সম্পাদনা

লাচিত ছেঙ-কালুক মছাই (একজন তাই-আহোম পাদ্রী) এর চতুর্থ পুত্র ছিলেন এবং আহোম রাজা সুসেনফার অধীনে সেনাপ্রধান (অথবা "ফু-কান") ছিলেন[৩]।ছেং-লুঙ-মুঙ, চে-রাই-ডয়তে তাই আহোম সম্প্রদায়ের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, রাজপরিবারে জন্ম হওয়ার জন্য লাচিত সামরিক ও অসামরিক দুই ধরনের শিক্ষা পেয়েছিলেন।লাচিত মানবতা, বনফ দর্শনশাস্ত্র, আদিবাসী শাস্ত্র এবং সামরিক দক্ষতা শিক্ষিত ছিল[৩] । শৈশবে তিনি কর্মনিষ্ঠা, কর্তব্য পরায়ন ও সততার গুন পেয়েছিলেন। । লাচিত বরফুকনের প্রকৃত নাম ছিল লাচিত লাও। আহোম সাম্রাজ্যে মূখ্য সেনাপতিকে বরকুকন উপাধী দেওয়া হত। লাচিত প্রথম ঘোড়া বরুয়া উপাধী পেয়েছিলেন কারণ তিনি প্রথম অবস্থায় দুর্দান্ত ঘোড়া বশে নিপুন ছিলেন। তারপর তিনি দুলীয়া বরবরুয়া, শিমুলগুরীয়া ফুকন, দোলাকাষরীয়া ফুকন উপাধী পেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি রাজা চক্রধ্বজ সিংহ কর্তৃক “ বরফুকন” উপাধী পেয়েছিলেন। আহোম রাজা সুসেনফার শরাইঘাট যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে লাচিত বরফুকনকে নিযুক্ত করেছিলেন।[৪] তিনি লাচিতকে উপহারস্বরুপ স্বর্ণ তরোয়াল (আহোম ভাষায় হেং দাং) ও পারম্পরিক বস্ত্র প্রদান করেছিলেন।

 
ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমীতে লাচিত আবক্ষ।

দায়িত্ব সম্পাদনা

সরাইঘাট যুদ্ধের সময় লাচিত মোগলদের বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আহোম সেনাদের একটি উচু দেওয়াল নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। লাচিতের মামা এই দেওয়াল নির্মাণের দ্বায়িত্বে ছিলেন। লাচিতের মামার অলস ভাবের জন্য পর্যাপ্ত সময়ে দেওয়াল নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করতে পারেন নাই। পর্যাপ্ত সময়ে নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ন দেখে তিনি মামার শিরশ্ছেদ করেন। মামার শিরশ্ছেদ করার সময় লাচিতের উক্তি ছিল “দেশতকৈ মোমাই ডাঙর নহয়” অনুবাদ: জন্মভূমি থেকে মামার স্থান বড় না।

 
তেজপুর নেহেরু ম্নয়দানে লাচিত বরফুকনের মূর্তি

সরাইঘাট যুদ্ধ সম্পাদনা

সরাইঘাট যুদ্ধ আহোম সেনাপতি লাচিত ররফুকনের নেতৃত্বে ও মোগল সেনাপতি রাম সিংহের নেতৃত্বে অসমের গুয়াহাটিতে হয়েছিল। আহোম সেনার তুলনায় মোগল সেনারা বেশি শক্তিশালী ছিল কিন্তু গোরিলা যুদ্ধ কৌশলের ফলে মোগলেরা এই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। যুদ্ধে অসফল হওয়ায় মোগল সেনাপতি রাম সিংহ লাচিতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। রাম সিংহ আহোম রাজা চক্রধ্বজ সিংহকে একটি পত্র প্রেরন করেছিলেন যেখানে লেখা ছিল যে লাচিত ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গুয়াহাটিতে মোগল সাম্রাজ্য স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু রাম সিংহের প্রচেষ্টা অসফল হয়েছিল কারণ রাজা চক্রধ্বজ লাচিতের সততা ও নিষ্ঠার প্রতি পূর্ন বিশ্বাস করিতেন ও আহোম সাম্রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী অতন বুরাগোহাই রাম সিংহের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে রাজাকে এই বিষয়ে অবগত করিয়েছিলেন।[৫] মোগলেরা ৩০, ০০০ সৈন্য, ১৫০০০ ধনুর্বিদ, ১৮, ০০০টি ঘোড়া, ১০০০ অধিক কামান ও বিশাল নৌকা নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।[৬][৭] মোগল সেনার বিরুদ্ধে আহোম সেনারা দুর্বল হওয়ায় আহোম সেনারা জয়লাভের আশা বাদ দিয়ে পিছিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। নিজ সেনাকে পিছিয়ে যাওয়া দেখে সেনাপতি লাচিত বরফুকন বলেছিলেন, “তোমরা যদি পিছিয়ে যেতে চাও, যাও কিন্তু স্বর্গদেও আমাকে আদেশ করেছেন, আমি মৃত্যুর আগ মূহর্ত পর্যন্ত লড়ব, তোমরা স্বর্গদেওকে বলবা আমি জীবনের অন্তিম নিশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করেছি। লাচিতের এই বানি আহোম সেনার মধ্যে উত্তেজনা জাগায় ও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে মোগল সেনাকে পরাস্ত করে।[৮]

 
লাচিত ভবন

লাচিত বরকুকনের মৃত্যু সম্পাদনা

সরাইঘাট যুদ্ধের সময় লাচিতের জ্বর হয়েছিল কিন্তু বীর লাচিত ভ্রূক্ষেপ না করে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। সরাইঘাট যুদ্ধ জয়ের কিছুদিন পর জ্বরে লাচিত বরফুকনের মৃত্যু হয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Lachit Divas observed across Assam"। Newslivetv.org। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০৩ 
  2. TI Trade (২০১০-১১-২৫)। "The Assam Tribune Online"। Assamtribune.com। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০৩ 
  3. "Vikaspedia"as.vikaspedia.in। India Development Gateway (InDG)। 
  4. Bhuyan, S K (১৯৪৭)। Lachit Barphukan and His Times। Guwahati: Lawyer's Book Stall। 
  5. "Lachit Borphukan: saluting the redoubtable General of Assam"। Mail-archive.com। ২০০২-১১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০৩ 
  6. "» Remembering our Heroes – Lachit Barphukan & the Battle of Saraighat ."। Satyameva Jayate। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০৩ 
  7. Rashmi Sarmah। "Remembering the Great Lachit Barphukan of Assam – the Hero of Saraighat Battle"। এপ্রিল ২৫, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২, ২০১৩ 
  8. Gurmeet Kanwal (২০০০)। Defenders of the Dawn: A Panorama of Eastern Command। Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 40–। আইএসবিএন 978-81-7062-279-6। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  9. "'Is it wrong to be proactive?'"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-০২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা