রোজা লুইস ম্যাকলি পার্কস (৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ – ২৪ অক্টোবর ২০০৫) ছিলেন আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী যিনি মন্টগোমারি বাস বর্জন ঘটনার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তাকে দ্য ফার্স্ট লেডি অব সিভিল রাইটস এবং দ্য মাদার অব দ্য ফ্রিডম মুভমেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছে।

রোজা পার্কস
১৯৫৫ সালে রোজা পার্কস, পিছনে মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র
জন্ম
রোজা লুইস ম্যাকলি

(১৯১৩-০২-০৪)৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩
তুসকেগি, আলাবামা, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যু২৪ অক্টোবর ২০০৫(2005-10-24) (বয়স ৯২)
ডেট্রয়েট, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র
পেশানাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মী
পরিচিতির কারণমন্টগোমারি বাস বয়কট
আন্দোলনসিভিল রাইটস মুভমেন্ট
দাম্পত্য সঙ্গীরেমন্ড পার্কস (বি. ১৯৩২; মৃ. ১৯৭৭)
স্বাক্ষর

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা রাজ্যে তৎকালীন পৃথকীকরণ নামে বর্ণবাদী একটি আইন ছিল যার মাধ্যমে শেতাঙ্গদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হত। একইভাবে গণপরিবহনেও শেতাঙ্গ ব্যতীত অন্যরা বৈষম্যের শিকার হত। শেতাঙ্গ নয় এমন ব্যক্তিদের বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা আসনে বসতে হত। ১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর আলাবামার মন্টগোমেরিতে রোজা একটি বাসে ওঠেন এবং শেতাঙ্গদের জন্য বরাদ্দ থাকা আসনে গিয়ে বসেন। বাসচালক জেমস এফ. ব্লেক রোজার আসনটি একজন শেতাঙ্গকে দিতে চাইলে রোজা আসন থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে পৃথকীকরণ আইনের দ্বারা তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।

গণপরিবহনে বর্ণবাদী আসন বরাদ্দের প্রতিবাদ এর পূর্বে অনেকেই করেছেন তবে ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালারড পিপল’ মনে করে রোজার গ্রেফতারের ঘটনাটি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পথ সূচনা করে। তার সাহসী পদক্ষেপ ও বিভিন্ন বৈষম্যের বিষয়ে তার ভূমিকা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে প্রতিবাদী করে তুলতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এক বছরের জন্য মন্টগোমেরির বাস পরিসেবা প্রত্যাক্ষান করে, যুদ্ধ পরবর্তী নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য এটিই ছিল কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় কর্তৃক প্রথম কোন সরাসরি প্রতিবাদ আয়োজন। পরবর্তীতে স্টেট কোর্টে মামলাটির বাতিল করা হয় কিন্তু মন্টগোমেরি বাস লস্যুাট ব্রাউডার বনাম গেইল ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে সফল হয়েছিল।[১][২]

পার্কস-এর এই প্রতিবাদী আচরণ পরবর্তীতে অধিকার আদানের আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়। তিনি বর্ণ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেন। অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সময় তিনি এডগার নিক্সন ও মার্টিন লুথার কিংদের সাথে মিলে কাজ করেছেন। তার এই প্রতিবাদী আচরণের জন্য তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হত। এই সময় তাকে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং পরবর্তী দিনগুলোতে তিনি হত্যার হুমকিও পেতেন নিয়মিত।[৩]

অবসর গ্রহণের পর পার্কস তার আত্মজীবনীতে লিখেন, কাজ এখনো শেষ হয়নি এবং এখনো অনেক কাজ বাকী রয়েছে।[৪] বাস বয়কটের ঘটনার পর তিনি ডেট্রয়েটে স্থানান্তরিত হন। সেখানে ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি জন কনির্য়াস নামে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান সরকার প্রতিনিধির সচিব হিসেবে কাজ করেন। এছাড়ও তিনি ব্ল্যাক পাওয়ার মুভমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দিদের পক্ষে কাজ করেন। শেষ জীবনে তার স্মৃতিভ্রংশ হয়। পার্কস তার শেষ জীবনে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৭৯ সালে এনএএসিপি কর্তৃক স্পাইনগ্রেন পুরস্কার, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, দ্য কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল ও মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল হিলের ভাস্কর্য সেকশনে তার ভাস্কর্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালে মৃত্যুর পর তাকে ক্যাপিটল রুটুন্ডাতে সমাহিত করা হয়। এখানে প্রথম নারী হিসেবে এবং চার জন আমেরিকানের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ও মিসোরিতে ৪ ফেব্রুয়ারি তার জন্মদিনকে রোজা পার্কস দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ওহাইও এবং অর্গানে ১ ডিসেম্বর তার গ্রেফতার হওয়ার দিনকে রোজা পার্কস দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. González, Juan; Goodman, Amy (মার্চ ২৯, ২০১৩)। "The Other Rosa Parks: Now 73, Claudette Colvin Was First to Refuse Giving Up Seat on Montgomery Bus"Democracy Now!Pacifica Radio। 25 minutes in। NPR। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৩ 
  2. Branch, Taylor (১৯৮৮)। "PARTING THE WATERS: America in the King Years"। Simon & Schuster। ২০১৩-০৫-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৩ 
  3. "Commentary: Rosa Parks' Role In The Civil Rights Movement"Weekend Edition Sunday, NPR। জুন ১৩, ১৯৯৯। 
  4. Theoharis, Jeanne (ডিসেম্বর ১, ২০১৫)। "How History Got Rosa Parks Wrong" – Washington Post-এর মাধ্যমে।