রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সুরক্ষা প্রদানকারী বাহিনী

বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশের একটি বেসামরিক রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৯৭৬ সালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) অধ্যাদেশ জারি হয় যার মাধ্যমে ’ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড’ পরিবর্তিত হয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) নামে কার্যক্রম শুরু করে। চীফ সুপারিনটেন্ডেন্টের পদের নামকরণ করা হয় চীফ কমান্ড্যান্ট। ডিআইজি, রেলওয়ে পুলিশ আরএনবি’র চিফ কমান্ড্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্মারকঃ Rly/Estb-II/13E-2/83 pt-236, তাং- ২৮/০২/১৯৮৩ খ্রিঃ মূলে এক আদেশে আরএনবি’র চিফ কমান্ড্যান্ট পদ আরএনবি’র নিজস্ব কর্মকর্তা হতে পূরণ করা হবে বলে বলা হয়। আরএনবি রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জ হতে পৃথক হয়ে মহা পরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৬ সালে প্রণিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬ এর মাধ্যমে সংবিধানের ১৫২নং অভিব্যক্তি সম্পন্ন হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনীর মর্যাদায় উন্নীত হলে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ আভ্যন্তরিণ তত্ত্ব্বাবধান বাংলাদেশ রেলওয়ে'র নিকট হতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর Allocation of Rules of Business, 1996 (Revised upto 2017) অনুসারে হস্তান্তরিত হয় প্রযোজ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট।[]

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী
গঠিত১৯৭৬; ৪৮ বছর আগে (1976)
সদরদপ্তররেলভবন, ঢাকা, বাংলাদেশ
যে অঞ্চলে কাজ করে
বাংলাদেশ
সদস্য
৬০০০
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা

দায়িত্ব ও কর্তব্য

সম্পাদনা

বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ,যাত্রীগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী কর্মরত আছে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

ব্রিটিশ আমল

সম্পাদনা

ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ১৮৫৪ সালে রেলওয়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমান বাংলাদেশ অংশে ইস্টার্ণ বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি সর্বপ্রথম ১৫ নভেম্বর, ১৮৬২ সালে জগতি, কুষ্টিয়া হতে দর্শনা, চুয়াডাঙ্গার মধ্যে ৫৩.১১ কি:মি:  রেলযোগাযোগ স্থাপন করে। অল্পদিনের মধ্যেই রেলওয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়, নির্ভরযোগ্য ও সুলভ গণপরিবহন হিসেবে পরিগণিত হয়। রেলওয়ে যোগাযোগ বিস্তৃতির সাথে সাথে ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই সাথে রেলপথে চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধও বৃদ্ধি পায়। উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় ব্রিটিশ রাজ প্রাদেশিক পর্যায়ে ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশের একটি কন্টিনজেন্টকে রেলপথের নিরাপত্তা ও রেলওয়ের সম্পত্তি রক্ষার্থে নিয়োজিত করে। যেমন বেঙ্গল রেলওয়ের নিরাপত্তায় ১ জানুয়ারী ১৮৬৭ সাল হতে ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশ হতে রেলওয়ে পুলিশ ফোর্স নিয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কোম্পানি তাদের কোম্পানিতে নিয়োগকৃত রেলওয়ে পুলিশ ফোর্সের ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ভার বহন করত। এর কিছুদিন পর ব্রিটিশ ভারত সরকার উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, বাণিজ্যিক রেলওয়ে কোম্পানিগুলি রেলপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাস্ট্রীয় পুলিশ ফোর্স অপব্যবহার করে শুধুমাত্র নিজেদের রেলওয়ে সম্পত্তি সুরক্ষায় বেশি মনোযোগী হচ্ছে কিন্তু রেলপথের নিরাপত্তা বিধানে ততটা আগ্রহ প্রদর্শন করছেনা। সুতরাং, ব্রিটিশ রাজ রেলওয়ে পুলিশের সামঞ্জস্যপূর্ণ গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারনের জন্য রেলওয়ে পুলিশ কমিটি, ১৮৭২ গঠন করে। রেলওয়ে পুলিশ কমিটি, ১৮৭২ এর সুপারিশের আলোকে ১৮৮১ সালে রেলওয়ে পুলিশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে । নবসৃষ্ট এই রেলওয়ে পুলিশের দুইটি অংশ ছিল -

ক) গভর্ণমেন্ট পুলিশঃ রেলপথের নিরাপত্তা, অপরাধ দমন ও তদন্তের দায়িত্ব পালন করে। গভর্ণমেন্ট পুলিশ একজন পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্টের অধীনে পরিচালিত হতো।

খ) কোম্পানি পুলিশঃ রেলওয়ের সম্পত্তির সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পালন করে। সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কোম্পানী ’কোম্পানী পুলিশে’র ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করত।

কিছু সময়ের ব্যবধানে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রদেশ ভেদে রেলওয়ে পুলিশ তিন ধরনের প্রশাসনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে থাকে; ১) জেলা পুলিশের অংশ হিসেবে; ২) প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় এাবং ৩) রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থপনায় । উদহরণস্বরুপ, ২৩ জানুয়ারী ১৯০১ বেঙ্গল এন্ড আসাম প্রদেশে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেলপথের নিরাপত্তায় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ভলান্টিয়ার রাইফেলস নামে একটি রেলওয়ে পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করত। ইন্ডিয়ান পুলিশ কমিশন ১৯০২-০৩ উপর্যুক্ত তিনটি রেলওয়ে পুলিশ ব্যবস্থার মধ্যে সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে শুধুমাত্র প্রাদেশিক রেলওয়ে পুলিশ ব্যবস্থার সুপারিশ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারনে ইন্ডিয়ান পুলিশ কমিশনের এ সুপারিশ তখনই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ ভারত সরকার রেলপথের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ কারনে রেলওয়ে পুলিশ কমিটি, ১৯২১ গঠিত হয়। ইন্ডিয়ান পুলিশ কমিশন ১৯০২-০৩ এর প্রাদেশিক রেলওয়ে পুলিশ ব্যবস্থার সুপারিশটি রেলওয়ে পুলিশ কমিটি, ১৯২১ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ অনুমোদনের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রদেশে পূর্বের ’গভর্ণমেন্ট পুলিশ’ রুপান্তরিত হয়ে ’গভর্ণমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)’ নামে পুলিশের একটি স্বতন্ত্র বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। তাছাড়া পূর্বের ’কোম্পানি পুলিশ’ রেলওয়ে পুলিশ হতে পৃথক হয়ে ’ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সমগ্র পূর্ব বাংলা রেলওয়ে পুলিশ একজন পুলিশ সুপারের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করত যার সদর দপ্তর ছিল চট্রগ্রামে।

পাকিস্তান আমল

সম্পাদনা

১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) রেলওয়ে পুলিশ বিভক্ত হয়ে চট্রগ্রাম রেলওয়ে জেলা এবং সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। পুলিশ সুপার চট্রগ্রাম ও সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা দ্বয় ডিআইজি, সিআইডি এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ১৯৬৭ সালে একজন ডিআইজির অধীনে রেলওয়ে রেঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয় যার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় পাহাড়তলী, চট্রগ্রামে। ডিআইজি, রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জ একই সঙ্গে রেলওয়ের ’ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড’ এর প্রধান চীফ সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ডিআইজি, রেলওয়ে রেঞ্জ চীফ সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বেতন ভাতাদি পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে হতে গ্রহণ করতেন।  

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ

সম্পাদনা

সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলাধীন লালমনিরহাটে রেলওয়ে ইন্টেলিজেন্স অফিসার (আরইও) হিসেবে কর্মরত থাকা কালে এসআই আব্দুর রহমান চৌধুরী ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।

বাংলাদেশ আমলঃ

সম্পাদনা

১৯৭৬ সালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) অধ্যাদেশ জারি হয় যার মাধ্যমে ’ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড’ পরিবর্তিত হয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) নামে কার্যক্রম শুরু করে। চীফ সুপারিনটেন্ডেন্টের পদের নামকরণ করা হয় চীফ কমান্ড্যান্ট। ডিআইজি, রেলওয়ে পুলিশ আরএনবি’র চিফ কমান্ড্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্বারক নং- Rly/Estb-II/13E-2/83 pt-236, তাং- ২৮/০২/১৯৮৩ খ্রিঃ মূলে এক আদেশে আরএনবি’র চিফ কমান্ড্যান্ট পদ আরএনবি’র নিজস্ব কর্মকর্তা হতে পূরণ করা হবে বলে বলা হয়। আরএনবি রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জ হতে পৃথক হয়ে মহা পরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে কার্যক্রম শুরু করে। রেলওয়ে নিরপত্তা বাহিনী ১৯৭৬ সালে "রেলওয়ে নিরপত্তা বাহিনী অধ্যাদেশের" মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।[] ২০১৬ সালে, ১৯৭৬ সালের রেলপথের নিরপত্তা বাহিনী অধ্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং ২০১৬ সালের একটি হালনাগাদকৃত অধ্যাদেশ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Steps taken to overhaul railways: Minister"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ "High speed train soon: Sujan"bangladeshpost.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "The Railway Nirapatta Bahini Ordinance, 1976"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  4. "Railway Nirapatta Bahini Bill passed"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০