হিমায়কযন্ত্র
হিমায়কযন্ত্র বা রেফ্রিজেরাটর (কথ্যভাষায় হিমায়ক বা ফ্রিজ) কৃত্রিমভাবে খাদ্য-পানীয় ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করার একটি জনপ্রিয় গৃহস্থালি যন্ত্র।এটি একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র। এতে থাকে তাপনিরোধক আধার এবং একটি তাপকল (যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক) যা হিমায়কের ভেতর থেকে তাপ বাইরে বের করে দেয়, ফলে চারপাশের পরিবেশের তাপমাত্রার চেয়ে হিমায়কের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। উন্নত বিশ্বে খাদ্য সংরক্ষণে অপরির্যভাবে হিমায়ন করা হয়। নিম্ন তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার কম প্রজনন করে ও কম ছড়ায়, সেকারণে খাদ্য সহজে পচে না। হিমায়কযন্ত্রের ভেতর তাপমাত্রা গলনাঙ্কের সামান্য উপরে থাকে। পচনশীল খাদ্যে সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট).[১] হিমায়কযন্ত্রের অনুরূপ যন্ত্র ফ্রিজার কিন্তু গলনাঙ্কের চেয়ে কম তাপমাত্রা বজায় রাখে। এর আগে প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে ঘরবাড়িতে খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতো আইসবক্স। সেকারণে আমেরিকায় হিমায়কযন্ত্র কখনো কখনো আইসবক্স অর্থাৎ বরফ-বাক্স বলা হয়ে থাকে।


খাদ্য ঠান্ডা করে জমানোর প্রথম পদ্ধতিতেই বরফ ব্যবহার করা হয়েছিল। আর কৃত্রিম হিমায়ন শুরু হয় ১৭৫০ দশকের মধ্যভাগে, ১৮০০ শতকের প্রথমভাগে তা আরো উন্নত হয়। ১৮৩৪ সালে, প্রথম কার্যকর জলীয়বাষ্প-চাপ হিমায়কযন্ত্র পদ্ধতি তৈরি করা হয়। আর প্রথম বাণিজ্যিক বরফ তৈরির কল উদ্ভাবিত হয় ১৮৫৪ সালে। ১৯১৩ সালে ঘরে ব্যবহারের উপযোগী হিমায়কযন্ত্র তৈরি করা হয়। ১৯২৩ সালে ফ্রিজিডেয়ার কোম্পানি প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ একক হিমায়ক বানায়। ১৯২০ দশকে ফ্রেয়ন আবিষ্কারের পর ৩০-এর দশকে হিমায়কযন্ত্রের বাজার প্রসারিত হয়। ৪০-এর দশকে আসে ঘরোয়া হিমায়ক, তাতে ছিল প্রয়োজনের চেয়ে বড় আলাদা আলাদা আধার, যেন বরফের ঘনক রাখা যায়। হিমায়কযন্ত্র আসার পূর্বে জমানো বা হিমায়িত খাবার ছিল বিলাসদ্রব্য, কিন্তু এখন তা সাধারণের নাগালে চলে এলো।
হিমায়কযন্ত্র ব্যবহৃত হয় ঘর-গৃহস্থালিতে, শিল্পকারখানায় এবং ব্যবসায়। বাণিজ্যিক হিমায়কযন্ত্র ও ফ্রিজার গৃহস্থালিগুলোর চেয়ে প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে ব্যবহৃত হতো। অধিকাংশ বাসায় উপরে-ফ্রিজার-ও-নিচে-হিমায়কযন্ত্র এরূপ স্টাইলের মডেল ব্যবহার করা হয় যার শুরু ১৯৪০-এর দশকে। বেশিরভাগ গৃহস্থালি হিমায়কযন্ত্র, হিমায়কযন্ত্র-ফ্রিজার ও ফ্রিজারে জলীয়বাষ্প সংকোচন চক্র ব্যবহৃত হয়। নতুনতর হিমায়কযন্ত্রগুলোতে থাকতে পারে অটো বিহিমায়ন পদ্ধতি বা ফ্রিজের পাল্লায় ঠান্ডা পানি ও বরফের জন্য বিধায়ক।
বাসাবাড়িতে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হিমায়কযন্ত্র ও ফ্রিজারগুলো বিভিন্ন আকারের হতে পারে। সবচেয়ে ছোট মডেলগুলোর মধ্যে আছে ৪ লিটার পেলটিয়ার হিমায়কযন্ত্র যা ৬ ক্যান বিয়ার ধারণ করতে পারে। এদিকে বড় আকারের হিমায়কযন্ত্রগুলো মানুষের মাথা-সমান উঁচু হতে পারে, প্রস্থে হতে পারে ১ মিটার এবং ধারণক্ষমতা ৬০০ লিটার। হিমায়কযন্ত্র ও ফ্রিজার রান্নাঘরে স্থায়ীভাবে বসানো থাকতে পারে, আবার চলনশীলও হতে পারে। হিমায়কযন্ত্রের কারণে আধুনিককালে আগের চেয়ে বেশি সময় খাদ্য টাটকাভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। ফলে লোকজন একসাথে অনেক খাবার কিনে রাখতে পারছে, আর সেটা অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী।
বাণিজ্যিক হিমায়ন তাপমাত্রা
সম্পাদনা(উষ্ণতম থেকে শীতলতম)[২]
- হিমায়কযন্ত্র ৩৫ ফা থেকে ৩৮ ফা, এবং তা হিমায়কযন্ত্রের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ফা-এর চেয়ে বেশি নয়
- ফ্রিজার, রিচ-ইন -১০ ফা থেকে +৫ ফা
- ফ্রিজার, ওয়াক-ইন -১০ ফা থেকে ০ ফা
- ফ্রিজার, আইসক্রীম -২০ ফা থেকে -১০ ফা
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাঅতিরিক্ত পঠন
সম্পাদনা- Rees, Jonathan. Refrigeration Nation: A History of Ice, Appliances, and Enterprise in America (Johns Hopkins University Press; 2013) 256 pages
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কীভাবে রেফ্রিজারেটর কাজ করে প্রবন্ধ, লেখক 'Mintu Dhara'
- রেফ্রিজারেটর, কানাডা সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম
- কীভাবে গৃহস্থালি রেফ্রিজারেটরগুলো তৈরি করা হয় (ভিডিও)