রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ
রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ (ইংরেজি: Rumor Scanner Bangladesh) হলো আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক স্বীকৃত বাংলাদেশের একটি ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান।[১][২][৩] ২০২০ সালের ১৭ মার্চ এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এটি ওয়েব কন্টেন্টের পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে ফ্যাক্ট চেক স্টোরি প্রকাশ করে। ঢাকায় এর সদরদপ্তর অবস্থিত।[৪]
![]() প্রাতিষ্ঠানিক লোগো | |
গঠিত | ১৭ মার্চ ২০২০ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | সুমন আহমেদ |
আইনি অবস্থা | সক্রিয় |
উদ্দেশ্য | তথ্য যাচাই |
যে অঞ্চলে | বাংলাদেশ |
ক্ষেত্রসমূহ | সাংবাদিকতা |
ওয়েবসাইট | rumorscanner |
ইতিহাস
সম্পাদনা২০১৯ সালে বাংলাদেশে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা প্রয়োজন, করোনা মহামারি সহ বিভিন্ন গুজবের ভয়াবহতা ও নেতিবাচকতা উপলব্ধি করে তার প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০২০ সালের ১৭ মার্চ এটি আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন সুমন আহমেদ, ছাকিউজ্জামান ও সাঈদ আল মাহমুদ। প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যে এটি আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি লাভ করে।[৫]
পদ্ধতি
সম্পাদনাএটি সর্বমোট আটটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তথ্য যাচাই করে থাকে। যথা: অনুরোধ, সক্রিয় পর্যবেক্ষণ দল, যাচাই এর জন্য দাবী নির্বাচন, গবেষণা, প্রতিবেদন লেখা ও সম্পাদনা, ডিজিটাল ব্যানার, রেটিং এবং সংশোধন।[৬]
ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান
সম্পাদনা২০২৪ সালে ২ হাজার ৯১৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। আগের বছর শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৯১৫টি ভুল তথ্য। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়েছে ভুল তথ্য ছড়ানো। [৭]
২০২৪ সালে বাংলাদেশকে নিয়ে ৭২টি ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রিউমর স্ক্যানার। [৮]
২০২৪ সালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে ভারতের কিছু গণমাধ্যম ও ব্যক্তিরা অপতথ্য ছড়াচ্ছেন বলে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় এক্স (সাবেক টুইটার) মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারকারী ৫০টি অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর পোস্ট ১ কোটি ৫৪ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে। বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট ভারতে অবস্থিত এবং কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ব্যক্তিরাও এ কার্যকলাপে জড়িত। অপতথ্য ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানো হয়েছিলো।[৯]
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানার প্রচারিত ১০৮২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জড়িয়ে একই সময়ে ৭৪টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এই আট মাসে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শেখ হাসিনার বিষয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৪৩) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা মোট রাজনৈতিক ভুল তথ্যের ১৭ শতাংশ।[১০][১১]
সংস্থাটি ২০২২ সালে ১৪০০টি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৮২টি, ফেব্রুয়ারিতে ৯০টি, মার্চে ১১৯টি, এপ্রিলে ৯০টি, মে মাসে ৭২টি, জুন মাসে ১৩০টি, জুলাইয়ে ১০৫টি, আগস্টে ১৫০টি, সেপ্টেম্বরে ১৩৩টি, অক্টোবরে ১৩০টি, নভেম্বরে ১৪২টি এবং ডিসেম্বর মাসে ১৫৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।[১২]
স্বীকৃতি ও প্রভাব
সম্পাদনারিউমর স্ক্যানার ২০২১ সালে আইএফসিএন কর্তৃক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এছাড়া, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় লিডসউইন লিমিটেড কর্তৃক 'পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড' এ ভূষিত হয়।[১৩]
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো রিউমার স্ক্যানারের জরিপ ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রায়শই সংবাদ প্রকাশ করে। [১৪][১৫][১৬][১৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Rumor Scanner becomes 2nd verified signatory in Bangladesh"। The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ "Rumor Scanner Bangladesh becomes verified signatory of the IFCN"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ফ্যাক্ট চেকিংয়ে স্বীকৃতি পেল রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ"। www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ "আমাদের সম্পর্কে - Rumor Scanner"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ ফিরোজ, জহিরুল কাইউম। "গুজবের বিরুদ্ধে রিউমার স্ক্যানারের অভিনব লড়াই"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ "কাজের পদ্ধতি - Rumor Scanner"। ২০২০-০৮-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ "রেকর্ড ২৯১৯ ভুল তথ্যে ফিরে দেখা ২০২৪ সাল"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-২৫।
- ↑ "২০২৪ সালে বাংলাদেশকে নিয়ে ৭২ ভারতীয় গণমাধ্যমে অপতথ্য"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-২৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-১৭)। "গণমাধ্যম ও দায়িত্বশীলেরা প্রচার করছেন অপতথ্য"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১৭।
- ↑ "২০২৩ সালের আট মাসে ১০৮২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার"। ২০২৩-০৯-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৩।
- ↑ "নির্বাচনের আগে ভুয়া খবর বাড়ছে"। ২০২৩-০৯-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৫।
- ↑ "২০২২ সালে ১৪০০ গুজব চিহ্নিত করেছে রিউমার স্ক্যানার"। ঢাকা পোস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৮।
- ↑ "'পজেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাওয়ার্ড' পেল রিউমর স্ক্যানার"। ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-১১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-১২-০৩)। "ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার শিকার শ্যামলী বাস নিয়ে ভারতে অপপ্রচার"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৪।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৪-০৯-১৬)। "৬ মাসে কোনো ভুল সংবাদ করেনি ডেইলি স্টার"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-১২-০৩)। "১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-১২-০৪)। "ভারতের পতাকা মাড়ানোর 'ভাইরাল' ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি: রিউমার স্ক্যানার"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৪।